Home বাংলা নিউজ যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানিতে ধস, ১১ মাসে কমেছে এক-চতুর্থাংশ

যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানিতে ধস, ১১ মাসে কমেছে এক-চতুর্থাংশ

তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের বড় গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র। কয়েক মাস ধরে বাজারটিতে দুশ্চিন্তা তৈরি হয়—এমন সংবাদ আসছে। সর্বশেষ খবর, বিদায়ী বছরের প্রথম ১১ মাসে এই বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানিতে ধস নেমেছে। বাংলাদেশের মোট পোশাক রপ্তানির ১৮ শতাংশের গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র।

বিদায়ী বছরের জানুয়ারি-নভেম্বর পর্যন্ত ১১ মাসে যুক্তরাষ্ট্রে ৬৭৯ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি এর আগের বছরের তুলনায় একই সময়ের তুলনায় এক-চতুর্থাংশ (২৪ দশমিক ৯১ শতাংশ) কম। ২০২২ সালের প্রথম ১১ মাসে দেশটিতে ৯০৪ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছিল বাংলাদেশ।

অবশ্য শুধু বাংলাদেশ নয়, যুক্তরাষ্ট্রে অন্য পাঁচ শীর্ষ পোশাক রপ্তানিকারক দেশের রপ্তানিও সাড়ে ২১ থেকে প্রায় ২৬ শতাংশ পর্যন্ত কমে গেছে। মূলত যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীরা গত বছরের প্রথম ১১ মাসে এর আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ২২ শতাংশ তৈরি পোশাক আমদানি কম করেছে। সে জন্য রপ্তানিকারক সব দেশের রপ্তানিতে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

দেশের রপ্তানিকারকেরা বলছেন, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি দ্রুত বাড়তে থাকে। ওই বছরের জুনে দেশটির মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ১ শতাংশে উঠে যায়, যা ছিল গত ৪০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। ফলে নিত্যপণ্য ও জ্বালানি ছাড়া অন্যান্য পণ্য কেনা কমিয়ে দেন দেশটির ভোক্তারা। দেশটি নীতি সুদহার বাড়ানোসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়ায় মূল্যস্ফীতি কমে আসে। গত নভেম্বরে মূল্যস্ফীতি ছিল ৩ দশমিক ১ শতাংশ। ফলে চলতি মাসের শেষ দিকে দেশটির ব্র্যান্ড ও ক্রেতাপ্রতিষ্ঠান থেকে ক্রয়াদেশ পাওয়ার হার বাড়তে পারে বলে মনে করছেন তাঁরা।

ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের আওতাধীন অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলের (অটেক্সা) হালনাগাদ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত বছরের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ৭ হাজার ২৪১ কোটি ডলারের পোশাক আমদানি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীরা। ২০২২ সালের একই সময়ে তাঁরা আমদানি করেছিলেন ৯ হাজার ৩৩১ কোটি ডলারের পোশাক। তার মানে, বিদায়ী বছরের প্রথম ১১ মাসে যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক আমদানি কমেছে ২২ দশমিক ৪০ শতাংশ।

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শীর্ষ পোশাক রপ্তানিকারক দেশ চীন। গত বছরের ১১ মাসে চীনের পোশাক রপ্তানি ২৫ দশমিক ৮৫ শতাংশ কমে ১ হাজার ৫২২ কোটি ডলারে দাঁড়ায়। দ্বিতীয় শীর্ষ রপ্তানিকারক ভিয়েতনাম রপ্তানি করেছে ১ হাজার ৩১৮ কোটি ডলারের পোশাক। তাদের রপ্তানি কমেছে ২২ দশমিক ৬৮ শতাংশ। এই বাজারে বাংলাদেশ তৃতীয় শীর্ষ রপ্তানিকারক দেশ, দেশটিতে বাংলাদেশের পোশাকের বাজার হিস্যা ৯ দশমিক ৪৭ শতাংশ। চীন ও ভিয়েতনামের হিস্যা যথাক্রমে ২১ ও ১৮ শতাংশ।

অটেক্সার তথ্যানুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ১০ বছরের ব্যবধানে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ২ দশমিক ৩৩ শতাংশ। ২০১২ সালে রপ্তানি ছিল ৪১৮ কোটি ডলার। পরের বছর তা বেড়ে ৪৬৫ কোটি ডলারে দাঁড়ায়। ওই বছরের এপ্রিলে সাভারের রানা প্লাজা ধসের পর যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানি কমে যায়। চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই অবস্থার পরিবর্তন হতে থাকে। চীনের ওপর নির্ভরশীলতা কমানো ও বাড়তি শুল্ক থেকে রেহাই পেতে বেশি ক্রয়াদেশ নিয়ে বাংলাদেশে আসে যুক্তরাষ্ট্রের অনেক ক্রেতাপ্রতিষ্ঠান। তাতে ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পোশাক রপ্তানি বেড়ে ৯৭২ কোটি ডলার হয়।

২০২২–২৩ অর্থবছরে ৪ হাজার ৬৯৯ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়। এর মধ্যে ১৮ দশমিক ১২ শতাংশ বা ৮৫২ কোটি ডলারের পোশাকের গন্তব্য ছিল যুক্তরাষ্ট্র। তখন রপ্তানি কমেছিল সাড়ে ৫ শতাংশ। এদিকে চলতি ২০২৩–২৪ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাস জুলাই–নভেম্বরে ১ হাজার ৮৮৩ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এর মধ্যে ১৭ দশমিক ৪০ শতাংশ গিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রে।
যদিও এই সময়ে বাজারটিতে রপ্তানি কমেছে পৌনে ৬ শতাংশ।

রাজনৈতিক ইস্যুতে বেশ কয়েক মাস ধরে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র টানাপোড়েন চলছে। গত মে মাসে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিত করতে নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। সে জন্য দেশটি গত ১৬ নভেম্বর বিশ্বজুড়ে শ্রম অধিকার সুরক্ষায় নতুন নীতি ঘোষণা করলে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা বিশেষ করে তৈরি পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তারা দুশ্চিন্তায় পড়েন।

তবে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পোশাক রপ্তানি কমে যাওয়ার সঙ্গে রাজনৈতিক টানাপোড়েনের সম্পর্ক নেই বলে মন্তব্য করেন নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সাবেক সভাপতি ফজলুল হক। গতকাল তিনি প্রথম আলোকে বলেন, মূলত উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে চাহিদা হ্রাস এবং গুদামে অবিক্রীত পণ্যের বিশাল মজুত থাকার কারণে দেশটি থেকে ক্রয়াদেশ কমে গেছে।

ফজলুল হক আরও বলেন, ‘বড়দিনের দীর্ঘ ছুটি শেষে ব্র্যান্ড ও ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা কর্মক্ষেত্রে ফিরতে শুরু করেছেন। তাঁরা নতুন ক্রয়াদেশ দেওয়া নিয়ে আলাপ-আলোচনা শুরু করেছেন। বড়দিনে ভালো বিক্রি হয়েছে। ফলে আমাদের প্রত্যাশা জানুয়ারির শেষ দিকে ক্রয়াদেশ আসার হার বাড়বে। সেটি নিশ্চিত হতে আরও দুই সপ্তাহ সময় লাগবে।’

news sources: prothomalo

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here