Home বাংলা নিউজ নতুন বাজারে পোশাক রপ্তানিতে ধাক্কা

নতুন বাজারে পোশাক রপ্তানিতে ধাক্কা

তৈরি পোশাক খাতের নতুন বাজারে রপ্তানি আয় বাড়াতে সরকারের নানা উদ্যোগ সত্ত্বেও আশানুরূপ আয় বাড়ছে না। চলতি অর্থবছরের (২০১৬-১৭) জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত গত আট মাসে মোট রপ্তানি আয়ের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১.৭৯ শতাংশ। অথচ গত অর্থবছরের একই সময়ে দেশের তৈরি পোশাক খাতের প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৮.৬৭ শতাংশ। তবে বিশ্ববাজারে চাহিদা কমে যাওয়া, আমেরিকার নির্বাচন, ব্রেক্সিট পরবর্তী ইউরোর দরপতনের কারণে এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন এ খাতের উদ্যোক্তারা।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) এবং পোশাক খাতের সংগঠন বিজিএমইএ সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরে নতুন বাজারে গত আট মাসে পোশাক খাতের রপ্তানি আয় হয়েছে ২৮৫ কোটি ৫১ লাখ ডলার। আর ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এ আয় ছিল ২৮০ কোটি ৫০ লাখ ডলার। অর্থাৎ গত আট মাসে নতুন বাজারগুলোতে রপ্তানি আয় পাঁচ কোটি ডলার বাড়লেও গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রবৃদ্ধি কমেছে প্রায় ৭ শতাংশ।

ইউরোপ, আমেরিকা, কানাডা ছাড়া অন্য বাজারগুলোকে অপ্রচলিত তথা নতুন বাজার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এসব বাজারে রপ্তানি আয় বাড়াতে সরকার পোশাক রপ্তানিকারকদের নগদ সহায়তা দেয়। ২০০৯-১০ সালে প্রথম ৫ শতাংশ নগদ সহায়তা দেওয়া শুরু হয়। এরপর ২০১০-১১ অর্থবছরে ৪ শতাংশ এবং ২০১১-১২ থেকে নতুন বাজারগুলোতে ২ শতাংশ করে নগদ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে ভারত, চীন, রাশিয়া, জাপান, দক্ষিণ আফ্রিকা, তুরস্ক, ব্রাজিল, চিলি, মেক্সিকো, সাউথ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডে রপ্তানি আয় বাড়ছে।

অপ্রচলিত বা নতুন বাজারগুলোর মধ্যে গত আট মাসে সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হয়েছে জাপানে। দেশটিতে ৫১ কোটি ৫২ লাখ ডলার পোশাক রপ্তানি হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ায় ৩৯ কোটি ৪৩ লাখ, ব্রাজিলে ছয় কোটি ৫৭ লাখ, চিলিতে তিন কোটি ৭৯ লাখ, চীনে ২৫ কোটি ৬২ লাখ, ভারতে আট কোটি ৯২ লাখ, কোরিয়ায় ১১ কোটি, মেক্সিকোয় আট কোটি ১০ লাখ, রাশিয়ায় ২২ কোটি ১৩ লাখ এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় রপ্তানি হয়েছে তিন কোটি ৮২ লাখ ডলার। আর এ সময় অস্ট্রেলিয়ায় সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি হলেও জাপানে রপ্তানি বেশি হয়েছে।

ইপিবির পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, ২০০৮ সালে অপ্রচলিত বাজারগুলোতে রপ্তানি আয় ছিল মাত্র ৮০ কোটি ডলার। আর গত অর্থবছরে এ আয় (২০১৫-১৬) দাঁড়িয়েছে ৩৯০ কোটি ডলার।

জানতে চাইলে তৈরি পোশাক খাতের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘নতুন বাজারগুলোতে প্রচুর সম্ভাবনা থাকলেও সম্প্রতি বিশ্ববাজারে পোশাকের চাহিদা কমে যাওয়ায় রপ্তানি আয়েও ধস নেমেছে। ’

তিনি বলেন, গত আট মাসে বিশ্ববাজারে পোশাকের মোট চাহিদা কমেছে প্রায় ৬ শতাংশ। এ ছাড়া ইউরোর দরপতন, ব্রেক্সিট এবং আমেরিকার নির্বাচনের কারণেও রপ্তানি আয়ে প্রভাব পড়েছে। তবে এ বাজারগুলোয় আরো বাজার বাড়াতে আমরা কাজ করছি। তিনি আরো বলেন, যদিও বর্তমানে তৈরি পোশাক খাতে বাজার কিছুটা নিম্নমুখী তার পরও জাপান, রাশিয়া, চীন এবং চিলির বাজারে বেশ সম্ভাবনা রয়েছে।

ইপিবির পরিসংখ্যানে দেখা যায়, এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে জাপান থেকেই সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হয়। গত জুলাই ও ফেব্রুয়ারি মাসে জাপানে মোট রপ্তানি হয়েছে ৫১ কোটি ৫২ লাখ ডলার। এ সময় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২.৫৮ শতাংশ। উদ্যোক্তাদের প্রত্যাশা চলতি অর্থবছরের শেষের দিকে এ আয় ১০০ কোটি ডলারে ছাড়াতে পারে।

বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, স্বল্পোন্নত দেশগুলোর (এলডিসি) জন্য জাপান ওভেন ও নিট পণ্যে তাদের রুলস অব অরিজিন শিথিল করেছে। জাপান চীনের কাছ থেকে বছরে ৪০ বিলিয়ন (চার হাজার কোটি ডলারের পণ্যে প্রায় ৮০ শতাংশ) পোশাক আমদানি করত। কিন্তু চীনের ওপর নির্ভরতা কমাতে তারা অন্য বাজারগুলো থেকে আমদানি শুরু করেছে।

বিজিএমইএর সাবেক সহসভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম কালের কণ্ঠকে বলেন, জাপান রুলস অব অরিজিন শিথিল করা, চায়না প্লাসের ফলে বাংলাদেশের পোশাকের রপ্তানি আয় বাড়ছে দেশটিতে। এ ছাড়া উন্নতমানের পণ্যে প্রতিযোগিতামূলক দাম দেওয়ার ফলে এটা হচ্ছে।