Home বাংলা নিউজ শ্রম আইন সংশোধনে আন্তর্জাতিক চাপ

শ্রম আইন সংশোধনে আন্তর্জাতিক চাপ

ইউরোপীয় ইউনিয়নের জিএসপি সুবিধা ধরে রাখতে সরকার ফের শ্রম আইন সংশোধন করতে যাচ্ছে। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্প্রতি এ বিষয়ে এক প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। এতে ১৫ সদস্যের একটি ত্রিপক্ষীয় কমিটি গঠনের কথা বলা হয়েছে। তবে খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সরকার যেহেতু ফের শ্রম আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে, তারপর বিধিমালা করা হোক। কারণ বিধিমালা আইনের ওপর নির্ভরশীল। আইন কিভাবে বাস্তবায়িত হবে তার বিবরণী হলো বিধিমালা। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা আইএলওর সাবেক কর্মকর্তা ড. উত্তম কুমার দাশ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সংশোধনের পাশাপাশি আইন প্রয়োগে বেশি মনোযোগী হওয়া দরকার। সরকার যেহেতু নতুন করে শ্রম আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে, তার পরই বিধিমালা তৈরিতে মনোযোগ দেওয়া উচিত।’  শ্রমিক নেতারা জানান, এই নিয়ে পঞ্চমবারের মতো শ্রম আইন সংশোধন করতে যাচ্ছে সরকার। এর আগে ২০১৮ সালে শ্রম আইনের ৫০টি ধারা পরিবর্তন করা হয়। ২০১৩ সালে রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর বাংলাদেশ শ্রম আইনের ৮৭টি ধারা এবং উপধারা সংশোধন করে। আন্তর্জাতিক চাপে তৈরি পোশাক খাতে শ্রম অধিকার উন্নয়নে এ পরিবর্তন আনা হয়। ইন্ডাস্ট্রি অল বাংলাদেশ কাউন্সিলের (আইবিসি) জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি সালাউদ্দিন স্বপন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আইনের ভিত্তিতে বিধিমালা করতে হয়। এখন বিধি করলে জাতীয় সংসদ শ্রম আইনের কোনটি পাস করবে তা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জানার কথা নয়। তাই শ্রম আইন যেহেতু আসন্ন, আপাতত শ্রমবিধি সাময়িক স্থগিত করে আইন সংশোধন করে তবেই বিধিমালা সংশোধনে আসা উচিত।’ আগে আইন সংশোধন করা উচিত উল্লেখ করে শ্রমিক নেতা সিরাজুল হক রনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আইন সংশোধনের পাশাপাশি আইন প্রয়োগেও মনোযোগ দেওয়া উচিত। এ জন্য সরকার ও মালিক পক্ষকে আরো সচেতন হতে হবে। এ ছাড়া কলকারখানা ও  প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর ও শ্রম অধিদপ্তরের মনিটরিং সেলকে নজরদারি বাড়াতে হবে। কারণ ইউরোপীয় ইউনিয়ন আইনের দৃশ্যমান ফল দেখতে চায়।’ শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, শ্রম মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে ১৫ সদস্যের একটি ত্রিপক্ষীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে রয়েছেন শ্রম মন্ত্রণালয়ের দুজন সদস্য, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশন, তৈরি পোশাক খাতের সংগঠন বিজেএমইএ, বিকেএমইএ, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ, জাতীয় শ্রমিক লীগ, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফেডারেশনের প্রতিনিধি এবং একজন শ্রম আইন বিশেষজ্ঞ। কমিটি আইন সংশোধনের খসড়া আগামী মার্চ মাসের মধ্যে শ্রমসচিবের কাছে হস্তান্তর করবে। শ্রম অধিদপ্তর এবং কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান  পরিদর্শন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারাও থাকছেন এই কমিটিতে। শ্রম বিশেষজ্ঞরা জানান, ইউরোপের বাজারে জিএসপি সুবিধা অব্যাহত রাখতে গত বছর নভেম্বরে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেওয়া পরামর্শের সঙ্গে সংগতি রেখে এবার শ্রম আইন সংশোধন করা হবে। গত ২০ অক্টোবর বাংলাদেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের কর্মকর্তাদের মধ্যে একটি ভার্চুয়াল সভা হয়। ওই সভায় শ্রম অধিকারের রূপকল্প নিয়ে আলোচনা হয়। আবার গত মাসে ইইউর দেওয়া এক চিঠিতে বলা হয়, আগামী নভেম্বরের মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নতুন জিএসপি প্রস্তাব চূড়ান্ত করা হবে। ইউরোপের বাজারে অস্ত্র ছাড়া সব পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা পেতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এই প্রস্তাব। আইন ও বিধি সংশোধন একসঙ্গে চলতে পারে উল্লেখ করে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. মো. রেজাউল হক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘শ্রম আইনের অংশীদারদের মতৈক্যে পৌঁছাতে না পারায় শ্রম আইনের আরো কিছু সংশোধন প্রয়োজন। এ জন্য শ্রম আইন সংশোধনে নতুন কমিটি করা হয়েছে। শ্রম আইন ও শ্রমবিধি একসঙ্গেই সংশোধন হবে।’ বাংলাদেশ ইবিএর আওতায় ইউরোপের বাজারে গত অর্থবছরে এক হাজার ৭১৪ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে। এটি পোশাক খাতে রপ্তানির ৬১.৩৫ শতাংশ। গত অর্থবছরে তৈরি পোশাক খাত থেকে বাংলাদেশের আয় হয়েছে দুই হাজার ৭৯৪ কোটি ডলার।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here