Home বাংলা নিউজ কানাডায় মাস্ক ‘কেলেঙ্কারিতে’ রপ্তানিতে নতুন অনিশ্চয়তা

কানাডায় মাস্ক ‘কেলেঙ্কারিতে’ রপ্তানিতে নতুন অনিশ্চয়তা

কভিড-১৯ মহামারির সময় নানা প্রণোদনা দিয়ে দেশের রপ্তানি খাতকে টিকিয়ে রাখতে চেষ্টা করছে সরকার। এমন সময় দেশের দুটি প্রতিষ্ঠান কানাডায় নিম্নমানের সার্জিক্যাল মাস্ক রপ্তানি করে রপ্তানি খাতকে নতুন করে অনিশ্চয়তায় ফেলে দিয়েছে। এ বিষয়ে তদন্তে নেমেছে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)। তদন্ত প্রতিবেদন পেলে ব্যবস্থা নেবে কর্তৃপক্ষ। তবে অভিযুক্ত রপ্তানিকারক একটি প্রতিষ্ঠান দাবি করেছে, তাদের মাস্কের মান ঠিক আছে। কম দামে অন্য কোথাও থেকে নেবে বলে কানাডার প্রতিষ্ঠানটি তাদের সরবরাহ করা মাস্কের মান খারাপের অভিযোগ তুলেছে। জানা যায়, কানাডীয় প্রতিষ্ঠান বাসরেল মেডিক্যাল বাংলাদেশের মুনতাহা সোর্সিং লিমিটেড ও সিলভারিন অ্যাপারেল নামের দুটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নিম্নমানের মাস্ক সরবরাহের অভিযোগ এনেছে। তবে সিলভারিন এমন ঘটনায় জড়িত নয় বলে জানা গেছে। ওই অভিযোগ থেকে জানা যায়, বাসরেল মুনতাহা সোর্সিং লিমিটেডকে মাস্ক রপ্তানির কার্যাদেশ দিয়ে বিক্রয় চুক্তির বিপরীতে অগ্রিম মূল্য বাবদ এক কোটি ডলার পরিশোধ করে। নমুনা অনুমোদনের পর ২১ লাখ ডলার মূল্যের মাস্ক রপ্তানি করে মুনতাহা। কুইবেক ও আলবার্টা প্রাদেশিক সরকারের সার্জিক্যাল মাস্ক সরবরাহের কাজ করে কানাডীয় প্রতিষ্ঠান বাসরেল মেডিক্যাল। বাসরেল দাবি করছে, বাংলাদেশ থেকে পাঠানো মাস্ক কানাডা সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগ নিম্নমানের ও স্বাস্থ্যসম্মত নয় বলে গ্রহণ করতে অস্বীকার করেছে। প্রতিষ্ঠানটি তাদের সেই এক কোটি ডলার ফেরত দেওয়ার দাবি জানিয়েছে। সমস্যা সমাধানে বাসরেল বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতা চায়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, কানাডা হাইকমিশনের অনুরোধে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ইপিবিকে বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দেয়। গত ১৪ জুলাই ইপিবি তৈরি পোশাক খাতের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ ও বায়িং হাউসগুলোর সংগঠন বিজিবিএকে চিঠি দিয়েছে। ইপিবি জানতে চায় সিলভারিন ও মুনতাহা সোর্সিং ওই সংগঠন দুটির সদস্য কি না। বিজিএমইএ সূত্র বলছে, তারা খোঁজ নিয়ে দেখেছে যে ঘটনাটির সঙ্গে সিলভারিন জড়িত নয়। কানাডীয় ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনার পর বিজিএমইএ থেকে মুনতাহা সোর্সিংয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। বলা হয়, তারা যেন টাকা ফিরিয়ে দেয়। কারণ যে পণ্য সরবরাহ করা হয়েছে তা ক্রেতা গ্রহণযোগ্য মনে করেনি। তবে টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার বিষয়টি পুরো নির্ভর করছে ইপিবির তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর। মুনতাহা সোর্সিং লিমিটেডের কর্ণধার শাহদাত হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘কানাডার ক্রেতা অন্য জায়গা থেকে কম মূল্যে পণ্য পাওয়া থেকে মাস্ক পাওয়ায় তারা আমাদের সঙ্গে কাজ করতে চায় না। তবে আমরা এখনো চেষ্টা করছি তাদের সঙ্গে কাজ করতে। বিষয়টি নিয়ে ইপিবি ও বিজিএমইএ সিদ্ধান্ত নেবে।’ বিজিএমইএ সূত্রে জানা যায়, কানাডার যে প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এই ঘটনা ঘটেছে তারা পিপিইর বড় ক্রেতা। বিশ্ববাজার থেকে বছরে ৪০ কোটি ডলারের পিপিই কেনে তারা। করোনা মহামারির সময়ে এমন একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এই ঘটনা বিব্রতকর। এ ছাড়া কানাডা বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের বড় বাজারও। করোনা পরিস্থিতির কারণে তৈরি পোশাক খাত স্থবির হয়ে আছে। এই অবস্থায় দুটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কানাডার ওই প্রতিষ্ঠানের অভিযোগ দেশের তৈরি পোশাক খাতকে ভাবমূর্তির সংকটে ফেলে দিয়েছে। বাংলাদেশ গার্মেন্ট বায়িং হাউস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কাজী ইফতেখার হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘কানাডায় প্রতিশ্রুত সার্জিক্যাল মাস্ক সরবরাহ না করার সঙ্গে বাংলাদেশের পোশাক খাতের দুটি প্রতিষ্ঠানের নাম জড়িত হওয়ায় আমরা উদ্বিগ্ন। এ ধরনের অনৈতিক কার্যকলাপে দেশের মান-সম্মান ও ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। ফলে এই কাজের সুদূরপ্রসারী ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।’ ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান এ এইচ এম আহসান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ হয়েছে। আমরা তদন্ত করছি। এই সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়া যাবে।’ বিষয়টির সুন্দর সমাধান হবে—এমন আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান বাকি পণ্যের টাকা ফেরত দেওয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক। জানতে চাইলে বাণিজ্যসচিব ড. জাফর উদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে পুরো ধারণা আমার নেই। যতটুকু জানি, পুরো বিষয়টি তদন্তাধীন। এর বাইরে এই মুহূর্তে কিছু বলার নেই।’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here