Home বাংলা নিউজ মাস্ক উৎপাদনে ১০০ কোটি টাকা নতুন বিনিয়োগ

মাস্ক উৎপাদনে ১০০ কোটি টাকা নতুন বিনিয়োগ

করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্বজুড়ে রপ্তানি বাণিজ্য গতি হারিয়েছে। তবে এ সময়ে ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী (পিপিই) ও মাস্কের চাহিদা বেড়েছে। বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের তালিকাতেও এ দুটি পণ্য বৈচিত্র্য এনেছে। আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে সুরক্ষা পণ্যের রপ্তানি। বিদেশি ক্রেতাদের চাহিদা মেটাতে তৈরি পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা নতুন বিনিয়োগও করছেন। উদ্যোক্তারা জানান, পাঁচ পণ্যে সীমাবদ্ধ তৈরি পোশাক খাতে এই দুই পণ্যের মাধ্যমে বৈচিত্র্য আনার সুযোগ তৈরি হয়েছে। যে পরিমাণ রপ্তানি আদেশ দিতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন ক্রেতারা তা পূরণ করা গেলে ব্যাপক সম্ভাবনা তৈরি করবে। ২০১৯-২০ অর্থবছরের এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত তিন মাসে মাস্ক রপ্তানি হয়েছে এক কোটি ৩১ লাখ ডলারের। আগের বছরের একই সময়ে যা ছিল মাত্র ১০ লাখ ডলার। পুরো অর্থবছরের হিসাবে পাঁচ গুণ বেড়ে মোট রপ্তানি হয়েছে আড়াই কোটি ডলারের। আগের বছর এর পরিমাণ ছিল ৫৫ লাখ ডলার। অন্যদিকে গেল অর্থবছর পিপিই রপ্তানি হয়েছে ৫১ কোটি ডলারের। সবচেয়ে বেশি ১১ কোটি ডলারের পিপিই গেছে জার্মানিতে। যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হয়েছে ৮ কোটি ডলারের। বিশ্ববাজারের এ চাহিদা পূরণে বেশ জোরেশোরে কাজ শুরু করেছেন রপ্তানিকারক ও উদ্যোক্তারা। বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ সূত্রে জানা গেছে, মাস্ক উৎপাদনে নতুন বিনিয়োগের পরিমাণ অন্তত ১০০ কোটি টাকা। বড় ব্র্যান্ড ও ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী মূল্য সংযোজিত উন্নত মানের মাস্ক তৈরিতে মূলত বিনিয়োগ করা হচ্ছে। এর বাইরে তৈরি পোশাক কারখানাগুলোতে বর্তমানে যেসব যন্ত্রপাতি রয়েছে সেগুলো দিয়ে সাধারণ মানের মাস্ক উৎপাদন করা হচ্ছে। এখন অনেক কারখানায় মাস্ক উৎপাদন হচ্ছে। সার্জিক্যাল ও সাধারণ উভয় ধরনের ফেস মাস্ক উৎপাদন করা হচ্ছে। স্থানীয় বাজারেও যাচ্ছে বিপুল পরিমাণ মাস্ক। বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর তথ্য অনুযায়ী, প্রচলিত বাজারের মধ্যে কানাডায় মাস্কের রপ্তানি বেশি হারে বেড়েছে। মোট রপ্তানির প্রায় এক-পঞ্চমাংশ ৫০ লাখ ডলারের মাস্ক গেছে দেশটিতে। আগের অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল ২৮ হাজার ডলার। দেশটিতে সার্বিক পোশাক রপ্তানি ২৬ শতাংশ কমলেও মাস্কের এ চাহিদায় বড় সম্ভাবনা দেখছেন উদ্যোক্তারা। জার্মানি, ফ্রান্সসহ ইউরোপের সব দেশ এবং যুক্তরাষ্ট্রেও চাহিদা বেড়েছে কয়েকগুণ। এমনকি ভারত, থাইল্যান্ডের মতো বাজারেও চাহিদা অনেক বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে ফেস মাস্ক রপ্তানি করে ফতুল্লা গ্রুপ। এ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বিকেএমইএর পরিচালক ফজলে শামীম এহসান সমকালকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্সসহ বেশ কয়েকটি দেশে মাস্ক রপ্তানি করছেন তারা। ক্যারফোর, ডিজেলসহ অনেক ব্র্যান্ডের সঙ্গে কাজ করছেন তিনি। অন্য অনেক ক্রেতা যোগাযোগ করছেন। এ কারণে বিনিয়োগ সম্প্রসারণ করেছেন তিনি। দেড় কোটি টাকার নতুন মেশিন স্থাপন করা হয়েছে বলে জানান তিনি। সাধারণত ফেব্রিকের মাস্কই বেশি রপ্তানি হচ্ছে। তবে সার্জিক্যাল মাস্ক উৎপাদনেরও প্রস্তুতি নিচ্ছেন। চাহিদা ও সম্ভাবনা বিবেচনায় শীর্ষস্থানীয় শিল্প প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকোও নতুন বিনিয়োগ করেছে। প্রধান কার্যালয়ের পাশে সুরক্ষা সামগ্রী উৎপাদনে পৃথক ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোন করছে। তারা মান নিশ্চিত করতে একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গেও সম্প্রতি কৌশলগত চুক্তি করেছে। ফ্রান্সে নিট মাস্কের রপ্তানিকারক টেক্সওয়েভ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশিকুর রহমান তুহিন সমকালকে বলেন, চার লাখ পিস মাস্ক এরই মধ্যে ক্রেতার হাতে পৌঁছানো হয়েছে। আরও অনেক ক্রেতার বেশ কিছু কাজ হাতে আছে। তিনি জানান, সুরক্ষা মাস্কের পাশাপাশি নানা রকম ফ্যাশনেবল মাস্ক যুক্ত হয়েছে রপ্তানি তালিকায়। পণ্যে বৈচিত্র্য আনার এটা একটা বড় সুযোগ বলে মনে করছেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রে মাস্কের রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ক্লাসিক গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বিজিএমইএর সাবেক সহসভাপতি শহিদুল্লাহ আজিম সমকালকে বলেন, ফ্যাশনেবল এবং ৯ স্তরের সুরক্ষা রেখে মাস্ক বানাচ্ছেন তারা। শিশু-কিশোর থেকে সব বয়সীদের উপযোগী মাস্ক রপ্তানি করছেন তারা। ফ্যাশনেবল মাস্ক উৎপাদনে কিছুটা বেশি বিনিয়োগ করতে হয়েছে তাকে। উর্মি গ্রুপও পিপিই ও মাস্ক উৎপাদনে ৫ লাখ ডলার নতুন বিনিয়োগ করেছে জানিয়ে ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসিফ আশরাফ বলেন, এর বাইরে কিছু প্রচলিত পণ্যের জায়গায় এ দুই সুরক্ষা পণ্যের জন্য কার্যক্রম স্থানান্তর করা হয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here