Home Bangla Recent চামড়া বনাম তৈরি পোশাক- কেন পিছিয়ে চামড়া খাত?

চামড়া বনাম তৈরি পোশাক- কেন পিছিয়ে চামড়া খাত?

আশির দশকে যাত্রা শুরু করা তৈরি পোশাক শিল্প এখন দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান উৎস। মোট রপ্তানির আশি শতাংশের বেশি আসে শ্রমঘন এই শিল্প থেকে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৩ হাজার ৪৮৩ কোটি ডলারের রপ্তানি আয়ের মধ্যে তৈরি পোশাক থেকেই এসেছে প্রায় ২ হাজার ৮১৫ কোটি ডলার। তবে তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে যে পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়, তাতে স্থানীয় মূল্য সংযোজনের পরিমাণ খুব একটা বেশি নয়। বর্তমানে কিছু এক্সেসরিজ দেশে তৈরি হলেও অর্ধেকের বেশি চলে যায় পোশাক খাতের বিভিন্ন সামগ্রী আমদানিতে।  এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম চামড়াজাত শিল্প। এ শিল্পের প্রধান কাঁচামালের উত্স বাংলাদেশ। এ কারণে চামড়া ও চামড়াজাত শিল্পে স্থানীয় মূল্য সংযোজনের পরিমাণও অনেক বেশি। চামড়া শিল্পের জন্য কেমিক্যাল ছাড়া খুব বেশি সামগ্রী আমদানি করতে হয় না। এ কারণে চামড়া রপ্তানি থেকে নীট আয়ের পরিমাণও অনেক বেশি। বিশ্বে এই শিল্পের বাণিজ্যের পরিমাণ ১শ বিলিয়ন ডলার। অথচ এর মাত্র ১ শতাংশ যোগান দিচ্ছে বাংলাদেশ। গত অর্থবছরে এ খাত থেকে রপ্তানি আয় এসেছে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি। চলতি অর্থবছরে (২০১৭-১৮) জন্য লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৪০ কোটি ডলার।

নীট আয় বা স্থানীয় মূল্য সংযোজন অনেক বেশি হলেও বাস্তবতা হচ্ছে, গত ছয় দশকেরও বেশি সময়ে চামড়া শিল্প খুব একটা বিকশিত হয়নি। এক্ষেত্রে প্রধান বাধা ছিল পরিবেশগত ক্ষতি ও নেতিবাচক শ্রম পরিবেশ। এই দুই বাধার ফলে চাইলেও বাংলাদেশ উন্নত বিশ্বে চামড়া রপ্তানি বাড়াতে পারেনি। সাভারের চামড়াশিল্প নগরীতে ট্যানারি স্থানান্তর হওয়ায় এই বাধা আর থাকবে না। সম্প্রতি চামড়া শিল্পনগরী পরিদর্শন করে এ কথাই জানিয়ে দিয়েছেন জাতিসংঘের শিল্পখাত উন্নয়ন সংস্থার ( ইউনিডো) মহাপরিচালক লি ইয়ং। পরিবেশ সম্মত চামড়া শিল্পনগরীর প্রশংসাও করেছেন তিনি।

তৈরি পোশাক থেকে চামড়া শিল্পে আসা উদ্যোক্তারা বলছেন, তৈরি পোশাকের মত এই শিল্প এগিয়ে না যাওয়ার পিছনে বড় একটি কারণ ছিল দক্ষ উদ্যোক্তার অভাব। সরকারের সাবেক আমলা, সামরিক বাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা, প্রকৌশলী, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক থেকে শুরু করে উচ্চ শিক্ষিত একটি উদ্যোক্তা শ্রেণী শুরু থেকেই তৈরি পোশাকের সাথে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। তাদের ভবিষ্যত্ চিন্তা, সময়োপযোগী কর্মপরিকল্পনা, ব্যাংক ঋণের সহজলভ্যতা এবং সরকারের কাছ থেকে নীতি সহায়তা আদায় করে নিতে পারায় তরতর করে এগিয়ে গেছে তৈরি পোশাক শিল্প।

কিন্তু চামড়া শিল্প সেই ধরনের উদ্যোক্তা শ্রেণী পায়নি। অন্য ব্যবসার সাথে জড়িতরা আগ্রহ নিয়ে এই শিল্পে এগিয়ে আসেননি। নানা জটিলতার কথা চিন্তা করে ভবিষ্যত সম্ভাবনা থাকলেও তারা এগিয়ে আসেনি। তবে আশার কথা নতুন প্রজন্মের উদ্যোক্তারা যেভাবে এই শিল্পে এগিয়ে আসছে তাতে উজ্জ্বল সম্ভাবনা হাতছানি দিচ্ছে। আগামীতে এ খাতে আর দক্ষ উদ্যোক্তার অভাব হবে না। তবে প্রয়োজন পড়বে সরকারের নীতি সহায়তার। এক্ষেত্রে আর দেরি না করে চামড়া শিল্পকে কিভাবে বিকশিত করা হবে, সেজন্য কর্মপরিকল্পনা তৈরির তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

২০১৭ সালের জন্য চামড়াকে প্রোডাক্ট অব দি ইয়্যার (জাতীয় ভাবে বার্ষিক পণ্য) ঘোষণা করেছে। এতেই বোঝা যায় সরকারের নীতি নির্ধারকরা এই খাতকে কতটা গুরুত্ব দিয়েছেন। তবে বাস্তবতা ভিন্ন কথা বলে। ৩ বছরের সময়সীমা নিয়ে ২০০৩ সালে সাভারের চামড়া শিল্পনগরীর কাজ শুরু হলেও ১৪ বছরেও তা সম্পূর্ণ হয়নি। গ্যাস, বিদ্যুত্ সংকট কাটলেও সেখানকার রাস্তাঘাটের বেহাল দশা। কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার (সিইটিপি) পুরোপুরি চালু হয়নি। গড়ে ওঠেনি কঠিন বর্জ্যব্যবস্থাপনা। বর্জ্য ধলেশ্বরীতে চলে যাওয়ায় তৈরি হচ্ছে আরেকটি বুড়িগঙ্গা। শিল্পের চালিকা শক্তি শ্রমিকদের জন্য আবাসন থেকে শুরু করে কোন ধরনের সুযোগ সুবিধা তৈরি হয়নি চামড়া শিল্পনগরীতে।

২০২১ সালের মধ্যে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি করে ৫শ কোটি ডলার আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে হাজারীবাগে ট্যানারি স্থানান্তরের কারণে এই লক্ষ্যমাত্রা ৩শ কোটি ডলারের নামিয়ে আনা হয়েছে। অর্থাত্ আগামী ৪ বছরে চামড়া খাতে রপ্তানি বাড়াতে হবে তিনগুণ। বিদ্যমান সমস্যাগুলো সমাধানের পাশাপাশি এই লক্ষ্য অর্জন করতে হলে গবেষণার উপর জোর দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। সত্যিকার অর্থে এখনো চামড়া খাত নিয়ে সরকারি বেসরকারি পর্যায়ে কোন গবেষণাই হয়নি। এর পাশাপাশি দরকার ফ্যাশন ডিজাইনিং এর উপর জোর দেয়া। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চামড়া খাতে রপ্তানি বাড়লে এ খাত সংশ্লিষ্ট অন্যান্য শিল্পও বিকশিত হবে। বাড়বে কর্মসংস্থান, সমৃদ্ধ হবে দেশের পশু পালন। সবচেয়ে বড় কথা, রপ্তানি আয়ের প্রায় পুরোটাই দেশে থাকবে। এতে বৈদেশিক মুদ্রা মজুত শক্তিশালী হয়ে স্থিতিশীলতা বাড়বে দেশের অর্থনীতির।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here