Home বাংলা নিউজ নথি জালিয়াতি: লঘু দণ্ডে বাড়ছে রাজস্ব ফাঁকির ঘটনা

নথি জালিয়াতি: লঘু দণ্ডে বাড়ছে রাজস্ব ফাঁকির ঘটনা

exports

নথি জালিয়াতি করে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি করা পণ্যে প্রতিনিয়ত রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে বেশকিছু অসাধু আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ও পণ্য খালাসের দায়িত্বে থাকা সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট। একইভাবে ভুয়া বিল-ভাউচার ও চালান তৈরি করে শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানি করা পণ্যও খোলাবাজারে বিক্রি করছে তারা। এসব জালিয়াতি ধরা পড়ার পরও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কড়া কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। অধিকাংশ ক্ষেত্রে নামমাত্র জরিমানা দিয়েই ছাড় পেয়ে যাচ্ছে তারা। লঘু দণ্ডে ছাড় পাওয়ার ফলে দিন দিন বাড়ছে রাজস্ব ফাঁকির ঘটনা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নথি জালিয়াতির ঘটনা প্রমাণের পর সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়াসহ লাইসেন্স বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে বিভিন্ন তদন্ত প্রতিবেদনে। কিন্তু অজানা কারণে লাইসেন্স বাতিলের সুপারিশ আমলে নিচ্ছে না শুল্ক কর্তৃপক্ষ। ফলে পরবর্তীতে আবারো জালিয়াতির সুযোগ পাচ্ছে অসাধু আমদানিকারকরা।

চট্টগ্রাম বন্ড কমিশনারেট সূত্রে জানা গেছে, নিয়ম লঙ্ঘন করে শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানি করা ২০ টন ডুপ্লেক্স বোর্ড খোলাবাজারে বিক্রি করে দেয় ‘মেসার্স জিএমসিপি করপোরেশন লিমিটেড’। অথচ প্রতিষ্ঠানটি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানের কাছে এসব পণ্য বিক্রি করা হয়েছে উল্লেখ করে চালানপত্র, মূসক-১১-এর কপি এবং ট্রাক চালানের নথি চট্টগ্রাম কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের কার্যালয়ে দাখিল করে। পরবর্তীতে শুল্ক কর্মকর্তারা এসব নথি খতিয়ে দেখে জালিয়াতির প্রমাণ পাওয়ায় প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। বন্ড কশিনারেটের মামলার তথ্যমতে, গত ২০ সেপ্টেম্বর বন্ড কমিশনারেটের শুল্ক কর্মকর্তারা সরেজমিন মেসার্স জিএমসিপি করপোরেশন লিমিটেডের কারখানা পরিদর্শন করে ২০ টন ডুপ্লেক্স কম পাওয়ায় কারণ দর্শানোর নোটিস দেয়। প্রতিষ্ঠানটি এসব পণ্য গাজীপুরের রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স পলিগন ফ্যাশন লিমিটেডের কাছে বিক্রি হয়েছে উল্লেখ করে চালানপত্র ও মূসক-১১ এবং ট্রাকের চালানকপি দাখিল করে। দুটি চালানপত্রে ১১ হাজার ২৭০ ডলার মূল্যের (৮ লাখ ৯০ হাজার টাকা) পণ্য ডেলিভারি দেয়া হয়েছে ডেল্টা ট্রান্সপোর্ট সার্ভিসের মাধ্যমে। চট্ট-মেট্রো-ট ১১০৭৮২ এবং সিলেট-ট ৫৭২৪ ট্রাকের চালানকপিও দাখিল করা হয়। পরবর্তীতে শুল্ক কর্মকর্তারা গাজীপুরের মেসার্স পলিগন ফ্যাশন লিমিটেড এবং ডেল্টা ট্রান্সপোর্ট লিমিটেডের সঙ্গে যোগাযোগ করে দাখিলকৃত কাগজপত্রের সত্যতা না পেয়ে মামলা করেন। সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে দাবি করা সাড়ে ৯ লাখ টাকার রাজস্ব (ফাঁকিকৃত রাজস্ব ৪ লাখ ৯৪ হাজার টাকা, জরিমানা ৪ লাখ এবং বিমোচন জরিমানা ৫০ হাজার টাকা) আদায় হয়েছে।

এ বিষয়ে কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের সহকারী কমিশনার আমীন মামুন বণিক বার্তাকে বলেন, ‘শুল্কমুক্ত সুবিধার অপব্যবহার করে বেশকিছু প্রতিষ্ঠান শুল্ক ফাঁকি দিচ্ছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে। এসব ঘটনায় ফাঁকিকৃত রাজস্ব আদায় ছাড়াও জরিমানা করা হয়। আর নথিপত্র জালিয়াতির প্রমাণ পাওয়া গেলে জরিমানার পরিমাণ বেশি করা হয়। তবে আইন অনুযায়ী সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে লাইসেন্স বাতিল করার বিধান থাকলেও প্রাথমিকভাবে আমরা তা করছি না। একই ঘটনা পুনরায় ঘটলে লাইসেন্স বাতিলসহ আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়ে দেয়া হয়েছে জিএমসিপি করপোরেশনকে।’সম্প্রতি চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজে ব্যাংক নথি ও আমদানি নথি জালিয়াতি করে উচ্চ শুল্কহারের প্রসাধনী পণ্য কম শুল্কহারের পণ্যের নামে পরিশোধে প্রমাণ পেয়েছেন শুল্ক কর্মকর্তারা। এসব চালানে মিথ্যা তথ্যের মাধ্যমে প্রসাধনী পণ্যের সাতটি চালান খালাস করে নিয়ে যায় ঢাকার পাঁচ আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান হোযায়ফা এন্টারপ্রাইজ, প্লানেট ইন্টারন্যাশনাল, রেজুয়ানা এন্টারপ্রাইজ, ন্যাশনাল ট্রেডিং এবং ইউনিফাইড ট্রেডিং পয়েন্ট। এর আগে চলতি বছরের শুরুর দিকে শেরপুরের ‘ইউনুস অটো রাইস মিল’, সর্দার এগ্রো প্রডাক্টস, মেসার্স এসএম ডিজাইন কোম্পানিসহ অর্ধশতাধিক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যাংক নথিসহ বিভিন্ন আমদানি নথি জালিয়াতির প্রমাণ পেলেও নামমাত্র জরিমানা দিয়েই ছাড় দেয়া হয়েছে তাদের। বেশকিছু তদন্ত প্রতিবেদনে এসব প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিলের সুপারিশ করা হলেও নামমাত্র জরিমানাতেই সীমাবদ্ধ থেকেছে কর্তৃপক্ষ।

এছাড়া গত ১৩ জানুয়ারি থাইল্যান্ড থেকে একটি মেশিন আমদানি চালানের আগামপত্র (বি/ই: ৫২২৯৩) দাখিল করে সর্দার এগ্রো প্রডাক্টস। পণ্যটি খালাসের দায়িত্বে ছিল চট্টগ্রামের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট মনির আহম্মেদ।  আমদানিকৃত পণ্যের বিপরীতে ন্যাশনাল ব্যাংকে ১ কোটি ১৫ লাখ টাকার এলসি (নং-০০০০০৯৫২১৫০২০০০১) খোলেন আমদানিকারক। অপেক্ষাকৃত কম শুল্কহার আছে, এমন একটি আমদানি পণ্যের নাম উল্লেখ করে নথি জাল করে প্রতিষ্ঠানটি। এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটিকে সহায়তা করে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট। গত বুধবার ব্যাংক নথি জালিয়াতির প্রমাণ পাওয়ার পর জড়িত রাজস্ব আদায়সহ প্রতিষ্ঠান এবং সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কাস্টমস কমিশনার বরাবর চিঠি দিলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ। এর আগে একইভাবে ব্যাংক নথি জালিয়াতি করে শেরপুরের ‘ইউনুস অটো রাইস মিল’ ২ কোটি টাকা মূল্যের একটি চালানে (বি/ই-৬৩৯৫২৩) মেশিন আমদানি করে। ফারমার্স ব্যাংকে (এলসি-০০০০৩৩০১১৫০২০০০১) নথি জালিয়াতি করে প্রতিষ্ঠানটি ৭০ লাখ টাকার রাজস্ব ফাঁকি দেয়। নথি জালিয়াতির অপরাধে জড়িত রাজস্বসহ ৮০ লাখ টাকা আদায় করা হয়েছে। লাইসেন্স বাতিলের সুপারিশ করা হলেও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ‘আবির ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড’কে মাত্র দেড় লাখ টাকা জরিমানা করেই ছাড় দেয়া হয়।