Home বাংলা নিউজ দেশে বাড়ছে সবুজ কারখানা, সুফল মিলছে রফতানিতে

দেশে বাড়ছে সবুজ কারখানা, সুফল মিলছে রফতানিতে

গ্রিন ফ্যাক্টরির তালিকায় দেশে নতুন বছরে আরও তিনটি পোশাক কারখানা অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরেই শীর্ষে থাকা বাংলাদেশে সবুজ কারখানার সংখ্যা এখন ১৮৬টি। এছাড়া গ্রিন ফ্যাক্টরির তালিকায় রয়েছে আরও ৫৫০টির মতো কারখানা।

সোমবার (৩০ জানুয়ারি) পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। প্রসঙ্গত, যুক্তরাষ্ট্রের গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিলের (ইউএসজিবিসি) এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট ডিজাইন (এলইইডি) গ্রিন ফ্যাক্টরি বা সবুজ কারখানার সার্টিফিকেশন দিয়ে থাকে।

তৈরি পোশাক খাতের ব্যবসায়ীরা বলছেন, ‘অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যে বৈশ্বিক বাজারে যখন পোশাকের অর্ডার কমে যাচ্ছে, তখন এ ধরনের স্বীকৃতি বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের মনোবল বৃদ্ধি করে। এতে বাংলাদেশের প্রতি ক্রেতাদের আস্থা বাড়ছে। এর ফলে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা সত্ত্বেও বাংলাদেশের রফতানি আয়ে সুবাতাস বইছে।’

এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএর পরিচালক মো. মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, ‘এই ধরনের স্বীকৃতি আমাদের মনোবল বৃদ্ধি করছে। এর প্রভাব পড়ছে রফতানি আয়েও।’ দেশের সবুজ ফ্যাক্টরির স্বীকৃতি বাড়ার কারণে আগামীতেও রফতানি আরও বাড়বে বলে মনে করেন তিনি।

বিজিএমইএর তথ্য মতে, ‘বাংলাদেশে এখন গ্রিন ফ্যাক্টরি ১৮৬টি। এর মধ্যে প্লাটিনাম ক্যাটাগরির ৬২টি, গোল্ড ১১০টি, সিলভার ১০টি ও সার্টিফাইড চারটি। এর মধ্যে গত বছরে ৩০টি কারখানা স্বীকৃতি পায়। এর মধ্যে ১৫টি ছিল প্লাটিনাম ক্যাটাগরির। আর চলতি জানুয়ারি মাসে দুইটি প্লাটিনাম ক্যাটাগরিতে ও একটি গোল্ড ক্যাটাগরিতে গ্রিন ফ্যাক্টরির স্বীকৃতি পেয়েছে বাংলাদেশ। এছাড়া ৫৫০টির বেশি কারখানা গ্রিন ফ্যাক্টরি হতে রেজিস্ট্রেশন বা পাইপলাইনে রয়েছে।’

প্রসঙ্গত, পোশাক কারখানায় সবুজের দিক দিয়ে বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয়। নতুন করে সবুজ কারখানার তালিকায় নরসিংদীর ভাটপারার আমানত শাহ ফ্যাব্রিক্স লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি গোল্ড ক্যাটাগরির একটি সবুজ কারখানা। এছাড়া প্লাটিনাম ক্যাটাগরিতে স্বীকৃতি পেয়েছে গাজীপুরের জে এল ফ্যাশন লিমিটেড ও জে কে এল এডমিন অ্যান্ড ডে কেয়ার বিল্ড।

এর আগে ২০১৯ সালে ২৮টি কারখানা এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। নতুন বছরে শুরুতেই তিনটি সবুজ কাখানার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

উল্লেখ্য, সবুজ কারখানার তালিকায় বাংলাদেশের পরের অবস্থানে রয়েছে ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়া।

গার্মেন্টস খাতের একাধিক উদ্যোক্তা জানান, গ্রিন ফ্যাক্টরির স্বীকৃতি বাংলাদেশে বাড়ার কারণে  প্রচলিত বাজার তথা ইউরোপ ও আমেরিকার বাইরে নতুন বাজারগুলো থেকে বাড়তি অর্ডার আসছে। এতে সার্বিকভাবে রফতানি বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে। আর এই পোশাক রফতানির ওপর ভর করে দেশের অর্থনীতিও জোর কদমে এগিয়ে চলেছে।

বিজিএমইএর তথ্য অনুযায়ী, সদ্য বিদায়ী বছরে বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ থেকে ৪৫ হাজার ৭০৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের গার্মেন্টস পণ্য রফতানি হয়েছে, যা আগের বছর ছিল ৩৫ হাজার ৮১১ মিলিয়ন ডলার। তথ্য আরও বলছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই থেকে ডিসেম্বর) বাংলাদেশ থেকে ১২ হাজার ৬৬০ মিলিয়ন ডলার নিটওয়্যার এবং ১০ হাজার ৩৪০ ডলারের ওভেন পণ্য রফতানি হয়েছে।

অবশ্য চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ২৭ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রফতানি করা হয়েছে, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১১ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে তৈরি পোশাক পণ্যের দাম ছিল ২৩ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ রফতানি আয়ের নতুন রেকর্ড অর্জনে সহায়তা করেছে তৈরি পোশাক খাত। একই সঙ্গে তা নভেম্বরে হওয়া রেকর্ডকেও ভেঙেছে। ডিসেম্বরে ৯ শতাংশের কিছু বেশি প্রবৃদ্ধি নিয়ে রফতানি হয়েছে ৫ দশমিক ৩৭ বিলিয়ন ডলারের পণ্য, যা একক মাসের হিসাবে এযাবৎকালের সর্বোচ্চ। 

এদিকে রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নে বাংলাদেশের পোশাক রফতানি ১৬ দশমিক ৬১ শতাংশ বেড়ে ১১ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ৯ দশমিক ৮৭ বিলিয়ন ডলার।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রে আমাদের তৈরি পোশাক রফতানি ২০২২-২৩ সালের জুলাই-ডিসেম্বরে ৪ দশমিক ২৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে, যার প্রবৃদ্ধি গত বছরের একই সময়েরে তুলনায় মাত্র ১ দশমিক ১১ শতাংশ। একই সময়ে যুক্তরাজ্য ও কানাডায় রফতানি যথাক্রমে ১১ দশমিক ৮৯ শতাংশ এবং ২৮ দশমিক ৪২ শতাংশ বেড়ে ২ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন ডলার এবং ৭৭৪ দশমিক ১৬ মিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here