Home বাংলা নিউজ শ্রমিকের উৎসব ভাতা দিয়েছে ২৯% পোশাক কারখানা

শ্রমিকের উৎসব ভাতা দিয়েছে ২৯% পোশাক কারখানা

rmg labour

উৎসব ভাতা দিতে সরকারের বেঁধে দেওয়া সময়সীমা গত রোববার শেষ হয়েছে। তবে সেটি মেনেছেন মাত্র সাড়ে ২৯ শতাংশ পোশাক কারখানার মালিক। ফলে সাড়ে ৭০ শতাংশ কারখানার শ্রমিকই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে উৎসব ভাতা পাননি।

প্রকৃত চিত্র এটি হলেও রোববার পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর নেতারা বলেছিলেন, অধিকাংশ কারখানার শ্রমিক ভাতা পেয়েছেন। আর শ্রমিকনেতাদের দাবি ছিল, ৫০-৭৫ শতাংশ কারখানা শ্রমিকের ভাতা দেয়নি। গতকাল সোমবার শিল্প পুলিশ বলেছে, রোববার পর্যন্ত গাজীপুর, আশুলিয়া-সাভার, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামের মাত্র ২৯ দশমিক ৫০ শতাংশ পোশাক কারখানা শ্রমিকদের উৎসব ভাতা দিয়েছে।

পোশাকসহ অন্য শিল্পকারখানার পরিস্থিতি পর্যালোচনায় শ্রম মন্ত্রণালয়ের গঠিত ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্টবিষয়ক কোর কমিটি গত মাসে পোশাকশ্রমিকদের ভাতা ২০ রমজানের মধ্যে দিতে কারখানার মালিকদের সময় বেঁধে দিয়েছিল। কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের (ডিআইএফই) হিসাব অনুযায়ী দেশে ৪ হাজার ৮০৯টি পোশাক কারখানা আছে। এই কারখানার অধিকাংশই বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর সদস্য।

শিল্প পুলিশের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গাজীপুর, আশুলিয়া-সাভার, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামের ৩ হাজার ২১০ পোশাক কারখানার মধ্যে ৯৪৭টি রোববার পর্যন্ত শ্রমিকের উৎসব ভাতা দিয়েছে। এর মধ্যে আশুলিয়া ও সাভার এলাকার ৭৬৬ কারখানার মধ্যে ২৪৪টি শ্রমিকদের উৎসব ভাতা দিয়েছে। গাজীপুরের ৯৫৫ কারখানার মধ্যে ২৮৯টি ভাতা দিয়েছে। নারায়ণগঞ্জের ৬৩৭ কারখানার মধ্যে ভাতা দিয়েছে ২৮৪টি। চট্টগ্রামে ৮৫২ কারখানার মধ্যে ১৩০টি শ্রমিকের উৎসব ভাতা দিয়েছে। আর জুন মাসের বেতন দিয়েছে মাত্র ৪০টি পোশাক কারখানা।

জানতে চাইলে শিল্প পুলিশের মহাপরিচালক (ডিজি) আবদুস সালাম গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘বড় কারখানাগুলো ইতিমধ্যে উৎসব ভাতা দিয়ে দিয়েছে। তবে আজ (সোমবার) অনেক কারখানা ভাতা দিচ্ছে। আমাদের ধারণা, আজকের হিসাব ধরলে শ্রমিকদের ভাতা দেওয়া পোশাক কারখানার সংখ্যা সব মিলিয়ে ৫০-৬০ শতাংশ হতে পারে।’ আবদুস সালাম আরও জানান, শিল্প পুলিশ গাজীপুর, আশুলিয়া-সাভার, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামের কারখানাগুলো তদারকি করে। এর বাইরে ঢাকায় হাজার-বারো শ কারখানা আছে। ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, মানিকগঞ্জ, পাবনা, নীলফামারীর সৈয়দপুরেও অল্প কিছু পোশাক কারখানা আছে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক-কর্মচারী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম বলেন, ঢাকার পোশাক কারখানাগুলোর মধ্যে হাতে গোনা কয়েকটি ভাতা দিয়েছে। সব মিলিয়ে উৎসব ভাতা দেওয়ার হার এখনো সন্তোষজনক নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।

রোববার বিজিএমইএর সহসভাপতি মাহমুদ হাসান খান প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ৭০ শতাংশ কারখানা উৎসব ভাতা দিয়ে দিয়েছে। গতকাল শিল্প পুলিশের তথ্য-উপাত্ত জানিয়ে তাঁর কাছে রোববারের বক্তব্যের ব্যাখ্যা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা ৪৪৫টি কারখানার ওপর একটি জরিপ করেছিলাম। এ ছাড়া সব কারখানাই সময়মতো ভাতা দেবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। তার বাইরে বিভিন্ন কারখানার মালিকের সঙ্গে কথা বলে আমরা আনুমানিক একটি সংখ্যা বলেছিলাম।’

এদিকে সরকারের বেঁধে দেওয়া সময়সীমার মধ্যে ভাতা পরিশোধে ব্যর্থ মালিকদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি করেছেন কয়েকজন শ্রমিকনেতা। তাঁরা বলছেন, সরকার চাপে পড়ে একটি ঘোষণা দেয়, তবে কোনো ধরনের তদারকি করে না। ব্যর্থদের শাস্তি দেয় না। এতে করে শেষ পর্যন্ত অনেক শ্রমিকই ন্যায্য পাওনা পান না। কিছু শ্রমিককে খালি হাতেও বাড়ি ফিরতে হয়।

শ্রমিকের পাওনা পরিশোধে ব্যর্থ মালিকদের শাস্তির আওতায় আনা প্রয়োজন কি না—জানতে চাইলে মাহমুদ হাসান খান বলেন, ‘কোন আইনের আওতায় আপনি শাস্তি দেবেন?’ তিনি আরও বলেন, ‘শ্রমিকেরা বেতন-ভাতা পাচ্ছে কি না, সেটাই আসল কথা। সে ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা নেই। আর সরকার একটি সময়সীমা ঘোষণা করে, যাতে করে মালিকেরা চাপে থাকে।’