Home বাংলা নিউজ রাশিয়ায় পশ্চিমা ব্র্যান্ডগুলো পুনরায় ব্যবসা চালু করায় বাংলাদেশের আরএমজি সেক্টরের জন্য সুখবর

রাশিয়ায় পশ্চিমা ব্র্যান্ডগুলো পুনরায় ব্যবসা চালু করায় বাংলাদেশের আরএমজি সেক্টরের জন্য সুখবর

রাশিয়ান বাজারে নতুন নামে পশ্চিমা ব্র্যান্ডগুলো তাদের ব্যবসা পুনরায় চালু বাংলাদেশি পোশাক রপ্তানিকারকদের জন্য দারুণ সুযোগ হতে পারে। পোষাক খাতের সাথে জড়িতদের মতে, রাশিয়ার বাজারে ঢোকার জন্য অনেকগুলো বিদেশি ব্র্যান্ড তুরস্ক, সিঙ্গাপুর এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের মাধ্যমে পোশাক রপ্তানি করছে।

“যুদ্ধের কারণে বন্ধ হয়ে যাওয়া রাশিয়ান চেইন স্টোরগুলো নতুন নামে তাদের দোকানগুলো চালু করছে। চাহিদার কমতি নেই, যেটি একটি ভালো সংবাদ। কারণ আমরা চাই আমাদের কাপড় বিক্রি হোক।

এএফপির বরাতে জানা যায়, একটি সুইস গবেষণা অনুযায়ী, ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার সামরিক অভিযানের পর পশ্চিমা দেশগুলোতে রাশিয়া নিয়ে ব্যাপক নেতিবাচকতা ছড়ীয়ে পড়লে অনেকগুলো ব্র্যান্ডই রাশিয়া থেকে তাদের ব্যবসা গুটিয়ে নেয়। 

দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের সাথে কথা বলার সময় একটি পোশাক উৎপাদনকারী কোম্পানির এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, “তারা গ্লোরিয়া জিনস এবং ও’স্টিন [অস্টিন] নামের দুটো রাশিয়ান ব্র্যান্ডের সাথে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন, যেটি এখনো পর্যন্ত চলছে।”

জিজিএক্স, এইচঅ্যান্ডএম, ইন্ডিটেক্সের মতো কোম্পানিগুলো রাজনৈতিক চাপ কমানোর জন্য দুবাইয়ে নতুন নামে তাদের ব্যবসা চালু করেছে। কোম্পানিটির শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, “ওই নতুন কোম্পানিগুলো আমাদের সাথেও ব্যবসা করছে। তারা তুরস্কের মতো তৃতীয়পক্ষের দেশ থেকে কাপড়সহ অন্যান্য পণ্য আমদানি করে। তারা তৃতীয় আরেকটি দেশের সাথে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা চালিয়ে আসলেও রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কঠোর পদক্ষেপের কারণে তারা এদিকে আরও ঝুঁকে পড়েছে।”

২০২২ সালের মার্চে বেশ কিছু রাশিয়ান ব্যাংককে সুইফট (সোসাইটি ফর ওয়ার্ল্ডওয়াইড ইন্টারব্যাংক ফাইন্যানশিয়াল টেলিকমিউনিকেশন) সিস্টেম থেকে বাদ দিয়ে দেওয়ায় রাশিয়ান রপ্তানিকারকদের জন্য পেমেন্ট পাওয়া বেশ কঠিন হয়ে যায়। অন্যদিকে, বড় বড় রিটেইলার ও ব্র্যান্ডগুলো ঘোষণা দেয় যে, তারা রাশিয়ার মার্কেট ছেড়ে চলে যাবে। এর ফলে বাংলাদেশি রপ্তানিকারকেরা তাদের পেমেন্ট ঠিক সময়ে পেরে সমস্যা হচ্ছে। কোনো কোনো রপ্তানিকারক তাদের পেমেন্ট পাচ্ছেন তুরস্ক, চীন বা অন্য দেশের মুদ্রার মাধ্যমে। 

এক্সপোর্ট প্রমোশন ব্যুরো (ইপিবি)-র মতে, ২০২২ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর মাসে তুরস্কে পোশাক রপ্তানি বেড়ে  ১১৭.৪৩ মিলিয়ন ডলার হয়েছে, যেটি গত বছরের তুলনায় ৮৩% বেশি। অন্যদিকে, সংযুক্ত আরব আমিরাতে পোশাক রপ্তানি বেড়ে ১৫৫.৩৫ মিলিয়ন ডলার হয়েছে, যেটি ২২.৩৮ শতাংশ বেশি। 

ইপিবির সূত্র অনুযায়ী, ২০২১ আর্থিক বছরে বাংলাদেশ রাশিয়ায় ৬৬৫.৩২ মিলিয়ন ডলার সমমূল্যের পণ্য রপ্তানি করেছে, যার মধ্যে ৬০৭ মিলিয়ন ডলারই এসেছে পোশাক খাত থেকে। তবে ২০২৩ অর্থবছরে রাশিয়ায় পোশাক রপ্তানি গত বছরের তুলনায় ৪৭.০৬ শতাংশ কমে ১৮০.৬৪ মিলিয়ন ডলারে নেমে গিয়েছে।

গত বছর পর্যন্ত রাশিয়ার সাথে ব্যবসা করা রুপা গ্রুপের ম্যানেজিং ডিরেক্টর মো. শহীদুল ইসলাম জানান, “বর্তমানে আমাদের সাথে রাশিয়ার কোনো ব্যবসা নেই। যুদ্ধের কারণে এটা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। আমার ক্রেতারা ইতিমধ্যেই সমস্ত পেমেন্ট পরিশোধ করেছেন, যেটা যুদ্ধের কারণে থেমে ছিল।”

যুদ্ধের আগে কোম্পানিটি রাশিয়ায় প্রতি মাসে অর্ধেক মিলিয়ন ডলারের সোয়েটার রপ্তানি করতো। 

ইয়াং ফর এভার টেক্সটাইলস লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর রাজিব চৌধুরী বলেন, “বর্তমানে আমাদের সাথে রাশিয়ার কোনো বাণিজ্যসম্পর্ক নেই, যদিও তাদের সাথে ব্যবসা করার অন্য পথ খোলা আছে। আমি জানি যে বেশ কিছু রপ্তানিকারক দুবাই এবং সিঙ্গাপুরের মাধ্যমে রাশিয়ার সাথে ব্যবসা করছেন।”

ক্রেতাদের আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও, রাজিব মনে করেন যে অন্য দেশের মাধ্যমে ব্যবসা করা তার জন্য ঝুকিপূর্ণ হবে। কারণ গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর তিনি তার পেমেন্ট পেতে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে প্রায় আড়াই মাস বেশি সময় লেগেছে। 

বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মাদ আলী খোকন বলেন, “যুদ্ধের কারণে বন্ধ হয়ে যাওয়া রাশিয়ান চেইন স্টোরগুলো নতুন নামে তাদের দোকানগুলো চালু করছে। চাহিদার কমতি নেই, যেটি একটি ভালো সংবাদ। কারণ আমরা চাই আমাদের কাপড় বিক্রি হোক। আমরা দেখছি যে বর্তমান আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক অবস্থা ক্রমেই উন্নতির দিকে যাচ্ছে। যদিও ২০২৩-এর শুরুটা তেমন ভালো হয়নি, তারপরেও আমরা বিশ্বাস করি বছরের শেষদিকে এটি ভালো পর্যায়ে যাবে।” 

পশ্চিমা কোম্পানিগুলোর মধ্যে মাত্র ৮.৫% কোম্পানি রাশিয়া ছেড়েছে। 

ইউনিভার্সিটি অফ সেন্ট গ্যালেন এবং লজানের আইএমডি ইনিস্টিটিউটের গবেষকরা দেখছছেন কীভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং জি৭ দেশগুলোর কোম্পানিগুলো গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে পুরোদমে যুদ্ধ শুরু করার পর দেশটি থেকে কীভাবে নিজেদেরকে সরিয়ে নিয়েছে। 

এএফপির বরাতে সেন্ট গ্যালেন বিশ্ববিদ্যালয় জানিয়েছে, তাদের গবেষণাপ্রাপ্ত ফলাফল থেকে দেখা যায় যে ইইউ এবং জি৭ দেশগুলোর প্রতিষ্ঠানগুলোর খুব কমই রাশিয়া থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছে এবং দেশটি থেকে পশ্চিমা কোম্পানিগুলো ব্যাপকহারে নিজেদেরকে গুটিয়ে নিয়েছে, সেই ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করে। বাস্তবে এসব দেশে কোম্পানিগুলোর হেডকোয়ার্টার থাকলেও তারা সরকার, গণমাধ্যম এবং অন্যান্য এনজিওগুলোর চাপ সামলিয়ে রাশিয়ার সাথে বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। 

সোশ্যাল সায়েন্স রিসার্চ নেটওয়ার্কে প্রকাশিত গবেষণাটিতে দেখা যায়, ইইউ এবং জি৭ দেশগুলোর ১০ শতাংশেরও কম প্রতিষ্ঠান রাশিয়া থেকে ব্যবসা সরিয়ে নিয়েছে। 

যখন মস্কো কিয়েভের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে, তখন ইইউ ও জি৭-এর ১,৪০৪টি কোম্পানির ২,৪০৫টি অঙ্গপ্রতিষ্ঠান রাশিয়ায় সক্রিয় ছিল। এগুলোর মধ্যে ১২০টি কোম্পানি (৮.৫%) নভেম্বরের মধ্যে রাশিয়া থেকে তাদের কমপক্ষে একটি অঙ্গপ্রতিষ্ঠান সরিয়ে নেয়। ইউরোপ এবং জাপানের তুলনায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলো রাশিয়া থেকে বেশি ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের এই ভূমিকা সত্ত্বেও, ১৮ শতাংশেরও কম মার্কিন কোম্পানি এ কাজ করেছে। এর বিপরীতে, ১৫ শতাংশ জাপানি কোম্পানি এবং ৮.৩ শতাংশ ইউরোপীয় কোম্পানি ব্যবসা বন্ধ করেছে। যেসব প্রতিষ্ঠান রাশিয়া থেকে সরে গিয়েছে, তাদের মধ্যে ১৯.৫ শতাংশ কোম্পানি জার্মান মালিকানাধীন এবং ১২.৪ শতাংশ মার্কিন মালিকানাধীন। 

গবেষণা থেকে দেখা যায়, যে সকল কোম্পানির বিশাল পরিমাণ জনবল রাশিয়ায় রয়েছে এবং তুলনামূলক কম লাভ হয়, সেগুলোই রাশিয়া থেকে চলে গিয়েছে। অন্যদিকে, বেশি লাভ করা প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবসা চালু রেখেছে। 

এ সকল ফলাফল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় বিবৃতি জানায়, “কোনো দেশের সরকার অপর দেশকে ভূরাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করলেও সে দেশের প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিদ্বন্দ্বী রাষ্ট্রের বাজার থেকে আলাদা হতে চায় না বলেই প্রতীয়মান হয়।” 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here