Home Bangla Recent টি-শার্ট ও প্যান্ট রপ্তানি কমেছে

টি-শার্ট ও প্যান্ট রপ্তানি কমেছে

প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে সোয়েটার

দুই বছর ধরে বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য ‘প্যান্ট’। এর পরেই আছে ‘টি-শার্ট’। কিন্তু বিশ্ববাজারে মন্দা আর বাংলাদেশে কমপ্লাইয়েন্স নিয়ে জটিলতার কারণে প্রধান এই দুই রপ্তানি পণ্যেও পড়েছে নেতিবাচক ছাপ। আগের অর্থবছরে যেখানে শুধু প্যান্ট রপ্তানি করে ৬ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি হয়েছিল সেখানে এবার রপ্তানি হয়েছে ৬ দশমিক ০২ বিলিয়ন ডলার। আগের বছরের চেয়ে প্যান্ট রপ্তানি কমেছে ৪.৬৩ শতাংশ। একই অবস্থা টি-শার্টেও। সমাপ্ত অর্থবছরে টি-শার্ট রপ্তানি হয়েছে ৫ দশমিক ৮৬ বিলিয়ন ডলার, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ২৫৬ মিলিয়ন ডলার কম। প্রধান দুটি রপ্তানি পণ্যের এই নেতিবাচক প্রবণতার প্রভাব পড়েছে দেশের জাতীয় রপ্তানিতে। যেখানে ৩৪ দশমিক ৮৩ বিলিয়ন রপ্তানি করে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫.৮৫ শতাংশ পিছিয়ে ছিল জাতীয় রপ্তানি। কারণ মোট জাতীয় রপ্তানির ৩৪ শতাংশই এসেছে এ দুটি পণ্য থেকে।

এ ছাড়া জ্যাকেট ও শার্ট রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে যথাক্রমে ৩ দশমিক ৫৫ বিলিয়ন ডলার এবং ২ দশমিক ১০ বিলিয়ন ডলার। এ দুটি পণ্যও আগের অর্থবছর থেকে ৬.০২ এবং ৯ শতাংশ। তবে সোয়েটার রপ্তানিতে ঠিকই ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি অর্জন হয়েছে। এ খাতে গত বছরের চেয়ে ১৭৯ মিলিয়ন ডলার রপ্তানি বেড়ে সমাপ্ত অর্থবছরে আয় হয়েছে ৩ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন ডলার।

তবে রপ্তানি কমলেও এ দুটি পণ্য রপ্তানি করেই আয় হয়েছে ৯৭ হাজার কোটি টাকা (প্রতি ডলার ৮১.৬০ টাকা)। সমাপ্ত অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হওয়া প্রায় ১৩৯টি আইটেমের মধ্যে এ দুটি পণ্য থেকেই আয় হয়েছে এক তৃতীয়াংশের বেশি বৈদেশিক মুদ্রা। যদিও টি-শার্ট থেকে এবার যে আয় হয়েছে তা গত দুই বছরের মধ্যে কম। ২০১৪-১৫ অর্থবছরেও টি-শার্ট থেকে আয় হয়েছিল ৬ দশমিক ০৬ বিলিয়ন ডলার।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) সূত্র জানায়, নিট ও ওভেন খাত মিলিয়ে প্যান্ট রপ্তানিতে এই অর্জন হয়েছে। ইপিবি এবং বিজিএমইএ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে সর্বমোট ৩৪ দশমিক ৮৩ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এর মধ্যে প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাকশিল্পের অবদান ২৮ দশমিক ১৪ বিলিয়ন ডলার। জাতীয় রপ্তানিতে পোশাকশিল্পের অবদান ৮০.৮১ শতাংশের বেশি।

বাংলাদেশের রপ্তানি খাতের প্রধান পণ্য হয়ে উঠেছে মানুষের নিত্য ব্যবহার্য প্যান্ট আর টি-শার্ট। কর্মসংস্থান এবং বিনিয়োগে যেমন এগিয়ে তেমনি রপ্তানি খাতকেও সামনে থেকে পথ দেখাচ্ছে এ দুটি পণ্য।

সংশ্লিষ্টরা জানান, দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশ থেকে অর্ডার দিয়ে প্যান্ট নিচ্ছে গ্যাপ, মার্কস অ্যান্ড স্পেন্সার, জারা, এইচঅ্যান্ডএম, সিঅ্যান্ডএ, চার্লস ভোগলে, র্যাংলার, ডকার্স, ওয়ালমার্ট, টম টেইলর ও ওল্ডনেভির মতো বিশ্বমানের ব্র্যান্ডগুলো। ইপিবিতে নিবন্ধিত দেশের ২৮০টি কারখানা থেকে এই পণ্য বিদেশে রপ্তানি হয়েছে।

জানা গেছে, বাংলাদেশ থেকে রপ্তানীকৃত প্যান্টের প্রধান বাজার ইউরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্র। ২০১২ সাল থেকেই যুক্তরাষ্ট্রে ছেলেদের প্যান্টের বাজার বাংলাদেশের দখলে। এর আগে এই বাজারটির দখল ছিল মেক্সিকোর কাছে। ফলে আর্থিক মূল্যেও যুক্তরাষ্ট্রে সর্বোচ্চ প্যান্ট রপ্তানি হয় বাংলাদেশ থেকে। চীন, ভিয়েতনাম ও মেক্সিকোকে পেছনে ফেলে শীর্ষে উঠে আসে বাংলাদেশ। তবে এবার সেই বাজারেও রপ্তানিতে সার্বিকভাবে কিছুটা নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

এ ছাড়া সস্তাশ্রম আর কম উৎপাদন খরচের কারণে এইচঅ্যান্ডএম, গ্যাপ, ওয়ালমার্ট, জারার মতো বিশ্বখ্যাত চেইনশপগুলো যেমন আছে তেমনি বিশ্বের নামি পোশাক ব্র্যান্ড জর্জিও আরমানি, হুগো বস, টমি হিলফিগার, বেন হিউসেন ও কেলভিন ক্লেইনও বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর উল্লেখযোগ্যসংখ্যক টি-শার্ট আমদানি করে।

প্যান্ট ও শার্ট কম রপ্তানি হওয়া প্রসঙ্গে বিজিএমইএর সাবেক প্রথম সহসভাপতি ও ইস্টার্ন অ্যাপারেলস গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাছির উদ্দিন চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বাংলাদেশের প্যান্টের বাজার বিশ্ব দরবারে অনেক আগে থেকেই শক্ত অবস্থানে। বিশেষ করে বৈচিত্র্যপূর্ণ এবং ফ্যাশনেবল অর্ডারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রতি আস্থা বেশি। ’

তিনি বলেন, গার্মেন্ট খাতে দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতার কারণে এই আস্থার অবস্থান সৃষ্টি হয়েছে। তবে গত অর্থবছরে রপ্তানি কম হওয়ার মূল কারণ বিশ্ববাজারে চাহিদা কম থাকা। এ ছাড়া কমপ্লাইয়েন্সগত কারণে অনেক কারখানা বন্ধ হয়েছে আবার অনেক কারখানা অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ করতে গিয়ে উৎপাদন বন্ধ রেখেছিল। স্বাভাবিকভাবে ক্যাপাসিটি কমেছে। এ প্রভাব পড়েছে রপ্তানিতে।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবসায়িক সফরের অভিজ্ঞতা থেকে তিনি বলেন, ‘ভারত পোশাকশিল্পে ভালো প্রবৃদ্ধি করছে। চীন, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, পাকিস্তান যেভাবে এগোচ্ছে তাতে বাজার অনেক উন্মুক্ত হয়ে গেছে। কিন্তু সেভাবে আমাদের ক্যাপাসিটি বাড়ছে না। ’

পাশাপাশি তিনি ব্রাজিল, রাশিয়া, জাপানের মতো বাজারগুলোর দিকে আরো বেশি নজর দেওয়ার জন্য সরকার, বিজিএমইএ এবং এই ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here