Home Bangla Recent দুই বছরে তৈরি পোশাক খাতে কর্মসংস্থান প্রবৃদ্ধি শূন্য

দুই বছরে তৈরি পোশাক খাতে কর্মসংস্থান প্রবৃদ্ধি শূন্য

তৈরি পোশাক খাতে নতুন করে শ্রমিকদের কর্মসংস্থান বাড়ছে না। নতুন নতুন মেশিন সংযোজনের ফলে উৎপাদন ও রফতানি বাড়লেও সুযোগ কমছে শ্রমিকদের। এতে গত দুই বছরে এ খাতে কর্মসংস্থানের প্রবৃদ্ধি ছিল শূন্য শতাংশ। আর গত ২৬ বছরে এ খাতে প্রতি মিলিয়ন ডলার রফতানি আয়ের বিপরীতে শ্রমিকের কর্মসংস্থান কমেছে ৭৪ শতাংশ।

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই) প্রকাশিত পলিসি ইনসাইট ম্যাগাজিনের উদ্বোধনী সংখ্যার এক নিবন্ধে এ তথ্য উঠে এসেছে। পিআরআই’র গবেষণা পরিচালক মোহাম্মদ এ রাজ্জাক ও সিনিয়র গবেষক নুজহাত তাসনিম দৃষ্টি যৌথভাবে এ নিবন্ধ লিখেছেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বৈশ্বিক বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে আরও দ্রুত অটোমেশনের দিকে যাচ্ছে দেশের গার্মেন্ট কারখানাগুলো। আর তৈরি পোশাক খাতে দ্রুত অটোমেশনের কারণেই এমনটি হচ্ছে। আগামীতে এ খাতে কর্মসংস্থানের সংকট আরও বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে।

অটোমেশন, কর্মসংস্থান ও শিল্পায়ন শীর্ষক নিবন্ধে গবেষকরা বলেন, দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিতেই কর্মসংস্থানবিহীন প্রবৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে। একই অবস্থা দেখা গেছে সর্ববৃহৎ রফতানিমুখী তৈরি পোশাক খাতেও। ২০১০ সালে এ খাতের রফতানি আয় ছিল সাড়ে ১২ বিলিয়ন ডলার, যা ২০১৬ সালে হয়েছে ২৮ বিলিয়ন। ছয় বছরে এ খাত থেকে রফতানি আয় দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে, কিন্তু এ খাতের কর্মসংস্থান সে হারে বাড়েনি। ২০১০ থেকে ২০১৪ সাল নাগাদ এ খাতের কর্মসংস্থান চার লাখের মতো বাড়লেও শেষ দুই বছরে একেবারেই বাড়েনি। গবেষণায় বলা হয়, ২০১৫-১৬ ও ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতে কর্মসংস্থানের সম্প্রসারণ ক্ষমতা (ইলাসটিসিটি) ছিল শূন্য।

এ প্রসঙ্গে গবেষক মোহাম্মদ এ রাজ্জাক বলেন, ‘সাধারণত শিল্পায়নের মাধ্যমে কর্মসংস্থান হবে বলে আশা করা হয়, কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে জিডিপিতে ম্যানুফ্যাকচারিং খাতের অবদান কমছে এবং এ খাতেও কর্মসংস্থানের হার কমে যাচ্ছে। আধুনিক মেশিনপত্রের ব্যবহারের কারণে কর্মসংস্থানে এ প্রভাব সৃষ্টি হয়েছে। তবে প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশে এখনও অটোমেশন কম হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এ অবস্থায় নীতি প্রণয়নে কোনো ধরনের দ্বিধা করার সুযোগ নেই। দেশের উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হলে প্রযুক্তির প্রভাবকে ভয় পাওয়া যাবে না। প্রযুক্তি আসলে দক্ষ কর্মীদের সুযোগ সৃষ্টি করছে, আর অদক্ষ কর্মীদের ঝুঁকিতে ফেলছে। তাই আমাদের অটোমেশন বন্ধ না করে কর্মীদের দক্ষতাবৃদ্ধির দিকে মনোযোগ দিতে হবে।’

গবেষণার তথ্যমতে, চীন ও ভিয়েতনামে প্রতি মিলিয়ন ডলার রফতানির বিপরীতে মাত্র ৪৮ শ্রমিক কাজ করে। ভারতে ৫৯ জনের শ্রমের বিনিময়ে এক মিলিয়ন ডলার আসছে। সেখানে বাংলাদেশে প্রতি মিলিয়ন ডলারের বিপরীতে ১৪২ শ্রমিক কাজ করছে। আর শ্রমিকপ্রতি প্রযুক্তি ব্যয়ের ক্ষেত্রে দেখা গেছে বাংলাদেশে প্রত্যেক শ্রমিক গড়ে ১১৮ ডলার মূল্যের মেশিন ব্যবহার করেন, যেখানে ভিয়েতনামে প্রত্যেক শ্রমিকের বিপরীতে প্রযুক্তির ব্যবহার হচ্ছে এক হাজার ২০৫ ডলারের।

গবেষণায় বলা হয়, ১৯৯০ সালে তৈরি পোশাক রফতানিতে প্রতি মিলিয়ন ডলার আয় করতে ৫৪৫ শ্রমিক কাজ করত; কিন্তু ২০১৬ সালে এসে দেখা যাচ্ছে মাত্র ১৪২ শ্রমিকের হাত ধরেই রফতানি করা যাচ্ছে এক মিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ অটোমেশনের কারণে এ খাতে গত ২৬ বছরে প্রতি মিলিয়ন ডলার রফতানির বিপরীতে ৭৪ শতাংশ বা ৪০৩ শ্রমিকের চাকরির সুযোগ কমেছে।

এদিকে পোশাক খাত ছাড়া অন্যান্য শিল্প খাতেও প্রবৃদ্ধির বিপরীতে কর্মসংস্থান কমেছে বলে তথ্য দেওয়া হয়েছে। বলা হয়, ১৯৯০-পরবর্তী সময়ে জাতীয় প্রবৃদ্ধিতে শিল্প খাতের অবদান ১৩ শতাংশ থেকে বেড়ে ২১ শতাংশ হয়েছে। গত পাঁচ বছরে (২০১৩-১৫) শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১০ শতাংশের বেশি, যেখানে দেশের মোট জিডিপির প্রবৃদ্ধি হয়েছে সাড়ে ছয় শতাংশের মতো। কিন্তু এ সময়ে শিল্প খাতে কর্মসংস্থান ৯৫ লাখ থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ৮৬ লাখে। অর্থাৎ গত পাঁচ বছরে শিল্প খাতে কর্মসংস্থান কমেছে ১০ লাখ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here