Home বাংলা নিউজ বিশ্ব মাতাচ্ছে পাটপণ্য

বিশ্ব মাতাচ্ছে পাটপণ্য

২০২০ সালের মধ্যে শুধু যুক্তরাষ্ট্রের বাজারেই দেড় হাজার কোটি ডলারের শপিং ব্যাগের বাজার তৈরি হবে

কি হয় না পাট দিয়ে? ঘরের দৈনন্দিন ব্যবহার্য জিনিসপত্র থেকে শুরু করে বিশ্বের নামিদামি গাড়ির ভেতরের বাক্স, বডি, কাপড়, বিছানার চাদর, টুপি, ফার্নিচার, শার্ট, প্যান্ট এমনকি জিন্সও এখন তৈরি হচ্ছে পাট থেকে। শুধু তাই নয়, তৈরি হচ্ছে পাট পাতার চা। গত কয়েক বছর আগেও যে পাট ছিল কৃষকের গলার ফাঁস তা আবার কৃষকের মুখের হাসি হয়ে ফিরছে। শুধু দেশেই নয়, পাটপণ্য এখন বিশ্ব মাতাচ্ছে। রপ্তানি হচ্ছে বিশ্বের ১১৮টির বেশি দেশে। পরিবেশবান্ধব পণ্য হিসেবে বিশ্বে পাটপণ্যের কদর ক্রমেই বাড়ছে।

এ দিকে সোনালি আঁশ পাটের ব্যবহার বাড়াতে সরকার পাটের তৈরি পরিবেশবান্ধব ‘পলিথিন’ উত্পাদনের উদ্যোগ নিয়েছে। ইতোমধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে পলিথিন উত্পাদন শুরু করা হয়েছে। আগামী তিন মাসের মধ্যে প্রকল্পের মাধ্যমে বড় পরিসরে কাজ শুরু হবে।

এ প্রসঙ্গে বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম ইত্তেফাককে বলেন, একসময় পাট দিয়ে শুধু দড়ি, চট, ছালা তৈরি হতো। কিন্তু পাট দিয়ে এখন শতশত ধরনের ব্যবহার্য জিনিসপত্র তৈরি হচ্ছে। তিনি বলেন, সরকারি উদ্যোগে করিম জুট মিলে একটি স্বতন্ত্র ইউনিট তৈরি হচ্ছে। সেখানে পাটের শপিং ব্যাগ, শৌখিন এবং আসবাব সামগ্রী তৈরির কাঁচামাল উত্পাদিত হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পুরনো যন্ত্রপাতির কারণে জুট মিলস করপোরেশনের (বিজেএমসি) পাটকল-গুলোর উত্পাদন ক্ষমতা অর্ধেকে নেমে এসেছে। এ সব কারখানাকে আবার পুরোদমে উত্পাদনে নিয়ে আসতে চীনের সহায়তায় আধুনিকায়নের কাজ চলছে।

বাড়ছে পাট ও পাটপণ্যের চাহিদা: বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে ১১৮টি দেশে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি হচ্ছে। যা থেকে গত অর্থ বছরে আয় হয়েছে সোয়া ৭ হাজার কোটি টাকা। আর চলতি অর্থ বছরের প্রথম ছয় মাসে আয় হয়েছে সাড়ে ৪ হাজার কোটি। যা আগের বছর একই সময়ের তুলনায় প্রায় ১২ শতাংশ বেশি। এ ছাড়া গত বছর ৭০০ কোটি টাকার শুধু পাটপণ্যই রপ্তানি হয়েছে। যা ৫ বছর আগে ২০১২ সালে ছিল মাত্র ৩৭০ কোটি টাকা। বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছেন, চলতি বছর এক কোটি বেলের বেশি পাট রপ্তানি হবে। আগামী মৌসুমে ১০ কোটি বেল পাট উত্পাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে বলে তিনি জানান।

পাট বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল জুট স্টাডি গ্রুপের হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে বিশ্বে বছরে পাঁচ হাজার কোটি পিস শপিং ব্যাগের চাহিদা রয়েছে। গত বছর থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে প্লাস্টিকের ব্যাগ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক প্রাকৃতিক আঁশ সমিতির হিসাব অনুযায়ী, ২০২০ সালের মধ্যে শুধু যুক্তরাষ্ট্রের বাজারেই দেড় হাজার কোটি ডলারের শপিং ব্যাগের বাজার তৈরি হবে। এতে পাটের তৈরি পণ্যের বড় ধরনের চাহিদা তৈরি হবে।

পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট জানিয়েছে, বর্তমানে ডেনিম উত্পাদনে দেশি পাট ব্যবহার করা হচ্ছে। এ ছাড়া আগে থেকেই সুতামিশ্রিত কাপড় তৈরিসহ অন্যান্য কাপড় উত্পাদনে পাটকে কাজে লাগানো হচ্ছে। এর বাইরেও পাটের বহুমুখী ব্যবহার বাড়াতে নিবিড় গবেষণা চলছে।

পাটপণ্য রপ্তানিকারকরা জানিয়েছে, সরকারের পর্যাপ্ত সহযোগিতা পেলে বিশ্বে বাংলাদেশের পাট তার হারানো গৌরব ফিরে পাবে। তারা জানান, বিশ্বে পাটপণ্যের কয়েক বিলিয়ন ডলারের বাজার আছে। যদি উন্নত মানের পাটপণ্য তৈরি করে এ বাজারে প্রবেশ করানো যায় তা হলে এ খাত থেকে বিপুল পরিমাণ রপ্তানি আয় সম্ভব।

এ প্রসঙ্গে বহুমুখী পাটপণ্যের বড় উদ্যোক্তা ক্রিয়েশন প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাশিদুল করিম মুন্না গতকাল ইত্তেফাককে বলেন, বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের পাটপণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বর্তমানে আমরা যেসব পাটপণ্য উত্পাদন করছি তার বাইরেও আরো নতুন নতুন পাটপণ্য তৈরির সুযোগ রয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশ থেকে কাঁচা পাট নিয়ে পাটপণ্য তৈরি করে আন্তর্জাতিক চাহিদার একটি বড় অংশের যোগান দেয় ভারত। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবদান নামমাত্র। কিন্তু নিজেদের কাঁচামাল দিয়ে সাশ্রয়ী দামে পাটপণ্য তৈরি করে বিদেশের বাজার ধরার বড় সুযোগ রয়েছে আমাদের। এ সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে সত্যিকার অর্থে পাট তার হারানো গৌরব ফিরে পাবে।