Home বাংলা নিউজ টি-শার্টেই ৫৬ হাজার কোটি টাকা আয়

টি-শার্টেই ৫৬ হাজার কোটি টাকা আয়

আরামদায়ক ও সস্তা বলে সবচেয়ে সহজলভ্য যে পোশাক পড়ছেন সেই টি-শার্ট রপ্তানি করেই গত অর্থবছরে বাংলাদেশ আয় করেছে ৬৬১ কোটি ৫০ লাখ ডলার যা বাংলাদেশী মুদ্রায় ৫৬ হাজার ২২৭ কোটি টাকা। বাংলাদেশ মোট জাতীয় রপ্তানির ১৭ শতাংশ এবং তৈরী পোশাক রপ্তানির ২১ শতাংশের বেশি।

বিশ্বব্যাপী ব্যাপক চাহিদাকে পুঁজি করে টি-শার্ট রপ্তানিতে করোনার ধাক্কা কাটিয়ে আবারও ঘুরে দাড়িয়েছে বাংলাদেশ। এ সময় প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১৮ শতাংশ। এক বছরের ব্যবধানে আয় বেড়েছে ৮৫০০ কোটি টাকা। তবে বছরের পর বছর কম দামের টি-শার্টই টিকিয়ে রেখেছে এই খাতকে। ফলে আয় বাড়লেও মুনাফা কম। মূল্য সংযোজনে তাই ফ্যাশনেবল টি-শার্ট উৎপাদনে বিনিয়োগ বাড়াতে পরামর্শ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

রপ্তানী উন্নয়ণ ব্যুরো (ইপিবি) থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, রপ্তানির হিসেবে গত কয়েকবছর ধরে দেশের প্রধান ৫টি রপ্তানি পণ্য হচ্ছে টি-শার্ট, প্যান্ট, জ্যাকেট, স্যুয়েটার এবং শার্ট। ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রধান ৫টি পণ্য রপ্তানি হয়েছে ২১৫৭ কোটি ডলার। আগের অর্থবছরের চেয়ে এই পণ্যগুলোর রপ্তানি বেড়েছে ১৬২ কোটি ডলার।

এরমধ্যে শুধু টি-শার্ট রপ্তানি বেড়েছে ১০০ কোটি ডলার। বাংলাদেশি টি-শার্টের প্রধান বাজার জার্মানী ১১৩ কোটি ১০ লাখ ডলারের টি-শার্ট নিয়ে গেছে বাংলাদেশ থেকে। যুক্তরাজ্যে রপ্তানি হয়েছে ৭৩ কোটি ৪০ লাখ ডলারের টি-শার্ট। সস্তাশ্রম আর কম উৎপাদন খরচের কারণে এইচএন্ডএম, গ্যাপ, ওল্ডনেভি, নেক্সট, ম্যাটালন, নিউওয়েভ, ওয়ালমার্ট, জারা-এর মত বিশ্বখ্যাত চেইনশপগুলো যেমন আছে তেমনি বিশ্বের নামি পোশাক ব্র্যান্ড জর্জিও আরমানি, হুগো বস, টমি হিলফিগার, বেন হিউসেন ও কেলভিন ক্লেইনও বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক টি-শার্ট আমদানি করে।

ওয়ার্ল্ডস টপ এক্সপোর্টসের তথ্যানুযায়ী, টি-শার্ট রপ্তানিতেও বাংলাদেশ দ্বিতীয় রপ্তানিকারক। বরাবরের মতো চীন প্রধান রপ্তানি বাজার। ২০১৯ সালের যে পরিসংখ্যান তারা প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, ২০১৯ সালে বিশ্বব্যাপী ৪৭ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার রপ্তানিতে চীনের অংশ ৭ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার। আর ২য় স্থানে থাকা বাংলাদেশের হিস্যা ৬ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার। টি-শার্ট রপ্তানিতে বাংলাদেশের পরে যথাক্রমে আছে তুরস্ক, ভারত, জার্মানি, ভিয়েতনাম, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, স্পেন ও বেলজিয়াম। গন্তব্য হিসেবে ইউরোপই এখনও প্রধান বাজার।

চট্টগ্রামের কালুরঘাটে অবস্থিত অন্যতম বৃহৎ টি-শার্ট উৎপাদনকারী কারখানা বেস টেক্সটাইল। এই কারখানায় প্রায় সব ধরনের নীট পণ্য উৎপাদন হয়। এরমধ্যে মধ্যে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের টি-শার্ট তৈরী হচ্ছে প্রতিদিন প্রায় ১৬ হাজার পিস। বছরে যা প্রায় ৫০ লাখ পিস। এলসি ওয়াইকিকি, নিউওয়ে, টেমা, টেরেনোভা, ম্যাটালন ব্র্যান্ডের টি-শার্ট তৈরী হচ্ছে বেস টেক্সটাইলের কারখানায়। বেস টেক্সটাইলের প্রধান মানবসম্পদ ও কমপ্লাইয়েন্স কর্মকর্তা উত্তম দাশ গুপ্ত কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা মূলত: মধ্যমমানের টি-শার্ট তৈরী করছি। এছাড়া বাল্ক আইটেম তো আছেই। বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হওয়া টি-শার্ট মূলত এই মানের।’ এই প্রতিষ্ঠানে আগামী ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত টি-শার্টের অর্ডার বুকিং আছে।

টি-শার্ট রপ্তানিতে চট্টগ্রামের অন্যতম বৃহৎ প্রতিষ্ঠান ক্লিফটন গ্রুপ। এই গ্রুপের এমডি ও বিজিএমইএ’র পরিচালক মো. এম মহিউদ্দিন চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হওয়া টি-শার্টের অধিকাংশ বাল্ক আইটেম। বাকীগুলো মাঝারি মানের। অথচ চীন, ভিয়েতনামের টি-শার্ট ফ্যাশনেবল ও স্টাইলিশ। আমাদের এখানে সেই মানের প্রিন্টিং মেশিন নাই। একটি ভালমানের প্রিন্টিং মেশিনের দাম ৩০ থেকে ৩৫ কোটি টাকা। এই জায়গায় বিনিয়োগ করতে তেমন আগ্রহ দেখা যায় না।’ তবে ধীরে হলেও মূল্য সংযোজনকারী ফ্যাশনেবল আইটেমে বিনিয়োগ শুরু হয়েছে। ঢাকার আশুলিয়ায় স্থাপিত আলিফ ভিলেজ লিমিটেডের উদাহরণ দিয়ে এই ব্যবসায়ী নেতা বলেন, ‘প্রায় ৪০০ কোটি টাকা ব্যয়ে সর্বাধুনিক প্রিন্টিং ও এমব্রয়ডারি মেশিন বসিয়ে পণ্যে বৈচিত্র এনে মূল্য সংযোজন করছে। ক্রেতাদের কাছ থেকেও ভাল সাড়া পাচ্ছে। বিশ্বখ্যাত এইচএন্ডএম, গ্যাপ, জারা ব্র্যান্ডের জন্য ফ্যাশনেবল পোশাক তৈরী করছে তাঁরা।’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here