Home বাংলা নিউজ অবকাঠামো সংকটই রফতানির বড় বাধা: গোলটেবিল বৈঠকে উদ্যোক্তারা

অবকাঠামো সংকটই রফতানির বড় বাধা: গোলটেবিল বৈঠকে উদ্যোক্তারা

export

গ্যাসের অপ্রতুল সরবরাহ, বিদ্যুৎ সঞ্চালন ও বিতরণে সমস্যা, বন্দরের সক্ষমতার অভাবসহ অবকাঠামোর নানা সংকটকে রফতানির পথে প্রধান বাধা বলে মনে করছেন উদ্যোক্তারা। তারা বলেছেন, প্রতিযোগিতায় ভালোভাবে টিকে থাকতে হলে দ্রুত অবকাঠামোর দুর্বলতা দূর করতে হবে। পাশাপাশি দক্ষতা উন্নয়ন এবং পণ্য ও বাজার বৈচিত্র্যকরণের মতো বিষয়ে বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে। গতকাল শনিবার দৈনিক প্রথম আলো ও ক্রাউন সিমেন্ট আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে রফতানিকারক উদ্যোক্তারা এমন মতামত দেন। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকের বিষয় ছিল ‘রফতানির পথে বাধা ও উত্তরণের উপায়’।

গোলটেবিল বৈঠকে এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন বলেন, তৈরি পোশাক রফতানিতে সরকারের যেসব প্রণোদনা রয়েছে, তা যৌক্তিক। তবে অন্য খাতেও একই প্রণোদনা থাকা উচিত। শিল্পায়নের জন্য নিরবিচ্ছিন্ন, মানসম্মত ও যৌক্তিক মূল্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং গ্যাস সংকট নিরসনের উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদহারের পাশাপাশি অবকাঠামো সংকটকে রফতানি খাতের অন্যতম প্রতিবন্ধকতা বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য পেঁৗছাতে হলে চার থেকে সাড়ে চার ঘণ্টায় ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যেতে হবে। বর্তমানে অনেক ক্ষেত্রে চট্টগ্রাম পেঁৗছাতে ১৬-১৭ ঘণ্টা সময় লাগছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়লেও সঞ্চালন ও বিতরণে অনেক দুর্বলতা রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরে ডেলিভারিতে ৭ থেকে ৮ দিন সময় লাগে। রফতানি আয় যখন ৫০০ কোটি ডলার ছিল, তখন বন্দরের যে সক্ষমতা ছিল, এখন ৩৪০০ কোটি ডলারের সময়ও তাই আছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের (ডবিল্গউটিও) সেলের মহাপরিচালক শুভাশীষ বসু বলেন, বাংলাদেশের মোট রফতানির ৯২ শতাংশই আসে মাত্র ছয়টি পণ্য থেকে। আবার পণ্যের বাজারও সীমাবদ্ধ কয়েকটি দেশের মধ্যে। এ প্রবণতা ঝুঁকিপূর্ণ। তিনি বাংলাদেশি পণ্যের ব্রান্ড উন্নয়নের গুরুত্ব তুলে ধরেন। এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইএবি) সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী বলেন, জঙ্গি হামলার পর ক্রেতাদের কেউ কেউ এ ঘটনাকে বারবার উল্লেখ করে আরও কম দামে পোশাক কিনতে চাইছেন। তিনি বিভিন্ন প্রতিযোগী দেশে ডলারের ঊর্ধ্বমুখী ধারার বিপরীতে বাংলাদেশে এর পতনের তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরে বিনিময় হারজনিত ক্ষতি থেকে তাদের রক্ষার দাবি জানান।

বিকেএমইএর সাবেক সভাপতি ফজলুল হক বলেন, ২০২১ সালে ৫ হাজার কোটি ডলারের রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ছাড়া এ অর্জন সম্ভব নয়। তিনি বলেন, অবকাঠামো সংকটই রফতানির প্রধান বাধা। দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে হয়তো ১০ শতাংশ এগোনো যাবে। ৫০ বিলিয়ন ডলার লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে অবকাঠামো উন্নয়নেই বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান মাফরুহা সুলতানা বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজার এবং ৬টি পণ্যের ওপর দেশের রফতানি খাতের অতিনির্ভরশীলতা বিপজ্জনক। এ থেকে বেরিয়ে আসতে ইপিবি কাজ করছে। তবে পণ্যের বহুমুখীকরণের জন্য একসঙ্গে অনেকগুলো পণ্য নিয়ে কাজ করা সম্ভব হয় নয়। বিকেএমইএর সাবেক সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, গ্যাসের সংযোগ বন্ধ। যেসব কারখানা ঢাকার বাইরে যেতে চাচ্ছে, তাদের গ্যাসের লাইন স্থানান্তর করা হচ্ছে না।  বৈঠকটি সঞ্চালনা করেন প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আবদুল কাইয়ুম। আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জুট মিলস অ্যাসোসিয়েশনের সচিব আবদুল বারী খান, ক্রাউন সিমেন্টের নির্বাহী পরিচালক হাবিবুর রহমান মোল্লা ও দৈনিক সমকালের বিজনেস এডিটর জাকির হোসেন।