Home বাংলা নিউজ জিএসপি প্লাস সুবিধা পেতে প্রস্তুতি নেয়ার পরামর্শ

জিএসপি প্লাস সুবিধা পেতে প্রস্তুতি নেয়ার পরামর্শ

GSP

ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জিএসপি প্লাস কর্মসূচি থেকে বাংলাদেশকে সুবিধা অর্জনের জন্য এখন থেকেই প্রস্তুতি গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন বাণিজ্য বিশ্লেষকরা। তারা বলেছেন, জিএসপি প্লাস অর্জন করতে হলে ২৭টি শর্ত পূরণ করতে হয়। এর মধ্যে প্রধান শর্ত হল- গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, সুশাসন বাস্তবায়ন, শ্রমিকদের অধিকার এবং কমপ্লায়েন্স (কারখানার নিরাপত্তা ও উন্নত কর্মপরিবেশ) নিশ্চিত করা। তাই জিএসপি প্লাস সুবিধা পেতে বাংলাদেশকে প্রস্তুতি নিতে হবে। বিশেষ করে পোশাক খাতের বাইরে সরবরাহ, রফতানি এবং প্রতিযোগিতা সক্ষমতা আরও বাড়াতে হবে। পাশাপাশি কীভাবে পোশাক খাত এবং এর বাইরে আরও সুবিধা নেয়া যায়, তার প্রতিও সরকার ও উদ্যোক্তাদের মনোনিবেশে জোর দিতে হবে।

মঙ্গলবার ঢাকায় হোটেল লা মেরিডিয়ানে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ট্রেড ডিভিশনের উদ্যোগে আয়োজিত ‘দ্য মিডটার্ম ইভালুয়েশন অব দ্য ইইউ’স জিএসপি’ শীর্ষক দিনব্যাপী কর্মশালায় বক্তারা এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন, ঢাকায় নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত পিয়েরি মায়াদুন, ইউরোপীয় কমিশনের বাণিজ্যবিষয়ক ডিরেক্টর জেনারেল ড্যানিয়েল ক্রামার, ইউরোপীয় ইউনিয়নের জিএসপি ইভেলুয়েশন টিমের প্রধান উইলিয়াম ভেন্ডার গিস্ট। মুখ্য আলোচনায় বক্তব্য দেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. মোস্তাফিজুর রহমান ও বাংলাদেশ ফরেন ট্রেড ইন্সটিটিউটের (বিএফটিআই) প্রধান নির্বাহী আলী আহমেদ। এছাড়া কর্মশালায় ‘ইভেলুয়েশন প্রসেস অ্যান্ড অবজেকটিভস’ সম্পর্কে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষ থেকে একটি ‘প্রেজেনটেশন’ তুলে ধরা হয়। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস চেয়ারম্যান ‘ইবিএ : বাংলাদেশ পার্সপেকটিভ’ শীর্ষক একটি উপস্থাপনাও তুলে ধরেন। এ সময় ঢাকায় নিযুক্ত ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূতসহ উন্নয়ন সহযোগী বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার প্রতিনিধি এবং বাংলাদেশের সরকারি ও বেসরকারি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

কর্মশালায় সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ২০২৩ সালে নতুন যে জিএসপি পলিসি করবে সেটা নিয়ে পরিকল্পিতভাবে এগোতে হবে বাংলাদেশকে। নতুন পলিসি আমাদের মতো দেশের আর্থিক, সামাজিক, শ্রমিক অধিকার এবং পরিবেশের ওপর কী ধরনের প্রভাব ফেলবে, তা চিহ্নিত করতে হবে। কারণ বাংলাদেশ যখন এলডিসি (স্বল্পোন্নত দেশ) থেকে বের হয়ে যাবে তখন আর রফতানি থেকে ইবিএ (এভরিথিং বাট আমর্স) সুবিধা মিলবে না। ওই সময় আমাদের জিএসপি প্লাসের মধ্যে যেতে হবে। তিনি দাবি করেন, আমাদের হিসাব মতে, এখানে যেতে এখনও অনেক সময় আছে। তবে আমাদের এখনই প্রস্তুতি নিতে হবে।

বিএফটিআইর প্রধান নির্বাহী আলী আহমেদ বলেন, ইইউতে তিন ধরনের বাজার সুবিধা রয়েছে। এর মধ্যে এলডিসিভুক্ত দেশগুলো পায় ইবিএ সুবিধা। অর্থাৎ অস্ত্র ছাড়া সব পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা। দ্বিতীয়টি হল স্ট্যান্ডার্ড জিএসপি। যেখানে কিছু পণ্য কম ডিউটি সুবিধা পাবে আর কিছু পণ্যে ডিউটি দিতে হবে। তৃতীয়টি হল জিএসপি প্লাস।

যেখানে এরই মধ্যে পাকিস্তান, বলিভিয়াসহ ৮টি দেশ প্রবেশ করেছে। এখানে যেতে হলে আমাদের ২৭টি শর্ত পূরণ করতে হবে।

জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, আগামীতে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে প্রবেশ কর?বে। তাই পণ্যের অগ্রাধিকারমূলক বাজার সুবিধা (জিএসপি) নয়, বরং এখন থেকেই জিএসপি প্লাসের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। তিনি ব?লেন, জিএসপি প্লাস সুবিধা পেতে বাংলাদেশকে বেশ কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে। এরই মধ্যে শ্রমিকদের অধিকার, কমপ্লায়েন্স (কারখানার নিরাপত্তা ও উন্নত কর্মপরিবেশ) নিশ্চিতে আমা?দের বেশ অগ্রগ?তি হয়েছে। অন্য শর্তগু?লো পূর?ণের কাজ শুরু ক?রে?ছি। আশা কর?ছি, যথাসম্ভব স্বল্প সময়ে আমরা জিএসপি প্লাস অর্জন কর?তে পারব।

ইউরোপীয় ইউনিয়নে জিএসপি সুবিধার ইতিবাচক দিক উল্লেখ করে তোফায়েল আহমেদ আরও বলেন, ইইউর ‘এভ্রিথিংস বাট আর্মস (ইবিএ)- কর্মসূচি’র আওতায় বাংলাদেশকে দেয়া রফতানি ক্ষেত্রে ডিউটি ও কোটা ফ্রি সুবিধা বাংলাদেশের কর্মসংস্থান ও আর্থসামজিক উন্নয়নে খুবই ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে। এর ফলে সার্বিক রফতানি বিশেষ করে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের রফতানি দিন দিন বাড়ছে। এতে করে কারখানায় বিশেষ করে মহিলাদের কাজের সুযোগ উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন দেশে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা দ্রুত কমে আসছে এবং আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব উন্নতি হচ্ছে। এজন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের অবদান অনেক। বাংলাদেশ তা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করে। তাই ভবিষ্যতেও ইইউর জিএসপি প্লাস সুবিধা পেতে বাংলাদেশ কাজ শুরু করেছে বলে জানান তিনি।