বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর বছর ২০২১ সালে রফতানি আয় ৬০ বিলিয়ন ডলার বা ৬ হাজার কোটি টাকা হবে, এমন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত রয়েছে। বাংলাদেশের মুদ্রার বিনিময় হার অনুযায়ী প্রায় পাঁচ লাখ কোটি টাকা আয় হবে এ খাত থেকে। লক্ষ্যমাত্রা উচ্চাভিলাষী সন্দেহ নেই। গত অর্থবছর অর্থাৎ ২০১৭-১৮ সময়ে রফতানি আয় ছিল তিন হাজার ৭শ’ কোটি ডলারের মতো। আর চলতি অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তিন হাজার ৯শ’ কোটি ডলার। ছয় বিলিয়ন ডলারের লক্ষ্য অর্জনের জন্য দুই বছরও হাতে নেই। তাহলে কি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণে বাস্তবতার চেয়ে আবেগ বেশি কাজ করেছে? এটা ঠিক যে, উচ্চ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা থাকলে রফতানি পণ্যের উৎপাদক ও সংশ্নিষ্টদের তা অর্জনে তাগিদ থাকে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের দুই বছর পর আমাদের রফতানি আয় ছিল ৩৭ কোটি ডলার। অর্থাৎ গত সাড়ে চার দশকে আমাদের রফতানি আয় বেড়েছে ১০০ গুণেরও বেশি। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে এ খাত থেকে আয় ছিল সাড়ে ১৫শ’ কোটি ডলার। সন্দেহ নেই, সীমিত রফতানি পণ্যের ‘বাস্কেট’ নিয়ে বাংলাদেশ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের গুরুত্বপূর্ণ এ খাতটিতে যথেষ্ট ভালো করছে। একসময় পাট-চামড়া-চা- এ তিনটি পণ্য ছিল রফতানি আয়ের উৎস। এরপর এলো পোশাক শিল্প, যা রীতিমতো বিপ্লব সাধন করেছে। এ খাতের এখনও সম্ভাবনা রয়েছে। তবে রফতানি পণ্য এবং একই সঙ্গে এর বাজার বহুমুখী করতে হলে বিশেষভাবে আরও কয়েকটি খাতে নজর দিতে হবে। যেমন- তথ্যপ্রযুক্তি, চামড়া, অলঙ্কার। রফতানিমুখী শিল্পের জন্য নিজস্ব কাঁচামাল ভাণ্ডার চাই, এ মতে বাংলাদেশ আটকে থাকেনি। পোশাক শিল্পের বিকাশ ঘটেছে অন্য দেশ থেকে বস্ত্র-সুতা-তুলা আমদানি করে। মেশিনও আমদানি করতে হচ্ছে। অন্যদিকে, তথ্যপ্রযুক্তির মতো খাতে ব্রেক-থ্রুর জন্য নজর প্রয়োজন মানবসম্পদের প্রতি। এ বিষয়টি গুরুত্ব পাচ্ছে ঠিকই, তবে প্রত্যাশা আরও। অন্যান্য খাতেও কর্মীদের দক্ষতা বাড়ানোর তাগিদ রয়েছে। একই সঙ্গে গুরুত্ব দিতে হবে অবকাঠামো উন্নয়নের প্রতি- সড়ক-রেলপথ, নৌ-বিমানবন্দর, বিদ্যুৎ, গ্যাস- ৬০ বিলিয়ন ডলারের লক্ষ্য অর্জন করতে হলে প্রতিটি খাতেই চাই বিপ্লব। নীতিনির্ধারকসহ সংশ্নিষ্টরা নিশ্চয়ই কাগুজে পরিকল্পনা ধরে বসে থাকবেন না।
৬০ বিলিয়ন ডলার যেন স্লোগান না থাকে
রফতানি খাত