Home Apparel কাঁচা পাট ক্রয় : খুলনা-যশোরের ৯ রাষ্ট্রায়ত্ত মিলে দেড়শ কোটি টাকা বকেয়া

কাঁচা পাট ক্রয় : খুলনা-যশোরের ৯ রাষ্ট্রায়ত্ত মিলে দেড়শ কোটি টাকা বকেয়া

খুলনা-যশোরের রাষ্ট্রায়ত্ত নয় পাটকলে কাঁচা পাট ক্রয়ের ১৫২ কোটি টাকা বকেয়া পড়েছে। শ্রমিক ও কর্মচারীদের মজুরি, বেতন ও বোনাস মিলিয়ে আরো ২৪ কোটি টাকার দেনায় রয়েছে পাটকলগুলো। এ অবস্থায় পাটকলগুলো কোনোমতে কাঁচা পাট ক্রয় ও নামমাত্র উৎপাদনের মাধ্যমে চালু রয়েছে। বিজেএমসির আঞ্চলিক সমন্বয়কারী মো. সাজ্জাত হোসেন বলেন, মজুদকৃত পাটপণ্য বিক্রি করার সব ধরনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। তিনি বলেন, কাঁচা পাট ক্রয়ের ১৫২ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। আর শ্রমিকদের পাঁচ সপ্তাহের মজুরির ২০ কোটি টাকা ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এক মাসের বেতনের ৪ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। এর সঙ্গে আসন্ন ঈদ বোনাসের অর্থ যুক্ত হচ্ছে। তিনি জানান, চলতি বছর জুন মাস নাগাদ কাঁচা পাট ক্রয়ে আলিম জুট মিলে সাড়ে ৮ কোটি, কার্পেটিং জুট মিলে ৫ কোটি, ক্রিসেন্ট জুট মিলে ৩৯ কোটি, ইস্টার্ন জুট মিলে ১৩ কোটি, জেজেআইতে ১৬ কোটি ২৫ লাখ, খালিশপুর জুট মিলে ১৫ কোটি ৬০ লাখ, প্লাটিনাম জুট মিলে ৩০ কোটি ৩৩ লাখ, স্টার জুট মিলে ২০ কোটি ৬৫ লাখ ও দৌলতপুর জুট মিলে সাড়ে ৪ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলে উৎপাদিত ৩০০ কোটি টাকার পাটপণ্য বিক্রি করতে না পারায় আর্থিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে কাঁচা পাট ক্রয়ে হিমশিম খাচ্ছে মিল কর্তৃপক্ষ। আর শ্রমিকদের পাঁচ সপ্তাহের মজুরি ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এক মাসের বেতন বকেয়া পড়েছে। বাংলাদেশ রাষ্ট্রায়ত্ত জুট মিল সিবিএ-নন সিবিএ পরিষদের আহ্বায়ক ক্রিসেন্ট জুট মিলের শ্রমিক নেতা মো. সোহরাব হোসেন বলেন, বিজেএমসি কর্মকর্তাদের অদক্ষতার কারণে উৎপাদিত পাটপণ্য রফতানি হচ্ছে না। সৃষ্টি হচ্ছে না নতুন বাজার। এ কারণে বাড়ছে উৎপাদিত পণ্যের মজুদ। আর শ্রমিকদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। অর্থকষ্টে অর্ধাহারে-অনাহারে দিন পার করছে এসব শ্রমিক পরিবার। পাটকলগুলোয় বর্তমানে পাঁচ সপ্তাহের মজুরি বকেয়া রয়েছে। বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশন (বিজেএমসি) সূত্রে জানা গেছে, খালিশপুর, আটরা-গিলাতলা ও যশোরের অভয়নগর শিল্পাঞ্চলে রাষ্ট্রায়ত্ত নয়টি পাটকল রয়েছে। যার অধিকাংশই ষাটের দশকে স্থাপিত। মিলগুলো হচ্ছে ক্রিসেন্ট, প্লাটিনাম, দৌলতপুর, খালিশপুর (পিপলস), স্টার, ইস্টার্ন, আলিম, কার্পেটিং ও যশোর জুট ইন্ডাস্ট্রি (জেজেআই)। ১৯৭২ সালে এসব পাটকল বিজেএমসির আওতায় আনা হয়। নয়টি পাটকলে ৫ হাজার ১০৯টি তাঁত থাকলেও ২ হাজার ৬০৭টি তাঁত চালু রয়েছে। এসব পাটকলে স্যাকিং (মোটা বস্তা), হেসিয়ান (পাতলা চট), সিবিসি (কার্পেট বেকিং ক্লথ) ও ইয়ার্ন (সুতা) উৎপাদন হচ্ছে। উৎপাদিত এসব পণ্য সিরিয়া, ইরাক, ইরান, সুদান, মিসরসহ বিভিন্ন দেশে রফতানি হয়। বিশ্ববাজারে চাহিদা কমে যাওয়া ও নতুন বাজার সৃষ্টি করতে না পারার কারণে এ পর্যন্ত নয়টি পাটকলে ৩১ হাজার ৩৬৫ মেট্রিক টন (৯৩ হাজার ৬৩৩ বেল) পাটপণ্য অবিক্রীত পড়ে রয়েছে, যার মূল্য প্রায় ৩০০ কোটি টাকা। ক্রিসেন্ট জুট মিলের প্রকল্পপ্রধান বনিজ উদ্দিন মিয়া বলেন, উৎপাদিত পাটজাত পণ্য বিক্রি করা সম্ভব হলে মিলগুলোয় অর্থ সংকট থাকত না। পাটপণ্য বিক্রি না হওয়ার কারণে এখন মৌসুমে প্রয়োজনীয় কাঁচা পাট ক্রয় করাও কঠিন হচ্ছে না। ব্যবসায়ীরা বকেয়া না পেলে নতুন করে আর কাঁচা পাট দিতে আগ্রহী হচ্ছেন না। আর মজুরি না পেলে শ্রমিকরা কাজে যথাযথভাবে মনোনিবেশ করতে পারছেন না। আর্থিক সমস্যার কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সিরিয়া ও সুদানের অভ্যন্তরীণ সমস্যার সমাধান হলেই এ পর্যন্ত উৎপাদিত পাটপণ্য বিক্রি হলে আর্থিক সংকট কেটে যেত। বিজেএমসি সূত্রে জানা গেছে, গত অর্থবছরে পাট ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮ লাখ ৪৭ হাজার ৬৯০ কুইন্টাল। কেনা হয়েছে লক্ষ্যের ৬৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে (২০১৯-২০) পাট ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৮ লাখ ৫৭ হাজার ৯৯০ কুইন্টাল।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here