Home বাংলা নিউজ মহামারীকালে মাঝে বাড়লেও রপ্তানি আয়ে ফের ধাক্কা

মহামারীকালে মাঝে বাড়লেও রপ্তানি আয়ে ফের ধাক্কা

করোনাভাইরাস মহামারীতে গত এপ্রিলে রপ্তানি আয় তলানিতে পৌঁছলেও এরপর ধীরে ধীরে বাড়ছিল, তবে অক্টোবরে এসে আবার ধাক্কা লেগেছে।

ইউরোপ-আমেরিকায় সংক্রমণের যে দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে, তার প্রভাবেই রপ্তানি আয় হোঁচট খেয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। সদ্য সমাপ্ত অক্টোবর মাসে গত বছরের অক্টোবরের চেয়ে রপ্তানি আয় কমেছে ৪ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় কমেছে ৬ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। এই মাসে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ ২৯৪ কোটি ৭৮ লাখ ডলার আয় করেছে। গত বছরের অক্টোবরে আয় ছিল ৩০৭ কোটি ৩২ লাখ ডলার। আর এবার লক্ষ্য ধরা ছিল ৩১৩ কোটি ৭০ লাখ ডলার। মহামারীতে বিশ্বের অর্থনীতি স্থবির হয়ে পড়ায় গত এপ্রিলে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় মাত্র ৫২ কোটি ডলারে নেমে এসেছিল। পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছিল মাত্র ৩৬ কোটি ডলার। বিধি-নিষেধ শিথিলে কারখানা খোলার পর মে মাসে রপ্তানি আয় কিছুটা বাড়ে, জুনে তার চেয়ে অনেক বাড়ে। এরপর চলতি ২০২০২১ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসেও সেই ইতিবাচক ধারা অব্যাহত ছিল। জুলাইয়ে সার্বিক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল দশমিক ৫৯ শতাংশ। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেড়েছিল ১৩ দশমিক ৪ শতাংশ। জুলাই মাসের ওই আয়ের মধ্য দিয়ে সাত মাস পর রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধিতে ফিরে আসে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় মাস অগাস্টে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৪ দশমিক ৩২ শতাংশ। সেপ্টেম্বরে প্রবৃদ্ধি হয় ৩ দশমিক ৫৩ শতাংশ। প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি এই তিন মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি আয় দেশে আসে। কিন্তু চতুর্থ মাস অক্টোবরে এসে ফের ধাক্কা দেখে বিচলিত হয়ে পড়েছেন রপ্তানিকারকরা; ভাবনায় রয়েছেন অর্থনীতিবিদরাও। পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রপ্তানি আয় ঘুঁরে দাঁড়াতে শুরু করেছিল। মনে হচ্ছিল ধাক্কা কেটে যাবে। কিন্তু ইউরোপ, আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে করোনাভাইরাসের ‘সেকেন্ড ওয়েভ’ শুরু হওয়ায় সেটা আর হচ্ছে না।” শীতের শুরুতে সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের পর ইউরোপের বিভিন্ন দেশ আবারও লকডাউনসহ বিধিনিষেধের কড়াকড়ি ফিরিয়েছে। আগামী কয়েক মাস রপ্তানি আয়ে এই নেতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকবে বলে ধারণা করছেন আহসান মনসুর। দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত পোশাক শিল্প মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা ভেবেছিলাম, ২৫ ডিসেম্বরের বড় দিনকে সামনে রেখে আমরা পুরোপুরি ঘুঁরে দাঁড়াব। কিন্তু এখন আর সেটা সম্ভব হচ্ছে না। “সেকেন্ড ওয়েভ আমাদের সব হিসাব-নিকাশ ওলটপালট করে দিয়েছে। বিভিন্ন দেশে নতুন করে লকডাউন শুরু হয়েছে। ৩ নভেম্বরের নির্বাচনের পর যুক্তরাষ্ট্রে কী হবে কে জানে? আশঙ্কা করা হচ্ছে, কঠোর লকডাউন শুরু হবে।” জুলাই, অগাস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে যেভাবে রপ্তানি আদেশ পেয়েছিলেন, তা এখন পাচ্ছেন না বলে জানান এভিন্স গ্রুপের চেয়ারম্যান পারভেজ। “সবমিলিয়ে আগামী কয়েক মাস খরাই যাবে বলে মনে হচ্ছে।” নিট পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ’র সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেমও বলেন, “ডিসেম্বর পর্যন্ত এই নেতিবাচক প্রবৃদ্ধিই হবে বলে মনে হচ্ছে।” রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) সোমবার রপ্তানি আয়ের হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) বিভিন্ন পণ্য রপ্তনি করে বাংলাদেশ এক হাজার ২৮৪ কোটি ৪৬ লাখ ৪০ হাজার (১২.৮৪ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছে। এই চার মাসে লক্ষ্যমাত্রা ধরা ছিল এক হাজার ২৭৯ কোটি ৬০ লাখ ডলার। গত ২০১৯-২০ অর্থবছরের একই সময়ে এই আয়ের পরিমাণ ছিল এক হাজার ২৭২ কোটি ১২ লাখ ডলার। এ হিসাবে জুলাই-অক্টোবর সময়ে গত বছরের একই সময়ের চেয়ে রপ্তানি আয় বেড়েছে শূন্য দশমিক ৯৭ শতাংশ। আর লক্ষ্যের চেয়ে আয় বেড়েছে শূন্য দশমিক ৩৮ শতাংশ। দেশের বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র চট্টগ্রাম বন্দর। ছবি: সুমন বাবু জুলাই-অক্টোবর সময়ে তৈরি পোশাক রপ্তানি কমেছে ১ দশমিক ২ শতাংশ। অর্থাৎ গত বছরের এই চার মাসের চেয়ে চলতি বছরের চার মাসে ১ দশমিক ২ শতাংশ রপ্তানি আয় কম এসেছে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় কমেছে দশমিক ৮৯ শতাংশ। জুলাই-অক্টোবর নিট পোশাক রপ্তানি ৪ দশমিক ৭৬ শতাংশ বাড়লেও উভেন পোশাক রপ্তানি কমেছে ৭ দশমিক ৭৬ শতাংশ। লক্ষ্যের চেয়ে নিট পোশাক রপ্তানি ১১ দশমিক ৩২ শতাংশ বেড়েছে। তবে উভেন রপ্তানি কমেছে ১২ দশমিক ৮৩ শতাংশ। এই চার মাসে এক হাজার ৫৪কোটি ৪২ লাখ ডলার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে এক হাজার ৪৫ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। গত বছরের একই সময়ে আয় হয়েছিল এক হাজার ৫৭ কোটি ৭৪ লাখ ডলার। জুলাই-অক্টোবর সময়ে তৈরি পোশাকের মধ্যে নিট পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ৫৮০ কোটি ১৮লাখ ডলার। অপরদিকে উভেন পোশাক রপ্তানি করে আয় হয়েছে ৪৬৪ কোটি ৮২ লাখ ডলার। ইপিবির তথ্যে দেখা যায়, এই চার মাসে মোট রপ্তানি আয়ের ৮১ দশমিক ৩৬ শতাংশ এসেছে তৈরি পোশাক খাত থেকে। আহসান মনসুর বলেন, “এখানে একটি বিষয় কিন্তু আমাদের সবার মনে রাখতে হবে। কোভিড-১৯ এর প্রভাব শুরু হওয়ার আগে থেকেই কিন্তু আমাদের রপ্তানি আয়ে খারাপ পরিস্থিতি ছিল। প্রতি মাসেই প্রবৃদ্ধি কমছিল। “চার মাসের হিসাবে ১ শতাংশের মতো প্রবৃদ্ধি আছে। এই মহামারীর সময় প্রবৃদ্ধি থাকাটাও একটা বড় বিষয়।” জুলাই-অক্টোবর সময়ে ৪৩ কোটি ৮৮ লাখ ডলারের পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩৯ দশমিক ৫২ শতাংশ বেশি। আর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেড়েছে ২০ দশমিক ৪৭ শতাংশ। গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ ৮৮ কোটি ২৩ লাখ ডলার আয় করেছে, যা ছিল আগের ২০১৮-১৯ অর্থবছরের চেয়ে ৮ দশমিক ১০ শতাংশ বেশি। মহামারীকালে ওষুধ রপ্তানি বেড়েছে ২০ শতাংশ। কৃষি পণ্য রপ্তানি বেড়েছে দশমিক ৩৭ শতাংশ। হ্যান্ডিক্রাফট রপ্তানি বেড়েছে ৪৮ শতাংশের মতো। হিমায়িত মাছ রপ্তানি বেড়েছে ৫ দশমিক ৪৫ শতাংশ। তবে চামড়া এবং চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি কমেছে ১০ দশমিক ৬৩ শতাংশ। স্পেশালাইজড টেক্সটাইল রপ্তানি কমেছে ২ দশমিক ২ শতাংশ। করোনাভাইরাস মহামারীর এই সময়ে চলতি অর্থবছরে ৪৮ বিলিয়ন (৪ হাজার ৮০০) মার্কিন ডলারের পণ্য ও সেবা রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করেছে সরকার, যা গত অর্থবছরের রপ্তানি আয়ের চেয়ে ১৯ দশমিক ৭৯ শতাংশ বেশি। গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ ৩ হাজার ৩৬৭ কোটি ৪০ লাখ (৩৩.৬৭ বিলিয়ন) ডলার আয় করে, যা ছিল আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৭ শতাংশ কম। আর লক্ষ্যের চেয়ে আয় কম ছিল ২৬ শতাংশ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here