টানা শ্রমিক বিক্ষোভের প্রেক্ষাপটে দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের সবের্শষ মজুরি কাঠামোর ছয়টি গ্রেড সংশোধন করে মোট বেতন ১৫ টাকা থেকে ৭৮৬ টাকা বাড়িয়েছে সরকার। রোববার শ্রম মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে মালিক-শ্রমিক ও প্রশাসনের প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত ত্রিপক্ষীয় কমিটির বৈঠক শেষে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এই সিদ্ধান্ত জানান। তিনি বলেন, প্রথম গ্রেডের একজন কমীর্ সব মিলিয়ে ১৮ হাজার ২৫৭ টাকা বেতন পাবেন। ২০১৩ সালের বেতন কাঠামোতে এই গ্রেডের মজুরি ছিল ১৩ হাজার টাকা। ২০১৮ সালে নতুন মজুরি কাঠামোর গেজেটে তা ১৭ হাজার ৫১০ টাকা করা হয়েছিল।
দ্বিতীয় গ্রেডের সবের্মাট বেতন ধরা হয়েছে ১৫ হাজার ৪১৬ টাকা। ২০১৩ সালের বেতন কাঠামোতে এই গ্রেডের বেতন ১০ হাজার ৯০০ টাকা এবং ২০১৮ সালের গেজেটে তা ১৪ হাজার ৬৩০ টাকা করা হয়েছিল।
তৃতীয় গ্রেডের সবের্মাট বেতন ঠিক হয়েছে ৯ হাজার ৮৪৫ টাকা, যা ২০১৩ সালের বেতন কাঠামোতে ৬ হাজার ৮০৫ টাকা এবং ২০১৮ সালের গেজেটে ৯ হাজার ৮৪৫ টাকা করা হয়েছিল।
চতুথর্ গ্রেডের সবের্মাট বেতন ধরা হয়েছে ৯ হাজার ৩৪৭ টাকা। ২০১৩ সালের বেতন কাঠামোতে এই গ্রেডের বেতন ৬ হাজার ৪২০ টাকা ছিল। ২০১৮ সালের নতুন কাঠামোর করা হয়েছিল ৯ হাজার ২৪৫ টাকা।
পঞ্চম গ্রেডে সবের্মাট বেতন ঠিক হয়েছে ৮ হাজার ৮৭৫ টাকা, যা ২০১৩ সালের বেতন কাঠামোতে ৬ হাজার ৪২ টাকা এবং ২০১৮ সালের গেজেটে ৮ হাজার ৮৭৫ টাকা ছিল।
ষষ্ঠ গ্রেডের সবের্মাট বেতন ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৪২০ টাকা। ২০১৩ সালের বেতন কাঠামোতে তা ছিল ৫ হাজার ৬৭৮। আর ২০১৮ সালে মজুরি কাঠামোর গেজেটে তা বাড়িয়ে ৮ হাজার ৪০৫ টাকা করা হয়েছিল।
সপ্তম গ্রেডের মজুরি সব মিলিয়ে আট হাজার টাকাই রাখা হয়েছে। ২০১৩ সালের কাঠামোতে সবির্নম্ন গ্রেডের বেতন ছিল ৫ হাজার ৩০০ টাকা।
টিপু মুনশি বলেন, সংশোধিত এই কাঠামো ২০১৮ সালের ১ ডিসেম্বর থেকেই কাযর্কর ধরা হবে। বধির্ত অংশের টাকা ফেব্রæয়ারির বেতনের সঙ্গে সমন্বয় করা হবে।
আগামী সাত দিনের মধ্যে সংশোধিত কাঠামোর গেজেট প্রকাশ করা হবে জানিয়ে শ্রমিকদের কাজে ফেরার আহŸান জানান বাণিজ্যমন্ত্রী, যিনি নিজেও গামের্ন্টস খাতের একজন উদ্যোক্তা।
তিনি বলেন, শ্রমিকদের অধিকাংশই ভাঙচুর চায় না। কাজ করতে চায়। আমি আশা করব, তারা সবাই শান্তিপূণর্ভাবে কাজে যোগ দেবেন।
বৈঠকে উপস্থিত শ্রমিক পক্ষের প্রতিনিধি গামের্ন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি আমিরুল হক আমিনও সংশোধিত মজুরি কাঠামোকে স্বাগত জানিয়ে শ্রমিকদের কাজে ফেরার আহŸান জানান।
তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি আট হাজার টাকা নিধার্রণ করে গত ২৫ নভেম্বর গেজেট প্রকাশ করে সরকার। ডিসেম্বরের ১ তারিখ থেকে তা কাযর্কর করার নিদের্শনা দেয়া হয় সেখানে।
ওই মজুরি কাঠামোর কয়েকটি গ্রেডে বেতন কমে যাওয়ার অভিযোগ জানিয়ে গত ৬ জানুয়ারি থেকে ঢাকা ও আশপাশের গামের্ন্ট অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে বিক্ষোভ দেখাচ্ছে পোশাক শ্রমিকরা। অনেক কারখানায় নিধাির্রত সময়ে নতুন মজুরি কাঠামো বস্তবায়ন হয়নি বলেও শ্রমিকদের অভিযোগ রয়েছে।
শ্রমিকদের আন্দোলতের প্রেক্ষিতে গত ৯ জানুয়ারি শ্রম সচিবকে প্রধান করে ১২ সদস্যের পযাের্লাচনা কমিটি করে শ্রম মন্ত্রণালয়। সেখানে মালিক পক্ষের পঁাচজন, শ্রমিক পক্ষের পঁাচজন ছাড়াও বাণিজ্য সচিবকে সদস্য করা হয়।
পরদিন ওই কমিটির প্রথম বৈঠক শেষে শ্রম সচিব আফরোজা খান বলেন, নতুন কাঠামোর সাতটি গ্রেডের মধ্যে ৩, ৪ ও ৫ নম্বর গ্রেড নিয়ে শ্রমিকদের আপত্তি তারা আমলে নিয়েছেন এবং সেগুলো পযাের্লাচনা করে তারা সমন্বয় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
আন্দোলনকারীদের অভিযোগ ছিল, ২০১৩ সালে যখন সবের্শষ বেতন বাড়ানো হয়, তখন তৃতীয় গ্রেডে মূল বেতন হয় ৪ হাজার ৭৫ টাকা। বছরে ৫ শতাংশ হারে বেতন বৃদ্ধির পর ওই গ্রেডের একজন শ্রমিকের মূল বেতন এখন ৫ হাজার ২০৪ টাকা হওয়ার কথা। আর নতুন কাঠামোতে তৃতীয় গ্রেডের মূল বেতন ঘোষণা করা হয়েছে ৫ হাজার ১৬০ টাকা।
তাদের এই হিসাবে তৃতীয় গ্রেডে বেতন কমেছে ৪৪ টাকা; একইভাবে চতুথর্ গ্রেডের মূল বেতন ৭৯ টাকা এবং পঞ্চম গ্রেডে ১৬৪ টাকা বেড়েছে। অথচ সপ্তম গ্রেডে নতুন শ্রমিকদের বেতন বেড়েছে ২ হাজার ৭০০ টাকা।
রোববার পযাের্লাচনা কমিটির বৈঠক শেষে ঘোষিত কাঠামোতে দেখা যায়, সংশোধনে সবচেয়ে বেশি বেতন বেড়েছে দ্বিতীয় গ্রেডে। ডিসেম্বরে ঘোষিত গেজেটের তুলনায় এই গ্রেডের মূল বেতন বেড়েছে ৭৮৬ টাকা। আর প্রথম গ্রেডে বেতন বেড়েছে ৭৪৭ টাকা।
যে তিনটি গ্রেড নিয়ে শ্রমিকদের সবচেয়ে বেশি আপত্তি ছিল, সেই ৩, ৪ ও ৫ নম্বর গ্রেডে ডিসেম্বরের গেজেটের তুলনায় বেতন বেড়েছে যথাক্রমে ২০, ১০২ ও ২৫৫ টাকা। এছাড়া ষষ্ঠ গ্রেডে ডিসেম্বরের গেজেটের তুলনায় ১৫ টাকা বেতন বেড়েছে।
তিনটির বদলে ছয়টি গ্রেড পযাের্লাচনার কারণ ব্যাখ্যা করে বাণিজ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ১০ তারিখে যখন আলোচনা হয়েছিল তখন শুধু ৩, ৪, ও ৫ নম্বর গ্রেড নিয়ে আলোচনার করার জন্য বলা হয়েছিল। কিন্তু আজ আমরা মালিক-শ্রমিক উভয়পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে বললাম যে ১ থেকে ৫ পযর্ন্ত করব, তাহলে ৬ কেন বাদ যাবে। এজন্য আমরা ছয়টি গ্রেড সমন্বয় করে দিয়েছি।
বৈঠক শেষে বেতন কাঠামো সংশোধনের প্রস্তাবে মালিক ও শ্রমিকপক্ষের প্রতিনিধিরা স্বাক্ষর করেন। শ্রম ও কমর্সংস্থান মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুন্নুজান সুফিয়ানের সভাপতিত্বে এ বৈঠকে শ্রম ও কমর্সংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব আফরোজা খানসহ মালিক ও শ্রমিক প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
