Home বাংলা নিউজ প্রভাব পড়বে না দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে

প্রভাব পড়বে না দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন-পরবর্তী ক্ষমতায় যে দলই আসুক না কেন, দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে এর প্রভাব পড়বে না বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। তাঁরা মনে করেন, দেশটির সরকার একটি দীর্ঘমেয়াদি এবং নির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করে। আর যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে বাংলাদেশ এই মুহূর্তে যা পেতে পারে, তা হলো দেশটির বাজারে অগ্রাধিকার বাণিজ্য সুবিধা (জিএসপি)। গতকাল সোমবার দেশের ব্যবসায়ীরা যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন-পরবর্তী প্রভাব নিয়ে এমন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স ইন বাংলাদেশের (অ্যামচেম) ২০১৯ সালের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, দেশটির বাজারে ৩৮তম পণ্য সরবরাহকারী দেশ বাংলাদেশ। এই সময় বাংলাদেশ পণ্য রপ্তানি করেছে ৬৭০ কোটি ডলার। ২০১৮ সালের চেয়ে এই আয় ৯.৫ শতাংশ বেশি। বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হয় তৈরি পোশাক। ৪১০ কোটি ডলারের ওভেন পোশাক এবং নিট পোশাক ১৬০ কোটি ডলার। এ ছাড়া রয়েছে কৃষিপণ্য, চা, খাদ্য, ফল ও শাকসবজি। অন্যদিকে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২০১৯ সালে আমদানি করে ২৩০ কোটি ডলারের পণ্য।  অ্যামচেমের সভাপতি সৈয়দ এরশাদ আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আগে ডেমোক্রেটিক সরকারের সঙ্গে আমাদের যে সম্পর্ক ছিল, বর্তমান রিপাবলিকান সরকার আসার পর পরিবর্তনের তেমন প্রভাব পড়েনি। বিল ক্লিনটন ও ওবামা সরকারের সময়ও একই অবস্থা ছিল।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্র একটি বড় ট্রেডিং পার্টনার। তৈরি পোশাক খাতের শুরুর দিকে বড় রপ্তানি বাজার ছিল দেশটি। এখন পর্যন্ত তৈরি পোশাক খাতের সবচেয়ে বড় একক বাজার যুক্তরাষ্ট্র। এমনকি বিদেশি বিনিয়োগেও তারাই সবচেয়ে বড় দেশ। বাণিজ্যেও বাংলাদেশ যা আমদানি করে, এর চেয়ে দ্বিগুণ রপ্তানি করে।’ বাণিজ্য বিশ্লেষকরা বলেন, ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কো-অপারেশন  ফ্রেমওয়ার্ক অ্যাগ্রিমেন্ট (টিকফা) বাংলাদেশের বাণিজ্য নিয়ে দর-কষাকষির বড় একটি প্ল্যাটফর্ম। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ লাভবান হয়েছে। এর মাধ্যমে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য নিয়ে উভয় দেশ আলোচনা করতে পারে। ফলে বাংলাদেশ এখন ইন্টারন্যাশনাল প্রপার্টি অ্যাক্ট (আইপিআর) বোঝে। বাংলাদেশ লেবার কান্ট্রি হিসেবে উন্নতি করেছে। ব্যবসায় এখন এসব সুবিধা কাজে লাগছে। তবে জিএসপি নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে তাঁরা বলেন, টিকফার মাধ্যমে আলোচনা করে বাংলাদেশ শুল্ককাঠামো কমিয়ে আনতে পারে। এটা কমালেই অনেক লাভবান হবে দেশ। নতুন সরকার এলেও জিএসপি নিয়ে তেমন সুবিধা হবে বলে মনে হয় না। এ ছাড়া বাংলাদেশ এখন মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হচ্ছে। এই সময় জিএসপি নিয়ে বাংলাদেশেরও তেমন একটা আগ্রহ নেই। অবকাঠামো দুর্বলতার কারণে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিদেশি বিনিয়োগকারীদের তেমন সাড়া নেই উল্লেখ করে অ্যামচেম সভাপতি এরশাদ আহমেদ বলেন, ‘সর্বশেষ ২০১৯ সালের তথ্য অনুযায়ী দেশে যুক্তরাষ্ট্রের মোট বিনিয়োগ ৪৯ কোটি ৩০ লাখ ডলার। ২০১৮ সাল থেকে ৩.৭ শতাংশ কমেছে। এ ছাড়া সরবরাহ লাইনে অবকাঠামোও অপর্যাপ্ত। অন্যদিকে এখন অবকাঠমো উন্নয়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেই। বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল করলেও এখানে কিভাবে সমন্বয় হবে, এর কোনো পরিকল্পনা নেই। বিমানবন্দরে স্ক্যানার নেই। সব স্ক্যানার নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। তাই কুকুর দিয়ে পণ্য চেক করাতে  হয়।’ বিনিয়োগে বড় বাধা অবকাঠামো ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘পুরনো কাস্টমস আইনে পরিবর্তন আনতে হবে। শিল্প, বাণিজ্য ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়হীনতা দূর করতে হবে। কাস্টম অটোমেশন হচ্ছে না। এ ছাড়া হয়রানি বন্ধ করতে হবে। এটা বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে ভুল বার্তা দেয়।’ এফবিসিসিআইয়ের সহসভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য সাড়ে আট বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। এ ছাড়া এই মুহূর্তে বাংলাদেশে আসা প্রবাসী আয়ের ক্ষেত্রেও মধ্যপ্রাচ্যের সৌদি আরবের পরেই যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান। দেশটির বাজারে জিএসপি না পেলেও পোশাক খাতের একক বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র।’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here