Home Bangla Recent পোশাক মালিকরা না চাইলেও শিল্পের জন্য ভালো বলছে জোট

পোশাক মালিকরা না চাইলেও শিল্পের জন্য ভালো বলছে জোট

অ্যাকর্ডের সময় বাড়ানোর সিদ্ধান্ত

তৈরি পোশাক ক্রেতাদের সংগঠন অ্যাকর্ডের সময় বাড়ানোর সিদ্ধান্তে পোশাক খাতে জটিলতা তৈরি হয়েছে। সংগঠনটি সময় বাড়ানোর এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের পোশাক খাতের জন্য ভালো বললেও বিরোধিতা করছেন পোশাক খাতের কারখানা মালিকরা। পোশাক মালিকদের সঙ্গে কোন আলোচনা না করেই অ্যাকর্ড এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলেও অভিযোগ করছেন তারা। তবে অ্যাকর্ড বলছে সিদ্ধান্তের বিষয়ে পোশাক মালিকদের বড় সংগঠন বিজিএমইএকে শীঘ্রই এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে। আর সংশ্লিষ্ট বিশ্লেষকরা বলছেন অ্যাকর্ড বা বিজিএমইএ নয় সময় বাড়বে কি বাড়বে না তার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত সরকারই নিবে। অ্যাকর্ড তাদের প্রস্তাব জানাতে পারে মাত্র।

২০১৪ সালের ২৪ এপ্রিল রানা প্লাজা ধসের পর সাসটেইনেবল কমপ্যাক্টের মাধ্যমে অ্যাকর্ড গঠিত হয়। প্রায় ২০০ ব্র্যান্ড ও ক্রেতা প্রতিষ্ঠান এবং বৈশ্বিক ট্রেড ইউনিয়ন অ্যাকর্ডের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ আছে। চুক্তিবদ্ধ ব্র্যান্ড ও ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের পোশাক তৈরির কাজ করে এমন প্রায় ১ হাজার ৬০০ কারখানার কর্মপরিবেশ উন্নয়নের দায়িত্বে আছে অ্যাকর্ড। আগামী বছরের মে মাসে তাদের কার্যক্রম গোটানোর কথা ছিল। কিন্তু সম্প্রতি আরও তিন বছর বাংলাদেশে তাদের কার্যক্রমের মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২১ সাল পর্যন্ত করার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইউরোপের ক্রেতাদের সমন্বয়ে গঠিত জোট। ফলে আগামী বছরের জুনের পর আরও তিন বছর তাদের পরিদর্শনের আওতায় থাকা এক হাজার ছয়শ’ কারখানা ভবনের কাঠামো, অগি্ন, বৈদ্যুতিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেখভাল করবে তারা।

তবে অ্যাকর্ডের এভাবে সরকার বা বিজিএমইএর সঙ্গে কোন আলোচনা না করে সময় বাড়ানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়াকে নীতিবিরোধী বলছেন সংশ্লিষ্টরা। কোন পক্ষই চাইছেন না অ্যাকর্ড বা অ্যালায়েন্সের মতো কোন ক্রেতা সংগঠন এদেশে থাকুক। এ নিয়ে কারখানা মালিকদের মধ্যে অস্বস্তি তৈরি হয়েছে। তারা চান না অ্যাকর্ড বর্তমানের মতো নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরীক্ষার নামে ট্রেড ইউনিয়নসহ অন্য বিষয়ে খবরদারি করুক। মেয়াদ বাড়াতে চাইলে সরকার ও বিজিএমইকে সঙ্গে নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে বলেও মনে করছেন কারখানা মালিকরা।

এ নিয়ে তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ অ্যাকর্ডকে একটি চিঠিও পাঠিয়েছে। ই-মেইলের মাধ্যমে সেটি পাঠানো হয়। পরে তার জবাবে অ্যাকর্ড বলেছে তৈরি পোশাক শিল্পের কর্মপরিবেশ উন্নয়নে ২০২১ সাল পর্যন্ত থাকার বিষয়টি পোশাক খাতের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানাবে। অ্যাকর্ডের নির্বাহী পরিচালক রবওয়েজ গত সোমবার বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষকে এক ই-মেইল বার্তার মাধ্যমে বিষয়টি জানিয়েছেন। এতে তিনি জানান, অ্যাকর্ডের নতুন সংস্করণের নিয়মকানুনের বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে। বিজিএমইএর সহ-সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

বিজিএমইএর সহ-সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু বলেন, আমরা মনে করি আগামী বছরের মধ্যে অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সভুক্ত সব কারখানার সংস্কার কাজ সম্পন্ন হয়ে যাবে। ফলে তাদের থাকার প্রয়োজন নেই। তবুও তারা যদি কার্যক্রম সম্প্রসারণ করতে চায়, সে জন্য সরকার ও বিজিএমইএকে জানাতে হবে। সরকার ও মালিকপক্ষের সঙ্গে সমন্বিতভাবে তা করতে হবে। সময় বাড়ানোর প্রাথমিক সিদ্ধান্তের পর এ বিষয়টি আমরা তাদের ইতোমধ্যে জানিয়েছি।

তিনি বলেন, তারা বাংলাদেশ সরকার এবং পোশাক শিল্পের দুই সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএকে বাদ দিয়েই সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে। এ বিষয়ে অ্যাকর্ডের মূল অংশীদারেরা প্রতিশ্রুতি না দিলেও আলোচনা হওয়ার কথা ছিল। সেটি না হওয়ায় আমরা উদ্বিগ্ন। আরেকটি কারণ হচ্ছে, তারা একের পর এক আওতা বাড়াচ্ছে। অ্যাকর্ডের নতুন সংস্করণ অনুযায়ী, কোম্পানিগুলো বাংলাদেশ থেকে পোশাকের পাশাপাশি অন্য যেসব কারখানা থেকে পণ্য কেনে, চাইলে সেসব কারখানাও পরিদর্শনের আওতায় নিতে পারবে তারা। সেটি সুতা, কাপড়, প্যাকেজিং জুতার কারখানা হতে পারে। আগে বিষয়টি থাকলেও এবার বেশি জোর দেয়া হচ্ছে। আমাদের কথা হচ্ছে, পোশাকের মতো অন্য কারখানার নিরাপত্তা নিশ্চিত করলে আপত্তি নেই। তবে এ কাজের জন্য জাতীয় উদ্যোগ আছে। ফলে অন্য কারখানায় কাজ করতে গিয়ে অ্যাকর্ডের সময়কালই কেবল বাড়বে। এছাড়া প্রশিক্ষণের নামে অ্যাকর্ড কারখানাগুলোতে শ্রমিক সংগঠনের অধিকারের বিষয়ে খবরদারি করার চেষ্টা চালাবে। কিন্তু এই কাজ করার জন্য শ্রম মন্ত্রণালয়, আন্তর্জাতিক শ্রম সংগঠন (আইএলও) ও ৫০টির বেশি ফেডারেশন আছে।

এদিকে বিষয়টি সম্প্রতি চার দেশের কূটনীতিকদের নিয়ে বৈঠক করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। বৈঠকে সময়সীমা বাড়ানোর বিষয়ে এককভাবে কোন সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে সরকারের পক্ষ থেকে তাদের অনুরোধ করা হয়েছে। বৈঠকে বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত পিয়েরে মায়াদুন, যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শা স্টিফেন্স বস্নম বার্নিকাট, কানাডিয়ান হাইকমিশনার ও নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূত উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিত ছিলেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই, বিজিএমইএর শীর্ষ নেতা ছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি খাত উন্নয়ন বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানও।

বৈঠক শেষে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, সিদ্ধান্তটি নেওয়ার আগে অ্যাকর্ডের উচিত ছিল বাংলাদেশ সরকারসহ সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গে আগে আলোচনা করা। সিদ্ধান্তটি প্রত্যাশিত নয় বলে বৈঠক জানিয়েছি। অ্যাকর্ড প্রস্তাব দিতে পারে, কিন্তু সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে পারে না।

তবে অ্যাকর্ড প্রতিনিধিরা বলছেন, ইউরোপীয় ক্রেতাদের জোট অ্যাকর্ড একটি ইনডিপেনডেন্ট বডি বা স্বাধীন সংগঠন। ব্র্যান্ড ও ক্রেতা প্রতিষ্ঠান এবং বৈশ্বিক ও স্থানীয় ট্রেড ইউনিয়নের দ্বিপক্ষীয় চুক্তির মাধ্যমে অ্যাকর্ড গঠিত হয়েছিল। অ্যাকর্ডের সব সিদ্ধান্ত নেয় স্টিয়ারিং কমিটি। সেই কমিটিতে আছেন ব্র্যান্ড ও ক্রেতা প্রতিষ্ঠান এবং বৈশ্বিক ও স্থানীয় ট্রেড ইউনিয়নের প্রতিনিধিরা। তিন বছর সময় বাড়ানোর সিদ্ধান্তটি তারাই নিয়েছে। ফলে এটিকে একতরফা বলা যাবে না। এমনকি অ্যাকর্ডকে দোষারোপ করা মূল্যহীন; বরং ব্র্যান্ড ও ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলা যেতে পারে। ছয় মাস থেকে এক বছর ধরে অ্যাকর্ডের সময় বাড়ানো নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল। ব্র্যান্ড ও ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা বিজিএমইএর নেতাদের অবহিত করেছিলেন।

অ্যাকর্ডের এই সিদ্ধান্ত দেশের পোশাক খাতের জন্য ভালৌ বলেও মনে করছেন তারা। এ বিষয়ে অ্যাকর্ডের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য আমিরুল হক আমিন বলেন, অ্যাকর্ডের সময় বাড়ানোর সিদ্ধান্তের কারণে তৈরি পোশাক শিল্পের যথেষ্ট ভালো হবে। কারণ, রানা প্লাজা ধসের পর বিদেশি ক্রেতা প্রতিষ্ঠান দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। বিদেশের ভোক্তাদের মনে এমন প্রতিচ্ছবি তৈরি হয়েছিল যে বাংলাদেশের পোশাক শিল্প মানেই তাজরীন ফ্যাশনস আর রানা প্লাজা। কানাডার কিছু বিক্রয়কেন্দ্রে ‘উই ডু নট সেল বাংলাদেশি প্রোডাক্ট’ লেখা সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দিয়েছিল। এমন পরিস্থিতিতে পোশাক কারখানার কর্মপরিবেশ উন্নয়নে অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্স গঠিত হয়। পরে সরকারও উদ্যোগ নেয়। ফলে ধীরে ধীরে ক্রেতা ও ভোক্তাদের আস্থা ফিরে আসে। অ্যাকর্ডের অধীনে থাকা কারখানাগুলো অনেক সংস্কারকাজ শেষ করেছে। তবে আরও কাজ বাকি আছে। তাই তাদের সময় লাগবে। আমি মনে করি না, অ্যাকর্ডের কারণে পোশাক শিল্পের কোন ক্ষতি হবে। বরং কর্মপরিবেশের উন্নতি হবে, তাতে বাংলাদেশি পণ্যের প্রতি ক্রেতাদের আগ্রহ ও আস্থা আরও বাড়বে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here