ভারত থেকে বাংলাদেশে সব ধরনের পণ্য আমদানির অনুমতি নেই। এর পরও প্রতি বছর দেশটি থেকে উল্লেখযোগ্য হারে আমদানি বাড়ছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের স্থলবন্দরগুলোর পরিবেশও অনেকটা সহায়ক ভূমিকা রেখেছে। অন্যদিকে ভারতে প্রায় সব ধরনের পণ্য রফতানির অনুমতি থাকলেও এক্ষেত্রে তেমন অগ্রগতি নেই। এর কারণ হিসেবে বিভিন্ন ধরনের অশুল্ক বাধাকে দায়ী করা হচ্ছে। আর এসব অশুল্ক বাধা বিষয়ে ক্রমেই অসন্তোষ বাড়ছে বাংলাদেশে। সম্প্রতি দুই দেশের মধ্যকার যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের সভায় এমনটিই জানানো হয়।
দুই দেশের মধ্যকার যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের সভা গত মাসের শুরুর দিকে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত হয়। এতে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মুনির চৌধুরী। আর ভারতের পক্ষে নেতৃত্ব দেন দেশটির বাণিজ্য বিভাগের যুগ্ম সচিব ভুপিন্দার এস ভাল্লা। এ সময় অন্য সরকারি কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন। ওই সভার কার্যপত্র থেকে জানা যায়, ২০১১-১২ থেকে ২০১৪-১৫ অর্থবছর পর্যন্ত চার বছরে দেশটি থেকে আমদানি প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। সদ্য শেষ হওয়া ২০১৫-১৬ অর্থবছরের সাময়িক হিসাবেও আমদানি প্রবৃদ্ধির এ অব্যাহত ধারা পরিলক্ষিত হয়। কিন্তু ঠিক বিপরীত চিত্র দেখা গেছে দেশটিতে রফতানির ক্ষেত্রে।
সভা সূত্রে জানা গেছে, ২০১১-১২ অর্থবছরে ভারত থেকে ৩৭৮ কোটি ৯০ লাখ ডলারের পণ্য আমদানি হয় বাংলাদেশে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে এর পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ৬৪৫ কোটি ১৪ লাখ ডলারে। সদ্য শেষ হওয়া অর্থবছরের চূড়ান্ত হিসাবেও আমদানি প্রবৃদ্ধির তথ্য পাওয়া গেছে। অন্যদিকে ২০১১-১২ অর্থবছরে ভারতে রফতানি হয়েছিল সাড়ে ৫৮ কোটি ডলারের পণ্য। এর পরের অর্থবছর রফতানি কিছুটা বেড়ে ৬৪ কোটি ডলারে উন্নীত হলেও ২০১৩-১৪ অর্থবছরে তা ফের কমে যায়। ওই অর্থবছরে রফতানি নেমে আসে ৩৮ কোটি ৩৪ লাখ ডলারে। আর ২০১৪-১৫ অর্থবছরে রফতানি আবারো কিছুটা বেড়ে ৬২ কোটি ১৩ লাখ ডলারে উন্নীত হয়। অর্থাৎ চার বছরে আমদানি প্রায় দ্বিগুণ হলেও রফতানি প্রায় অপরিবর্তিত রয়েছে। এর জন্য বিভিন্ন ধরনের অশুল্ক বাধাকে দায়ী করা হয়েছে সভায়।
সভায় জানানো হয়, ভারত বাংলাদেশকে প্রায় সব ধরনের পণ্য রফতানিতে বিভিন্ন ধরনের শুল্ক সুবিধা দিয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন ধরনের অশুল্ক বাধার কারণে এর সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। এসব অশুল্ক বাধার মধ্যে ভারতের বন্দরগুলোর প্রশাসনিক জটিলতা উল্লেখযোগ্য। সভায় ভারতের পক্ষ থেকে কী ধরনের অশুল্ক বাধা রয়েছে, তা লিখিতভাবে জানাতে বলা হয়। ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুই শতাধিক পণ্যে শুল্কমুক্ত ঘোষণা থাকলেও পণ্য রফতানিতে শুল্ক-অশুল্কসহ নানাবিধ বাধা রয়ে গেছে। ফলে ভারত থেকে রফতানি আয় বাড়লেও সম্ভাবনা ও আকাঙ্ক্ষার তুলনায় প্রবৃদ্ধির চিত্রটি অত্যন্ত হতাশাজনক। ভারতে পণ্য রফতানিতে বিদ্যমান তিনটি বাধা এরই মধ্যে চিহ্নিত করেছে বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের চিহ্নিত বাধাগুলোর মধ্যে রয়েছে— রফতানিকারকরা, বিশেষত পোশাক শিল্প-সংশ্লিষ্টরা ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রফতানিতে সুবিধাজনক মূল্য পেয়ে থাকেন। এ কারণে ভারতে পোশাক রফতানিতে তাদের মধ্যে অনাগ্রহ রয়েছে। পাশাপাশি ভারতে পণ্য রফতানিতে মান নির্ধারণ-সংক্রান্ত সনদের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে সংশয়ের কারণেও রফতানিকারকরা নিরুত্সাহিত হয়ে থাকেন। এছাড়া রফতানিযোগ্য পণ্যের সংখ্যার স্বল্পতাকেও এক্ষেত্রে একটি বাধা হিসেবে চিহ্নিত করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
এ বিষয়ে ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (আইবিসিসিআই) সভাপতি মোহাম্মদ আলী বণিক বার্তাকে বলেন, সরকার চিহ্নিত তিনটি বাধার সঙ্গে আমরা একমত। এর মধ্যে মান নিয়ন্ত্রণজনিত সমস্যা সমাধানের জোর চেষ্টা চলছে। আর সিভিডির মাধ্যমে বিরাজমান শুল্কবাধা দূর করার বিষয়েও আলোচনা চলছে। তবে চাহিদা অনুযায়ী পণ্য সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি মূলত উদ্যোক্তাদের ওপর নির্ভর করছে।