Home বাংলা নিউজ ভিয়েতনাম বাংলাদেশকে টপকাবে, সেটাই স্বাভাবিক

ভিয়েতনাম বাংলাদেশকে টপকাবে, সেটাই স্বাভাবিক

তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশ দ্বিতীয়। তবে সেই ভিত নাড়িয়ে দিয়েছে ভিয়েতনাম। দেশটির বেশি ব্যবসা পাওয়ার মূলে রয়েছে সেই চীনা বিনিয়োগ। তাহলে কি সত্যি সত্যি বাংলাদেশ ভিয়েতনামের কাছে তার দ্বিতীয় শীর্ষ অবস্থান হারাচ্ছে। পতন ঠেকানোর কি কোনো উপায় নেই? এসব বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন ভিয়েলাটেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান কে এম রেজাউল হাসনাত।

ভিয়েতনাম চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশকে পেছনে ফেলছে। পরবর্তী মাসগুলোয় সেটি অব্যাহত থাকলে ভিয়েতনাম দ্বিতীয় শীর্ষ পোশাক রপ্তানিকারকের মুকুটটি দখল করে নিতে পারে। তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর দেওয়া তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জানুয়ারি-মে) বাংলাদেশ ৯৬৮ কোটি ৪৯ লাখ ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে। তার বিপরীতে ভিয়েতনাম রপ্তানি করেছে ১ হাজার ৫০ কোটি ৯১ ডলারের পোশাক। তার মানে পাঁচ মাসে বাংলাদেশের চেয়ে ৮২ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি বেশি করেছে ভিয়েতনাম। জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে ভিয়েতনামের চেয়ে ১১২ কোটি ডলারের বেশি পোশাক রপ্তানি করে বাংলাদেশ। তবে মার্চ থেকে ভিয়েতনাম এগিয়ে যায়। মার্চে ২২৬, এপ্রিলে ৩৭ ও মে মাসে ১২৩ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করে বাংলাদেশ। তার বিপরীতে ভিয়েতনাম মার্চে ২৩৪, এপ্রিলে ১৬১ ও মে মাসে ১৮৬ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে। পোশাক রপ্তানিতে ভিয়েতনাম বাংলাদেশকে টপকে যাবে, সেটাই স্বাভাবিক বলে মনে করেন পোশাকশিল্পের প্রতিষ্ঠান ভিয়েলাটেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান কে এম রেজাউল হাসনাত। গতকাল রোববার বিকেলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের ডোনাল্ড ট্রাম্প বাণিজ্যযুদ্ধ শুরুর পর থেকেই চীনের বড় বড় পোশাক কারখানা ভিয়েতনামে বিনিয়োগ শুরু করে। বর্তমানে ভিয়েতনামে পোশাকশিল্পের ৬০ শতাংশ বিনিয়োগই চীনাদের। আমরা মূলত এই জায়গাতেই পিছিয়ে পড়েছি। মনে হচ্ছে, চলতি বছরই ভিয়েতনামের কাছে আমরা দ্বিতীয় স্থান হারিয়ে ফেলব।’ কে এম রেজাউল হাসনাত বলেন, বাণিজ্যযুদ্ধ শুরুর পর যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে চীনের পোশাক রপ্তানি ব্যাপকভাবে কমে গেছে। সেই ব্যবসার বড় অংশ পেয়েছে ভিয়েতনাম। তারপর কিছু পেয়েছে ইন্দোনেশিয়া, কম্বোডিয়া ও বাংলাদেশ। ভিয়েতনাম বেশি ব্যবসা পাওয়ার মূলে রয়েছে সেই চীনা বিনিয়োগ। তারাই তাদের ক্রেতাদের চীন থেকে ভিয়েতনামে নিয়ে গেছে। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) ‘ওয়ার্ল্ড স্ট্যাটিস্টিক্যাল রিভিউ ২০২০’ প্রতিবেদন অনুযায়ী, পোশাক রপ্তানিতে দ্বিতীয় অবস্থানে ২৭ দেশের জোট ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। তবে একক দেশ হিসেবে বাংলাদেশ দ্বিতীয়। চীন বরাবরের মতো শীর্ষে রয়েছে। ডব্লিউটিও বলছে, ২০১৮ সালের তুলনায় গত বছর চীনের পোশাক রপ্তানি ৬০০ কোটি ডলার কমে ১৫ হাজার ২০০ কোটি ডলার হয়। বাংলাদেশ গত বছর ৩ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের (প্রকৃতপক্ষে ৩,৩০৭ কোটি) পোশাক রপ্তানি করেছে। বৈশ্বিক পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের হিস্যা ৬ দশমিক ৮ শতাংশ। ২০১০ সালেও হিস্যা ছিল ৪ দশমিক ২ শতাংশ। অন্যদিকে তৃতীয় অবস্থানে থাকা ভিয়েতনাম ৩ হাজার ১০০ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে। চীনের মতো ভিয়েতনামের পোশাক রপ্তানি ২০১৮ সালের তুলনায় গত বছর ১০০ কোটি ডলার কমেছে। মোট পোশাক রপ্তানিতে ভিয়েতনামের বর্তমান হিস্যা ৬ দশমিক ২ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বাজারেও ভিয়েতনামের পোশাক রপ্তানি বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে বলে উল্লেখ করেন ভিয়েলাটেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান কে এম রেজাউল হাসনাত। তিনি বলেন, ভিয়েতনাম ইইউর সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) করেছে। সেটি কার্যকর হলেই ইইউর বাজারে ভিয়েতনাম বড় প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠতে পারে। বিদায়ী ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশ ২ হাজার ৭৯৫ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। তার মধ্যে ইইউতে ৬১ দশমিক ৩৫ শতাংশ বা ১ হাজার ৭১৪ কোটি ডলার এবং যুক্তরাষ্ট্রে ১৮ দশমিক ৪১ শতাংশ বা ৫১৫ কোটি ডলার রপ্তানি হয়েছে। সেই হিসেবে ইইউ বাংলাদেশি পোশাকের বড় বাজার। বাংলাদেশকে দ্বিতীয় অবস্থানে টিকিয়ে রাখতে সস্তার পাশাপাশি বেশি মূল্যের পোশাক উৎপাদন, উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, প্রযুক্তিগত উৎকর্ষের সঙ্গে বিদেশি বিনিয়োগ বিশেষ করে চীনা বিনিয়োগ আনতে হবে হবে মনে করেন কে এম রেজাউল হাসনাত। তিনি বলেন, চীনাদের সঙ্গে বাংলাদেশে সংস্কৃতির তেমন একটা মিল নেই। তার বাইরে নানা রকম প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। সে কারণে চীনারা বিনিয়োগ করতে ততটা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে না। তাই সরকারকেই বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ তৈরিতে উদ্যোগ নিতে হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here