Home বাংলা নিউজ ‘কারিগরি’ পোশাকের বাজারে বাংলাদেশের নজর দেওয়ার তাগিদ

‘কারিগরি’ পোশাকের বাজারে বাংলাদেশের নজর দেওয়ার তাগিদ

চিকিৎসা ব্যবস্থার ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রীসহ এ ধরনের বিশেষায়িত কারিগরি পোশাকের বাজারে বাংলাদেশের ভালো অংশীদারিত্ব অর্জনের সুযোগ রয়েছে বলে সাম্প্রতিক এক গবেষণায় উঠে এসেছে।

বিজিএমইএর সহযোগিতায় জার্মান উন্নয়ন সংস্থা জিআইজেড পরিচালিত ‘বাংলাদেশে ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী (পিপিই), কারিগরি পোশাক (টেকনিক্যাল টেক্সটাইল) উৎপাদন বৃদ্ধির সম্ভাব্যতা’ শীর্ষক গবেষণায় এমন ধারণা পাওয়া গেছে।

মঙ্গলবার এক অনুষ্ঠানে এ গবেষণার ফলাফল ও মূল্যায়ন প্রকাশ করে বিজিএমইএ ও জিআইজেড।

গবেষণা প্রতিবেদনের সারাংশে বলা হয়, বিশ্বব্যাপী কারিগরি পোশাকের বর্তমান বাজার প্রায় ১৭৯ বিলিয়ন ডলার। গড়ে ৪ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে ২০২৫ সালের মধ্যে তা ২২৪ ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে। এ সময়ের মধ্যে পিপিই এর বাজার হবে অন্তত ৯৩ বিলিয়ন ডলার।

এতে বলা হয়, বর্তমানে ইউরোপ মেডিকেল টেক্সটাইলের বড় বাজার হলেও এক্ষেত্রে উত্তর আমেরিকার দেশগুলোও এগিয়ে আসছে। মহামারীর কারণে পিপিইসহ চিকিৎসা সুরক্ষা সামগ্রীর বাজার বড় হলেও অন্যান্য কারিগরি পোশাকের বাজার আগে থেকেই বড় অবস্থান তৈরি করে আছে।

গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে, বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা একবার যদি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিসহ এ বাজারে আস্থা অর্জন করতে পারে তাহলে পণ্যের বৈচিত্র্যকরণের ক্ষেত্রে ব্যাপক সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন হবে।

বর্তমানে বাংলাদেশের অধিকাংশ পোশাক রপ্তানিকারকের অবস্থান মধ্যম পর্যায়ের। এমনকি বড় রপ্তানিকারকরা বড় আকারের কারিগরি পোশাক ও পিপিই আমদানিকারদের সঙ্গে পরিচিত নন বলে গবেষণায় উঠে এসেছে।   

জিআইজেড বাংলাদেশের টেক্সটাইল ক্লাস্টার কোঅর্ডিনেটর ওয়েরনার ল্যাঙ্গে বলেন, গবেষণায় টেকনিক্যাল টেক্সটাইল ও পিপিইর বিশ্ববাজার, রপ্তানিতে পিছিয়ে পড়ার কারণ এবং রপ্তানি বাড়ানোর সম্ভাব্য কৌশলগুলোতে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত ‘টেকনিক্যাল টেক্সটাইল’ ও পিপিই এর সম্প্রসারণশীল বাজার ধরতে প্রস্তুত উল্লেখ করে বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, “এই সন্ধিক্ষণে আমাদের প্রয়োজন বিনিয়োগ ও উন্নত বিশ্বের প্রযুক্তিগত জ্ঞান।“

তিনি টেকনিক্যাল টেক্সটাইল ও পিপিই খাতে যৌথ বিনিয়োগকে স্বাগত জানান। তিনি বলেন, “সেই সঙ্গে  ব্র্যান্ড, টেস্টিং সার্ভিসেস কোম্পানি এবং প্রযুক্তি সররবাহকারীদের সহায়তা নিয়ে এক সাথে হাত মিলিয়ে এ সম্ভাবনা আমরা বাস্তবে রূপ দিতে চাই।”

গবেষণায় দেখা গেছে, যে বিষয়গুলোতে বাংলাদেশ পিছিয়ে রয়েছে, তা হচ্ছে- সমন্বয়ের অভাব, আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির ঘাটতি, বিপণন ও প্রচারণার অভাব, প্রধান রপ্তানিকারকদের মধ্যে এসব পণ্যের বাজার সম্পর্কে পর্যাপ্ত ধারণা না থাকা এবং এ ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সনদ না থাকা।

গবেষণায় ভবিষ্যতে একটি সমন্বিত সাপ্লাই চেইন গড়ে তোলার সুপারিশ করা হয়। একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডগুলোর বিবেচনায় কম্প্লায়েন্ট হতে হবে এবং মেইড ইন বাংলাদেশের বিশ্বস্ততা অর্জনের পাশাপাশি ব্যবস্থাপনা কারিগরি দক্ষতার অভিজ্ঞতা অর্জন করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

কমপ্লায়েন্ট হওয়ার স্বীকৃতি এবং ইইউ ও মার্কিন বাজারের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ ট্রেডিং পার্টনার হিসেবে অর্জিত খ্যাতিকে পুঁজি করার জন্য গবেষণায় বাংলাদেশকে পরামর্শ দেওয়া হয়।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, “বাংলাদেশ উন্নত প্রযুক্তিতে যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে কারিগরি পোশাক (টেকনিক্যাল টেক্সটাইল) ও পিপিই খাতে আস্থা ও নির্ভরযোগ্যতা অর্জন করতে পারে। এগুলো পণ্যের বৈচিত্র্য আনার মাধ্যমে শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করতে সাহায্য করবে।

“এমনকি সীমিত সংখ্যক পণ্যও যদি উচ্চমান বজায় রেখে উৎপাদিত হয়, তাহলেও তাদের জন্য বাজারে নির্দিষ্ট ক্যাটাগরি ও পণ্যের দরজা খুলে যাবে।“

জিআইজেড টেক্সটাইল ক্লাস্টার বাংলাদেশের চলমান চ্যালেঞ্জগুলো কাটাতে সব ধরনের কারিগরি পোশাক তৈরির সামর্থ্য অর্জন করতে স্থানীয় অংশীদারদের সহযোগিতা দিচ্ছে বলেও অনুষ্ঠানে জানানো হয়।

টেক্সটাইল ও পোশাক খাতে জিআইজেড এর সম্পৃক্ত হওয়ার সাফল্যের রূপরেখা তুলে ধরে ঢাকায় জার্মান রাষ্ট্রদূত আচিম ট্রোস্টার বলেন, “এই গবেষণার মাধ্যমে বাংলাদেশকে টেক্সটাইল খাতে সহযোগিতা করতে পেরে আমরা আনন্দিত। ভবিষ্যতেও এ বিষয়ে সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।“

বিজিএমইএ সহসভাপতি শহিদউল্লাহ আজিম, সহসভাপতি মিরান আলী, জিআইজেড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর এনজেলিকা ফ্লেডডারমেন আলোচনায় অংশ নেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here