Home বাংলা নিউজ ১১১ পোশাক কারখানাকে সতর্ক করল বিজিএমইএ

১১১ পোশাক কারখানাকে সতর্ক করল বিজিএমইএ

ঝুঁকিপূর্ণ হলেও ত্রুটি সংস্কারে গাফিলতি

bgmea

চট্টগ্রামের আগ্রাবাদে পাঁচতলা ভবনে তিনটি পোশাক কারখানা—সাদাফ ফ্যাশনস, ডালিম টেক্সটাইল ও অ্যাঞ্জেলা ফ্যাশনস। ইউরোপীয় ক্রেতাদের জোট অ্যাকর্ড ২০১৪ সালের এপ্রিলের দিকে পরিদর্শন করে ভবনটির কাঠামোগত বেশ কিছু মারাত্মক ত্রুটি চিহ্নিত করে। ত্রুটিগুলো শ্রমিকের নিরাপত্তায় ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় কারখানাগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে রিভিউ প্যানেলে পাঠায় অ্যাকর্ড।

শ্রম মন্ত্রণালয়ের কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের (ডিআইএফই) নেতৃত্বাধীন রিভিউ প্যানেল কারখানার উৎপাদন কাজ চালু রাখার সিদ্ধান্ত দেয়। তবে ছয় সপ্তাহের মধ্যে ওই ভবনের ডিটেইল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যাসেসমেন্ট (ডিইএ) করতে বলা হয়। এ ছাড়া দ্রুত সময়ের মধ্যে ভবনের ছাদের ওপরের কংক্রিটের পানির ট্যাংক ভেঙে ফেলা, চতুর্থ তলার ভার কমানো, ভেতরের ভারী দেয়াল অপসারণসহ কিছু সংস্কারকাজ করতে নির্দেশ দেন রিভিউ প্যানেলের সদস্যরা।

এরপর দুই বছর কেটে যায়। গত বছর অধিদপ্তরের পরিদর্শকেরা সরেজমিন পরিদর্শন করে জানতে পারেন, কাজের কাজ কিছুই হয়নি। ঝুঁকি কমাতে যেসব ত্রুটি সংস্কারকাজ দ্রুত করতে বলা হয়েছিল, সেগুলোর অধিকাংশই করা হয়নি। অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, একাধিকবার তাগিদ দেওয়া হলেও কর্ণপাত করেনি কারখানা কর্তৃপক্ষ। ত্রুটি সংস্কারকাজ করেনি তারা।

এমন প্রেক্ষাপটে সাদাফ ফ্যাশনস, ডালিম টেক্সটাইল, অ্যাঞ্জেলা ফ্যাশনসসহ মোট ১১১ পোশাক কারখানাকে চিঠি দিয়ে সতর্ক করেছে তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। গত মাসের শেষ সপ্তাহে কারখানাগুলোর প্রতিটিকে আলাদা করে চিঠি পাঠায় বিজিএমইএ। চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘গত ১৬ জানুয়ারি অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শকের সঙ্গে বিজিএমইএর বৈঠক হয়। এতে সিদ্ধান্ত হয়েছে, এক মাসের মধ্যে সংস্কারকাজ শেষ না করলে সংশ্লিষ্ট কারখানার উৎপাদন বন্ধ করে দেবে অধিদপ্তর। আর এমনটি হলে বিজিএমইএ কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করবে না।’

বিষয়টি স্বীকার করে বিজিএমইএর সহসভাপতি মাহমুদ হাসান খান বলেন, ‘১১১ কারখানাকে সতর্ক চিঠি দিয়েছি আমরা। তবে ইতিমধ্যে তিন-চারটি কারখানা চিঠির জবাব দিয়েছে। তাতে কারখানাগুলো দাবি করেছে, সংস্কারকাজে তাদের অগ্রগতি আছে। প্রতি সপ্তাহে আমরা অধিদপ্তরকে এ-সংক্রান্ত অগ্রগতি জানাব।’ তিনি আরও বলেন, ‘৩০ দিনের মধ্যে কারখানাগুলোকে সংস্কারকাজে অগ্রগতি দেখাতে হবে। অন্যথায় অধিদপ্তর যদি কোনো ব্যর্থ কারখানা বন্ধ করতে চায়, আমরা আপত্তি করব না।’

রানা প্লাজা ধসের পর তৈরি পোশাক কারখানার কর্মপরিবেশ উন্নয়নের জন্য ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার ক্রেতাদের দুটি আলাদা জোট অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্স গঠিত হয়। জোট দুটি প্রায় ২ হাজার কারখানা পরিদর্শন করে বৈদ্যুতিক, অগ্নি ও ভবনের কাঠামোগত ত্রুটি চিহ্নিত করেছে। এ ছাড়া জাতীয় ত্রিপক্ষীয় কর্মপরিকল্পনার (এনটিএপি) অধীনে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার সহায়তায় ডিআইএফই ১ হাজার ৫৪৯ কারখানা পরিদর্শন করেছে।

পরিদর্শনে ঝুঁকির পরিমাণ বেশি পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট কারখানা তাৎক্ষণিকভাবে বন্ধ হবে কি না, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে রিভিউ প্যানেলে পাঠানো হয়। এমন ১৫০টি কারখানা রিভিউ প্যানেলে পাঠিয়েছে অ্যাকর্ড, অ্যালায়েন্স ও ডিআইএফই। এর মধ্যে ৩৯ কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ৪২ কারখানা আংশিক বন্ধ ও আংশিক চালু আছে। ৬২ কারখানা বিভিন্ন শর্তে চালু রাখার অনুমতি দিয়েছে রিভিউ প্যানেল। ডিআইএফইর নেতৃত্বে গঠিত রিভিউ প্যানেলের সদস্য হিসেবে আছেন বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বুয়েট, অ্যাকর্ড, অ্যালায়েন্স ও ইন্ডাস্ট্রিঅলের প্রতিনিধি।

জানতে চাইলে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক (আইজি) সৈয়দ আহম্মদ বলেন, ‘রিভিউ প্যানেল যেসব ত্রুটি অনতিবিলম্বে সংস্কার করতে বলেছিল, অধিকাংশ কারখানা সেগুলো করেনি। গত বছর বিষয়টি নজরে আসার পর আমরা অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে কারখানাগুলোকে সতর্ক করে চিঠি দিয়েছি। একই সঙ্গে বিজিএমইএর নেতাদের বলেছি, ত্রুটি সংস্কারে ব্যবস্থা না নিলে কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হবে।’ কারখানাগুলো কতটা ঝুঁকিপূর্ণ—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বেশি ঝুঁকি ছিল বলেই রিভিউ প্যানেলে গেছে।

এত দিন ব্যবস্থা না নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে বিজিএমইএর সহসভাপতি মাহমুদ হাসান খান বলেন, ‘তিনটি আলাদা সংস্থা কারখানা পরিদর্শন করেছে। তাই কারখানাগুলো সংস্কারকাজ করছে কি না, সেটা তারাই বলতে পারবে। সে জন্য অধিদপ্তর যখন আমাদের তালিকা পাঠিয়ে বলছে তারা কাজ করছে না, তখন আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। সতর্ক করে চিঠি দিয়েছি।’

জানতে চাইলে বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘যেসব কারখানা সংস্কারকাজে অগ্রগতি করেছে বা যারা কারখানা স্থানান্তর করবে তাদের কথা ভিন্ন। তবে যারা গাফিলতি করছে তাদের বিরুদ্ধে আমাদের পরিষ্কার অবস্থান—ডিআইএফই কঠোর ব্যবস্থা নিলে আমরা কিছু বলব না।’