Home বাংলা নিউজ পোশাক কারখানায় প্রতিরোধ কমিটি গঠনের তাগিদ

পোশাক কারখানায় প্রতিরোধ কমিটি গঠনের তাগিদ

নারী কর্মীর প্রতি সহিংসতা ও যৌন হয়রানি প্রতিরোধে প্রতিটি পোশাক কারখানায় দ্রুত কার্যকর কমিটি গঠনের তাগিদ দিয়েছেন বক্তারা। সে ক্ষেত্রে উচ্চ আদালতের রায় অনুসরণের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) গত বছরের সনদে বাংলাদেশকে যত দ্রুত সম্ভব সই করতে বলেছেন তাঁরা। এসএনভি-প্রথম আলো ভার্চ্যুয়াল সভায় বক্তারা চাকরি হারানোর ভয় না করে নারী কর্মীরা যেন যৌন হয়রানি বা সহিংসতার ঘটনা ঘটলেই অভিযোগ করার আস্থা পান, সেই ব্যবস্থাও নিতে বলেছেন। নেদারল্যান্ডস দূতাবাসের সহযোগিতায় পরিচালিত এসএনভি বাংলাদেশের ওয়ার্কিং উইথ ওমেন প্রকল্প-২ এবং প্রথম আলোর যৌথ
উদ্যোগে ‘পোশাক খাতে প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা’ শিরোনামের ৬ পর্বের আলোচনা সভার চতুর্থ পর্ব অনুষ্ঠিত হয় গত ২৫ নভেম্বর। এ পর্বে বক্তারা কথা বলেন ‘পোশাক খাতে নারীর প্রতি সহিংসতা নিরসনে করণীয়’ নিয়ে। বক্তারা বলেন, ঘর থেকে কর্মক্ষেত্র এবং চলার পথে কোথাও নিরাপদ নন নারী কর্মীরা। কর্মক্ষেত্রে আসা-যাওয়ার পথে অনেক কারখানার কর্মী ধর্ষণেরও শিকার হয়েছেন। এ ছাড়া কারখানার ভেতরও নানাভাবে যৌন হয়রানি ও সহিংসতার ঘটনা ঘটে। কারখানা কর্তৃপক্ষকে নারী কর্মীদের জন্য নিরাপদ কর্মপরিবেশ গড়ে তুলতে হবে। সরকারকেও নারীবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে শ্রম আইনের সংশোধন, বাস্তবায়ন ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সনদ অনুমোদন করতে হবে। উল্লেখ্য, কর্মস্থল ও শিক্ষাঙ্গনে নারী ও শিশু যৌন হয়রানি প্রতিরোধে দিকনির্দেশনা চেয়ে ২০০৮ সালে রিট করে বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি। শুনানি শেষে ২০০৯ সালের ১৪ মে হাইকোর্ট কয়েক দফা নির্দেশনা–সংবলিত রায় দেন। রায়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানে ‘যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি’ গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়। নারীদের সহায়তায় সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নারী নির্যাতন প্রতিরোধে মাল্টিসেক্টরাল কর্মসূচির প্রকল্প পরিচালক আবুল হোসেন বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে ও বিচার নিশ্চিত করতে সরকারের যেসব পদক্ষেপ রয়েছে, পোশাক কারখানার কর্মীরা তার বাইরে নন। সরকার সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণ দিতে চাইলে অনেক কারখানা কর্তৃপক্ষ কাজের ক্ষতি হবে জানিয়ে আগ্রহ দেখায় না। নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনায় তাৎক্ষণিক সহায়তা দেওয়ার জন্য মন্ত্রণালয়ের হেল্পলাইন নম্বর ১০৯ নিয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষকে তিনি প্রচার চালানোর আহ্বান জানান। তিনি বলেন, পোশাক কারখানাগুলোর প্রধান ফটক থেকে শুরু করে জায়গায় জায়গায় নম্বরটির বিষয়ে তথ্য দিয়ে রাখলে নারী কর্মীরা কোনো ঘটনা ঘটলে সঙ্গে সঙ্গে অভিযোগ জানাতে পারবেন। নারী কর্মীদের সেই আস্থা দিতে হবে যে তাঁদের অভিযোগগুলো গোপন থাকবে এবং অভিযোগের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কারখানায় যৌন হয়রানির অনেক ঘটনা ঘটলেও সামাজিক সংস্কার ও বাধার কারণে অভিযোগ কম আসে বলে মন্তব্য করেছেন আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) বাংলাদেশের কর্মসূচি কর্মকর্তা (জেন্ডার মেইনস্ট্রিমিং) শাম্মিন সুলতানা। তিনি বলেন, পোশাক কারখানায় নারী কর্মীর সংখ্যা ৬০ শতাংশ হলেও তা আগের তুলনায় কম। কেন কমে গেল, সেটা পর্যালোচনা করে নারী কর্মীর কাজের সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টিতে গুরুত্ব দিতে হবে। ২০১৯ সালের জুনে জেনেভাতে অনুষ্ঠিত অধিবেশনে আইএলও বিশ্বজুড়ে কর্মক্ষেত্রে সহিংসতা ও হয়রানি বন্ধে একটি সনদ নিয়েছে। বাংলাদেশসহ কিছু দেশ এখনো সেই সনদে সই করেনি। তিনি বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুসারে, কারখানায় যৌন হয়রানি ও সহিংসতা বন্ধে কর্মী, চাকরি দাতাসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে কমিটি গঠন করতে হবে। নামকরা ব্র্যান্ডের সঙ্গে কাজ করে, এমন কারখানাগুলোতে হয়রানির বিরুদ্ধে অভিযোগ জানানোর ব্যবস্থা রয়েছে বলে জানালেন বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) পরিচালক ও অনন্ত অ্যাপারেল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শরিফ জহির। তিনি বলেন, সেসব কারখানায় কর্মক্ষেত্রের অভিযোগ নিয়ে আলোচনার জন্য ক্রেতা কর্তৃপক্ষ, কারখানার মালিক ও কর্মীর শক্তিশালী অংশগ্রহণ রয়েছে। হয়রানির যেকোনো ঘটনা ঘটলেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়। গত ১০ বছরে পোশাক কারখানায় অনেক ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। আগে যেসব গ্রহণযোগ্য বলে ধরে নেওয়া হতো, সেসব ভাবনায় অনেক পরিবর্তন এসেছে। এখন সবাই বুঝতে পারেন, কর্মীরা ভালো থাকলে উৎপাদন বাড়ে। ছোট-বড় প্রতিটি কারখানায় যত দ্রুত সম্ভব যৌন হয়রানিবিরোধী কমিটি করার দাবি জানিয়েছেন শ্রমিকনেতা ও আওয়াজ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা নাজমা আক্তার। সেই সঙ্গে সরকারকে আইএলও সনদ অনুমোদন করার তাগিদ দিয়েছেন তিনি। নাজমা আক্তার বলেন, পোশাক কারখানায় নারী কর্মীদের স্বাধীনভাবে কথা বলার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়। যৌন হয়রানি প্রতিরোধে যথাযথ ব্যবস্থা নেই। দেশে কর্মীদের জন্যআইন-নীতিমালা আছে, তবে সত্যিকারভাবে বাস্তবায়ন করার জায়গাটা এখনো তৈরি হয়নি। সরকারি কর্মকর্তা আবুল হোসেন বলেন, মুষ্টিমেয় কিছু কারখানায় নারী কর্মীদের কল্যাণে ভালো পদক্ষেপ রয়েছে। অন্যান্য কারখানায় অন্তত প্রজনন স্বাস্থ্যসুবিধা, মাতৃত্বকালীন সুবিধা, দিবাযত্ন কেন্দ্র ইত্যাদি রাখার ব্যবস্থা যেন থাকে, বিজিএমইএ সে উদ্যোগ নিতে পারে। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন প্রথম আলোর সহকারী সম্পাদক ফিরোজ জামান চৌধুরী।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here