Home Apparel পোশাক কারখানা নিয়ে সবাই তাকিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দিকে

পোশাক কারখানা নিয়ে সবাই তাকিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দিকে

বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কারণে দেশের পোশাক কারখানা সাময়িক বন্ধের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে গতকাল রবিবার শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসে শ্রম মন্ত্রণালয়। পরিস্থিতি বিচেনায় শ্রমিকদের একটি পক্ষ এখনই পোশাক কারখানা বন্ধের পক্ষে মত দেন। অন্যটি পক্ষ খোলা রেখে সেখানে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে সব ধরনের সুরক্ষা নিশ্চিত করার কথা বলেন। এ অবস্থায় কোনো সিদ্ধান্তে নিতে পারেনি শ্রম মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে শ্রমিক নেতাদের বলা হয়েছে কাল মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে অনুষ্ঠেয় বৈঠক থেকে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত আসতে পারে। শ্রম মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। উপস্থিত ছিলেন শ্রম মন্ত্রণালয়ের সচিব কেএম আলী আজম। এ ছাড়াও পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতারা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। শ্রমিক নেতাদের দুপক্ষই গতকাল বৈঠকে পোশাক শ্রমিকদের বেতন-ভাতাসহ অন্য সুযোগ সুবিধা অব্যাহত রাখার দাবি করেন। তারা বলেন, আন্তর্জাতিক শ্রম আইন অনুযায়ী কোনো পোশাক কারখানা মালিক বা সরকারের পক্ষ থেকে সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হলে শ্রমিকদের কী কী সুবিধা দিতে হবে সে ব্যাপারে স্পষ্ট দিকনির্দেশনা রয়েছে। আলোচনায় অংশ নিয়ে জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম রনি বলেন, ছোট-মাঝারি অনেক কারখানায় এখনো শ্রমিকদের হাত ধোয়ার সাবান পর্যন্ত দিচ্ছে না। মালিকরা শ্রমিকদের বাসা থেকে হাত-পা ধুয়ে আসতে বলছে। শ্রমিকরা ভয়াবহ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে।

এ অবস্থায় কারখানা চালু থাকলে যদি কোনো শ্রমিক করোনায় আক্রান্ত হয়, তার দায় কে নিবে? একজন আক্রান্ত হলে পুরো কারখানায় ছড়িয়ে পড়বে। শ্রমিকরা গা ঘেষাঘেষি করে কাজ করে। এ বিবেচনায় কিছুদিনের জন্য হলে লকডাউন করা যায় কিনা ভেবে দেখতে হবে। তবে যে সিদ্ধান্তই নেওয়া হোক না কেন ভেবেচিন্তা নিতে হবে। শ্রমিকরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।

বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির সভাপ্রধান তসলিমা আখতার লিমা বলেন, যেখানে সরকার সব ধরনের লোকসমাগম হয় এমন কার্যক্রম বন্ধ করেছে। স্কুল, কলেজ, সভাসমাবেশ বন্ধ করেছে। সেখানে শ্রমঘন পোশাক কারখানা কেন বন্ধ হবে না? কারখানায় শ্রমিকরা গাঘেঁষে বসে। একজন আরেকজনকে ঠেলে উঠতে হয়। একজন আরেক জনের গায়ে হাত দেয়। শুধু কারখানায় না, গণপরিবহন ছাড়াও কারখানা ছুটির সময় একজন আরেকজনের গাঘেঁষে প্রবেশ করে এবং বের হয়। এ অবস্থায় যদি কোনো শ্রমিক আক্রান্ত হয় এর দায় কি মালিকরা নিবেন? মালিকরা যদি সঠিক ব্যবস্থা নেয় তাহলে কথা নেই। কিন্তু তারা এটা নিশ্চিত করতে পারবে না। তাহলে শ্রমিকদের স্ববেতনে ছুটি দিতে হবে। কারখানা চালুর পর তাকে স্বপদে বহাল রাখতে হবে। শ্রমিকদের জীবন ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দেওয়া কোনোভাবেই উচিত হবে না।

শ্রমিক নেতা লাভলী ইয়াসমিন বলেন, করোনা মোকাবিলা করার জন্য পুরো পৃথিবী প্রতিমুহূর্তে গবেষণা করছে। যেহেতু ১৪ দিন পর আলমত ধরা পড়ে, এর আগে তার আশপাশের সব মানুষকে আক্রান্ত করবে। একজন শ্রমিক আক্রান্ত হলে ওই কারখানাসহ আশপাশের সব কারখানা লকডাউন করতে হবে। কেন আমরা এ পর্যন্ত অপেক্ষা করব। এর আগেই বন্ধ করা উচিত। যাদের জন্য কারখানা চালু থাকবে সেই ক্রেতারাই সবকিছু বন্ধ রেখেছে। অর্ডার বাতিল করছে।

এদিকে কারখানা চালু রাখার পক্ষে মত দিতে গিয়ে শ্রমিক নেতা রহুল আমি বলেন, দেশে এখন মার্কেট বন্ধ হয়নি। পরিবহন বন্ধ হয়নি। তাই মনে করি লক ডাউন করার প্রয়োজন এখনো হয়নি। কারখানায় শ্রমিকরা যতক্ষণ থাকবে সে ততক্ষণ নিরাপদে থাকবে। এখন লকডাউন হলে মালিকরা বলবে শিপমেন্ট হয়নি, তাই বেতন-বোনাস দিতে পারবোনা। সামনে দুইটি ঈদ রয়েছে, মালিকরা এই সুযোগ কাজে লাগাবে। এ কারণেই বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না।

জাতীয় শ্রমিক লীগ সভাপতি ফজলুল হক মন্টু বলেন, পোশাক শিল্পে ৪০ লাখ শ্রমিক কাজ করে। কিন্তু অন্যান্য খাত মিলে প্রায় ১ কোটি শ্রমিক কাজ করে। পোশাক কারখানা বন্ধ করা হলে অন্য শ্রমিকরাও বন্ধের দাবিতে অস্থিরতা সৃষ্টি করবে। এটা মাথায় নিয়ে কাজ করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী সবাইকে সচেতন হতে বলেছেন। আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে। আমরা শুধু মালিকদের চাপ দেই। কিন্তু যারা বছরের পর বছর আমাদের দিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা লাভ করেছে সেই বায়ারদের কিছু বলি না। এই বিপদের সময় তাদেরও আমাদের পাশে চাই। তাদেরও চাপ দিতে হবে। এখন অনেক বায়ার ঢাকায় অবস্থান করছে কিন্তু তদাদের হারিকের দিয়েও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। অথচ তাদের কারণে শত শতকোটি টাকা নষ্ট হয়েছে।

সব পক্ষের মতামত শুনে শ্রম প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান বলেন, আমি পক্ষে বিপক্ষে মত দিব না। সিদ্ধান্ত দিবেন প্রধানমন্ত্রী। আমি কেবল দুই পক্ষের যুকিগুলো প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরব। তিনি বলেন, আজকের দিনেও এত মানুষ নিয়ে মিটিং করা নৈতিক ছিল না। তারপরেও শিল্প বাঁচাতে এই ঝুঁকি নিয়েছি। কারণ যাকে ভালোবাসি তাকে রক্ষা করতে হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here