Home বাংলা নিউজ আবারও সুবিধা চান পোশাকশিল্পের মালিকেরা

আবারও সুবিধা চান পোশাকশিল্পের মালিকেরা

আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত ঋণের টাকা ফেরত দিতে চান না তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকেরা। করোনার মধ্যে রপ্তানিমুখী পোশাক ও বস্ত্র খাতের ব্যবসা-বাণিজ্য এবং শ্রমিকদের কর্মসংস্থান চলমান রাখতে এই সুবিধা চান তাঁরা।
তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের দুই সংগঠন—বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান ও বিকেএমইএর সভাপতি এ কে এম সেলিম ওসমান গতকাল রোববার এ–সংক্রান্ত একটি আবেদন অর্থমন্ত্রী বরাবর দিয়েছেন। তার আগে গত বুধবার দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম উদ্দিন একই দাবি জানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরকে চিঠি দেন।

অর্থমন্ত্রীকে দেওয়া চিঠিতে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ সভাপতি বলেছেন, আগামী মাসেই পবিত্র ঈদুল আজহা। তার আগেই শ্রমিকদের বেতন-ভাতা বাবদ প্রচুর অর্থের প্রয়োজন হবে। ব্যবসা-বাণিজ্য আগের মতো স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে না আসা পর্যন্ত ঋণের বিপরীতে কিস্তির টাকা সময়মতো পরিশোধ করা উদ্যোক্তাদের পক্ষে কঠিন।

অর্থমন্ত্রীকে দেওয়া চিঠিতে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ সভাপতি বলেছেন, করোনার কারণে তৈরি পোশাকের রপ্তানিকারকেরা ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছেন। বিদেশি ক্রেতারা একদিকে ক্রয়াদেশ কমিয়ে দিচ্ছেন, অন্যদিকে রপ্তানি হওয়া পণ্যের মূল্য পরিশোধে দীর্ঘ সময় নিচ্ছেন। এই প্রতিকূলতার মধ্যেও উদ্যোক্তারা ব্যবসা-বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন। কর্মসংস্থান ধরে রাখতে চেষ্টা করছেন।

চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে পোশাকশিল্পের প্রধান কাঁচামাল সুতা ও কাপড়ের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। এই অবস্থায় পোশাকের মূল্য নিয়ে ক্রেতাদের সঙ্গে দর–কষাকষি করে ক্রয়াদেশ ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। অনেক ক্ষেত্রে উদ্যোক্তারা টিকে থাকার জন্য লোকসান দিয়েও ক্রয়াদেশ নিচ্ছেন। এসব কারণে রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোতে তারল্যসংকট বাড়ছে। এমন অবস্থায় শ্রমিকের মজুরি দেওয়াসহ অন্যান্য কার্যক্রম পরিচালনায় উদ্বেগের মধ্যে আছেন উদ্যোক্তারা। এদিকে আগামী মাসেই পবিত্র ঈদুল আজহা। তার আগেই শ্রমিকদের বেতন-ভাতা বাবদ প্রচুর অর্থের প্রয়োজন হবে। ব্যবসা-বাণিজ্য আগের মতো স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে না আসা পর্যন্ত ঋণের বিপরীতে কিস্তির টাকা সময়মতো পরিশোধ করা উদ্যোক্তাদের পক্ষে কঠিন।

আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত কোনো ঋণ শ্রেণীকরণ না করা এবং ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে পুনঃ তফসিল করার সুযোগ চেয়েছে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ।

এসব কারণ দেখিয়ে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত কোনো ঋণ শ্রেণীকরণ না করা এবং ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে পুনঃ তফসিল করার সুযোগ চেয়েছে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ।
করোনার কারণে গত বছরের মার্চে একের পর এক ক্রয়াদেশ বাতিল ও স্থগিতাদেশ আসতে থাকে। তখন পোশাকশিল্পের মালিকেরা আতঙ্কিত হয়ে পড়লে সরকার রপ্তানিমুখী শ্রমিকদের এপ্রিল, মে ও জুন—তিন মাসের মজুরি দেওয়ার জন্য পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে। ওই ঋণের বিপরীতে সেবা মাশুল ছিল ২ শতাংশ। পরে পোশাকশিল্পের মালিকেরা আরও এক মাসের মজুরি দেওয়ার জন্য ঋণ দেওয়ার দাবি করেন। সরকারও মেনে নেয়। তখন তহবিলের আকার বেড়ে ৯ হাজার ১৮৮ কোটি টাকা দাঁড়ায়। তবে চতুর্থ মাসের বেতনের জন্য ঋণের ক্ষেত্রে মালিকদের সুদ দিতে হবে সাড়ে ৪ শতাংশ। বাকি সাড়ে ৪ শতাংশ ভর্তুকি দেবে সরকার।

অর্থ মন্ত্রণালয় গত ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে প্রণোদনা তহবিল থেকে নেওয়া ঋণ পরিশোধে ১ মার্চ থেকে বাড়তি ছয় মাস সময় দেওয়ার নির্দেশনা দেয়। তার ফলে আগামী সেপ্টেম্বর থেকে ঋণের কিস্তি দিতে হবে মালিকদের।

রপ্তানিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠানের শ্রমিক-কর্মচারীদের জন্য প্যাকেজটি ঘোষিত হলেও তহবিল থেকে সবচেয়ে বেশি প্রায় ১ হাজার ৮০০ কারখানামালিক ঋণ নিয়েছেন। এই ঋণের গ্রেস পিরিয়ড ছিল ছয় মাস। পরবর্তী ১৮ মাসের কিস্তিতে সেই ঋণ পরিশোধের শর্ত ছিল। তবে গত বছরের শেষ দিকে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ প্রণোদনার ঋণের গ্রেস পিরিয়ডের সময় বাড়ানোর দাবি জানায়। সরকারও তা মেনে নেয়।
অর্থ মন্ত্রণালয় গত ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে প্রণোদনা তহবিল থেকে নেওয়া ঋণ পরিশোধে ১ মার্চ থেকে বাড়তি ছয় মাস সময় দেওয়ার নির্দেশনা দেয়। তার ফলে আগামী সেপ্টেম্বর থেকে ঋণের কিস্তি দিতে হবে মালিকদের।
জানতে চাইলে বিজিএমইএর সহসভাপতি শহিদউল্লাহ আজিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে রপ্তানি পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় আমরা সুবিধাটি বাড়ানোর প্রস্তাব করেছি। আশা করছি, আগামী অক্টোবর থেকে রপ্তানি পরিস্থিতি ভালো হবে।’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here