Home বাংলা নিউজ পাঁচ বছরে পাটশিল্প বস্ত্র খাতের সমান হবে

পাঁচ বছরে পাটশিল্প বস্ত্র খাতের সমান হবে

bangladesh jute products: india moves to impose anti-dumping duty

পাঁচ বছরে পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানি আয় তৈরি পোশাক থেকে আয়ের সমান হবে বলে জানিয়েছে পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম। তিনি বলেন, বিগত দিনে ষড়যন্ত্র করে পাটকে ধ্বংস করা হয়েছে। বিদেশী স্বার্থ রক্ষায় দেশের পাটকল বন্ধ করা হয়েছিল; পাটের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে দুর্নীতিবাজে পরিণত করা হয়েছিল; পাটকল বিক্রির মাধ্যমে সরকারী সম্পদ লুটপাট করা হয়েছিল এবং কৃষকদের হতাশ করার মধ্য দিয়ে দেশের পাট চাষকে ধ্বংস করা হয়েছিল।

শনিবার সকালে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে অর্থনৈতিক ইকোনোমিক ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত ‘অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে পাট খাতের সম্ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। ইআরএফ’র সভাপতি সাইফ ইসলাম দিলালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বিজিএমসির চেয়ারম্যান ড. মাহামুদুল হাসান, ইআরএফ’র সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমান, পাট খাতের উদ্যোক্তা রেজাউল করিম, রাশেদুল হাসান প্রমুখ। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন সিপিডি’র গবেষণা পরিচালক খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।

পাটের সোনালি দিন ফিরিয়ে আনতে নানামুখী উদ্যোগ নেয়া হয়েছে এ কারণে লোকসান কমতে শুরু করেছে। চলতি বছরে লোকসান ২০০ কোটি টাকা কমে লোকসানের পরিমাণ দাঁড়াবে ৪০০ কোটি টাকা। পাটের জনপ্রিয়তা আবার আগের স্থানে ফিরে আসছে। মেলাগুলোতে মানুষ উপছে পড়ছে। পাট থেকে নানা প্রকার পণ্য কেনা শুরু করেছে। পাটজাত পণ্যের উপযোগিতা, পরিবেশসম্মত ও বাহারি ডিজাইনের কারণে মানুষ পাটের দিকে ঝুঁকছে। দেশের মানুষের এই মনোযোগকে লক্ষ্য রেখে পাটের বহুমুখী ব্যবহার বাড়াতে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।

তিনি আরও বলেন, দেশে ২৯২ কোটি পাটের বস্তা প্রয়োজন। প্রয়োজনের অর্ধেক বস্তার ব্যবহার করা সম্ভব হলে দেশে উৎপাদিত পাটের ৩০ শতাংশ অভ্যন্তরীণ কাজে লাগানো যাবে। এটা সম্ভব হলে বৈদেশিক বাজারের পাশাপাশি পাটশিল্পকে অভ্যন্তরীণ বাজার নির্ভরশীল শিল্পে পরিণত করা সম্ভব হবে।

রাষ্ট্রায়ত্ত পাটগুলোতে শ্রমিক-কর্মচারীদের বেশি মজুরি দিতে হয় উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এটা যৌক্তিক ব্যয়। এর জন্য আমাদের মাথাব্যথা নেই। তবে পাট ক্রয়, পরিবহন ও পাটকল ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে যে দুর্নীতি হয় তা আমরা কমাতে চাই। ইতোমধ্যে কমিয়েছি। দেশে বর্তমান পাটবীজের চাহিদা ৬ লাখ মেট্রিক টন। এর মধ্যে দেশে উৎপাদিত হয় মাত্র ১০ শতাংশ। আগামীতে দেশে পাটবীজ উৎপাদনের হার বৃদ্ধি করা হবে বলেও উল্লেখ করেন পাট প্রতিমন্ত্রী।

পাট নিয়ে সরকারের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি আন্তর্জাতিক বাজারের প্রতিযোগিতায় সক্ষম করার দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিণত করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান সিপিডি’র গবেষণা পরিচালক খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। তিনি বলেন, প্রতিযোগী দেশের তুলনায় পাটজাত পণ্যের উৎপাদন খরচ বেশি। দেশের মেশিনপত্র মেরামত ও নতুনিকারণে ব্যয় বেশি; বেশি দামে খারাপ মানের পাট ক্রয় করা হয়; কারিগরি দক্ষতার প্রয়োগ নেই এবং মেশিন সঠিকভাবে পরিচর্চা করা হয় না। এ সব কারণে উৎপাদন খরচ বেশি হয়। এ সব সমস্যা সমাধান না করে অব্যাহতভাবে অর্থ সহায়তা দিয়ে গেলে পাটের উন্নতি হবে না বলেও মনে করেন এই গবেষক। বিজেএমসি চেয়ারম্যান মোঃ মাহমুদুল হাসান বলেন, পাটের সঙ্গে আমাদের নাড়ির সম্পর্ক। অর্থনৈতিক উন্নয়নে পাটের সম্পর্ক রয়েছে। সরকারের নানা পদক্ষেপে পাট শিল্পের পুনর্জাগরণ শুরু হয়েছে। পাটের অফুরন্ত সম্ভাবনা কাজে লাগাতে হবে। কিছুটা অব্যবস্থাপনা, অবহেলা আছে। পাটকে নগদ সহায়তা দিয়ে বিকাশ অব্যাহত রাখতে হবে। শিপার্স কাউন্সিলের চেয়ারম্যান রেজাউল করিম বলেন, ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার সরকার আসার পর পাট নিয়ে কিছু কাজ হয়েছিল। এরপর ২০০১ সালে আসা সরকারের সময়ে এ খাতে কোন কাজ হয়নি। ২০০৯ সালে আবার শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর পাটের পুনর্জাগরণ শুরু হয়েছে। পাটের অভ্যন্তরীণ বাজার বৃদ্ধি পাচ্ছে। পাট অধিদফতরের মহাপরিচালক মোসলেম উদ্দিন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাটকে সীমাহীন ভালবাসেন। পাট আইন-২০১৭ পাস করেছেন তিনি। নতুন পাট আইনে পাটের বহুমুখীকরণ ও অভ্যন্তরীণ পাটের বাজার বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। এখন পাট নীতিমালা করা হচ্ছে। বহুমুখী পাটপণ্য রফতানিকারক ও ক্রিয়েশন প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাশেদুল করিম মুন্না বলেন, ৫০ বছরেও স্পেশালাইজড পাট মিল তৈরি হয়নি। অথচ ৯০ দশক থেকে ভারতে স্পেশালাইজড মিল ও ছোট উদ্যোক্তাদের সরকারীভাবে সাপোর্ট দেয়া হচ্ছে। এ জায়গাতে সরকারের যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতা পেলে পাটজাত পণ্য পুনরুদ্ধার সম্ভব। প্রতিযোগিতায় উঠে আসতে বিনিয়োগ করার সময় রিসার্চ ফান্ড ও প্রোডাক্টস ফান্ড রাখতে হবে।