Home বাংলা নিউজ বন্ধ হচ্ছে বিক্রয়কেন্দ্র, ব্যবসা কমবে কতটুকু

বন্ধ হচ্ছে বিক্রয়কেন্দ্র, ব্যবসা কমবে কতটুকু

সুইডিশ ফ্যাশন ব্র্যান্ড এইচঅ্যান্ডএম আগামী বছরের মধ্যে তাদের ২৫০টি বিক্রয়কেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গত সপ্তাহে এইচঅ্যান্ডএম এই ঘোষণা দিলেও গত জুনেই স্পেনের খুচরা বিক্রেতা ব্র্যান্ড জারা বিশ্বজুড়ে ১ হাজার ২০০ বিক্রয়কেন্দ্র বন্ধের কথা জানায়। আর গত জুলাইয়ে যুক্তরাষ্ট্রের টেইলরড ব্র্যান্ড ৫০০ বিক্রয়কেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দেয়। করোনাভাইরাসের কারণে খুচরা বিক্রিতে ধস নামায় বিশ্বের বড় বড় ব্র্যান্ড তাদের বিক্রয়কেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। ঘটনার এখানেই শেষ নয়, করোনার ধাক্কায় ১১৮ বছরের পুরোনো মার্কিন খুচরা বিক্রেতা ব্র্যান্ড জেসি পেনি নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণার জন্য আবেদন করেছে। জেসি পেনি যুক্তরাষ্ট্রে ৮৫০টির বেশি স্থানে পোশাক, প্রসাধনসামগ্রী ও গয়না বিক্রি করে। জেসি পেনির মতো একই পথে হাঁটছে সেঞ্চুরি টোয়েন্টি ওয়ান, স্টেইন মার্ট, লর্ড অ্যান্ড টেইলর, মুজি ইউএসএসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। তৈরি পোশাকের বিশ্বখ্যাত এসব ব্র্যান্ড ও ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানের বিক্রয়কেন্দ্র বন্ধ ও দেউলিয়া ঘোষণার প্রক্রিয়া শুরু করায় বাংলাদেশের পোশাকের ব্যবসা কতটুকু কমবে, সে বিষয়ে কয়েকজন শিল্প উদ্যোক্তার সঙ্গে কথা হয়েছে। তাঁরা বলছেন, সাময়িকভাবে কিছুটা নেতিবাচক প্রভাব পড়লেও দীর্ঘ মেয়াদে কোনো সমস্যা হবে না। কারণ, বিজ্ঞাপন প্রতিবছরই ব্র্যান্ড ও ক্রেতাপ্রতিষ্ঠান তাদের লোকসানি বিক্রয়কেন্দ্র বন্ধ করে। করোনার কারণে একসঙ্গে বেশি বিক্রয়কেন্দ্র বন্ধের ঘোষণা আসায় সেটি সবার চোখে পড়ছে। তবে অনলাইন বিক্রি বেড়ে যাওয়ার কারণেও অনেক ব্র্যান্ড ও ক্রেতাপ্রতিষ্ঠান বিক্রয়কেন্দ্র বন্ধের সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। জানতে চাইলে ডেনিম এক্সপার্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তাফিজ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, বিক্রয়কেন্দ্র বন্ধের কারণে ব্যবসায় কোনো প্রভাব পড়বে না। কারণ, কয়েক বছর ধরে অনলাইন বিক্রি বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্র্যান্ড ও ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানগুলোর কিছু বিক্রয়কেন্দ্র বন্ধের পরিকল্পনা ছিল। করোনায় সেই প্রক্রিয়া দ্রুত হয়েছে। বিক্রয়কেন্দ্র বন্ধ হওয়ায় বরং লাভ হবে প্রতিষ্ঠানগুলোর। কারণ, একটি বিক্রয়কেন্দ্রের ব্যয়ের সিংহভাগই হচ্ছে দোকানভাড়া ও কর্মীদের বেতন।বিজ্ঞাপন বিক্রয়কেন্দ্র বন্ধে এখনো কোনো প্রভাব না পড়লেও করোনায় বড় রকমের বিপর্যয়ে পড়েছে দেশের তৈরি পোশাক খাত। করোনা ছড়িয়ে পড়লে সংক্রমণ রোধে লকডাউন জারি করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের অনেক দেশ। দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। তাতে গত মার্চে একের পর এক ক্রয়াদেশ বাতিল ও স্থগিতাদেশ আসতে থাকে। সব মিলিয়ে ৩১৮ কোটি ডলারের ক্রয়াদেশ বাতিল ও স্থগিত হয়। তাতে মালিকেরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। সরকার রপ্তানিমুখী শ্রমিকদের মজুরি দেওয়ার জন্য পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে। সেই তহবিল থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০ কারখানামালিক ২ শতাংশ সেবা মাশুলে ঋণ নিয়ে ৩ মাসের মজুরি দিয়েছেন। পরে জুলাই মাসের মজুরি দেওয়ার জন্যও ঋণ পান তাঁরা। এদিকে করোনার প্রথম ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে শুরু করেছে পোশাক খাত। বাতিল ও স্থগিত হওয়া ক্রয়াদেশের পণ্যও রপ্তানি হয়েছে। নতুন ক্রয়াদেশও আসছে। তাতে টানা সাত মাস রপ্তানি কমার পর গত আগস্ট থেকে বাড়ছে। সর্বশেষ গত সেপ্টেম্বরে রপ্তানি হয়েছে ২৪১ কোটি ডলারের পোশাক, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩ দশমিক ০৯ শতাংশ বেশি।বিজ্ঞাপন বিকেএমইএর সাবেক সভাপতি ফজলুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘বর্তমানে আমরা টিকে থাকার সংগ্রাম করছি। আমার নিজের কারখানা ১৫-২০ শতাংশ কম সক্ষমতায় চলছে। অনেক কারখানার পরিস্থিতি আরও খারাপ।’ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বিক্রয়কেন্দ্র বন্ধ হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ভালো সংবাদ নয়। তাতে সাময়িকভাবে রপ্তানি কমার আশঙ্কা রয়েছে। তবে দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা হবে না। ফজলুল হক বলেন, ‘করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে ইউরোপে নতুন করে লকডাউন দেওয়ার কথা শোনা যাচ্ছে। যদিও আগের মতো কড়াকড়ি হয়তো থাকবে না। ফলে আরও কিছুদিন ব্যবসা নিম্নমুখী থাকতে পারে। করোনার কারণে আমাদের দেশে যেমন কারখানা বন্ধ হচ্ছে, তেমনি অন্যান্য দেশেও হচ্ছে। তবে দীর্ঘ মেয়াদে ব্যবসায় টিকে থাকতে আমাদের সক্ষমতা কীভাবে বাড়ানো যায়, সেটি নিয়ে কাজ করতে হবে। নতুন নতুন বাজারে পণ্য রপ্তানির সুযোগ ধরতে হবে।’ হিমায়িত খাদ্যের রপ্তানি আয় বাড়াতে কয়েক বছর ধরে দেশে উচ্চফলনশীল জাতের ভেনামি চিংড়ির চাষ নিয়ে তোড়জোড় চলছে। গত বছরের সেপ্টেম্বরে বেসরকারি সংস্থা সুশীলন ও এমইউসি ফুডস অনুমতি পেয়েও খুলনার পাইকগাছায় ভেনামির পরীক্ষামূলক চাষ শুরু করতে পারেনি। সে জন্য কবে নাগাদ দেশে চিংড়ির এই উচ্চফলনশীল জাতের চাষ শুরু করা যাবে, তা নিয়ে রয়েছে অনিশ্চয়তা। চট্টগ্রামের অ্যাগ্রি বিজনেস এন্টারপ্রাইজকে কক্সবাজারে পরীক্ষামূলকভাবে ভেনামি চিংড়ি চাষ করতে গত রোববার অনুমতি দিয়েছে মৎস্য অধিদপ্তর। প্রতিষ্ঠানটি অধিদপ্তরের অনুমতি নিয়ে দেশের বাইরে থেকে ভেনামির পোনা আমদানি করবে। তারপর অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএফআরআই) পরীক্ষাগারে প্রয়োজনীয় রোগজীবাণু পরীক্ষা শেষে চাষ কার্যক্রম শুরু হবে। উদ্যোক্তারা জানান, গলদা ও বাগদা চিংড়ির চাষ বছরে একবারের (চাষের সময় মারা গেলে দুবার) বেশি করা যায় না। আর ভেনামি চাষ করা যায় বছরে তিনবার। সাধারণ পুকুরে প্রতি হেক্টরে ৩০০-৪০০ কেজি বাগদা চিংড়ি উৎপাদন করা যায়। অন্যদিকে একই পরিমাণ জমিতে সাত-আট হাজার কেজি ভেনামি চিংড়ি উৎপাদন সম্ভব। ভারতে ভেনামি চিংড়ির পরীক্ষামূলক চাষ থেকে বাণিজ্যিক উৎপাদনে যেতে পাঁচ বছর সময় লেগেছিল। বাংলাদেশে তিন বছরের মধ্যে সম্ভব। তবে পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে—এমন যুক্তিতে দীর্ঘদিন ভেনামি চাষে উৎসাহ বা অনুমতি কোনোটাই দেয়নি মৎস্য অধিদপ্তর। গত বছর অনুমতি পেয়েও ভেনামির চাষ শুরু করতে না পারার কারণ জানতে চাইলে সুশীলনের প্রধান নির্বাহী মোস্তফা নুরুজ্জামান গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভেনামির পরীক্ষামূলক চাষের জন্য আমরা ছয়টি পুকুর প্রস্তুত করেছিলাম। তবে গত মৌসুমে প্রচুর বৃষ্টিপাতের কারণে পুকুরে পানিতে প্রয়োজনীয় লবণাক্ততা ছিল না। সে কারণে পোনা আমদানির প্রক্রিয়া থেকে পিছিয়ে যাই আমরা। তবে আশা করছি, সামনের ফেব্রুয়ারিতে পোনা আমদানি করে চাষ শুরু করতে পারব।’ বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএফইএ) সভাপতি কাজী বেলায়েত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘পানিতে প্রয়োজনীয় লবণাক্ততা না থাকায় গত মৌসুমে ভেনামির পরীক্ষামূলক চাষ শুরু করা যায়নি। করোনার কারণেও পিছিয়ে গেছি আমরা। তবে আশা করছি, খুলনা ও কক্সবাজারে আগামী ফেব্রুয়ারিতে একসঙ্গে পরীক্ষামূলক চাষ শুরু করা যাবে।’ তিনি বলেন, ভেনামির পরীক্ষামূলক চাষের প্রতিটি ধাপে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের অনুমতি নিতে হচ্ছে। সে কারণে পুরো প্রক্রিয়া শ্লথগতিতে এগোচ্ছে। বিএফএফইএ সূত্রে জানা গেছে, দেশে প্রায় পৌনে তিন লাখ হেক্টর জমিতে চিংড়ি চাষ হয়। তবে দিন দিন রপ্তানির পাশাপাশি চিংড়ির উৎপাদনও কমেছে। যেমন গত ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৩৪ হাজার ৭৩৩ মেট্রিক টন বাগদা ও ৬ হাজার ৫০৩ মেট্রিক টন গলদা চিংড়ি উৎপাদিত হয়। গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাগদা চিংড়ি উৎপাদন কমে ২৪ হাজার ৩৯৬ মেট্রিক টনে নেমেছে। আর গলদা চিংড়ি উৎপাদন কমে হয়েছে ৫ হাজার ১৪৬ মেট্রিক টন। অন্যদিকে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৫৫ কোটি ডলারের হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানি হয়, যা পরের অর্থবছরে কমে ৫১ কোটি ডলারে নামে। এর পরের চার অর্থবছরও ধারাবাহিকভাবে চিংড়ি রপ্তানি কমেছে। সর্বশেষ ২০১৮-১৯ অর্থবছরে হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানি হয়েছে মাত্র ৩৩ কোটি ডলারের। বিএফএফইএর সভাপতি কাজী বেলায়েত হোসেন বলেন, ভালোই ক্রয়াদেশ আসা শুরু করেছিল। তবে ইউরোপে করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ আসার আশঙ্কা থাকায় ক্রেতারা ক্রয়াদেশ দিতে কিছুটা চিন্তাভাবনা করছেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here