Home বাংলা নিউজ ফেলে দেওয়া কাপড় দিয়ে তৈরি হচ্ছে হালফ্যাশনের পোশাক

ফেলে দেওয়া কাপড় দিয়ে তৈরি হচ্ছে হালফ্যাশনের পোশাক

প্রতিবছর গোটা বিশ্বে দশ হাজার কোটি পোশাক তৈরি করা হয়। তার মধ্যে প্রায় ৯ কোটি ২০ লাখ টন আবর্জনার স্তূপে জমা হয়

বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বর্তমান বিশ্বের বেশ আলোচিত একটি বিষয়। পৃথিবীকে মানুষের জন্য নিরাপদ আবাসস্থল করতে বিভিন্ন খাতের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। ইতোমধ্যে বিভিন্ন দেশে শুরু হয়েছে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। বর্জ্য  থেকে নতুন পণ্য উৎপাদন এই প্রক্রিয়ার একটি উল্লেখযোগ্য পদ্ধতি।

প্রতিবছর টেক্সটাইল খাত থেকে ৯ কোটি ২০ লাখ টন আবর্জনার জমা হয়/সংগৃহীত

যে সমস্ত খাত থেকে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক বর্জ্য উৎপন্ন হয় তার মধ্যে তৈরি পোশাক শিল্প অন্যতম। 

প্রতিবছর গোটা বিশ্বে দশ হাজার কোটি পোশাক তৈরি করা হয়। তার মধ্যে প্রায় ৯ কোটি ২০ লাখ টন আবর্জনার স্তূপে জমা হয়। আর এসব আবর্জনার মাত্র ১% কাপড় পুনর্ব্যবহার করা হয়৷

তবে, এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম জার্মানির একটি কোম্পানি। তারা গার্মেন্টস খাতের ফেলে দেওয়া কাপড় থেকে দামী পণ্য তৈরি করছে। তাদের এই উদ্যোগটি ব্যবসায়িকভাবেও বেশ সফল হয়েছে।

মিউনিখ শহরের কাছে ছোট একটি স্টুডিওতে টেক্সটাইল শিল্পের বাতিল করা কাপড় নতুন করে ব্যবহার করা হচ্ছে। এমনকি বাণিজ্য মেলায় ক্যাটালগের নমুনা হিসেবে যে কাপড় ব্যবহার করা হয়, সেগুলো থেকেও বালিশ বা কম্বল তৈরি করা হচ্ছে।

এলপিজে স্টুডিও নামের ওই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা হেডভিশ বুলে বলেন, “ফ্যাশন শিল্পজগতের কাছ থেকে আমরা কাপড় পাই। অনেক কোম্পানি ফোন করে জানতে চায়, আমরা সেই কাপড় তুলে নিতে পারি কি-না। কোম্পানিগুলোর জন্যও সেটা ভালো, কারণ তখন তাদের কিছুই ফেলে দিতে হয় না৷ তাদের অর্ডার দেওয়া কাপড় আবার ব্যবহার করা হয়।”

তিনি জানান, এভাবে উপকরণ সংগ্রহ করা বেশ কঠিন এবং সময়সাপেক্ষ। কারণ, সব কিছু রিসাইকেল করা সম্ভব হয় না। কিছু কাপড় নিয়ম মেনে ফেলে দিতে হয়।

এক্ষেত্রে আরেকটি চ্যালেঞ্জ হলো, সব কাপড় পুনর্ব্যবহার করা সম্ভব নয়। অথবা আর্থিক মানদণ্ডে সেই কাজের কোনো অর্থ হয় না।

হেডভিশ বুলে এর কারণ ব্যাখ্যা করে বলেন, “একদিকে প্রক্রিয়াকরণ, অন্যদিকে কাপড়ের আয়ু, সেই কাপড় কতটা মজবুত, এমন কারিগরি বিষয় যাচাই করা জরুরি। মান যত বেশি হবে, সেলাই যত ভালো হবে, যত ঘনভাবে বোনা হবে, যত সূক্ষ্ম হবে, দাম ও কদরও তত বেড়ে যাবে। নিম্ন মানের পণ্য আপসাইক্লিং করার কোনো অর্থ আমার কাছে নেই। আমি সেটা করি না।”

মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রেও সেই সব বিষয় বিবেচনা করা হয়। বালিশের দাম ৩৫০ ইউরো অথবা কম্বল ও হাতে বোনা কার্পেটের দাম হাজার ইউরোরও বেশি হতে পারে। বিলাসবহুল এমন পণ্যের জন্য অনেক পরিশ্রম করতে হয়। কিছু দোকানে সরাসরি অথবা ইন্টারনেটের মাধ্যমে পণ্যগুলো বিক্রি হয়।

পুরানো থেকে নতুন কিছু তৈরির আরেক কোম্পানি টালমায়ারের কর্মকর্তা কোম্পানির ক্রিস্টফ মিটারমায়ার বলেন, “বর্তমানে সত্যি অনেকে উৎপাদনের জায়গা, কাজের পরিবেশের মতো বিষয় সম্পর্কে জানতে চাইছেন। ভেবেচিন্তে একবার কিছু কিনলে অনেক কাল সেটার আনন্দ উপভোগ করা যায়।”

হেডভিশ বুলাই ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে জার্মানির একাধিক ফ্যাশন ব্র্যান্ডের হয়ে ডিজাইনার হিসেবে কাজ করছেন। তিনি এই শিল্পশাখা খুব ভালোই চেনেন, গাফিলতি সম্পর্কেও জানেন। তিনি পরিবর্তন দেখতে চান। হেডভিশ বুলাই বলেন, “অবশ্যই আমার নিজেরও অপরাধ বোধ রয়েছে। কিছু পরিস্থিতিতে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, যার দুটি বিকল্প ছিল। আমরা কি ২০ সেন্ট বেশি মূল্যের টেকসই ও অরগ্যানিক সুতি ব্যবহার করবো? নাকি এতকাল যেমন চলে এসেছে, তেমনটাই রেখে দেবো? বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পরিবর্তনের বিরুদ্ধেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”

তার মতে, আপসাইক্লিং এখনো ছোট আকারেই সম্ভব হচ্ছে। কিন্তু টেকসই প্রক্রিয়া সম্পর্কে বেড়ে চলা সচেতনতার প্রেক্ষাপটে ছোট কোম্পানিগুলোর জন্য এক্ষেত্রে বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here