Home বাংলা নিউজ যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানিতে রেকর্ড গড়ছে বাংলাদেশ

যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানিতে রেকর্ড গড়ছে বাংলাদেশ

জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে ৪৩২ কোটি ১১ লাখ ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। বর্তমান বিনিময় হার হিসাবে টাকার অঙ্কে এই অর্থের পরিমাণ প্রায় ৩৭ হাজার কোটি টাকা। করোনা মহামারির মধ্যে রপ্তানির এই অর্থ গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৪ দশমিক ১১ শতাংশ বেশি।

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি বাড়ছেই। চলতি বছরের প্রথম আট মাসের হিসাব বলছে, বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটিতে যে হারে পোশাক রপ্তানি হচ্ছে তাতে ছাড়িয়ে যাচ্ছে অতীতের সব রেকর্ড।

জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে ৪৩২ কোটি ১১ লাখ (৪.৩২ বিলিয়ন) ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। বর্তমান বিনিময় হার হিসাবে (প্রতি ডলার ৮৫ টাকা ৬০ পয়সা) টাকার অঙ্কে এই অর্থের পরিমাণ প্রায় ৩৭ হাজার কোটি টাকা। করোনা মহামারির মধ্যে রপ্তানির এই অর্থ গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৪ দশমিক ১১ শতাংশ বেশি।

যুক্তরাষ্ট্র গত বছরের একই সময়ে অর্থাৎ জানুয়ারি-আগস্ট সময়ে বাংলাদেশ থেকে ৩৪৮ কোটি ৪৯ লাখ ডলারের পোশাক আমদানি করেছিল।

ডিসেম্বরে বড়দিনকে সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি আরও বাড়বে বলে জানিয়েছেন পোশাকশিল্প মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ-এর সভাপতি ফারুক হাসান।

তিনি বলেন, ‘সে হিসাবে এবার যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বালাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি সাড়ে ৬ বিলিয়ন (৬৫০ কোটি) ডলার ছাড়িয়ে যাবে। আর এর মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানি অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে।’

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, একক দেশ হিসেবে বালাদেশের তৈরি পোশাকের সবচেয় বড় বাজার হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্র। এই বাজারে সবচেয়ে বেশি পোশাক রপ্তানি হয়েছিল ২০১৯ সালে; ৫৯২ কোটি ১৯ লাখ ডলার।

২০২০ সালে করোনার কারণে তা কমে ৫২২ কোটি ৮২ লাখ ডলারে নেমে আসে। ওই বছরে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাকের রপ্তানি কমেছিল ১১ দশমিক ৭১ শতাংশ।

গত ৫ অক্টোবর প্রকাশিত ইউএস ডিপার্টমেন্ট অফ কমার্সের আওতাধীন অফিস অফ টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলস (অটেক্সা) পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে ৪৩২ কোটি ১০ লাখ ৯৪ হাজার ডলারের পোশাক আমদানি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি গত বছরের একই সময়ে আমদানি করে ৩৪৮ কোটি ৪৯ লাখ ৪০ হাজার ডলারের পোশাক। এ হিসাবে আমদানি বেড়েছে ২৪ দশমিক ১১ শতাংশ।

বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি করা পোশাকের অধিকাংশই কটনভিত্তিক। চলতি বছরের প্রথম আট মাসে মার্কিন বাজারে সবচেয়ে বেশি আমদানি হওয়া পণ্য হলো মেনস বা বয়েজ কটন ট্রাউজার। ১৮ দশমিক ১৯ শতাংশ বেড়ে ৯৮ কোটি ডলারের এ পণ্য আমদানি হয়েছে। এ ছাড়া উইমেন বা গার্লস কটন স্ল্যাকস, মেনস বা বয়েজ নিট শার্ট, ওইমেনস বা গার্লস নিট ব্লাউজে পোশাক পণ্যগুলোর আমদানি বেড়েছে যথাক্রমে ২৮, ৭৪ ও ৫৯ শতাংশ।

গত জুলাই মাসে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক পোশাক ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের ক্রয় পূর্বাভাসসংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ পায়। ‘২০২১ ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি বেঞ্চ মার্কিং স্টাডি’ শীর্ষক ওই জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশ থেকে পোশাক আমদানি বাণিজ্যের গতি এখনও দুর্বল। পাশাপাশি শিল্পের সামাজিক ও শ্রম কমপ্লায়েন্স ব্যবস্থাপনায় এখনও ঝুঁকি দেখছেন তারা।

তবে সোর্সিং কস্ট বা পণ্য ক্রয় বাবদ ব্যয় বিবেচনায় বাংলাদেশ এখনও আকর্ষণীয়। মূলত মূল্য সুবিধায় পণ্য কিনতেই ঝুঁকি সত্ত্বেও বাংলাদেশমুখী হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক পণ্যের ক্রেতারা।

বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিপুলসংখ্যক মানুষকে করোনার টিকা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরেছে। তাই ওই দেশের ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো আগামী গ্রীষ্ম ও বসন্ত মৌসুমের জন্য করোনার আগের মতোই ক্রয়াদেশ দিচ্ছে। তা ছাড়া মিয়ানমারে সেনাশাসন ও ভারতে করোনার ভয়াবহতার কারণেও কিছু ক্রয়াদেশ বাংলাদেশে স্থানান্তরিত হয়।

‘এর আগে থেকেই কিছু ক্রয়াদেশ চীন থেকে বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশে স্থানান্তর করেন আমেরিকার ক্রেতারা। ভিয়েতনামে লম্বা সময় লকডাউন থাকার কারণেও কিছু ক্রয়াদেশ এসেছে। সব মিলিয়ে ২০১৯ সালের তুলনায় ১৫ থেকে ২০ শতাংশের বেশি ক্রয়াদেশ এসেছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। তার সুফল আগামী দিনগুলোতে পাওয়া যাবে।’

নিট পোশাক শিল্পমালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ-এর প্রথম সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মার্কিন ক্রেতাদের জন্য বাংলাদেশে তৈরি পোশাকের চাহিদা ক্রমেই আরও বাড়বে বলে আমরা মনে করি। আমাদের হিসাব বলছে, চলতি বছরে দেশটিতে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ২৫ শতাংশেরও বেশি হবে।’

হাতেম বলেন, ‘কারখানাগুলোতে প্রচুর ক্রয়াদেশ রয়েছে। সে জন্য আগের চেয়ে দামও কিছুটা বেশি নিতে পারছেন উদ্যোক্তারা। আশা করছি, আগামী মাসগুলোতে নিট পোশাক রপ্তানিতে ২০ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি হবে।’

তবে সুতার দামের অস্থিরতার কারণে রপ্তানিকারকরা খুব একটা স্বস্তিতে নেই বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

এক মাসে সর্বোচ্চ রপ্তানির রেকর্ড

করোনা মহামারির মধ্যেই পণ্য রপ্তানিতে নতুন রেকর্ড দেখল বাংলাদেশ। গত সেপ্টেম্বর মাসে দেশের উদ্যোক্তারা মোট ৪১৭ কোটি ডলার বা প্রায় ৩৬ হাজার কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি করেছেন। যার মধ্যে সাড়ে ৮২ শতাংশই এসেছে তৈরি পোশাক থেকে।

অতীতে আর কোনো মাসেই এই পরিমাণ পণ্য রপ্তানি হয়নি। এর আগে গত বছরের জুলাইয়ে সর্বোচ্চ ৩৯১ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছিল বাংলাদেশ।

সেপ্টেম্বর মাসের বালাদেশের রপ্তানি আয়ের উল্লম্ফনের এই তথ্য যোগ করে ইউএস ডিপার্টমেন্ট অফ কমার্সের আওতাধীন অফিস অফ টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলস (অটেক্সা)। আগামী নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে ৯ মাসের (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) তথ্য প্রকাশ করবে তারা। আর তখন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি উল্লম্ফনের প্রকৃত চিত্র পাওয়া যাবে বলে জানান ফারুক হাসান।

তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে আমাদের রপ্তানি বাড়াতে সম্প্রতি আমি নিউ ইয়র্ক, ওয়াশিংটন ডিসিসহ যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি স্টেট সফর করেছি। বড় বড় ক্রেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে মিটিং করেছি। তারা সবাই বাংলাদেশ থেকে আরও বেশি বেশি পোশাক কেনার আশ্বাস দিয়েছেন; দামও বেশি দিতে রাজি হয়েছেন। এসবের ইতিবাচক ফল আগামী দিনগুলোতে অবশ্যই পাওয়া যাবে।’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here