Home বাংলা নিউজ পোশাক ব্যবসার আড়ালে প্রতারণার ফাঁদ

পোশাক ব্যবসার আড়ালে প্রতারণার ফাঁদ

গার্মেন্ট ব্যবসায়ী পরিচয়ের আড়ালে প্রতারণা করে ফাঁদে ফেলা একটি চক্রকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। চক্রটি বিদেশী ক্রেতাদের বিভিন্ন কারখানা পরিদর্শনের নামে গাড়ি ভাড়া করে তা অর্ধেক দামে বিক্রি করে দিত। গত তিন মাসে এভাবে প্রতারণা করে ২২টি গাড়ি বিক্রি করেছে এই প্রতারক চক্র।


সিআইডি জানিয়েছে, কারখানা পরিদর্শনের নামে গাড়ি ভাড়া নিয়ে ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে গাড়িগুলো বিক্রি করে দিতেন এ চক্রের সদস্যরা। চক্রের মূল হোতা আবদুল কাইয়ুম ছোটন। তাকেসহ সাতজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃত অন্যরা হলেনÑ আবদুল আলী মিজি ওরফে আবদুল হাই (৪৬), নাজমুল হাসান (১৯), সানি রহমান (২০), সাজরাতুল ইয়াকিন রানা (৩৩), আলমগীর শেখ (৪৮) ও মো: সেলিমকে (২৭)। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে সাতটি গাড়ি।


জানা গেছে, ২১০ জন কর্মচারী নিয়ে ‘এ কে ফ্যাশনস’ নামে নামমাত্র একটি গার্মেন্টে টিশার্ট, জ্যাকেট ও পোলো শার্ট তৈরি করতেন আবদুল কাইয়ুম ওরফে ছোটন (৩১)। তিনি গার্মেন্ট ব্যবসায়ী পরিচয়ে বিদেশী ক্রেতাদের বিভিন্ন কারখানা পরিদর্শনের জন্য ব্যবহারের নাম করে ৩০ থেকে ৩৫টি গাড়ি ভাড়া নিয়েছিলেন। একেকটি গাড়ির মাসিক ভাড়া ছিল ২৫ হাজার থেকে ৩৫ হাজার টাকার মধ্যে। মাত্র তিন মাসের ওই গার্মেন্ট ব্যবসার আড়ালে তিনি ভাড়া করা গাড়িগুলো ব্যবহার না করে অর্ধেক দামে ভুয়া কাগজ তৈরি করে বিক্রি করে দেন। এ দিকে গাড়ির আসল মালিকরা ভাড়া না পেয়ে ঘুরতে থাকেন। আর প্রতারণার বিষয়টি আড়াল করতে তিনি পরিবারের সদস্যদের মাধ্যমে তাদের জানান, দেশের বাইরে আছেন। পরবর্তীতে আবদুল কাইয়ুমের বিরুদ্ধে ধানমন্ডিসহ তিন থানায় মামলা হয়। এর একটি মামলার তদন্ত করতে গিয়ে সঙ্ঘবদ্ধ ওই প্রতারক চক্রের সন্ধান পায় সিআইডি।


গতকাল দুপুরে রাজধানীর মালিবাগে সিআইডি কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সিআইডির এলআইসি শাখার বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তা ধর।


তিনি বলেন, করোনাকালে ঢাকা ও পাশের জেলাগুলোতে গার্মেন্ট কোম্পানির নামে গাড়ি ভাড়া করে প্রতারণার মাধ্যমে অন্যত্র বিক্রির ঘটনার অভিযোগ উঠছিল। একাধিক ঘটনা সংঘটিত হলে বিষয়টি সিআইডির নজরে আসে। অভিযোগের ভিত্তিতে সিআইডির এলআইসি শাখা ছায়া তদন্ত শুরু করে। তদন্তের একপর্যায়ে জানা যায়, আবদুল কাইয়ুম ওরফে ছোটন ওরফে ইসতিয়াক ওরফে মেহেদী হাসান গাজীপুরের গাছায় এ কে ফ্যাশন নামে একটি প্রতিষ্ঠান চালু করেন। সে সময়ই তিনি ২২টি গাড়ি ভাড়া নেন। গাড়ির মূল মালিকদের অগোচরে প্রতারণার মাধ্যমে গাড়িগুলো তিনি বিক্রি করে দেন। গাড়ি বিক্রির নগদ তিন কোটি ৮০ লাখ টাকা নিয়ে তিনি আত্মগোপনে চলে যান। গাড়ির প্রকৃত মালিকরা তাদের গাড়ি ও আবদুল কাইয়ুমের কোনো সন্ধান না পেয়ে বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা দায়ের করেন।


এরপর সিআইডি মামলাগুলোর তদন্তে নেমে একটি চক্রকে চিহ্নিত করে। এ ঘটনায় মানিকগঞ্জ পৌরসভার শহীদ রফিক সড়ক থেকে আবদুল আলী মিজি ও তার ছেলে নাজমুল হাসানকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের কাছ থেকে একটি টয়োটা প্রাইভেট কার উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃত গাড়ির বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদে তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে চক্রটির প্রধান সহযোগী সানি রহমানকে দিনাজপুর এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। তার দেয়া তথ্যানুযায়ী রংপুরের শাপলা চত্বর এলাকা থেকে সাজরাতুল ইয়াকিন রানাকে গ্রেফতার ও সাদা রঙের এক্সিও প্রাইভেট কার উদ্ধার করা হয়। তাদের দেয়া তথ্যাদি পর্যালোচনা শেষে উত্তরা এলাকা থেকে আরো চারটি চোরাই গাড়ি উদ্ধার করা হয়।


সিআইডির এলআইসির একাধিক টিম ঢাকা ও এর পাশের এলাকায় অভিযান চালিয়ে প্রতারক চক্রটির সক্রিয় সদস্য আলমগীর শেখ ও সেলিমকে একটি কালো রঙের এক্সিও প্রাইভেট কারসহ গ্রেফতার করে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে চক্রের মূল হোতা কথিত গার্মেন্ট ব্যবসায়ী আবদুল কাইয়ুমের নাম উঠে আসে। কাইয়ুম কক্সবাজারের পেকুয়ার কাছারীমোড়ার মো: আলতাফ হোসেনের ছেলে। তার সম্পর্কে তথ্য যাচাই-বাছাই করে খুলনার সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে অবৈধভাবে ভারত পালিয়ে যাওয়ার প্রাক্কালে আত্মগোপনে থাকা আবদুল কাইয়ুমকে গ্রেফতার করে সিআইডি।


মুক্তা ধর আরো বলেন, আবদুল কাইয়ুম গাজীপুরে প্রত্যাশা নামে একটি এনজিওতে চাকরি করতেন। সেখানে আর্থিক লেনদেনে অস্বচ্ছতার কারণে তার চাকরি চলে যায়। এরপর তিনি গাজীপুরের গাছা থানা এলাকায় একটি চার তলা বাড়ির তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় এ কে ফ্যাশনস নামে পোশাক কারখানা স্থাপন করেন। সেখানে তিনি নামমাত্র বেতন ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকায় ২১০ শ্রমিককে নিয়োগ দেন।


চলমান করোনা ও লকডাউনের মধ্যে তিনি গার্মেন্ট ব্যবসায় বিদেশী ক্রেতাদের যাতায়াতের কাজে ব্যবহারের কথা বলে বিভিন্নজনের কাছ থেকে ২২টি গাড়ি ভাড়া নেন। পরে গাড়ির মূল মালিকদের অগোচরে প্রতারণার মাধ্যমে গাড়িগুলো অবৈধভাবে বিভিন্ন ক্রেতার কাছে বিক্রি করে দেন। এর আগে তিনি প্রতিটি গাড়ির জিপিএস সিস্টেম অকেজো করে দেন। গাড়ি বিক্রির নগদ তিন কোটি ৮০ লাখ টাকা নিয়ে প্রতারক চক্রটি আত্মগোপনে চলে যায়। এক প্রশ্নের জবাবে মুক্তা ধর বলেন, আবদুল কাইয়ুম ছোটনের এই গার্মেন্ট স্থাপনের মেয়াদ ছিল মাত্র তিন মাস। অর্থাৎ এই স্বল্প সময়ে পণ্য উৎপাদন ও রফতানি করা যায় না। মূলত প্রতারণার জন্যই তিনি গার্মেন্ট ব্যবসাকে কাজে লাগান। যখন প্রতারণার বিষয়টি ভুক্তভোগীরা বুঝতে পারেন তখন তিনি যাদের কাছে গাড়ি বিক্রি করেছেন তাদের ঠিকানা দেন। আমরা ভুক্তভোগী ও অন্য আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে জানতে পারি, চক্রটি প্রায় ৩০ থেকে ৩৫টি গাড়ি ভাড়া নিয়ে প্রতারণা করেছে।


সিআইডি জানায়, ছোটন শুধু ভুক্তভোগীদের সাথেই প্রতারণা করেননি, তিনি যাদের কাছে গাড়ি বিক্রি করেছেন তাদের সাথেও প্রতারণা করেছেন। আবদুল কাইয়ুমসহ অন্য প্রতারকদের বিরুদ্ধে গাজীপুর মহানগর পুলিশের (জিএমপি) গাছা থানায় মামলা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ প্রক্রিয়াধীন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here