Home বাংলা নিউজ রফতানি ও রেমিটেন্সে অশনি সংকেত: ব্রেক্সিট

রফতানি ও রেমিটেন্সে অশনি সংকেত: ব্রেক্সিট

রফতানি ও রেমিটেন্সে অশনি সংকেত: ব্রেক্সিট

পাউন্ডের দরপতনে বিনিময় মূল্য কমছে মার্কিন ডলারের। এতে বাংলাদেশের রফতানি ও রেমিটেন্স খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। তৈরি পোশাক খাতের ব্যবসায়ীরা এ নিয়ে উদ্বিগ্ন। পাশাপাশি কমছে সংশ্লিষ্ট দেশের রেমিটেন্স। জানা গেছে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যের বের হয়ে যাওয়ার ঘোষণায় দেশটির মুদ্রা পতনে বড় ধরনের ধাক্কা লেগেছে। সে কারণে ব্রিটিশ পাউন্ডের দাম অব্যাহতভাবে কমছে।

গত ২০ দিনে পাউন্ডের দাম কমেছে প্রায় ১১ শতাংশ। ১১৭ টাকার প্রতি পাউন্ডের দাম নেমে এসেছে ১০০ টাকায়। এতে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন দেশের রফতানিকারক ও রেমিটেন্স প্রেরণকারীরা। তবে লাভে আছে আমদানিকারকরা। বিভিন্ন ব্যাংক ও মানি এক্সচেঞ্জ হাউস ও রফতানিকারকদের কাছে মিলেছে এসব তথ্য। গত ২৩ জুন ইউরোপীয় জোটে ব্রিটেনের থাকা না-থাকা নিয়ে একটি গণভোট অনুষ্ঠিত হয়। সেই ভোটের ঐতিহাসিক রায় প্রকাশ পায় ২৪ জুন। ভোটে দেশটির বেশির ভাগ নাগরিক ইউরোপীয় জোটে না থাকার পক্ষে রায় দেন। সে থেকে অব্যাহত রয়েছে পাউন্ডের দরপতন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রফতানি খাতের জন্য এটি অশনি সংকেত। পাশাপাশি রেমিটেন্সেও নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ২২ থেকে ২৩ জুন ছিল প্রতি পাউন্ড ১১৬ থেকে ১১৭ টাকা। ২৩ জুনের গণভোটের রায়ে বিভক্তির বিষয়টি ২৪ জুন স্পষ্ট হওয়ায় সঙ্গে সঙ্গে ১১৭ টাকা থেকে পাউন্ডের দাম নেমে আসে ১১৫ টাকায়। রায় আসে শুক্রবার, ২৪ জুন। দিনটিতে ছুটি থাকায় বড় পতন ঘটেনি। পরদিন শনিবার, ২৫ জুন। এদিনও বাংলাদেশে ছুটি। তাই পতনের পরিমাণ অপরিবর্তিত থাকে। তবে বড় পতন ঘটে ২৬ জুন থেকে। এদিন এক লাফে পাউন্ডের দাম নেমে আসে ১০৬ টাকা ৪৪ পয়সায়। ২৭ জুন ১০৪ টাকা ২৩ পয়সা, ২৮ জুন ১০৩ টাকা ৬৬ পয়সা, ২৯ জুন ১০৩ টাকা ৬৮ পয়সা, ৩০ জুন ১০৪ টাকা ৩০ পয়সা। এরপর ১ জুলাই ১০৩ টাকা ৬৪ পয়সায় নেমে আসে। টানা ৯ দিন বন্ধ শেষে আবার গণনা শুরু হয়।

এবার ১০ ও ১১ জুলাই সবচেয়ে বেশি পতন হয় পাউন্ডের। ১০ জুলাই ১০০ টাকা ৭৯ পয়সা, ১১ জুলাই ১০০ টাকা ৭৬ পয়সায় নেমে আসে। এরপর চলে পাউন্ডের দরে কিছুটা ওঠানামা। ১২ জুলাই ১০১ টাকা ৭৫ পয়সা, ১৩ জুলাই ১০৩ টাকা ৪১ পয়সা ও ১৪ জুলাই পাউন্ডের দাম নেমে আসে ১০২ টাকা ৫৭ পয়সায়। জানতে চাইলে অগ্রণী ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, পাউন্ডের অব্যাহত দরপতনে রফতানি খাতে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। পাশাপাশি রেমিটেন্সেও ভাটা পড়তে পারে বলে মনে করেন তিনি। সোনালী ব্যাংকের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ২২ জুন প্রতি পাউন্ডের দর ছিল ১১৬ টাকা ৩৩ পয়সা। পতনের ধাক্কায় ২৬ জুন তা নেমে আসে ১০৮ টাকা ৫০ পয়সায়। একইভাবে ২৭ জুন ১০৬ টাকা ১৩ পয়সা, ২৮ জুন ১০৬ টাকা ১২ পয়সা ও ২৯ জুন ১০৫ টাকা ৫১ পয়সায় পাউন্ডের দর ওঠানামা করে। ১০ থেকে ১৪ জুলাই পর্যন্ত পাউন্ডের দর নেমে আসে ১০৪ টাকা ৩০ পয়সায়।

এ প্রসঙ্গে সোনালী ব্যাংকের ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্টের উপমহাব্যবস্থাপক বিশ্বনাথ পাল যুগান্তরকে বলেন, ২০ দিনে ব্রিটিশ পাউন্ডের প্রায় ১৩ শতাংশ মূল্যপতন হয়েছে। এতে স্বাভাবিকের তুলনায় রেমিটেন্স আহরণের পরিমাণ কমে যাবে। পাশাপাশি রফতানি খাত কিছুটা হলেও ঝুঁকিতে পড়তে পারে। একইভাবে বেসরকারি প্রাইম ব্যাংক ও এনসিসি ব্যাংকের তথ্যও প্রায় অভিন্ন। ব্যাংক দুটির তথ্যে দেখা যাচ্ছে, ২২ জুন প্রতি পাউন্ডের দর ১১৬ থেকে ১১৭ টাকা হলেও সর্বশেষ ১৪ জুলাই তা নেমে এসেছে ১০৩ থেকে ১০৫ টাকার ঘরে।

বাংলাদেশ রফতানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের (ইএবি) তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাজ্যে তিন বিলিয়ন ডলারের বেশি পোশাক রফতানি হয়। দেশটিতে সর্বোচ্চ সংখ্যক বাংলাদেশী প্রবাসী রয়েছেন। সে কারণে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ শাক-সবজি রফতানি হয়। এই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ইএবি সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী যুগান্তরকে বলেন, যুক্তরাজ্যে প্রায় সাড়ে তিন বিলিয়ন ডলারের পোশাক রফতানি হয়।

 

স্থায়ী-অস্থায়ী মিলে যে পরিমাণ বাংলাদেশী যুক্তরাজ্যে বসবাস করছেন তা এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ প্রবাসীর দেশ হিসেবে পরিচিত। সে কারণে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ মাছ-মাংস, শাক-সবজি রফতানি করা হয়। তিনি বলেন, প্রতিযোগিতার বাজারে আগে থেকে নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়ে দিন পার করছে রফতানিকারকরা। পাউন্ডের পতন নতুন চ্যালেঞ্জের মধ্যে ঠেলে দিল। পাউন্ডের অব্যাহত দরপতন রফতানি খাতের জন্য অশনি সংকেত বলে মনে করেন তিনি।

 

প্রায় অভিন্ন মত দেন অপর রফতানিকারক মোহাম্মদ হাতেম। বিকেএমইএ’র সাবেক এই জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি যুগান্তরকে বলেন, যুক্তরাজ্যের বিভক্তিতে প্রত্যক্ষ শিকার আমরা নই। তবে পরোক্ষভাবে ক্ষতির শিকার। কারণ পাউন্ডের সঙ্গে সব মুদ্রার সম্পর্ক রয়েছে। একটি মুদ্রার পতন ঘটলে অন্যগুলোতেও ধাক্কা লাগে। এর আগে আমরা ইউরোর ধাক্কা সইছিলাম। এখন এলো পাউন্ডের ধাক্কা। একের পর এক চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়ছে রফতানিকারকরা।