Home বাংলা নিউজ পণ্য রপ্তানি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে: কর্মবিরতি

পণ্য রপ্তানি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে: কর্মবিরতি

export

কর্মবিরতির কারণে চট্টগ্রাম বন্দরে টেইলার চলাচল বন্ধ থাকায় জাহাজ থেকে সরাসরি জেটিতে রাখা হচ্ছে কনটেইনার। ছবিটি গতকাল বিকেলে তোলা l সৌরভ দাশকনটেইনার পরিবহনকারী গাড়ির মালিক ও শ্রমিকদের কর্মবিরতির কারণে গতকাল মঙ্গলবার চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে পণ্যবোঝাই ১৭৭ একক কনটেইনার রপ্তানি করা যায়নি। কনটেইনারবাহী গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকায় এসব রপ্তানি পণ্যের কনটেইনার এখনো ডিপোতে আটকা পড়ে আছে। কর্মবিরতির কারণে পণ্য রপ্তানি কার্যত বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে।

বন্দর সূত্রে জানা গেছে, গতকাল ভোরে জোয়ারের সময় এমভি আরসুলা নামের একটি জাহাজ মালয়েশিয়ার পোর্ট কেলাং বন্দরের উদ্দেশে চট্টগ্রাম বন্দরের জেটি ত্যাগ করে। রপ্তানি পণ্যভর্তি ১৭৭ একক কনটেইনার না পেয়ে জাহাজটি বন্দরের জেটি ত্যাগ করেছে। একই প্রতিষ্ঠানের পরিচালনাধীন এমভি এক্সপ্রেস লোটসি জাহাজও রপ্তানি পণ্যের ৬৭০ একক কনটেইনার জাহাজে বোঝাই করতে পারেনি। আজ বুধবার ভোরে এটির বন্দরের জেটি ছেড়ে যাওয়ার কথা। একইভাবে ওইএল কলম্বো নামের আরেকটি জাহাজও রপ্তানি পণ্যভর্তি অন্তত ৫০ একক কনটেইনার পায়নি।

কনটেইনার পরিবহনের গাড়ির মালিক ও শ্রমিকদের সংগঠন চট্টগ্রাম প্রাইম মুভার ট্রেইলার মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের ডাকে গত সোমবার সকাল আটটা থেকে এ কর্মবিরতি শুরু হয়। মহাসড়কে ওজন স্কেলে কনটেইনারবাহী গাড়ির চালকদের হয়রানি করার অভিযোগ এনে গত রোববার রাতে এ কর্মসূচি ডাকা হয়। কর্মসূচির কারণে এই সংগঠনের আওতাধীন আট হাজার গাড়িতে আমদানি-রপ্তানি পণ্যবোঝাই কনটেইনার আনা-নেওয়া বন্ধ রয়েছে। এসব গাড়ি ছাড়া কনটেইনার পরিবহন করা যায় না।

রপ্তানি পণ্য বিদেশি ক্রেতার হাতে তুলে দেওয়ার দায়িত্বে নিয়োজিত ফরোয়ার্ডারদের সংগঠন ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক খায়রুল আলম প্রথম আলোকে জানান, বন্দর থেকে রপ্তানি পণ্যবোঝাই জাহাজগুলো নেওয়া হবে সিঙ্গাপুর, পোর্ট কেলাং, তানজুং পেলেপাস ও কলম্বো বন্দরে। সেখানে অপেক্ষমাণ ইউরোপ-আমেরিকাগামী বড় জাহাজে তুলে দেওয়া হবে। বন্দর থেকে নির্ধারিত জাহাজে তুলে দেওয়া না গেলে ওই চারটি বন্দরে অপেক্ষমাণ বড় জাহাজেও পণ্য পরিবহনের সময়সূচি রক্ষা করা যাবে না। এতে পুরো রপ্তানি খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

রপ্তানি পণ্য পরিবহনের প্রক্রিয়া অনুযায়ী, সারা দেশ থেকে কাভার্ড ভ্যানে পণ্য এনে চট্টগ্রামের ১৬টি কনটেইনার ডিপোতে রাখা হয়। এরপর সেখানে রপ্তানি পণ্য কনটেইনারে বোঝাই করা হয়। পরে প্রাইম মুভার ট্রেইলার গাড়িতে এসব কনটেইনার নেওয়া হয় বন্দরে। সেখান থেকে জাহাজে তুলে দেওয়া হয়। বাংলাদেশ কনটেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশনের (বিকডা) সচিব রুহুল আমিন সিকদার প্রথম আলোকে জানান, ‘প্রতিদিন অন্তত দেড় হাজার একক রপ্তানি পণ্যের কনটেইনার ডিপো থেকে কনটেইনার পরিবহনকারী গাড়িতে বন্দরে নিয়ে জাহাজে তুলে দেওয়া হয়। এখন ডিপোতে রপ্তানি কনটেইনারের স্তূপ বাড়ছে।’

গতকাল বন্দর চত্বরে ঘুরে দেখা গেছে, বন্দর চত্বর ও বাইরে অসংখ্য ট্রেইলর দাঁড়িয়ে আছে। কর্মসূচি অব্যাহত থাকলে বন্দরের কার্যক্রম ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যাবে বলে ব্যবহারকারী ব্যক্তিরা জানান। প্রসঙ্গত, গত ১৬ আগস্ট সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ এক প্রজ্ঞাপনে গাড়িভেদে পণ্য পরিবহনের পরিসীমা বেঁধে দেয়। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, কনটেইনার পরিবহনকারী গাড়ি মালামালসহ ৩৩ টন পর্যন্ত পণ্য পরিবহন করতে পারবে। এর বেশি হলে স্তরভেদে ২ থেকে ১২ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা দিতে হবে। গত শনিবার থেকে এ প্রজ্ঞাপন কার্যকর করা হয় বলে মালিক-শ্রমিকেরা জানান।

চট্টগ্রাম প্রাইম মুভার ট্রেইলার মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক গোলাম মাওলা গতকাল সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘নতুন নিয়ম কার্যকর করার পর থেকে মহাসড়কে ওজন স্কেলে গাড়িচালক ও শ্রমিকেরা মারধরের শিকার হয়েছেন। হয়রানির প্রতিবাদে বাধ্য হয়েই এ কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে।’ কনটেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশন জানায়, কর্মবিরতির কারণে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত চট্টগ্রামের ১৬টি ডিপোতে আটকা পড়েছে রপ্তানি পণ্যের ৩ হাজার ৪৫২ একক কনটেইনার। এসব কনটেইনার রাতের মধ্যে বন্দরে নেওয়া না গেলে জাহাজে তুলে দেওয়া যাবে না। সে ক্ষেত্রে আজ বুধবার পাঁচটি জাহাজকেও রপ্তানি পণ্য ছাড়া বন্দর ছাড়তে হবে। আটকা পড়া কনটেইনারের সিংহভাগই পোশাকশিল্পের পণ্য।

তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ এবং মালিক-শ্রমিক এই দুই পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টি সুরাহা করার চেষ্টা করছি। কারণ কনটেইনার পরিবহনকারী গাড়ি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় রপ্তানি খাতে বড় ক্ষতি হচ্ছে। প্রতিদিন অন্তত ৬০০ কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি হয়। পণ্য রপ্তানিতে ব্যাঘাত হলে যদি বিমানেও পরিবহন করতে হয়, তাহলেও দিনে অন্তত ৫০ থেকে ৬০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ গুনতে হবে ব্যবসায়ীদের।’ সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এম এ এন ছিদ্দিক মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেখান থেকে পিছু হটার সুযোগ নেই। রাষ্ট্রের স্বার্থে সড়ক ও সেতুগুলো ঠিক রাখার জন্য এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পণ্য পরিবহন বেশি করতে হলে গাড়ির চাকার সংখ্যাও বাড়াতে হবে।’