Home ARTICLES বাংলাদেশ তৈরি পোশাক শিল্পের আনুষঙ্গিক পণ্যে স্বনির্ভর

বাংলাদেশ তৈরি পোশাক শিল্পের আনুষঙ্গিক পণ্যে স্বনির্ভর

বাংলাদেশ তৈরি পোশাক শিল্পের আনুষঙ্গিক পণ্যে স্বনির্ভর
বাংলাদেশ তৈরি পোশাক শিল্পের আনুষঙ্গিক পণ্যে স্বনির্ভর

আশির দশকে স্থানীয় উৎপাদনকারীরা তৈরি পোশাক রপ্তানির সময় পুরনো ও আগে ব্যবহৃত কার্টন ব্যবহার করতেন, কারণ সে সময় বাংলাদেশে কার্টন উৎপাদন করার মতো কোনো কারখানা ছিল না।

আগে ব্যবহৃত কার্টনগুলো আমদানি করা হতো। এগুলোতে রপ্তানি পণ্য বহনের জন্য প্রয়োজন অনুযায়ী কেটে নিয়ে আবারও ব্যবহারের উপযোগী করা হতো।

এ রকম পরিস্থিতিতে অনেক সময় রপ্তানির জন্য পণ্য প্রস্তুত থাকলেও সময় মতো চালান পাঠানো যাবে কি না, তা নিয়ে একটি অনিশ্চয়তা কাজ করতো।

এমনকী, মাত্র ১৫ বছর আগেও স্থানীয় উৎপাদকদের মূলত চীন ও হংকং থেকে বোতাম কিনে আনতে হতো, যেটি পোশাক শিল্পের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি আনুষঙ্গিক পণ্য।

বোতাম ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক পণ্যের স্বল্পতার কারণে অনেক পোশাক উৎপাদনকারীরা বিদেশি খুচরা বিক্রেতা ও ব্র্যান্ডের বেঁধে দেওয়া সময়সীমার মধ্যে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে ব্যর্থ হতেন।

প্রতিশ্রুত সময়সীমা অনুযায়ী পণ্য পাঠাতে না পারলে তারা বড় আকারের মূল্য ছাড় দিতে বাধ্য হতেন। কখনো কখনো অর্ডার বাতিলও হয়ে যেত।

তবে এখন আর এ রকম হয় না।

১৯৯০ সালের পর থেকে পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। সে সময় থেকে স্থানীয় উৎপাদকরা আনুষঙ্গিক পণ্যের কারখানা স্থাপন করতে শুরু করেন। উদ্যোক্তারা গত ১৫ বছরে এই খাতে ৪০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করে তৈরি পোশাকের আনুষঙ্গিক পণ্য ও প্যাকেজিং শিল্পের উন্নয়ন করেছেন, যার মাধ্যমে দেশের পোশাক শিল্পের প্রয়োজনীয়তার পূরণ হচ্ছে এবং বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান আরও শক্তিশালী হচ্ছে।

তাদের এসব উদ্যোগে স্থানীয়দের জন্য নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে এবং বিলিয়ন ডলারের বিদেশি মুদ্রার সাশ্রয় হয়েছে।

বর্তমানে প্রতিশ্রুত সময়সীমার মধ্যে পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে অনেক উন্নতি হয়েছে, কারণ রপ্তানিকারকরা স্থানীয় বাজার থেকে সরাসরি আনুষঙ্গিক পণ্য ও কার্টন সংগ্রহ করতে পারছেন। বিদেশ থেকে এসব পণ্য আমদানি করে যে সময় নষ্ট হতো, তা আর এখন হচ্ছে না।

বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যাকসেসরিজ অ্যান্ড প্যাকেজিং ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের অন্যতম পরিচালক আল শাহরিয়ার আহমেদ বলেন, ‘আমরা শুধুমাত্র তৈরি পোশাক শিল্পই নয়—ফার্মাসিউটিক্যালস, হোম টেক্সটাইল ও চামড়া খাতের জন্যেও পণ্য সরবরাহ করি।’

তিনি বলেন, ‘এই খাত ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্প হিসেবে কাজ করছে এবং তৈরি পোশাক শিল্পের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এর প্রবৃদ্ধি হচ্ছে।’

টঙ্গীভিত্তিক আনুষঙ্গিক পণ্যের কারখানা খান অ্যাক্সেসরিজ অ্যান্ড প্যাকেজিং কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল কাদের খান বলেন, ‘যদিও উৎপাদন প্রক্রিয়া বেশ জটিল, তবুও আজ আমরা তৈরি পোশাক শিল্পে ব্যবহৃত বোতামের চাহিদার ৯০ শতাংশই পূরণ করতে পারি।’

স্থানীয় তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের বাকি ১০ শতাংশ বোতাম আমদানি করতে হয়। এই বোতামগুলো একটু ভিন্ন ধরনের এবং এগুলো বিদেশি ক্রেতাদের বিশেষায়িত প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবহার করা হয়, যোগ করেন তিনি।

এই খাত সংশ্লিষ্টরা বলেন, বর্তমানে বোতামের স্থানীয় বাজারের মূল্যমান ১৬ কোটি ডলার, যা ৩০ বছর আগে প্রায় শূন্যের কোঠায় ছিল। শুধুমাত্র বোতামই নয় ,বাংলাদেশ তৈরি পোশাকের অন্য অনেক আনুষঙ্গিক পণ্য ও প্যাকেজিং পণ্যে স্বনির্ভরতা অর্জন করেছে।

উদাহরণস্বরূপ, একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ও রপ্তানিযোগ্য পোশাক তৈরি করতে ৩০টিরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ আনুষঙ্গিক পণ্য, যেমন: পলি ব্যাগ, হ্যাঙ্গার, জিপার, বোতাম, কার্টন ও প্যাকেজিংয়ের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ দরকার হয়। আনুষঙ্গিক পণ্যের এই উপখাত কিছু বিশেষায়িত পণ্য ছাড়া ৩০টি পণ্যের প্রায় সবগুলোই সরবরাহ করতে পারে।

উৎপাদনকারীরা একইসঙ্গে অন্যান্য তৈরি পোশাক উৎপাদনকারী দেশে তাদের আনুষঙ্গিক পণ্য রপ্তানি করছেন, যেমন পাকিস্তান, ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়া। তবে রপ্তানির পরিমাণ এখনো বেশ কম। এই খাত সংশ্লিষ্টরা আরও জানিয়েছেন, আনুষঙ্গিক পণ্যের সরাসরি রপ্তানির পরিমাণ ৫০ কোটি টাকা।

মন্ট্রিমস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মমিন মণ্ডল বলেন, ‘আমি তৈরি পোশাক শিল্পে ব্যবহৃত হয় এ রকম অল্প কিছু বিশেষায়িত আনুষঙ্গিক পণ্য রপ্তানি করি।’

তিনি ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী ইউরোপেও আনুষঙ্গিক পণ্য রপ্তানি করেছেন। প্রতিষ্ঠানটি বছরে ৬ কোটি ডলার মূল্যের আনুষঙ্গিক পণ্য রপ্তানি করেছে।

এই উদ্যোক্তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ তৈরি পোশাকের আনুষঙ্গিক পণ্য তৈরিতে প্রচুর অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে এবং গত দুই দশকে এ খাতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ উন্নয়ন হয়েছে।

দেশের অন্যতম প্রধান বোতাম উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ডেকো লিগ্যাসি গ্রুপের মোট রপ্তানির পরিমাণ ৩০ কোটি ডলার, যার মধ্যে ১৫ শতাংশ আসে আনুষঙ্গিক পণ্য থেকে। প্রতিষ্ঠানটি মূলত লেবেল, বোতাম, হ্যান্ড ট্যাগ, প্রাইস ট্যাগ ও প্রিন্টেড লেবেল উৎপাদন করে।

ডেকো লিগ্যাসি গ্রুপের চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন কিরণ বলেন, ‘আমরা আনুষঙ্গিক পণ্যে স্বনির্ভরতা অর্জন করেছি। এই খাতে প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে।’

খান অ্যাক্সেসরিজের আবদুল করিম খান জানান, তৈরি পোশাকের আনুষঙ্গিক পণ্যের ব্যবসা বেশ সম্ভাবনাময়, কারণ চীন এখন আর এই স্বল্প খরচের ব্যবসায় আগ্রহী নয়।

‘এ কারণে চীন থেকে অনেক ওয়ার্ক অর্ডার বাংলাদেশে স্থানান্তর হচ্ছে’, যোগ করেন তিনি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here