গুলশান ও শোলাকিয়ার মতো জঙ্গি হামলার ঘটনার পর বিদেশি ক্রেতারা চলে যাচ্ছেন—এ কথা ঠিক নয় বলে মন্তব্য করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। তিনি বলেন, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করতে কোনো কোনো মহল ষড়যন্ত্র করছে। এই ষড়যন্ত্র আগেও হয়েছে। তবে কখনোই সফল হয়নি এরা। সচিবালয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে বাণিজ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন। সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলাকে ‘বৈশ্বিক সমস্যা’ উল্লেখ করে ব্যবসায়ীরা এ বিষয়ে রাজনীতিকে টেনে না নিয়ে আসার অনুরোধ জানান। তাঁরা বলেন, বিশ্ব দেখতে চায় ঘটনাগুলোকে বাংলাদেশ কীভাবে নিচ্ছে (রেসপন্স করছে)। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, অবকাশযাপনের মৌসুম হওয়ায় জুলাই-আগস্ট মাসে বিদেশিরা কমই আসেন। সুতরাং জঙ্গি হামলার ঘটনায় ক্রয় আদেশ কম হচ্ছে বা সবাই চলে যাচ্ছেন বলে কোনো কোনো পত্রিকায় যে লেখালেখি চলছে, তা ঠিক নয়। আবার গুলশানে ক্রেতা নেই বা হাহাকার চলছে—এতেও কোনো সত্যতা খুঁজে পাননি বলে জানান বাণিজ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ঈদের পর ব্যবসায়ীরা সাধারণত ১০-১৫ দিন দোকানই খোলেন না। অনেকে গ্রামের বাড়িতে থাকেন। সব সময়ই ঈদের পরপর ব্যবসা ঢাল থাকে। জঙ্গিদের মৃত্যু প্রসঙ্গে তোফায়েল আহমেদ বলেন, ইরাক, সিরিয়ার কথা না হয় বাদই দিলাম। যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, জার্মানিতে যারা হামলা করেছে, এদের একজনও কি বেঁচে আছে? সুতরাং এসব কথা যাঁরা বলেন… (বাক্য শেষ করেননি মন্ত্রী)। বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ বলেন, ‘১ জুলাইয়ের ঘটনায় আমরা বিস্মিত হয়েছিলাম। কারণ, এ ধরনের ঘটনার মুখোমুখি আগে কখনো হইনি। তবে বিশ্ব দেখতে চায়, সরকার কী ব্যবস্থা নিল এবং বিশ্ব অবাক হয়ে দেখল প্রধানমন্ত্রী (শেখ হাসিনা) কী ত্বরিত ও শক্ত হাতে পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছেন।’
মাতলুব আহমাদ বলেন, বিশ্ববাসীর কাছে এরই মধ্যে বার্তা চলে গেছে যে জঙ্গিবাদকে কোনোভাবেই প্রশ্রয় দেবে না বাংলাদেশ। তবে সিএনএন ও বিবিসি হলি আর্টিজানের ঘটনায় বাংলাদেশকে যেভাবে নেতিবাচকভাবে তুলে ধরেছে, তা কাটিয়ে উঠতে দেশীয় গণমাধ্যমকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান তিনি। মাতলুব বলেন, ‘দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য স্বাভাবিক আছে। আমি ট্রাক-বাসের ব্যবসা করি এবং এগুলোর বিক্রি কমেনি।’ মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে যে সন্ত্রাসের বাস্তবতা, সেটাই এখন বাংলাদেশে এসেছে। এত দিন আমাদের মোকাবিলা করতে হয়নি, এখন করতে হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘কেউই বলতে পারবেন না এ ধরনের ঘটনা আর ঘটবে না। তবে বিদেশিরা দেখতে চাচ্ছে বিষয়গুলোকে আমরা কীভাবে নিচ্ছি এবং ভবিষ্যতেও কীভাবে নেব।’ নাসিম মঞ্জুর বলেন, ‘অভিযানে মারা যাওয়া লোকগুলোর লাশ যে পরিবারগুলো নেয়নি, এটাও বাংলাদেশ। এটাই আসল বাংলাদেশ। দেশের ৯৯ শতাংশ মানুষ যে জঙ্গিবাদকে পছন্দ করেন না, বহির্বিশ্বে তা বড় করে তুলে ধরতে হবে।’ বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি তপন চৌধুরী বলেন, ‘অনাকাঙ্ক্ষিত সব ঘটনায় পরিবারের ক্ষতি নিয়ে আমি বেশি করে ভাবছি। একজন অভিভাবক, একজন বাবা, একজন মা-ই শুধু অনুভব করতে পারেন এ যে কত বড় ক্ষতি!’ তপন চৌধুরী আরও বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনায় ধাক্কা যে আসে না, তা নয়। আমরাও চিন্তা করি যে ভ্রমণ করব কি করব না। তবে এমন বিপদে পুরো জাতি যেভাবে দাঁড়িয়ে গেল, আরেকবার প্রমাণিত হলো জাতপাত ভুলে যেকোনো বিপদে আমরা এক হতে জানি।’ পরিবার মৃতদেহ নিতে চায় না বা আইনজীবীরা মামলা নিতে চান না—এসব ঘটনায় আশাবাদ জাগায় বলে মন্তব্য করেন তপন চৌধুরী। বাংলাদেশ নিট পোশাক উৎপাদক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিকেএমইএ) সেলিম ওসমান বলেন, পোশাক খাতকে ধ্বংস করতে এ শিল্পের ক্রেতাদেশের নাগরিকদের ওপর গুলশানে পরিকল্পিতভাবে হামলা চালানো হয়েছে। কল্যাণপুর অভিযানে পেছন দিক থেকে কেন মারা হলো, পাকড়াও করা হলো না কেন—এসব প্রশ্ন ওঠার সমালোচনা করে নেতিবাচক প্রচারণা না করতে সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানান সেলিম ওসমান। বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান বলেন, ‘বিমানবন্দর থেকে বিদেশি ক্রেতাদের পুলিশ প্রহরা দিয়ে নিয়ে আসতে সরকারের কাছে যত সহযোগিতা চেয়েছি, পেয়েছি। সন্ত্রাসী হামলা অন্য দেশেও ঘটছে। আমরা বিদেশে গেলে কিন্তু এ ধরনের সহযোগিতা পাই না।’