Home Blog Page 447

A ‘happening year’ for RMG

The Readymade Garments (RMG) sector has come to news with some mixed signals. A report in the Financial Express on the first day of the year told a lot about the sector’s ups and downs in recent times. While, the first part of 2019 has been good, the later part of the year saw some downturns in export earnings. The US, EU and Canada have remained the main destinations for our products, while other countries like China and Vietnam have diversified in all aspects. Our products have been cotton-based mostly, calculated at being nearly three-fourths the total yield. Five items like trousers, t-shirts, sweaters, shirts and jackets constitute nearly three-fourths of Bangladesh’s total RMG exports. All these signal the need for diversification. For instance, China has made “techwear”, items that are made of special fabric and are water-resistant, helps breathability and increases comfort. A Centre for Policy Dialogue (CPD) study found more or less the same thing, pointing to the pre-dominance of cotton-based products. It also brought up the issues surrounding the garments sector throughout the whole year in 2019. Its labour cost is still the lowest among the competing countries. In human capital index, Bangladesh once occupied the third position among the big four in garments sector, even surpassing India. However, there is an adverse side to all these. A combination of competing countries has been fighting Bangladesh not on export issues, but trying to undermine it citing its record on labour rights and related matters. The country must guard against it and focus upon its truths on the international forum. It must also work at home to improve things so that it gets a clean chit from the outside world. Our record since the Rana Plaza disaster has been mixed. The international consortium of Accord was here for a couple of years, looking after the related issues of workers’ rights and working environment. Then there was the Alliance, which folded up a year ago. A lot indeed remains to be done. Among the four big garments producers, Bangladesh lies behind the remaining three of China, India and Vietnam in timeliness of shipments. Vietnam’s progress is eye-catching. It even has surpassed China in matters of human capital index. So there are issues that have to be solved at the Bangladesh end. The President of the Bangladesh Garments Manufacturers’ and Exporters’ Association (BGMEA) Dr Rubana Huq summed up the sector by saying that 2019 was a `happening year’ for the sector. The BGMEA president mentioned both positive and not-so-positive indicators. The formation of the ‘RMG Sustainability Council’ (RSC) is a positive development. Indeed sustainability is the core issue. While established houses have expanded, many factories folded up to October 2019, making a job-loss of nearly 30,000. At the same time new units have been established that could create 50,000 jobs. Taking everything into consideration, 2019 appears to be an `in and out kind’ of year. The government must step in to help the sector with infusion of more facilities. The BGMEA’s demand for single-digit lending rate deserves immediate implementation. Top management of the important banks have already agreed to it. So there should not be any delay. A sector that caters to hundreds of thousands of jobs, employs the largest number of women and earns so much hard currency may occupy the centre stage; yet a thrust on export diversification should be the key element of the overall strategy going forward.

Debonair Group to turn plastics into jackets

Debonair Group is set to establish a recycling facility to turn discarded plastic into yarn and fibres for manufacturing jackets, paddings and quilts, keeping in tune with rising global demand for manmade fibres and growing environmental awareness. Synthetic fibres made up about 45 percent of apparel traded globally in 2017, amounting to some $150 billion. It has witnessed a compound annual growth rate (CAGR) of 5 percent between 2007 and 2017. Bangladesh had just 5 percent share of the pie whereas Vietnam, its closest competitor in apparel trade, managed 10 percent. In contrast, cotton accounted for around 35 percent of the trade. Its CAGR was a negative 0.5 percent. The Bangladesh Garment Manufacturers and Exporters Association (BGMEA), the sector’s apex trade body, emphasised the need for raising the use of manmade fibres in garment production to boost its exports. The new facility will be established on 45 bighas of land in Bhaluka at a cost of Tk 240 crore and production will start from October this year, said Mohammed Ayub Khan, managing director of Debonair Group. The company will no longer need to depend on imports, mainly from China, worth some $55 million annually, he told The Daily Star over the phone. “We will collect discarded plastic bottles of edible oil and water from different corners of the country to make flakes and then to make yarn and fabrics and finally the paddings and quilts.” The company currently exports jackets and padding worth $140 million a year. Its major buyers are H&M, Colombia, VF Corporation, Benetton Group and C&A. Product traceability has made consumers around the world more conscious of what they purchase: they have come to prioritise environmental concerns and ways to address them according to industry insiders. The preference for polyester, synthetic and viscose fibres arise from their durability and the ease in taking care of clothes made from them. Local manufacturers have apparently been unable to take note of the advantages, since manmade fibres have accounted for just 20 percent of apparel exports for a long time. They have continued increasing production of yarn and garment products from cotton every year. Some 74.14 percent of apparel exported in fiscal 2018-19 was made from cotton fibres, up from 68.67 percent in fiscal 2008-09, said a BGMEA study unveiled last week. Since the demand for cotton garment items is going down, exporters are getting lower prices from buyers. Moreover, cotton accounted for 93.57 percent of the 2.05 million tonnes of fibre imported by Bangladesh in 2018, according to the study. Another impediment is the high investment required for setting up synthetic fibre production facilities. Of the 430 spinning mills in Bangladesh, only 27 churn out synthetic and acrylic yarn. 

১৮৯ কারখানার ইউডি সেবা স্থগিতে বিজিএমইএ-বিকেএমইএকে চিঠি

গাজীপুরে অবস্থিত একটি পোশাক কারখানার স্থাপত্য, অগ্নি, বৈদ্যুতিক বিষয়গুলোর মূল্যায়ন করা হয় জাতীয় উদ্যোগে। মূল্যায়ন-পরবর্তী প্রতিবেদনে কিছু সংস্কার কার্যক্রমের সুপারিশও করা হয়। কিন্তু কারখানা কর্তৃপক্ষ সংস্কারের কোনো পদক্ষেপই গ্রহণ করেনি। এ কার্যক্রম সম্পন্নের লক্ষ্যে নির্দেশনা অনুযায়ী ড্রইং-ডিজাইন জমা দেয়নি। এর পরিপ্রেক্ষিতে খাতসংশ্লিষ্ট সংগঠন থেকে প্রতিষ্ঠানটিকে নিয়মিত প্রদত্ত সেবা স্থগিত করার অনুরোধ জানিয়েছে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর (ডিআইএফই)। সূত্র বলছে, মোট ১৮৯টি কারখানার ইউটিলাইজেশন ডিক্লারেশন (ইউডি) সেবা স্থগিতের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

জাতীয় উদ্যোগের আওতায় ২০১৪ থেকে ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১ হাজার ৫৪৯টি কারখানায় প্রাথমিক মূল্যায়ন করা হয়। এর আওতায় কারখানাগুলোয় স্থাপত্য, অগ্নি, বৈদ্যুতিক বিষয়ক সুনির্দিষ্ট সংস্কার কার্যক্রম সুপারিশ করা হয়। কিন্তু অনেক কারখানা এখন পর্যন্ত কোনো সংস্কার কার্যক্রম সম্পন্ন করেনি এবং অধিদপ্তরে সংস্কারকাজ সম্পাদনের জন্য ড্রইং-ডিজাইন জমা দেয়নি।

জাতীয় উদ্যোগের আওতায় থাকা কারখানাগুলোর সংস্কার কার্যক্রম ত্বরান্বিত করার জন্য গত বছর সেপ্টেম্বরে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে ১৫তম জাতীয় ত্রিপক্ষীয় কমিটির (এনটিসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে এসকেলেশন প্রটোকল অনুমোদন করা হয়। ওই প্রটোকল অনুসরণের চতুর্থ ধাপে যে কারখানা সংস্কার কার্যক্রম সম্পন্ন করবে না, তাদের ইউডি সেবা সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রদান স্থগিত রাখার বিষয় বলা হয়।

এনটিসি সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সম্প্রতি পোশাক খাতসংশ্লিষ্ট দুই সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএকে তাদের সদস্য মোট ১৮৯টি কারখানায় তিন মাসের জন্য ইউডি সেবা স্থগিত রাখার অনুরোধ জানানো হয়েছে। এর মধ্যে বিজিএমইএকে তাদের ১৪৩টি কারখানার সেবা স্থগিতের চিঠি দেয়া হয়েছে গত ৫ ডিসেম্বর। বিকেএমইএকে তাদের সদস্য ৪৬টি কারখানার সেবা বন্ধ করার চিঠি দেয়া হয়েছে গত ২৯ ডিসেম্বর।

জানতে চাইলে বিজিএমইএ সভাপতি ড. রুবানা হক বলেন, ২০১৯ সালে ইউডি পরিস্থিতি বলছে ১৪৩টির মধ্যে ৫৪টি কারখানা ইউডি নিয়েছে। আমরা এ কারখানাগুলোর স্থাপত্য-বৈদ্যুতিক-অগ্নি বিষয়ক সাবমিশন পরীক্ষা করছি। এর আগে আমরা ৫১টি কারখানার ইউডি স্থগিত করেছিলাম।

জানা গেছে, গত বছর জুনেও সংস্কার কার্যক্রমের গড়িমসি ও অনগ্রসরতায় ইউডি সেবা স্থগিতের তত্পরতা ছিল। ওই সময় বিজিএমইএর ৫১টি ও বিকেএমইএর ৭৩টি কারখানার বিরুদ্ধে সেবা স্থগিতের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়।

উল্লেখ্য, তৈরি পোশাক শিল্পের কারখানাগুলোকে রফতানি প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর কাছ থেকে কাঁচামাল ব্যবহারের উপযোগিতা সনদ নিতে হয়, যা ইউডি সেবা হিসেবে পরিচিত। আর ইউডি সনদ না থাকলে শুল্কমুক্ত সুবিধা পায় না কোনো কারখানা।

রানা প্লাজা ধসের পর জাতীয় ত্রিপক্ষীয় কর্মপরিকল্পনার (এনটিপিএ) আওতায় অ্যাকর্ড, অ্যালায়েন্স ও জাতীয় উদ্যোগে শুরু হয় পোশাক কারখানা মূল্যায়ন কার্যক্রম। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক দুই জোট অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের আওতাধীন কারখানাগুলোর ৮৫ শতাংশের ত্রুটি সংস্কার হলেও জাতীয় উদ্যোগের আওতায় শতভাগ সংস্কার সম্পন্ন করেছে ১ শতাংশেরও কম কারখানার। এর মধ্যে একাধিক সতর্কতা জারির পরও সংস্কার কার্যক্রমের অগ্রগতি নেই এমন কারখানার বিরুদ্ধে প্রাথমিক ব্যবস্থা হিসেবে ইউডি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

যে কারখানা সংস্কার কার্যক্রম শুরু করেনি বা যাদের অগ্রগতি ২০ শতাংশের নিচে, তাদেরকে এসকেলেশন প্রটোকলের আওতায় অন্তর্ভুক্ত করে সংস্কার কার্যক্রম তদারকি করেছে ডিআইএফই। এক্ষেত্রে যেসব কারখানার সংস্কারকাজ একেবারেই নগণ্য, সেগুলোর ইউডি ইস্যু না করার জন্য বিজিএমইএ ও বিকেএমইএকে বলা হয় গত বছর।

বাংলাদেশের পোশাক খাত কেন বাণিজ্য যুদ্ধের সুফল নিতে পারলো না?

নতুন অর্থ বছরের শুরু থেকেই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রফতানি খাত তৈরি পোশাকের রফতানি প্রবৃদ্ধি ধারাবাহিকভাবে কমতে দেখা যাচ্ছে। অথচ চীন-মার্কিন বাণিজ্য যুদ্ধের ফলে পোশাক খাতের যেসব মার্কিন ক্রেতা চীন থেকে পোশাক কিনতেন, তাদের অনেকেই বাংলাদেশমুখী হবেন বলেই মনে করা হচ্ছিলো। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, সেটা হয়নি। চীন-মার্কিন বাণিজ্য যুদ্ধের সুফল বাংলাদেশ কেন নিতে পারলো না? আর সামগ্রিকভাবে পুরো খাতেই কেন রফতানি কমছে? সাভারের একটি পোশাক কারখানা। সোহেল ইন্টারন্যাশনাল মনিকা অ্যাপারেলস নামে এই কারখানাটিতে কাজ করেন প্রায় ২০০ শ্রমিক। এক যুগ আগে গড়ে ওঠা এই কারখানা শুরুতে ভালো ভালো চললেও গত একবছরে বিদেশি ক্রেতাদের কাছ থেকে কাঙ্ক্ষিত ক্রয়াদেশ আসছে না। প্রতিষ্ঠানটির পারিচালক আমিনুল ইসলাম জানাচ্ছেন, গেলো গ্রীষ্মের পুরোটাতেই কারখানায় কোনো কাজ হয়নি। শ্রমিকদের একরকম বসিয়ে রেখে তিন মাস বেতন গুনতে হয়েছে। এমনকি বড় বড় কারখানা থেকে সাব-কন্ট্রাক্টেও কোনো কাজ পাওয়া যাচ্ছিলো না। কারণ সেসব কারখানাতেও অর্ডার কমে যায়। ‘এই পরিস্থিতি আসলে গত কয়েক বছরে এবারই প্রথম ফেইস করলাম। ডিসেম্বরের দিকে আমরা বেশ কিছু অর্ডার পেয়েছি, কিন্তু এর আগেই যে ক্ষতিটা হয়ে গেছে সেটা কাটিয়ে ওঠা মুশকিল।’

রফতানি কি পুরো পোশাক খাতেই কমছে?

সাভারের আমিনুল ইসলাম তার কারখানার যে চিত্র তুলে ধরেছেন, সেটা অনেকের ক্ষেত্রেই ঘটছে। আমিনুল ইসলাম জানাচ্ছেন, তার কারখানার আশেপাশে থাকা ১০টি কারখানার মধ্যে তিনটি কারখানা গত একবছরে বন্ধ হয়ে গেছে। রফতানির চিত্রেও এর প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে। ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরের প্রথম ছয় মাসেই ধারাবাহিকভাবে পোশাক রফতানি থেকে আয় কমেছে। এই ছয় মাসে পোশাক রফতানি হয়েছে ১ হাজার ৬০২ কোটি ৪০ লাখ ডলারের কিছু বেশি। এই আয় গত অর্থ বছরে একই সময়ের তুলনায় প্রায় আট শতাংশ কম। একই সাথে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় আয় কমেছে ১৩ দশমিক ৬৩ শতাংশ।

চীন-মার্কিন বাণিজ্য যুদ্ধের সুফল ঘরে তুলতে পারেনি বাংলাদেশ’

গেলো বছরের জুলাই থেকেই চীন-মার্কিন বাণিজ্য যুদ্ধ শুরুর পর ধারণা করা হয়েছিলো মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে মার্কিন ক্রেতারা চীন থেকে পোশাক কিনবেন না। অথবা কমিয়ে দেবেন। আর এতে করে লাভবান হবে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত। কিন্তু দেখা যাচ্ছে তা হয়নি। উল্টো বাংলাদেশের সামগ্রিক পোশাক রফতানিতেই নেতিবাচক ধারা দেখা যাচ্ছে। এসময়ের মধ্যে বিশ্বে পোশাক রফতানিতে তৃতীয় স্থানে থাকা ভিয়েতনাম বেশ লাভবান হয়েছে। তাদের পোশাক রফতানি বাড়ায় গেলো বছর দুইয়ে থাকা বাংলাদেশের আরো কাছে চলে আসে দেশটি। আর যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশকেও ছাড়িয়ে যায় ভিয়েতনাম। চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে বাংলাদেশের রফতানি আয় যেখানে ২৪১ কোটি ডলার। সেখানে একই সময়ে ভিয়েতনামের আয় দ্বিগুণেরও বেশি ৬৪৫ কোটি ডলার।

রফতানি কমে যাওয়ার কারণ কী?

পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ বলছে, ভিয়েতনাম যে মার্কিন ক্রেতাদের আকৃষ্ট করছে, সেটা মূলত হচ্ছে চীনা বিনিয়োগের কারণে। বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হক বিবিসিকে বলেন, ‘প্রথমত মার্কিন ক্রেতারা ভিয়েতনামের পোশাক পছন্দ করছে। আমরা যে ধরণের পোশাক বানাই, সেসব পোশাকের চাহিদা যুক্তরাষ্ট্রে কমেছে। এটা একটা দিক।’ তিনি বলেন, ‘আরেকটি দিক হচ্ছে, ভিয়েতনামে প্রচুর চীনা বিনিয়োগ আছে। ওদের স্থানীয় উদ্যোক্তা সেভাবে নেই আসলে। ফলে যখন চীনে ব্যবসা কমে গেছে, তারা সেটা পাশেই ভিয়েতনামে নিয়ে এসেছে। এমনও হয়েছে যে, চায়নায় কিছু অংশ করে পরে সেটা ভিয়েতনামে এনে শেষ করেছে। এবং ভিয়েতনাম থেকেই রফতানি করেছে। ভিয়েতনামের ক্যাপাসিটি কম থাকলেও যেহেতু প্রাথমিকভাবে পোশাকের কাজগুলো চায়নায় হচ্ছে, সে কারণেও তারা লাভবান হয়েছে।’ রুবানা হক জানাচ্ছেন, ভিয়েতনাম যেভাবে সেদেশে সরকারি সহায়তা পায়, বাংলাদেশ সেখানে পিছিয়ে আছে। তিনি বলছেন, এই মুহূর্তে ডলারের বিপরীতে টাকা শক্তিশালী থাকায় প্রতিযোগিতামূলক দরে পোশাক বিক্রি করা যাচ্ছে না। তবে অর্থনীতি বিশ্লেষক মামুন রশীদ আবার বলছেন, বাংলাদেশে মূল সমস্যাটা অন্য জায়গায়। তিনি বলছেন, চীন-মার্কিন বাণিজ্য যুদ্ধের মতো আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির সুযোগ বাংলাদেশ কিভাবে নেবে তা নিয়ে পূর্ব পরিকল্পনা ছিলো না। তিনি বলছেন, ‘নগদ প্রণোদনা, কর কমানো কিংবা ইনসেনটিভ বাড়ানো, টাকার অবমূল্যায়নের জন্য চাপ দেয়া এগুলোর দিকেই আমরা বিজিএমইএ’কে ইদানিং বেশি তৎপর দেখতি পাচ্ছি।’ ‘কিন্তু এ খাতে দক্ষতা বাড়ানো, গবেষণা এবং পণ্যে বৈচিত্র আনার জন্য যেরকম পরিকল্পনা দরকার ছিলো সেটা দেখা যায়নি।’ মামুন রশীদ বলছেন, বিদেশি ক্রেতাদের কেনার ধরণ পাল্টেছে। উচ্চমূল্যের, ভালো ডিজাইনের পোশাকের বিক্রি বাড়ছে। কিন্তু বাংলাদেশ সে ধরণের পোশাক বানায় না। এখানে মূলত সস্তা ধরণের পোশাক তৈরি হয়। সুতরাং পণ্যে বৈচিত্র্য আনতেই হবে।

বিজিএমইএ কী বলছে?

বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হক বলছেন, পোশাক খাতে যে কিছু হচ্ছে না তা নয়। তিনি বলছেন, ইতোমধ্যেই গবেষণা খাতে বিনিয়োগ হয়েছে। প্রতি সপ্তাহে কী কী ধরণের পণ্য, কী রকম দামে বিক্রি হচ্ছে সেসব তথ্য পোশাক কারখানা মালিকদের কাছে দেয়া হচ্ছে, যাতে তারা ট্রেন্ড বুঝতে পারেন। ‘খুব পড়াশোনা করে যে আমাদের সেক্টরটাকে বিবেচনা করেছি সেটা না। আমরা এখন এটাকে কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছি। নানারকম থিংক ট্যাংকের সাথে কাজ হচ্ছে। ইতোমধ্যেই ছয়টি গবেষণায় আমরা বিনিয়োগ করেছি।’ ‘আমরা আগামী পাঁচ বছরে কী করবো, ১০ বছরে কী করবো, সেগুলো ভাবা হচ্ছে। পণ্যে বৈচিত্র্য আনা একই সাথে উৎপাদনেও বৈচিত্র্য আনার চেষ্টা হচ্ছে। অর্থাৎ একই যন্ত্র ব্যবহার করে কিভাবে উৎপাদন বাড়বে, এফিশিয়েন্সি বাড়বে সেগুলো নিয়ে কাজ হচ্ছে।

রফতানি আয়ে বড় ধস -৬ মাসে আয় এসেছে ১ হাজার ৯৩০ কোটি ডলার

অর্থবছরের ৬ মাসে বড় ধরনের হোঁচট খেল পণ্য রফতানি আয়। ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) ১ হাজার ৯৩০ কোটি ২১ লাখ ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছে। এই আয় গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৫ দশমিক ৮৪ শতাংশ কম। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কমেছে ১২ দশমিক ৭৭ শতাংশ। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) রবিবার পণ্য রফতানি আয়ের যে হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, ডিসেম্বর মাসে প্রবৃদ্ধি ও লক্ষ্যমাত্রা স্পর্শ করতে পারেনি দেশের তৈরি পোশাক খাত। চলতি অর্থবছরের ছয় মাসে ১ হাজার ৬০২ কোটি ৪০ লাখ ডলারের পোশাক রফতানি হয়েছে।

এই আয় গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৭ দশমিক ৭৪ শতাংশ কম। একইসঙ্গে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় আয় কমেছে ১৩ দশমিক ৬৩ শতাংশ। এদিকে একক মাস হিসেবে ডিসেম্বরে রফতানি আয় অর্জিত হয়েছে ৩৫২ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪০৭ কোটি ৭০ লাখ ডলার।

ইপিবি’র প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে সব ধরনের পণ্য রফতানিতে বৈদেশিক মুদ্রার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৫৫০ কোটি মার্কিন ডলার। ২০১৮-১৯ অর্থবছর শেষ রফতানি আয় অর্জিত হয়েছে ৪ হাজার ৫৩ কোটি ৫০ লাখ ৪ হাজার ডলার। চলতি অর্থবছর প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) রফতানির আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ হাজার ২১২ কোটি ডলার। এইছয় মাসে রফতানি আয় এসেছে ১ হাজার ৯৩০ কোটি ২১ লাখ মার্কিন ডলার। যা লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ১৩ দশমিক ৭৪ শতাংশ কম।

২০১৮-১৯ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে রফতানি আয় অর্জিত হয়েছিল ২ হাজার ৪৯ কোটি ৯৮ লাখ ডলার। সে হিসেবে রফতানি আয়ে প্রবৃদ্ধি কমেছে ৫ দশমিক ৮৪ শতাংশ। এদিকে একক মাস হিসেবে ডিসেম্বরে রফতানি আয় বাড়লেও পূরণ হয়নি লক্ষ্যমাত্রা। নবেম্বরে যেখানে মোট রফতানি আয় হয়েছিল ৩০৫ কোটি ৫৮ লাখ ডলার, সেখানে ডিসেম্বরে আয় বেড়ে হয়েছে ৩৫২ কোটি ৫০ লাখ ডলার। আর এ মাসে । অবশ্য গতবছরের ডিসেম্বরে আয় হয়েছিল ৩৪২ কোটি ৬১ লাখ ডলার। সে হিসাবে এই ডিসেম্বরে আগের বছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২ দশমিক ৮৯ শতাংশ।

জানা যায়, দেশের রফতানি আয়ের প্রায় ৮৫ শতাংশ আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে। এই খাত থেকে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রফতানি আয় এসেছিল ৩ হাজার ৪১৩ কোটি ৩২ লাখ ডলার। ২০১৯-২০ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে তৈরি পোশাক খাতে পণ্য রফতানি থেকে আয় অর্জিত হয়েছে ১ হাজার ৬০২ কোটি ৪০ লাখ ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে আয় এসেছিল ১ হাজার ৭০৮ কোটি ৪৯ লাখ ডলার। সে হিসেবে এ খাতে প্রবৃদ্ধি কমেছে ৬ দশমিক ২১ শতাংশ। প্রবৃদ্ধি কমার পাশাপাশি লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারেনি তৈরি পোশাক খাত। লক্ষ্যমাত্রা কমেছে ১৩ দশমিক ৭৪ শতাংশ।

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত ছয় মাসে নিট পোশাক রফতানি থেকে আয় এসেছে ৮২০ কোটি ৫ লাখ ডলার। যা আগের বছরের একই সময়ের ৫ দশমিক ১৬ শতাংশ কম। একইসঙ্গে লক্ষ্যমাত্রা কমেছে ১০ দশমিক ৪৮ শতাংশ। অন্যদিকে ওভেন পোশাক রফতানি করে আয় হয়েছে ৭৮১ কোটি ৮২ লাখ ডলার। যা ২০১৮-১৯ অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ কম। পাশাপাশি ১৬ দশমিক ৯২ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা কমেছে ওভেনে।

ইপিবির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছরের জুলাই-নবেম্বর সময়ে পাট ও পাটজাত পণ্যের রফতানি আয়ের প্রবৃদ্ধি ২১ দশমিক ৫৫ শতাংশ ও লক্ষ্যমাত্রা ২৭ দশমিক ৭ শতাংশ বেড়েছে। এ সময়ে এ খাত থেকে আয় এসেছে ৫১ কোটি ১৭ লাখ ডলার। চলতি অর্থবছরের ছয় মাসে ১০ দশমিক ৬১ শতাংশ কম প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে চামড়াজাত পণ্য রফতানিতে। এ খাত থেকে আয় এসেছে ৪৭ কোটি ৫৮ লাখ ডলার। লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রফতানি আয় কমেছে ১০ দশমিক ৪৮ শতাংশ। গত অর্থবছরজুড়েও চামড়াজাত পণ্য রফতানিতে আয় ও লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি।

এদিকে গত ছয় মাসে প্লাস্টিক পণ্যে প্রবৃদ্ধি বেড়েছে শূন্য দশমিক ৫৭ শতাংশ। এ সময়ে আয় হয়েছে ৫ কোটি ৬৮ লাখ ডলার, যা লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ২২ দশমিক ৬ শতাংশ কম। গত ছয় মাসে হোম টেক্সটাইল খাতে প্রবৃদ্ধি ও লক্ষ্যমাত্রা দুটিই কমেছে। এ সময় আয় এসেছে ৩৭ কোটি ১ লাখ ডলার। ২০১৯-২০ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর মাস শেষে কৃষি পণ্য রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়লেও প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়নি। এ খাত থেকে আয় এসেছে ৫২ কোটি ৩৯ লাখ ডলার। লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রফতানি আয় বেড়েছে ১ দশমিক ২১ শতাংশ। অন্যদিকে আগের অর্থবছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধি কমেছে ৩ দশমিক ৮১ শতাংশ।

রপ্তানি আয়ে নতুন খাঁড়া মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধাবস্থা

চার মাস পর ডিসেম্বরে পণ্য রপ্তানিতে বাংলাদেশ সামান্য প্রবৃদ্ধির দেখা পেলেও মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের দামামা ভয় ধরাচ্ছে ব্যবসায়ীদের মনে।

তারা মনে করছেন, মার্কিন হামলায় ইরানের সামরিক কমান্ডার নিহতের ঘটনায় যে উত্তেজনা শুরু হয়েছে, তাতে পণ্য রপ্তানিতে নতুন সঙ্কট দেখা দিতে পারে। প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমানোর উপর জোর দিচ্ছেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) রোববার রপ্তানি আয়ের হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) আয় গত বছরের একই সময়ের প্রায় ৬ শতাংশ কমেছে। তবে সর্বশেষ ডিসেম্বর মাসে ৩ শতাংশের মতো বেড়েছে। সুখবর নিয়ে ২০১৯-২০ অর্থবছর শুরু হলেও দ্বিতীয় মাস অগাস্টে এসেই ধাক্কা খায় রপ্তানি আয়। এরপর টানা চার মাস পতনের ধারাই চলতে থাকে। অগাস্ট মাসে গত বছরের অগাস্টের চেয়ে সাড়ে ১১ শতাংশ আয় কম আসে। সেপ্টেম্বরে কমে ৭ দশমিক ৩০ শতাংশ। অক্টোবরে আরও বড় ধাক্কা খায়: এ মাসে কমে ১৭ দশমিক ১৯ শতাংশ। নভেম্বরে কমে প্রায় ১১ শতাংশ। দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ সাবেক সভাপতি ও বাংলাদেশ চেম্বারের বর্তমান সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনাকে দেখছেন ‘মরার উপর খাঁড়ার ঘা’ হিসেবে। তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এমনিতেই আমাদের অবস্থা খারাপ, একটু ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছিলাম। এর মধ্যে যোগ হল যুদ্ধের দামামা। আমাদের অন্যতম প্রধান বাজার যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানি হুমকির মুখে পড়ে গেল।” আমেরিকা-চীনের বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশ কিছুটা সুবিধা পেয়ে এলেও এখন সেটাও অনিশ্চিয়তায় পড়ল বলে মন্তব্য করেন আহসান মনসুর। তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমেরিকার বাজারে আমাদের রপ্তানি বাড়লেও অন্য দেশগুলো থেকে কিন্তু পিছিয়ে পড়ছি। এতোদিন ইউএস মার্কেটে আমরা ৩/৪ নম্বরে ছিলাম। এখন ৭ নম্বরে নেমে এসেছি। এর মধ্যে যদি ‍যুক্তরাষ্ট্র-ইরান যুদ্ধ লেগেই যায়, তাহলে নতুন সঙ্কট যোগ হবে।” ইপিবি’র তথ্যে দেখা যায়, ২০১৯-২০ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বরে এক হাজার ৯৩০ কোটি ২২ লাখ (১৯.৩০ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। এই সময়ে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ হাজার ২১২ কোটি ৭০ লাখ ডলার। প্রথম ছয় মাসে গত অর্থ বছরের একই সময়ের চেয়ে ৫ দশমিক ৮৪ শতাংশ কম আয় হয়েছে। আর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম ১২ দশমিক ৭৭ শতাংশ। গত অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে আয় হয়েছিল ২ হাজার ৫০ কোটি ডলার। সর্বশেষ ডিসেম্বর মাসে রপ্তানি আয় প্রায় ৩ শতাংশ বাড়লেও এই মাসের লক্ষ্যের চেয়ে আয় ছিল ১৩ দশমিক ৫৪ শতাংশ কম। ডিসেম্বরে ৩৫২ কোটি ৫১ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ। লক্ষ্যমাত্রা ধরা ছিল ৪০৭ কোটি ৭০ লাখ ডলার। গত বছরের ডিসেম্বরে আয় হয়েছিল ৩৪২ কোটি ৬১ লাখ ডলার। অন্যান্য পণ্যের মধ্যে জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি বেড়েছে ২২ দশমিক ৫৫ শতাংশ। কৃষি পণ্য রপ্তানি বেড়েছে ১ দশমিক ২১ শতাংশ। ওষুধ রপ্তানি বেড়েছে ৫ দশমিক ৭১ শতাংশ। তবে চামড়া এবং চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি কমেছে ১০ দশমিক ৬১ শতাংশ। হিমায়িত মাছ রপ্তানি কমেছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশ। স্পেশালাইজড টেক্সটাইল রপ্তানি কমেছে ৯ শতাংশ। এই ছয় মাসে শাক-সবজি রপ্তানি বেড়েছে ১১৭ শতাংশ। হ্যান্ডিক্রাফট রপ্তানি বেড়েছে ২ দশমিক ৬৭ শতাংশ। তামাক রপ্তানি বেড়েছে ১৬ শতাংশ। গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ ৪ হাজার ৫৩৫ কোটি ৮২ লাখ (৪০.৫৩ বিলিয়ন) ডলার আয় করে। প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১০ দশমিক ৫৫ শতাংশ। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেড়েছিল ৪ শতাংশ। ২০১৯-২০ অর্থবছরে পণ্য রপ্তানির মোট লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৫৫০ কোটি (৪৫.৫০ বিলিয়ন) ডলার।

পোশাক রপ্তানি কমেছে ৬.২১%

জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে এক হাজার ৬০২ কোটি ৪০ লাখ ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৬ দশমিক ২১ শতাংশ কম। এই ছয় মাসে নিট পোশাক রপ্তানি কমেছে ৫ দশমিক ১৬ শতাংশ। আর উভেন পোশাক রপ্তানি কমেছে ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ। অর্থবছরের প্রথমার্ধে নিট পোশাক রপ্তানি থেকে এসেছে ৮২০ কোটি ৫৮ লাখ ডলার। আর উভেন থেকে এসেছে ৭৮১ কোটি ৮২ লাখ ডলার। হিসাব করে দেখা গেছে, এই ছয় মাসে মোট রপ্তানি আয়ের ৮৩ শতাংশই এসেছে তৈরি পোশাক থেকে। আনোয়ার-উল আলম বলেন, “বিশ্ব রাজনীতিতে অস্থিরতার কারণে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে যে যুদ্ধের গর্জন শোনা যাচ্ছে, তাতে আমেরিকায় আমাদের পোশাক রপ্তানি কমে যেতে পারে। “এ পরিস্থিতিতে ক্রেতারা যে সব দেশ কাছে অথবা লিড টাইম কম- সে সব দেশ থেকে পণ্য কিনবে। কেননা, যুদ্ধ বেঁধে গেলে পণ্য পৌঁছাতে দেরি হবে- এমন ঝুঁকি নেবে না তারা। সে বিবেচনায় আমাদের আমেরিকার অনেক অর্ডার অন্য দেশে চলে যেতে পারে।” বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ভরা মৌসুমের কারণে ডিসেম্বরে কিছুটা ভালো হয়েছে। কিন্তু সার্বিকভাবে অবস্থা সত্যিই খুবই খারাপ। আমাদের সব অর্ডার ভিয়েতনাম-ভারতে চলে যাচ্ছে।” আনোয়ার-উল আলম বলেন, ডিসেম্বরের মতো চলতি জানুয়ারি ও আগামী ফেব্রুয়ারিতেও প্রবৃদ্ধি হতে পারে, তবে তারপর প্রবৃদ্ধি আবার কমে যাবে। “সে হিসাবে অর্থবছর শেষে কিন্তু নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি থাকবে। আর যদি যুদ্ধ লেগে যায়, সেক্ষেত্রে কিন্তু পরিস্থিতি বেশ খারাপ হবে।” রুবানা বলেন, “খুব চিন্তার মধ্যে আছি আমরা। ছোট ও মাঝারি কারখানাগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ৬০টি কারখানা ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। প্রায় ৩০ হাজার শ্রমিক বেকার হয়েছে।” অর্থনীতির বিশ্লেষক আহসান মনসুর বলেন, “মূলত দুটি কারণে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় কমছে। প্রথমত ইউরোপের দেশগুলো আমাদের রপ্তানির প্রধান বাজার। সেখানে এক ধরনের অর্থনৈতিক মন্দা চলছে। সে কারণে সে দেশগুলোর মানুষ খরচ কমিয়ে দিয়েছে। পোশাকসহ অন্যান্য জিনিস কম কিনছে।” ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান আহসান মনসুরের দেখানো দ্বিতীয় কারণটি অভ্যন্তরীণ। “আমাদের নিজস্ব সমস্যা আছে। সেটা হচ্ছে, উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। কিন্তু পণ্যের দাম বাড়ায়নি বায়াররা। প্রতিযোগী দেশগুলো বাজার ধরে রাখতে তাদের মুদ্রার মান কমিয়েছে; আমরা সেটাও করিনি।” দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাতের জন্য এখন নগদ সহায়তাসহ সরকারের নীতি সহায়তা চান বিজিএমইএ সভাপতি। “এই মুহূর্তে আমাদের পলিসি সাপোর্ট দরকার। আমরা রপ্তানি খাতের জন্য টাকা-ডলারের আলাদা বিনিময় রেট চাই। একইসঙ্গে আমরা নগদ সহায়তা ঘোষণার জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ করছি।” “খুব দ্রুত এসব করতে হবে। মনে রাখতে হবে, খুব কঠিন সময় পার করছি আমরা, আমাদের অর্থনীতি। আরও খারাপ অবস্থা যেন না হয় সেজন্যই সব সিদ্ধান্ত দ্রুত নিতে হবে,” বলেন রুবানা। তিনি বলেন, ভারত সরকার তাদের দেশের পণ্য রপ্তানির উপর ৪ শতাংশ নগদ সহায়তা দিচ্ছে। এজন্য তারা ৫০ হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠন করেছে। পাকিস্তান ৭ শতাংশ সহায়তা দিচ্ছে। এই অবস্থায় প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে চীন, ভিয়েতনাম, ভারতসহ অন্য প্রতিযোগী দেশগুলোর মতো টাকার অবম্যূল্যায়নের পরামর্শ দেন অর্থনীতিবিদ আহসান মনসুর। তিনি বলেন, “এই মুহুর্তে যেটা করতে হবে, সেটা হল ডলারের বিপরীতে আমাদের টাকার মান কমাতে হবে। যে কাজটি আমাদের কমপিটিটর দেশ চীন, ভারত ও ভিয়েতনাম প্রতিনিয়ত করছে। আমাদেরও এখন সেই কাজটি করতে হবে।” টাকার অবমূল্যায়নের কথা কিছু দিন ধরে অর্থনীতিবিদরা বললেও অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল গত সপ্তাহেও বলেছেন, তেমন কোনো পরিকল্পনা তার নেই।

লক্ষ্য থেকে বহু দূরে রপ্তানি আয়

রপ্তানি আয়ে পড়েছে শকুনের দৃষ্টি। অব্যাহতভাবে কমছে আয়। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে রপ্তানি আয়ের ধস আরও বড় হয়েছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরের ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) ১ হাজার ৯৩০ কোটি ২১ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই আয় গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৫ দশমিক ৮৪ শতাংশ কম। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কমেছে ১২ দশমিক ৭৭ শতাংশ। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। গতকাল রবিবার পণ্য রপ্তানি আয়ের এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।

হালনাগাদ তথ্য থেকে দেখা যায়, ডিসেম্বর মাসে প্রবৃদ্ধি ও লক্ষ্যমাত্রা স্পর্শ করতে পারেনি দেশের তৈরি পোশাক খাত। চলতি অর্থবছরের ছয় মাসে ১ হাজার ৬০২ কোটি ৪০ লাখ ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এই আয় গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৭ দশমিক ৭৪ শতাংশ কম। একই সঙ্গে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় আয় কমেছে ১৩ দশমিক ৬৩ শতাংশ। এদিকে একক মাস হিসেবে ডিসেম্বরে রপ্তানি আয় অর্জিত হয়েছে ৩৫২ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪০৭ কোটি ৭০ লাখ ডলার।

ইপিবির প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে সব ধরনের পণ্য রপ্তানিতে বৈদেশিক মুদ্রার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৫৫০ কোটি মার্কিন ডলার। ২০১৮-১৯ অর্থবছর শেষ রপ্তানি আয় অর্জিত হয়েছে ৪ হাজার ৫৩ কোটি ৫০ লাখ ৪ হাজার ডলার। চলতি অর্থবছর প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) রপ্তানির আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ হাজার ২১২ কোটি ডলার। এই ছয় মাসে রপ্তানি আয় এসেছে ১ হাজার ৯৩০ কোটি ২১ লাখ মার্কিন ডলার, যা লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ১৩ দশমিক ৭৪ শতাংশ কম। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে রপ্তানি আয় অর্জিত হয়েছিল ২ হাজার ৪৯ কোটি ৯৮ লাখ ডলার। সে হিসাবে রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি কমেছে ৫ দশমিক ৮৪ শতাংশ। এদিকে একক মাস হিসেবে ডিসেম্বরে রপ্তানি আয় বাড়লেও পূরণ হয়নি লক্ষ্যমাত্রা। নভেম্বরে যেখানে মোট রপ্তানি আয় হয়েছিল ৩০৫ কোটি ৫৮ লাখ ডলার, সেখানে ডিসেম্বরে আয় বেড়ে হয়েছে ৩৫২ কোটি ৫০ লাখ ডলার। অবশ্য গত বছরের ডিসেম্বরে আয় হয়েছিল ৩৪২ কোটি ৬১ লাখ ডলার। সে হিসেবে এই ডিসেম্বরে আগের বছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২ দশমিক ৮৯ শতাংশ।

জানা যায়, দেশের রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮৫ শতাংশ আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে। এই খাত থেকে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রপ্তানি আয় এসেছিল ৩ হাজার ৪১৩ কোটি ৩২ লাখ ডলার। ২০১৯-২০ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে তৈরি পোশাক খাতে পণ্য রপ্তানি থেকে আয় অর্জিত হয়েছে ১ হাজার ৬০২ কোটি ৪০ লাখ ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে আয় এসেছিল ১ হাজার ৭০৮ কোটি ৪৯ লাখ ডলার। সে হিসেবে এ খাতে প্রবৃদ্ধি কমেছে ৬ দশমিক ২১ শতাংশ। প্রবৃদ্ধি কমার পাশাপাশি লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারেনি তৈরি পোশাক খাত। লক্ষ্যমাত্রা কমেছে ১৩ দশমিক ৭৪ শতাংশ।

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত ছয় মাসে নিট পোশাক রপ্তানি থেকে আয় এসেছে ৮২০ কোটি ৫ লাখ ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫ দশমিক ১৬ শতাংশ কম। একই সঙ্গে লক্ষ্যমাত্রা কমেছে ১০ দশমিক ৪৮ শতাংশ। অন্যদিকে ওভেন পোশাক রপ্তানি করে আয় হয়েছে ৭৮১ কোটি ৮২ লাখ ডলার, যা ২০১৮-১৯ অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ কম। পাশাপাশি ১৬ দশমিক ৯২ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা কমেছে ওভেনে।

ইপিবির প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০১৯-২০ অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর সময়ে পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি আয়ের প্রবৃদ্ধি ২১ দশমিক ৫৫ শতাংশ ও লক্ষ্যমাত্রা ২৭ দশমিক ৭ শতাংশ বেড়েছে। এ সময়ে এ খাত থেকে আয় এসেছে ৫১ কোটি ১৭ লাখ ডলার। চলতি অর্থবছরের ছয় মাসে ১০ দশমিক ৬১ শতাংশ কম প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে চামড়াজাত পণ্য রপ্তানিতে। এ খাত থেকে আয় এসেছে ৪৭ কোটি ৫৮ লাখ ডলার। লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রপ্তানি আয় কমেছে ১০ দশমিক ৪৮ শতাংশ। গত অর্থবছর জুড়েও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানিতে আয় ও লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি।

এদিকে গত ছয় মাসে প্লাস্টিক পণ্যে প্রবৃদ্ধি বেড়েছে শূন্য দশমিক ৫৭ শতাংশ। এ সময় আয় হয়েছে ৫ কোটি ৬৮ লাখ ডলার, যা লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ২২ দশমিক ৬ শতাংশ কম। গত ছয় মাসে হোম টেক্সটাইল খাতে প্রবৃদ্ধি ও লক্ষ্যমাত্রা দুটিই কমেছে। এ সময় আয় এসেছে ৩৭ কোটি ১ লাখ ডলার। ২০১৯-২০ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর মাস শেষে কৃষিপণ্য রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়লেও প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়নি। এ খাত থেকে আয় এসেছে ৫২ কোটি ৩৯ লাখ ডলার। লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রপ্তানি আয় বেড়েছে ১ দশমিক ২১ শতাংশ। অন্যদিকে আগের অর্থবছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধি কমেছে ৩ দশমিক ৮১ শতাংশ।

তৈরি পোশাক খাতে আয় কমলেও বেড়েছে পাটজাত পণ্যে

তৈরি পোশাক, চামড়া, প্লাস্টিকসহ বড় বড় খাতে রফতানি ও রফতানি আয় কমেছে। যার প্রভাবে এ খাতে নেতিবাচক ধারা অব্যাহত রয়েছে। চলতি ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের ষষ্ঠ মাস ডিসেম্বরে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রফতানি কমেছে ১২ দশমিক ৭৭ শতাংশ। অর্জিত আয় আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে পাঁচ দশমিক ৮৪ শতাংশ কম। তবে আলোচিত সময়ে পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানি বেড়েছে।

গতকাল রোববার রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের রফতানি আয়ের সিংহভাগই তৈরি পোশাক খাতের ওপর নির্ভরশীল। বিশ্ববাজারে পোশাকের চাহিদা কম। বছরের শুরু থেকেই রফতানি আদেশ কমেছে। সঙ্গে সঙ্গে পণ্যের মূল্যও কমেছে। এছাড়া অবকাঠামোগত সমস্যা, ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন না করা, ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদহারসহ বিভিন্ন কারণে রফতানি কমে গেছে। রফতানি বাড়াতে প্রতিযোগী দেশগুলোর সঙ্গে তালমিলিয়ে সরকারকে সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে। পাশাপাশি একক পণ্যের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনার লক্ষ্যে রফতানি পণ্য বহুমুখীকরণে জোর দিতে হবে। তা না হলে আগামীতে রফতানি আয় আরও কমে যাবে।

ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে (জুলাই-ডিসেম্বর) পণ্য রফতানি আয়ের লক্ষ্য ঠিক করা হয় দুই হাজার ২১২ কোটি মার্কিন ডলার। এর বিপরীতে রফতানি আয় হয়েছে এক হাজার ৯৩০ কোটি ডলার। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১২ দশমিক ৭৭ শতাংশ কম। একইসঙ্গে গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় রফতানির এ হার পাঁচ দশমিক ৮৪ শতাংশ কম।

ইপিবির তথ্য বলছে, একক মাস হিসাবে গেল ডিসেম্বরে রফতানি আয় হয়েছে ৩৫২ কোটি ৫০ লাখ ডলার। লক্ষ্য ছিল ৪০৭ কোটি ৭০ লাখ ডলার। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ডিসেম্বরে রফতানি আয় কমেছে ১৩ দশমিক ৫৪ শতাংশ। এছাড়া একক মাস হিসাবে প্রবৃদ্ধি বেড়েছে ২ দশমিক ৮৯ শতাংশ। গত বছরের ডিসেম্বরে রফতানি আয় হয়েছিল ৩৪২ কোটি ৬১ লাখ ডলার।

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে মোট রফতানি আয়ে পোশাকের অবদান প্রায় ৮৩ শতাংশ। তবে হোমটেক্স, টেরিটাওয়েলসহ এ খাতের অন্যান্য উপখাত হিসাব করলে তৈরি পোশাক খাতের অবদান ৮৫ শতাংশে দাঁড়াবে। তাই তৈরি পোশাকের রফতানি কমলে তার প্রভাব পড়ে পুরো রফতানি খাতে।

আলোচিত সময়ে তৈরি পোশাক খাতের রফতানি আয় কমেছে। অর্থবছরের ডিসেম্বর শেষে পোশাক রফতানি করে বাংলাদেশ আয় করেছে এক হাজার ৬০২ কোটি ৪০ লাখ ডলার। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৩ দশমিক ৭৪ শতাংশ কম। এ সময় রফতানি প্রবৃদ্ধিও কমেছে দশমিক ৬ দশমিক ২১ শতাংশ।

চলতি অর্থবছরের বড় খাতগুলোতেও রফতানি আয় কমেছে। চলতি অর্থবছরের ডিসেম্বর শেষে কৃষিপণ্য রফতানিতে আয় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩ দশমিক ৫১ শতাংশ কম হয়েছে। ডিসেম্বর শেষে কৃষিপণ্য রফতানিতে বাংলাদেশ আয় করেছে ৫২ কোটি ৩৯ লাখ ডলার।

প্লাস্টিক পণ্য রফতানির প্রবৃদ্ধি সামান্য বাড়লেও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় কমেছে ২২ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ। ছয় মাসে এ খাতে আয় হয়েছে পাঁচ কোটি ৬৮ লাখ ৬০ হাজার ডলার। ছয় মাসে লক্ষ্যমাত্রা ছিল সাত কোটি ২৯ লাখ ৫০ হাজার ডলার।

আলোচিত সময়ে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রফতানির প্রবৃদ্ধি কমেছে , অর্জন হয়নি লক্ষ্যমাত্রাও। ছয় মাসে চামড়াজাত খাত থেকে রফতানি আয় এসেছে ৪৭ কোটি ৫৮ লাখ ডলার। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১০ দশমিক ৪৮ শতাংশ কম। প্রবৃদ্ধিও কমেছে ১০ দশমিক ৬১ শতাংশ।

আলোচিত সময়ে পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানি বেড়েছে। ডিসেম্বর শেষে পাট ও পাটজাত পণ্য রফতারি করে বাংলাদেশ আয় করেছে ৫১ কোটি ১৭ লাখ ডলার। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৭ দশমিক ৭ শতাংশ বেশি। প্রবৃদ্ধিও গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২১ দশমিক ৫৫ শতাংশ বেড়েছে।

ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, গত ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে পণ্য রফতানি করে চার হাজার ৫৩ কোটি ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ। এ আয় গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১০ দশমিক ৫৫ শতাংশ বেশি। যা নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩ দশমিক ৯৪ শতাংশ বেশি।

চলতি অর্থবছরে (২০১৯-২০২০) রফতানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৪ বিলিয়ন বা পাঁচ হাজার ৪০০ কোটি ডলার। এর মধ্যে পণ্য খাতে রফতানির লক্ষ্য সাড়ে ৪৫ বিলিয়ন এবং সার্ভিস সেক্টরে সাড়ে আট বিলিয়ন ডলার। যা গত অর্থবছরের রফতানি আয়ের চেয়ে ১৫ দশমিক ২০ শতাংশ বেশি।

বন্ধ হয়ে গেছে ১৫টি শিল্প-কারখানা

গাজীপুরের কোনাবাড়ীতে অবস্থিত ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেট জয়দেবপুর বা বিসিক শিল্পনগরীতে নিয়মিত ব্যাংকঋণ পরিশোধ করতে না পারা, বিদেশী কার্যাদেশ কমে যাওয়া, স্থানীয় শ্রমিক নেতাদের অযৌক্তিক নানা দাবি-দাওয়াসহ বিবিধ কারণে বন্ধ হয়েছে অন্তত ১৫ শিল্প-কারখানা। বিসিক কর্তৃপক্ষ বলছে, এরইমধ্যে বন্ধ হওয়া শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকে নোটিস দেয়া হয়েছে এবং নিয়মানুযায়ী এ বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

বিসিক সূত্রে জানা গেছে, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প-কারখানার উন্নয়নে ১৯৯৭ সালে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের পাশে ৪৪ দশমিক ৫০ একর জায়গার ওপর এ শিল্পনগরীটি গড়ে ওঠে। এখানে ২৭৪টি প্লট রয়েছে। এসব প্লটের মধ্যে ১৪৫টি শিল্প ইউনিট আছে। এগুলোর মধ্যে নির্মাণাধীন রয়েছে ছয়টি ইউনিট। অন্যদিকে ১৫টি শিল্প ইউনিট নিষ্ক্রিয় বা রুগ্ণ। বন্ধ কারখানাগুলো দ্রুত চালু করার জন্য সংশ্লিষ্ট শিল্প মালিকদের চিঠি দিয়ে তাগাদা দিচ্ছে বিসিক কর্তৃপক্ষ। তবে নানা জটিলতায় চালু করতে না পেরে অনেকেই শিল্প ইউনিট হস্তান্তর করছেন নতুন উদ্যোক্তাদের কাছে।

শিল্পনগরী ঘুরে দেখা গেছে, একসময় লাভজনক ও সম্পূর্ণ রফতানিমুখী তৈরি পোশাক কারখানা নাইটিঙ্গেল ফ্যাশন লিমিটেড গত সেপ্টেম্বর মাস থেকে বন্ধ। নিটিং অ্যান্ড ডায়িংসহ এখানে থাকা কোম্পানিটির তিনটি কারখানার সবগুলোর কার্যক্রমই এখন বন্ধ।

কোম্পানিটির এমডি আব্দুস সালাম মাসুম বলেন, বিদেশী ক্রেতাদের কার্যাদেশ কমে যাওয়ার পাশাপাশি ট্রেড লাইসেন্স নবায়নে সমস্যা, নানা ইস্যুতে আন্দোলন, শ্রমিক নেতাদের উৎপাতসহ নানা সমস্যার কারণে কারখানাগুলো বন্ধ করে দিতে হয়েছে। তিনি জানান, চলতি জানুয়ারি থেকে কারখানাগুলো ফের চালুর জন্য চেষ্টা হচ্ছে।

শুধু নাইটিঙ্গেল নয়, এ শিল্পনগরীতে এ রকম আরো ১৫ শিল্প ইউনিট বন্ধ রয়েছে। এসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হচ্ছে মেসার্স তুলসী স্টিল ইন্ডাস্ট্রিজ, ম্যাক্স ড্রাগ লিমিটেড, হাজি প্লাস্টিক লিমিটেড, পারিজাত কেমিক্যাল অ্যান্ড মিনারেলস লিমিটেড, ব্রাইট টিউব ইত্যাদি। এছাড়া অনেকে কারখানা চালু করতে না পেরে নতুন উদ্যোক্তার কাছে শিল্প ইউনিট হস্তান্তর করছেন। শিহাব নামে একজন উদ্যোক্তা হাজি প্লাস্টিক লিমিটেডের কারখানায় শিগগিরই তৈরি পোশাক কারখানার কার্যক্রম শুরু করবেন বলে জানান।

বিসিক শিল্পনগরী কোনাবাড়ীর কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান রাসেল জানান, ঢাকার খুব কাছে অবস্থিত এটি একটি ইমাজিং শিল্পনগরী। এখানকার সমস্যাগুলো সমাধান করতে পারলে এটি দেশের জিডিপিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে। সম্প্রতি বন্ধ হওয়া কারখানাগুলোকে নোটিস দেয়া হয়েছে। প্লট খালি করতে অথবা হস্তান্তরের জন্য নিয়মানুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ হবে।

এদিকে গাজীপুর জেলা বিসিক কর্মকর্তা নজরুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘কারখানা মালিকদের সঙ্গে কথা জানা গেছে, মূলত ব্যাংক থেকে নেয়া ঋণ পরিশোধে ব্যর্থতার কারণেই অধিকাংশ কারখানা বন্ধ হয়েছে।’

তবে এ শিল্পনগরীসংশ্লিষ্ট অধিকাংশ লোকজনই এখানকার ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনা ও রাস্তাঘাটের বেহাল অবস্থা নিয়ে নানা ভোগান্তির কথা বলেছেন। তাদের মতে, বিদেশী ক্রেতাদের কথা চিন্তা করে এখানকার অবকাঠামো উন্নয়ন জরুরি।

শিল্পনগরী ঘুরে দেখা গেছে, বিসিক অফিসের পাশ দিয়ে প্রধান যে সড়কটি ভেতরে প্রবেশ করেছে, সেটির নানা জায়গা ভাঙা এবং কার্পেটিং উঠে গিয়ে ছোটখাটো গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। পল্লী বিদ্যুতের পাশের সড়কটিরও একই দশা। মাশরিকি টেক্সটাইল ও লাইফ টেক্সটাইলের সামনের রাস্তাসহ অনেক সড়কের ওপর পানি জমে রয়েছে। গর্ত সৃষ্টি হয়ে তার মধ্যে জমে থাকা পানি ছড়িয়ে পড়ছে আশপাশে। অধিকাংশ ড্রেনের অবস্থা নাজুক, ময়লা-আবর্জনা জমে চলাচলের পথ বন্ধ হয়ে পানি উপচে পড়ছে। ড্রেন দিয়ে পানি নিষ্কাশিত না হওয়ায় সামান্য বৃষ্টিতে রাস্তায় জমে থাকে। লাইফ টেক্সটাইলের ম্যানেজার (অ্যাডমিন) শোয়েব আহমেদ খান জানান, সামান্য বৃষ্টি হলেই রাস্তাঘাট পানিতে ডুবে যায়। তখন মাল বোঝাই গাড়ি ও এখানে কর্মরত কর্মীদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়।

বিসিক কর্তৃপক্ষ জানায়, বেশ কয়েকটি রাস্তার কাজ করা হয়েছে, বাকি রাস্তাগুলোও পর্যায়ক্রমে মেরামত করা হবে। আর ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনার জন্যও পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে এবং কিছু জায়গায় কাজ করা হয়েছে বলে দাবি কর্তৃপক্ষের।  

উন্নত প্রযুক্তিতে পোশাক শিল্পে চাকরি হারানোর শঙ্কা

পোশাকশিল্পে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে। এতে ৬০ ভাগ শ্রমিকের চাকরি হারানোর শঙ্কা তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি এ খাতে প্রতিনিয়ত ট্রেড ইউনিয়নের সংখ্যাও বাড়ছে। কিন্তু সেভাবে তাদের কোন কার্যক্রম নেই। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ-বিলস এর গবেষণায় এ সব তথ্য উঠে এসেছে। এছাড়াও ৯৫ শতাংশ পোশাক শ্রমিককে অতিরিক্ত কাজ করতে বাধ্য করা হয় বলে দাবি সংগঠনটির। দেশের রফতানি আয়ের অন্যতম উৎস পোশাক খাত। সার্বিক জিডিপিতে এর অবদান ১৮ ভাগ। এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত আছে প্রত্যক্ষভাবে প্রায় ৪০ লাখ শ্রমিক। যাদের প্রায় ৬১ ভাগই নারী। এছাড়াও প্রায় ১ কোটি মানুষের বিভিন্নভাবে কর্মসংস্থান হয়েছে এ শিল্পের মাধ্যমে। কিন্তু এ খাতে নানা সঙ্কটের কারণে গত এক দশকে নারীদের অংশগ্রহণ কমে যাওয়ার পাশাপাশি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে অনেক পোশাক কারখানা। সোমবার বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ-বিলসের শোভন কাজ ও কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে এক গবেষণায় উঠে আসে বিভিন্ন তথ্য। প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ায় কমছে নারীদের অংশগ্রহণ। গবেষণা বলছে, প্রযুক্তির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে শ্রমিকদের কোন প্রশিক্ষণ, কারখানা মালিকরা দেয় না। এতে চাকরি হারানোর শংকায় ৬০ শতাংশ শ্রমিক। গত ছয় বছরে পোশাকশিল্পে ট্রেড ইউনিয়নের সংখ্যা ৫০ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৫৩তে। এদেরও নেই কোন যথাযথ কার্যক্রম। বিলসের গবেষণা বলছে, এ খাতের ৯৭ ভাগ শ্রমিকই আছেন ইউনিয়নের বাইরে। ফলে তাদের ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার পুরোপুরি নিশ্চিত হয়নি। গবেষণায় দেখা যায়, শ্রম আইনে ৮ ঘণ্টার পর বাড়তি ২ ঘণ্টা কাজ করার কথা থাকলেও ৯৫ ভাগ শ্রমিককেই অতিরিক্ত কাজ করতে বাধ্য করা হয়।

RMG BANGLADESH NEWS