Home Bangla Recent তৈরী পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তারা হতাশ

তৈরী পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তারা হতাশ

বন্ধ হচ্ছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি কারখানা ; বন্দর সঙ্কট মারাত্মক ; বাড়ছে লোকসান

বিশ্বসেরা কারখানার তালিকায় শীর্ষে উঠে এসেছে বাংলাদেশী তৈরী পোশাক কারখানার নাম। মিরসরাই রফতানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকায় (ইপিজেড) গার্মেন্ট পল্লী করার জন্য জমি বরাদ্দ পেয়েছে বিজিএমইএ। অর্থবছরের প্রথম আট মাসে রফতানি আয়ে ৮ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে। কিন্তু এত কিছুর পরও চরম হতাশ তৈরী পোশাক শিল্প খাতের উদ্যোক্তারা। কারণ প্রবৃদ্ধির সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে লোকসানও। গ্যাস-বিদ্যুৎ সঙ্কটের সমাধান হয়নি। মারাত্মক হয়ে দেখা দিয়েছে বন্দর সঙ্কট। ফলস্বরূপ প্রতিনিয়ত বন্ধ হয়ে যাচ্ছে নিত্যনতুন কারখানা।

রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) রফতানি আয় দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৪৩৯ কোটি ৭০ লাখ ডলার। এর আগের অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল দুই হাজার দুই কোটি ৭১ লাখ ডলার; অর্থাৎ রফতানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ দশমিক ৩৮ শতাংশ। গত আট মাসের রফতানির ল্যমাত্রা ছিল দুই হাজার ৪৪০ কোটি দুই লাখ ডলার। এ সময়ে রফতানি আয় ল্যমাত্রা শূন্য দশমিক ২ শতাংশ কম অর্জিত হয়েছে। এ দিকে অর্থবছরে আট মাসে দুই হাজার ২৫ কোটি ৬০ লাখ ডলারের পোশাক রফতানি করেছে বাংলাদেশ। এ সময়ে পোশাক রফতানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৮ দশমিক ৬৮ শতাংশ। পাশাপাশি ল্যমাত্রার চেয়ে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ৩ দশমিক ২১ শতাংশ।

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে নির্মাণাধীন অর্থনৈতিক অঞ্চলে এরই মধ্যে প্রায় ৮০০ একর জমি বরাদ্দ পেয়েছেন পোশাক শিল্পসংশ্লিষ্টরা। এর মধ্যে বিজিএমইএকে ৫০০ একর জমি বরাদ্দ দিতে সম্প্রতি চুক্তি স্বারিত হয়েছে। এ ছাড়া অনন্ত গ্রুপসহ পোশাক শিল্পের আরো কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে ৩০০ একর জমি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বিজিএমইএর জন্য স্টক রাখা হয়েছে আরো ৭০০ একর জমি। ক্রেতাদের আস্থা বাড়াতে সব ধরনের অবকাঠামো সুবিধাসহ একটি মডেল পোশাকপল্লী গড়ে তোলা হচ্ছে সেখানে। কমপে ৫০০ কারখানা স্থাপিত হবে এ পল্লীতে। গত ২১ মার্চ রাজধানীর রেডিসন ব্লু হোটেলে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপ (বেজা) এবং বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফেকচারস অ্যান্ড এক্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) মধ্যে মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে গার্মেন্ট পার্ক প্রতিষ্ঠায় ৫০০ একর জমির লিজ গ্রহণে এক সমঝোতা স্মারক স্বার হয়।

এ দিকে অনেকটা নীরবেই বিশালসংখ্যক পরিবেশববান্ধব ও কর্মপরিবেশসম্পন্ন (কমপ্লায়েন্ট) কারখানা স্থাপন হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কারখানা এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও লাভ করেছে। তৈরী পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর হিসাবে এ পর্যন্ত ৬৭টি গার্মেন্ট ও টেক্সটাইল কারখানা ‘গ্রিন ফ্যাক্টরি’ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিলের (ইউএসজিবিসি) স্বীকৃতি পেয়েছে। আরো ২২৭টি কারখানা পরিবেশবান্ধব হিসেবে গড়ে উঠছে। বলা চলে, পরিবেশবান্ধব কারখানা প্রতিষ্ঠার েেত্র একধরনের নীরব বিপ্লব চলছে। তৈরী পোশাক শিল্প মালিকদের দাবি, ইউএসজিবিসির তালিকা অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি পরিবেশবান্ধব স্থাপনা এখন বাংলাদেশে। শুধু তা-ই নয়, পরিবেশবান্ধব কারখানার মান বিচারে বিশ্বের শীর্ষস্থানে থাকা তিনটি কারখানাও বাংলাদেশে। এর মধ্যে দু’টি নারায়ণগঞ্জে আর একটি পাবনার ঈশ্বরদী ইপিজেডে। ইউএসজিবিসির তালিকা অনুযায়ী বিশ্বের শীর্ষ দশে থাকা পরিবেশবান্ধব কারখানার সাতটিই বাংলাদেশের।

এত সুসংবাদ সত্ত্বেও চরম হতাশ রফতানি আয়ে ৮২ শতাংশ অবদান রক্ষাকারী বাংলাদেশের তৈরী পোশাক শিল্প খাতের উদ্যোক্তারা। সবচেয়ে বেশি হতাশায় ভুগছেন ুদ্র ও মাঝারি মানের উদ্যোক্তারা। এদের অনেকেই বাইরে থেকে অর্ডার পান না। সাব-কন্টাক্টে কাজ করান। সময়মতো কাজ না পেলে পড়তে হয় লোকসানে। লোকসান গুনতে না পারলে বন্ধ করে দিতে হয় কারখানা। একবার কারখানা বন্ধ হলেই বাড়ে ব্যাংক ঋণের চাপ। কোনো না কোনো কারখানা বন্ধের খবর আসছে প্রতিদিনই। বিজিএমইএর হিসাবে গত চার বছরে বন্ধ হয়েছে এক হাজার ২০০ তৈরী পোশাক কারখানা। ছয় মাসে বন্ধ হয়েছে ৭০টি।

হতাশার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, সম্প্রতি বিভিন্ন কারণে সমতা হারিয়ে প্রায় এক হাজার ২০০টি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। বিশেষ করে অ্যাকর্ড, অ্যালায়েন্সের পরিদর্শনের পর কিছু কারখানা আংশিক, সাময়িক ও পূর্ণাঙ্গভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। ব্যাংক ঋণ ও বাড়ি ভাড়াসহ অন্যান্য ব্যয় মিটিয়ে অনেকের পে টিকে থাকা সম্ভব হচ্ছে না। এ ছাড়া চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে কঠিন সঙ্কটের মুখে পোশাক শিল্প। তার পরও পোশাক রফতানি আয়ে প্রবৃদ্ধি ও ল্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে। কিন্তু আমরা দুশ্চিন্তায় আছি সামনের দিনগুলো নিয়ে। বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, পোশাক তৈরির উপকরণ বোঝাই জাহাজকে পণ্য খালাসের জন্য দিনের পর দিন অপো করতে হচ্ছে, পণ্য খালাস করতে না পারায় কনটেইনার ভাড়া বাবদ বন্দর ও জাহাজ কোম্পানিকে অতিরিক্ত জরিমানা দিতে হচ্ছে। তিনি বলেন, টানা আড়াই মাসের বেশি ধরে বন্দরে জাহাজ জট চলমান থাকার পরিস্থিতির সাথে এখন যুক্ত হয়েছে জাহাজীকরণ জটিলতাÑ রফতানি কনটেইনার না নিয়েই জাহাজের বন্দর ছেড়ে যাওয়ার ঘটনা, ইতিহাসে কখনই ঘটেনি। এ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে বিদেশী ক্রেতারাও সময়মতো পোশাক পাবে না বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

বন্ধ হওয়া রাজধানীর মহাখালীর রসুলবাগের টেক্স পোর্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরহাদ হোসেন চৌধুরী নিজের দুঃসহ অবস্থার কথা জানিয়ে বলেন, ১৯৯২ সাল থেকে তিনি তৈরী পোশাক ব্যবসায়ের সাথে জড়িত। কমপ্লায়েন্স করতে না পারায় কারখানাটি বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন। তিনি জানান, একসময় আমেরিকা, ইউরোপ ও কানাডার বায়ারদের সাথে কাজ করলেও বর্তমানে কাজ না থাকায় কারখানা বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছেন তিনি। তবে তাকে ব্যাংকের কোটি টাকার ঋণের দায় নিয়ে বন্ধ করতে হয়েছে। তার এ কারখানায় তৈরি হতো শার্ট ও প্যান্ট। তিনি আরো জানান, একই ভবনে থাকা আরো সাতটি কারখানা এরই মধ্যে বন্ধ হয়েছে একই কারণে। নতুন করে বিনিয়োগে গেলেন না কেনÑ জানতে চাইলে ফরহাদ হোসেন জানান, ঢাকার বাইরে বিনিয়োগ করতে হলে ৫০ কোটি থেকে ৬০ কোটি টাকা দরকার। ফলে বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর কোনো সমস্যা না হলেও বন্ধ হচ্ছে ছোট ও মাঝারি কারখানা। তিনি জানান, বেশির ভাগ ুদ্র ও মাঝারি বিনিয়োগকারী কারখানা বন্ধ করে এ ব্যবসা ছেড়ে চলে যাচ্ছেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here