Home Blog Page 430

ক্রয়াদেশ স্থগিত-বাতিলে প্রভাবিত ১৯ লাখ ৬০ হাজার শ্রমিকের কর্মসংস্থান

নভেল করোনার ভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিততে একের পর এক ক্রয়াদেশ হারাচ্ছে তৈরি পোশাক খাত। শিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) তথ্য বলছে, আজ সকাল ১০টা পর্যন্ত ৯৬৬ কোম্পানির অধীনে থাকা কারখানাগুলোতে ২৬৭ কোটি ডলারের ক্রয়াদেশ বাতিল ও স্থগিত হয়েছে। এর ফলে প্রভাবিত হয়েছে ১৯ লাখ ৬০ হাজার পোশাক শ্রমিকের কর্মসংস্থান।

বিজিএমইএ বলছে, এসব ক্রয়াদেশের আওতায় ছিলো ৮২ কোটি ৮০ লাখ পিস পোশাক। ৯৬৬ প্রতিষ্ঠানের আওতায় আছে ১৯ লাখ ৬০ হাজার শ্রমিক। ক্রয়াদেশ বাতিল-স্থগিত করা ক্রেতাদের মধ্যে প্রাইমার্কের মতো বড় ক্রেতা প্রতিষ্ঠানও আছে। আয়ারল্যান্ড ভিত্তিক প্রাইমার্কের পাশাপাশি ক্রয়াদেশ বাতিল-স্থগিত করেছে ইউরোপের ছোট-মাঝারি-বড় সব ধরনের ক্রেতারাও।

করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে পশ্চিমা বিশ্বের দেশগুলো একের পর এক লকডাউন ঘোষণা করছে। বিক্রয়কেন্দ্র বন্ধ ঘোষণা করছে পোশাকের ব্র্যান্ডগুলো। এ পরিস্থিতিতে ভোক্তা চাহিদায় ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। বাজার চাহিদার এ পরিস্থিতিতে নতুন ক্রয়াদেশ দিচ্ছে না ক্রেতারা। শুধু তাই নয়, বাতিল ও স্থগিত করছে আগের দেয়া ক্রয়াদেশও, যার ফলে ব্যাপক মাত্রায় ক্রয়াদেশ হারাচ্ছে দেশের তৈরি পোশাক খাত। 

করোনার প্রভাবে প্রথমে কাঁচামাল সরবরাহ সংকটে পড়তে হয়েছিল পোশাক খাতকে। কারণ দেশের তৈরি পোশাক খাতের ওভেন পণ্য তৈরির আনুমানিক শতকরা ৬০ শতাংশ কাপড় চীন থেকে আমদানি হয়।  

আর নিট পণ্য তৈরির আনুমানিক শতকরা ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কাঁচামাল চীন থেকে আমদানি হয়। চীনে করোনা ভাইরাস হানা দেয়া দেশটি থেকে  কাঁচামাল আসতে পারছিল না। কারণ করোনার প্রভাবে দেশটির বাণিজ্যিক কার্যক্রম বন্ধ ছিল। ধীর গতিতে হলেও কাঁচামাল সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করে পরে। কিন্তু এখন চাহিদা সংকটে পড়েছে পোশাক খাত।

এদিকে গত বুধবার (২৫ মার্চ) জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে রফতানিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠানের জন্য বিশেষ প্রণোদনা প্যাকেজেরও ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমাদের শিল্প উৎপাদন ও রফতানি বাণিজ্যে আঘাত আসতে পারে। এ আঘাত মোকাবেলায় আমরা কিছু আপৎকালীন ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। রফতানিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠানের জন্য আমি ৫ হাজার কোটি টাকার একটি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করছি। এ তহবিলের অর্থ দ্বারা কেবল শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করা যাবে।

প্রণোদনা চান পোশাক পণ্যের অ্যাকসেসরিজ প্রস্তুতকারকরাও

শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের বেতন ভাতাদি প্রদান করে উত্পাদন অব্যাহত রাখতে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে বরাদ্দ চেয়েছেন তৈরি পোশাক পণ্যের সুইং থ্রেট, বোতাম, কার্টনের মতো অ্যাকসেসরিজ বা অনুসঙ্গ প্রস্তুতকারক প্রচ্ছন্ন রফতানিকারকরা। গত ২৬ মার্চ এক সংবাদ বিবৃতির মাধ্যমে এ দাবি জানান সংশ্লিষ্ট সংগঠন বিজিএপিএমইএ সভাপতি মো. আব্দুল কাদের খান। বিবৃতিতে মো. আব্দুল কাদের খান বলেন, করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে বিদেশী ক্রেতারা প্রতিনিয়ত ক্রয়াদেশ বাতিলসহ স্থগিত করছে। ফলে শিল্প কারখানা চালু রাখা ও শ্রমিক কর্মচারীদের বেতনভাতা দেয়া কঠিন হয়ে গেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী রফতানিমুখি শিল্পের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। বিজিএপিএমইএ ১ হাজার ৭০০ এর অধিক গার্মেন্টস অ্যাকসেসরিজ ও প্যাকেজিং পণ্যের শতভাগ রফতানিমুখি শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি বাণিজ্যিক সংগঠন যা বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের ৯৫ ভাগ অ্যাকসেসরিজ পণ্য স্থানীয়ভাবে সরবরাহ করে থাকে এমন তথ্য উল্লেখ করে মো. আব্দুল কাদের খান বলেন, এছাড়াও ওষুধ, ক্রোকারিজ, হিমায়িত খাদ্য, সিরামিক, চামড়া ইত্যাদি রফতানিখাতের সব ধরনের মোড়কজাত পণ্যের চাহিদা পূরণ করে থাকে। বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যাকসেসরিজ অ্যান্ড প্যাকেজিং ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএপিএমইএ) সভাপতি মো. আব্দুল কাদের খান আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিজিএপিএমইএর বিনীত অনুরোধ, এ খাত যেন ঘোষিত প্রণোদনা থেকে বরাদ্দ পেয়ে সব শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের বেতন ভাতাদি দিয়ে উৎপাদন অব্যাহত রাখতে পারে।

প্যাকেজ থেকে বরাদ্দ চান প্রচ্ছন্ন রফতানিকারকরাও

শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের বেতনভাতাদি দিয়ে উৎপাদন অব্যাহত রাখতে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে বরাদ্দ চেয়েছেন তৈরি পোশাক পণ্যের সুইং থ্রেট, বোতাম, কার্টনের মতো অ্যাকসেসরিজ বা অনুষঙ্গ প্রস্তুতকারক প্রচ্ছন্ন রফতানিকারকরা। এক সংবাদ বিবৃতির মাধ্যমে এ দাবি জানান সংশ্লিষ্ট সংগঠন বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যাকসেসরিজ অ্যান্ড প্যাকেজিং ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএপিএমইএ) সভাপতি মো. আব্দুল কাদের খান। 

বিবৃতিতে মো. আব্দুল কাদের খান বলেন, বৈশ্বিক করোনাভাইরাসের দুর্যোগের কারণে বিশ্ব অর্থনীতির সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থনীতিও সমস্যার সম্মুখীন। বিশেষ করে রফতানিমুখী পোশাক শিল্পসহ অন্যান্য শিল্প খাত নানাবিধ চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়েছে। কারণ বিদেশী ক্রেতারা প্রতিনিয়ত ক্রয়াদেশ বাতিলসহ স্থগিত করে চলেছে। ফলে শিল্প-কারখানা চালু রাখা ও শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতনভাতা দেয়া অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে। ঠিক সে মুহূর্তে প্রধানমন্ত্রী তার দূরদর্শী দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে রফতানিমুখী শিল্পের মালিকরা যাতে করে শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতনভাতা প্রদান করতে পারেন, সে জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার একটি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিজিএপিএমইএ ১ হাজার ৭০০-এর অধিক গার্মেন্টস অ্যাকসেসরিজ ও প্যাকেজিং পণ্যের শতভাগ রফতানিমুখী শিল্প-প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি বাণিজ্যিক সংগঠন, যা বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের ৯৫ ভাগ অ্যাকসেসরিজ পণ্য স্থানীয়ভাবে সরবরাহ করে থাকে। এছাড়াও ওষুধ, ক্রোকারিজ, হিমায়িত খাদ্য, সিরামিক, চামড়া ইত্যাদি রফতানি খাতের সব ধরনের মোড়কজাত পণ্যের চাহিদা পূরণ করে থাকে। 

বিজিএপিএমইএর সভাপতি মো. আব্দুল কাদের খান আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের বিনীত অনুরোধ, যাতে করে ঘোষিত প্রণোদনা থেকে বরাদ্দ পেয়ে এ সেক্টরের শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের বেতনভাতাদি প্রদান করে আমরা উৎপাদন অব্যাহত রাখতে পারি।

বিকেএমইএর সব পোশাক কারখানা ৪ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ

করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে আগামীকাল শনিবার থেকে দেশের সব নিট পোশাক কারখানা ৪ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধের নির্দেশনা দিয়েছেন বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সভাপতি এ কে এম সেলিম ওসমান। শুক্রবার বিকেলে গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়।

নির্দেশনায় বলা হয়েছে, বিশব্যাপী করোনা সংক্রমণের যে ক্ষতিকর প্রভাব বাংলাদেশে পড়েছে, তা থেকে দেশ ও দেশের মানুষকে বাঁচানোই এ মুহূর্তে আমাদের সবার লক্ষ্য। মানুষ বাঁচলে শিল্প বাঁচবে এবং শিল্প বাঁচলে দেশ সমৃদ্ধ হবে। এজন্যই দেশের স্বার্থে সরকার সব প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখেছে।  বিকেএমইএ থেকেও ইতোপূর্বে গত ২৫ পত্রের মাধ্যমে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত কারখানা বন্ধ রাখার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী রপ্তানিমুখী শিল্পকে করোনা আক্রান্ত অর্থনৈতিক মন্দা থেকে রক্ষার জন্য বিশাল প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। এছাড়াও বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা এই শিল্প খাতের জন্য প্রদান করেছেন। তাই এমন প্রেক্ষাপটে আমাদের কারণে কোনো শ্রমিকের যেন ক্ষতি না হয়, সেজন্য কোনোভাবেই আতঙ্কিত না হয়ে, দেশ ও দেশের মানুষকে বাঁচানোর জন্য সরকারের সিদ্ধান্তের সাথে সাদৃশ্য রেখে বিকেএমইএর সদস্যভুক্ত সকল নিট পোশাক কারখানা আপাতত ৪ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ রাখার বিশেষ নির্দেশনা জারি করা হল।  নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ছুটির সময় কারখানার শ্রমিকরা যে যেখানে অবস্থান করছে সে যেন সেখানেই অবস্থান করে তা নিশ্চিত করতে হবে। তাদের বুঝাতে হবে, এটা কোনো ঈদ বা উৎসবের ছুটি নয়। তাই যে যেখানে অবস্থান করে, তাকে সেখানেই থাকতে হবে।

বন্ধের আওতামুক্ত থাকবে যেসব শিল্প কারখানা

কারখানা বন্ধের বিষয়ে পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন ইতিমধ্যে তাদের সদস্যভুক্ত কারখানাগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছে। তবে এ নিয়ে কিছুটা বিভ্রান্তির পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রবার শ্রম মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর (ডিআইএফই) একটি আলাদা নির্দেশনা দিয়েছে।

এতে বলা হয়, যেসব গার্মেন্টস কারখানায় রফতানি আদেশের কাজ চলমান রয়েছে, সেগুলো বন্ধের বিষয়ে সরকার কোন নির্দেশনা দেয়নি। এছাড়া বর্তমান করোনা ভাইরাস পরিস্থিতির মধ্যে ডাক্তারদের জন্য ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সমাগ্রী বা পিপিই তৈরি করছে কিংবা মাস্ক, গ্লাভস, স্যানিটাইজার, ওষুধ উৎপাদন করছে – সেসব কারখানা বন্ধের আওতামুক্ত থাকবে।  তবে এক্ষেত্রে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং আইইডিসিআর (রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট) কর্তৃক জারিকৃত স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নির্দেশিকা কঠোরভাবে প্রতিপালন করতে হবে। এতে বলা হয়, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে শিল্প খাতের শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য আহ্বান জানিয়েছিলেন।

করোনায় জরুরি প্রয়োজনে কারখানা খোলা রাখা যাবে

জরুরি প্রয়োজনে শিল্পকারখানা চালু রাখা যাবে বলে জানিয়েছে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর (ডিআইএফই)। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও আইইডিসিআরের জারি করা স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নির্দেশিকা কঠোরভাবে পরিপালন করেই কারখানা চালাতে হবে শিল্প মালিকদের। ডিআইএফইর মহাপরিদর্শক শিবনাথ রায় গতকাল শুক্রবার এই নির্দেশনা দিয়েছেন। তাতে বলা হয়েছে, যেসব রপ্তানিমুখী কারখানায় ক্রয়াদেশ রয়েছে এবং করোনা প্রতিরোধে অপরিহার্য পণ্য-পারসোনাল প্রোটেকটিভ ইকুইমেন্ট (পিপিই), মাস্ক, হ্যান্ডওয়াশ বা স্যানিটাইজার, ওষুধ ইত্যাদি উৎপাদন কার্যক্রম চলছে সেসব কারখানার শিল্প মালিকেরা শ্রমিকদের প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করে কারখানা চালু রাখতে পারবেন। তবে কারখানায় প্রবেশের পূর্বে থার্মাল স্ক্যানার ব্যবহার করে শ্রমিকদের দেহের তাপমাত্রা পরীক্ষা করা বাধ্যতামূলক। কোনা শ্রমিকের শরীরে করোনাভাইরাসের উপসর্গ দেখা দিলে তাকে সংগনিরোধ বা কোয়ারেন্টাইন করার পাশাপাশি চিকিৎসা দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে ডিআইএফই। অধিদপ্তর বলেছে, গত ২৫ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের বেতন ভাতা প্রদানের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদণা প্যাকেজ ঘোষনার পাশাপাশি তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করতে সবার প্রতি আহ্বান জানান। তবে প্রধানমন্ত্রী বক্তব্যে শিল্প কারখানা বন্ধের কোন নির্দেশনা ছিল না। সরকার থেকে নির্দেশনা না দিলেও তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ গতকাল শ্রমিকদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে মালিকদের কারখানা বন্ধ রাখার অনুরোধ করে। এদিকে আজ শুক্রবার নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি এ কে এম সেলিম ওসমান আগামী ৪ এপ্রিল পর্যন্ত কারখানা বন্ধ রাখতে বিশেষ নির্দেশনা দেন।

সময়মতো বেতন পাবেন প্রধানমন্ত্রী পাশে আছেন: বিজিএমইএ সভাপতি

করোনাভাইরাসে শ্রমিকদের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। সময়মতো শ্রমিকরা বেতন পাবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ড. রুবানা হক। তিনি সবাইকে প্রধানমন্ত্রীর ওপর ভরসা রাখার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘তিনি আমাদের পাশে আছেন। শুধু গার্মেন্ট শ্রমিক নয়, সব শ্রমিকের কথাই ভাবছেন প্রধানমন্ত্রী।’ সোমবার এক ভিডিওবার্তায় তিনি এ কথা বলেন।

অপরদিকে স্পর্শকাতর গার্মেন্ট সেক্টর নিয়ে দ্রুত সঠিক সমাধান চেয়েছেন মালিকরা। তাদের অনেকে যুগান্তরকে জানিয়েছেন, মূল্যবান সময় ফুরিয়ে যাচ্ছে। করোনাভাইরাসকে সত্যিকারার্থে মোকাবেলা করতে হলে সবার আগে এই সেক্টর নিয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত দিতে হবে। কেননা এখানে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দেড় কোটি লোকের কর্মসংস্থান জড়িত। দুপুরে ৪ মিনিট ১৬ সেকেন্ডের এক ভিডিওবার্তায় বিজিএমইএ সভাপতি ড. রুবানা হক বলেন, ‘আমরা সবাই দুরূহ ও অস্বাভাবিক সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি।

অর্ডার পরিস্থিতি অত্যন্ত শোচনীয়। গত ৪ দিনে প্রায় দেড় বিলিয়ন ডলারের অর্ডার বাতিল হয়েছে। কেউ কেউ পুরো অর্ডার বাতিল করেছেন, আবার কেউ আংশিক। অনেক ক্রেতা আলোচনার কথা বলছেন। আলোচনা করার কথা বললেও একটা আশা থাকে। কিন্তু বাতিল করে দিলে কোনো জায়গা থাকে না। ক্রেতারা এই মৌসুমের পণ্য আগামী মৌসুমে নেবে কি না, সেটাও বলছে না। এ অবস্থায় চরম অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। এই দেড় বিলিয়ন ডলার বাতিল বা স্থগিত করায় প্রায় ১২ লাখ শ্রমিক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

এটা শুধু বিজিএমইএর ওয়েবসাইটে গার্মেন্ট মালিকদের দেয়া তথ্য। এর বাইরেও প্রচুর অর্ডার বাতিল হয়েছে।’ শ্রমিকদের উদ্দেশে রুবানা হক বলেন, ‘এ অবস্থায় ধৈর্য হারালে হবে না। ২৫ মার্চ প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন। সবাই তার ভাষণের জন্য আপেক্ষা করি। আতঙ্কিত হওয়ার জায়গা নেই। শ্রমিকদের যখন বেতনের সময় আসবে তখন তারা বেতন পাবেন। কেউ ভয় পাবেন না। ভরসা রাখুন। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় আমাদের আশ্বস্ত করেছে, তারা আমাদের পাশে আছে।

অন্তত প্রধানমন্ত্রীর ওপর এটুকু ভরসা রাখুন, শুধু গার্মেন্টের ৪১ লাখ শ্রমিকের দিকে নয়, উনি সব শ্রমিকের দিকে তাকিয়ে আছেন। যতদিন উনি পাশে আছেন, আমরা কেউ পানিতে পড়ব না। বিদেশি ব্র্যান্ডকে আবেদন জানাই, তারা যেন বানানো মালগুলো নেয়। অন্তত চলার জায়গা তৈরি করুন। না হলে আগামী ৬ মাসে বড়, মাঝারি ও ছোট সব কারখানা বসে যাবে।’

সংবাদকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনাদের তাৎক্ষণিক একটি হেডলাইন, স্ক্রল এ মুহূর্তে পোশাক শিল্পের জীবন বদলে দিতে পারে। যদি কোনো ধরনের আতঙ্ক সৃষ্টি হয়, না শ্রমিক ভাই-বোনরা উপকৃত হবে, না বিজিএমইএ উপকৃত হবে, না শিল্প উপকৃত হবে, না সরকার উপকৃত হবে। শ্রমিক বেতনের সময় তার বেতন পাবে। এটি মনে রেখে আমাদের পাশে এসে দাঁড়ান।’

তিনি আরও বলেন, ‘শ্রমিকদের মাস্ক দেয়া চলছে, ডাক্তারদের পোশাক তৈরির কাজ চলছে। যেখানে পারছি করছি, আর যেখানে পারছি না সেখানে অন্তত রেইনকোর্ট কিনে সামনে মাস্ক দেয়া হচ্ছে। যাতে ডাক্তারদের নিরাপত্তা নিশ্চিত থাকে। বিজিএমইএ সব সময় শ্রমিকদের পাশে আছে।’

এদিকে এফবিসিসিআইর সহসভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, বিজিএমইএ-কে কারখানা মালিকরা যে তথ্য জানিয়েছে, তাতে দেড় বিলিয়ন ডলারের অর্ডার বাতিল হয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। অর্ডার বাতিলের পরিমাণ দেড় বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। প্রতি মুহূর্তের ক্রেতাদের ই-মেইল পাওয়ার শঙ্কায় রয়েছেন গার্মেন্ট মালিকরা। একটা নির্দিষ্ট পর্যায়ে না আসা পর্যন্ত সঠিকভাবে বলা যাবে না কী পরিমাণ অর্ডার বাতিল হয়েছে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন গার্মেন্ট মালিক যুগান্তরকে বলেন, ‘আমরা দেখতে পাচ্ছি অর্ডার বাতিলের তথ্য নিয়ে দায়িত্বশীল কেউ কেউ বিভ্রান্তিকর তথ্য দিচ্ছেন। কিন্তু বাস্তবতা হল, কোনো কারাখানায় অর্ডার নেই। যা ছিল সব বাতিল হয়ে গেছে। ফলে আমাদের উচিত হবে, কঠিন সত্যকে মেনে নিয়ে তা মোকাবেলা করার জন্য সরকারের সহযোগিতায় কার্যকর প্রস্তুতি নেয়া। যা অন্যান্য দেশ করছে। কিন্তু এভাবে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে ক্ষতি ছাড়া লাভ নেই।

প্রথমসারির একজন গার্মেন্ট মালিকের কারখানায় যদি কোনো অর্ডার না থাকে তাহলে অন্য কোথাও অর্ডার থাকার কথা নয়। সুতরাং নজিরবিহীন এ পরিস্থিতিতে সবার উচিত হবে, সরকারপ্রধানকে প্রকৃত তথ্য জানানো। পাশাপাশি অন্তত আগামী ৩ মাস কীভাবে গার্মেন্ট চলবে তার পলিসি নির্ধারণ করা। সে ক্ষেত্রে এমন প্রস্তাব দেয়া যেতে পারে, এক মাসের বেতন দিয়ে গার্মেন্ট কর্মীদের ছুটি দিতে হবে। একই সঙ্গে সরকার অবশিষ্ট ২ মাসের বেতন ব্যাংক থেকে সুদমুক্ত ঋণের ব্যবস্থা করবে।

যা গার্মেন্ট মালিকরা ৩-৪ বছর মেয়াদে পর্যায়ক্রমে পরিশোধ করবেন। সে ক্ষেত্রে সরকার ব্যাংকে কিছু ভর্তুকি দিতে পারে। কেউ কেউ বলেন, এ সেক্টর ভালোভাবে টিকিয়ে রাখতে কমপক্ষে আগামী ৩ মাসের পুরো তহবিল সরকারের পক্ষ থেকে বহন বরা উচিত। কেননা, এই গার্মেন্ট সেক্টর জাতিকে অনেক দিয়েছে। তারা বলেন, গার্মেন্ট শ্রমিকরা সামান্য বেতন পায়। তাই বেতনের নিশ্চয়তা না থাকলে তাদের ক্ষোভ-অসন্তোষ সামাল দেয়া কঠিন হবে। সঙ্গত কারণে বিজিএমইএ নেতারাসহ সরকারের উচ্চপর্যায়কে গার্মেন্ট সেক্টরকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। এ সেক্টরের বিষয়ে আরও আগে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত ঘোষণা দেয়া উচিত ছিল। ইতোমধ্যে অনেক দেরি হয়ে গেছে।

ভুক্তভোগী কারখানা মালিকরা বলছেন, অনেক ক্রেতা ই-মেইলে সরাসরি অর্ডার বাতিল না করলেও উৎপাদন বন্ধ রাখতে বলছেন। পরে তারা এ বিষয়ে আলোচনা করবেন বলে জানাচ্ছেন। কিন্তু এতেও আশঙ্কা আছে। কারণ, গার্মেন্টপণ্য মৌসুম অনুযায়ী বানানো হয়। আর প্রতিটি মৌসুমেই হালনাগাদ ডিজাইন পাঠান ক্রেতারা। তার মানে, এ বছরের ডিজাইন আগামী বছর পুরনো হয়ে পড়বে। তখন ওই পণ্য ক্রেতারা আদৌ নেবেন কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। এ কারণে যেসব অর্ডার নিয়ে আলোচনার কথা বলা হচ্ছে, সেগুলো প্রকৃতপক্ষে কৌশলে বাতিল করে দিয়েছেন ক্রেতারা।

নিট কারখানা খোলা থাকবে : সোমবার বিকালে কারওয়ান বাজারে বিকেএমইএর সম্মেলন কক্ষে সংগঠনের সভাপতি ও সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের সভাপতিত্বে পরিচালনা পর্ষদের জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় নিট কারখানা খোলা রাখাসহ ৩টি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে বিকেএমইএ।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২৬ ও ২৭ মার্চ কারখানায় সব ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। করোনা প্রতিরোধে কারখানায় প্রবেশমুখে সব শ্রমিক, কর্মকর্তা-কর্মচারীকে জীবাণুনাশক সাবান বা হ্যান্ডওয়াশ দিয়ে হাত ধোয়া এবং শরীরের তাপমাত্রা মেপে কারখানায় প্রবেশ করাতে হবে। এ ছাড়া কারখানার ভেতরে সাবান-পানি দিয়ে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা রাখতে হবে।

এতে আরও বলা হয়েছে, ২৫ মার্চ জাতির উদ্দেশে দেয়া প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের দিকনির্দেশনার আলোকে এবং প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে ফ্যাক্টরি খোলা বা বন্ধ রাখা হবে কি না, সে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এ ছাড়া কারখানার কী পরিমাণ অর্ডার বাতিল, স্থগিত এবং শিপমেন্ট বাতিল হয়েছে, তা ৩১ মার্চের মধ্যে ফ্যাক্টরিগুলো থেকে লিখিতভাবে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সময়মতো বেতন পাবেন প্রধানমন্ত্রী পাশে আছেন: বিজিএমইএ সভাপতি

করোনাভাইরাসে শ্রমিকদের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। সময়মতো শ্রমিকরা বেতন পাবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ড. রুবানা হক। তিনি সবাইকে প্রধানমন্ত্রীর ওপর ভরসা রাখার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘তিনি আমাদের পাশে আছেন। শুধু গার্মেন্ট শ্রমিক নয়, সব শ্রমিকের কথাই ভাবছেন প্রধানমন্ত্রী।’ সোমবার এক ভিডিওবার্তায় তিনি এ কথা বলেন।

অপরদিকে স্পর্শকাতর গার্মেন্ট সেক্টর নিয়ে দ্রুত সঠিক সমাধান চেয়েছেন মালিকরা। তাদের অনেকে যুগান্তরকে জানিয়েছেন, মূল্যবান সময় ফুরিয়ে যাচ্ছে। করোনাভাইরাসকে সত্যিকারার্থে মোকাবেলা করতে হলে সবার আগে এই সেক্টর নিয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত দিতে হবে। কেননা এখানে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দেড় কোটি লোকের কর্মসংস্থান জড়িত। দুপুরে ৪ মিনিট ১৬ সেকেন্ডের এক ভিডিওবার্তায় বিজিএমইএ সভাপতি ড. রুবানা হক বলেন, ‘আমরা সবাই দুরূহ ও অস্বাভাবিক সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি।

অর্ডার পরিস্থিতি অত্যন্ত শোচনীয়। গত ৪ দিনে প্রায় দেড় বিলিয়ন ডলারের অর্ডার বাতিল হয়েছে। কেউ কেউ পুরো অর্ডার বাতিল করেছেন, আবার কেউ আংশিক। অনেক ক্রেতা আলোচনার কথা বলছেন। আলোচনা করার কথা বললেও একটা আশা থাকে। কিন্তু বাতিল করে দিলে কোনো জায়গা থাকে না। ক্রেতারা এই মৌসুমের পণ্য আগামী মৌসুমে নেবে কি না, সেটাও বলছে না। এ অবস্থায় চরম অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। এই দেড় বিলিয়ন ডলার বাতিল বা স্থগিত করায় প্রায় ১২ লাখ শ্রমিক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

এটা শুধু বিজিএমইএর ওয়েবসাইটে গার্মেন্ট মালিকদের দেয়া তথ্য। এর বাইরেও প্রচুর অর্ডার বাতিল হয়েছে।’ শ্রমিকদের উদ্দেশে রুবানা হক বলেন, ‘এ অবস্থায় ধৈর্য হারালে হবে না। ২৫ মার্চ প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন। সবাই তার ভাষণের জন্য আপেক্ষা করি। আতঙ্কিত হওয়ার জায়গা নেই। শ্রমিকদের যখন বেতনের সময় আসবে তখন তারা বেতন পাবেন। কেউ ভয় পাবেন না। ভরসা রাখুন। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় আমাদের আশ্বস্ত করেছে, তারা আমাদের পাশে আছে।

অন্তত প্রধানমন্ত্রীর ওপর এটুকু ভরসা রাখুন, শুধু গার্মেন্টের ৪১ লাখ শ্রমিকের দিকে নয়, উনি সব শ্রমিকের দিকে তাকিয়ে আছেন। যতদিন উনি পাশে আছেন, আমরা কেউ পানিতে পড়ব না। বিদেশি ব্র্যান্ডকে আবেদন জানাই, তারা যেন বানানো মালগুলো নেয়। অন্তত চলার জায়গা তৈরি করুন। না হলে আগামী ৬ মাসে বড়, মাঝারি ও ছোট সব কারখানা বসে যাবে।’

সংবাদকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনাদের তাৎক্ষণিক একটি হেডলাইন, স্ক্রল এ মুহূর্তে পোশাক শিল্পের জীবন বদলে দিতে পারে। যদি কোনো ধরনের আতঙ্ক সৃষ্টি হয়, না শ্রমিক ভাই-বোনরা উপকৃত হবে, না বিজিএমইএ উপকৃত হবে, না শিল্প উপকৃত হবে, না সরকার উপকৃত হবে। শ্রমিক বেতনের সময় তার বেতন পাবে। এটি মনে রেখে আমাদের পাশে এসে দাঁড়ান।’

তিনি আরও বলেন, ‘শ্রমিকদের মাস্ক দেয়া চলছে, ডাক্তারদের পোশাক তৈরির কাজ চলছে। যেখানে পারছি করছি, আর যেখানে পারছি না সেখানে অন্তত রেইনকোর্ট কিনে সামনে মাস্ক দেয়া হচ্ছে। যাতে ডাক্তারদের নিরাপত্তা নিশ্চিত থাকে। বিজিএমইএ সব সময় শ্রমিকদের পাশে আছে।’

এদিকে এফবিসিসিআইর সহসভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, বিজিএমইএ-কে কারখানা মালিকরা যে তথ্য জানিয়েছে, তাতে দেড় বিলিয়ন ডলারের অর্ডার বাতিল হয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। অর্ডার বাতিলের পরিমাণ দেড় বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। প্রতি মুহূর্তের ক্রেতাদের ই-মেইল পাওয়ার শঙ্কায় রয়েছেন গার্মেন্ট মালিকরা। একটা নির্দিষ্ট পর্যায়ে না আসা পর্যন্ত সঠিকভাবে বলা যাবে না কী পরিমাণ অর্ডার বাতিল হয়েছে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন গার্মেন্ট মালিক যুগান্তরকে বলেন, ‘আমরা দেখতে পাচ্ছি অর্ডার বাতিলের তথ্য নিয়ে দায়িত্বশীল কেউ কেউ বিভ্রান্তিকর তথ্য দিচ্ছেন। কিন্তু বাস্তবতা হল, কোনো কারাখানায় অর্ডার নেই। যা ছিল সব বাতিল হয়ে গেছে। ফলে আমাদের উচিত হবে, কঠিন সত্যকে মেনে নিয়ে তা মোকাবেলা করার জন্য সরকারের সহযোগিতায় কার্যকর প্রস্তুতি নেয়া। যা অন্যান্য দেশ করছে। কিন্তু এভাবে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে ক্ষতি ছাড়া লাভ নেই।

প্রথমসারির একজন গার্মেন্ট মালিকের কারখানায় যদি কোনো অর্ডার না থাকে তাহলে অন্য কোথাও অর্ডার থাকার কথা নয়। সুতরাং নজিরবিহীন এ পরিস্থিতিতে সবার উচিত হবে, সরকারপ্রধানকে প্রকৃত তথ্য জানানো। পাশাপাশি অন্তত আগামী ৩ মাস কীভাবে গার্মেন্ট চলবে তার পলিসি নির্ধারণ করা। সে ক্ষেত্রে এমন প্রস্তাব দেয়া যেতে পারে, এক মাসের বেতন দিয়ে গার্মেন্ট কর্মীদের ছুটি দিতে হবে। একই সঙ্গে সরকার অবশিষ্ট ২ মাসের বেতন ব্যাংক থেকে সুদমুক্ত ঋণের ব্যবস্থা করবে।

যা গার্মেন্ট মালিকরা ৩-৪ বছর মেয়াদে পর্যায়ক্রমে পরিশোধ করবেন। সে ক্ষেত্রে সরকার ব্যাংকে কিছু ভর্তুকি দিতে পারে। কেউ কেউ বলেন, এ সেক্টর ভালোভাবে টিকিয়ে রাখতে কমপক্ষে আগামী ৩ মাসের পুরো তহবিল সরকারের পক্ষ থেকে বহন বরা উচিত। কেননা, এই গার্মেন্ট সেক্টর জাতিকে অনেক দিয়েছে। তারা বলেন, গার্মেন্ট শ্রমিকরা সামান্য বেতন পায়। তাই বেতনের নিশ্চয়তা না থাকলে তাদের ক্ষোভ-অসন্তোষ সামাল দেয়া কঠিন হবে। সঙ্গত কারণে বিজিএমইএ নেতারাসহ সরকারের উচ্চপর্যায়কে গার্মেন্ট সেক্টরকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। এ সেক্টরের বিষয়ে আরও আগে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত ঘোষণা দেয়া উচিত ছিল। ইতোমধ্যে অনেক দেরি হয়ে গেছে।

ভুক্তভোগী কারখানা মালিকরা বলছেন, অনেক ক্রেতা ই-মেইলে সরাসরি অর্ডার বাতিল না করলেও উৎপাদন বন্ধ রাখতে বলছেন। পরে তারা এ বিষয়ে আলোচনা করবেন বলে জানাচ্ছেন। কিন্তু এতেও আশঙ্কা আছে। কারণ, গার্মেন্টপণ্য মৌসুম অনুযায়ী বানানো হয়। আর প্রতিটি মৌসুমেই হালনাগাদ ডিজাইন পাঠান ক্রেতারা। তার মানে, এ বছরের ডিজাইন আগামী বছর পুরনো হয়ে পড়বে। তখন ওই পণ্য ক্রেতারা আদৌ নেবেন কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। এ কারণে যেসব অর্ডার নিয়ে আলোচনার কথা বলা হচ্ছে, সেগুলো প্রকৃতপক্ষে কৌশলে বাতিল করে দিয়েছেন ক্রেতারা।

নিট কারখানা খোলা থাকবে : সোমবার বিকালে কারওয়ান বাজারে বিকেএমইএর সম্মেলন কক্ষে সংগঠনের সভাপতি ও সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের সভাপতিত্বে পরিচালনা পর্ষদের জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় নিট কারখানা খোলা রাখাসহ ৩টি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে বিকেএমইএ।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২৬ ও ২৭ মার্চ কারখানায় সব ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। করোনা প্রতিরোধে কারখানায় প্রবেশমুখে সব শ্রমিক, কর্মকর্তা-কর্মচারীকে জীবাণুনাশক সাবান বা হ্যান্ডওয়াশ দিয়ে হাত ধোয়া এবং শরীরের তাপমাত্রা মেপে কারখানায় প্রবেশ করাতে হবে। এ ছাড়া কারখানার ভেতরে সাবান-পানি দিয়ে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা রাখতে হবে।

এতে আরও বলা হয়েছে, ২৫ মার্চ জাতির উদ্দেশে দেয়া প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের দিকনির্দেশনার আলোকে এবং প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে ফ্যাক্টরি খোলা বা বন্ধ রাখা হবে কি না, সে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এ ছাড়া কারখানার কী পরিমাণ অর্ডার বাতিল, স্থগিত এবং শিপমেন্ট বাতিল হয়েছে, তা ৩১ মার্চের মধ্যে ফ্যাক্টরিগুলো থেকে লিখিতভাবে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।

Knit factories will be open for now

An emergency meeting of the Board of Directors of the BKMEA was held at the conference room of the BKMEA Dhaka office on Monday, March 23, 2020. The meeting discussed in detail what to do for the lower sector in the context of Corona infection. After the discussion, the following conclusions are made:

2. The institutions shall take all necessary measures for the functioning of their institution. March 26, 2020: Public Holidays It will ensure all the safety measures in the factory, as it is a weekly holiday on March 27, 2020. All necessary security measures must be taken to protect workers and officers from corona virus during the factory. In this case, all workers / officers / employees at the entrance to the factory must wash their hands thoroughly with disinfectant soap or hand wash and enter the factory to measure body temperature and wash their hands regularly with soap in the factory. In the event of a fever, cold / cough must be reported to the factory authorities. Above all, we should always use mask, hand globes and avoid touching our nose and eyes.

2. The Prime Minister will address the nation on March 25, 2020.In the light of the direction of that speech, and whether the factory will be kept open or closed, in consultation with the Honorable Prime Minister, it will be decided.

3. Due to the Corona virus, the factory how much canceled the order, postponed and canceled the shipments, It will be taken after the writing from the factories by March 31 and further action will be taken in this regard.

পোশাক কারখানা নিয়ে সবাই তাকিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দিকে

বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কারণে দেশের পোশাক কারখানা সাময়িক বন্ধের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে গতকাল রবিবার শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসে শ্রম মন্ত্রণালয়। পরিস্থিতি বিচেনায় শ্রমিকদের একটি পক্ষ এখনই পোশাক কারখানা বন্ধের পক্ষে মত দেন। অন্যটি পক্ষ খোলা রেখে সেখানে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে সব ধরনের সুরক্ষা নিশ্চিত করার কথা বলেন। এ অবস্থায় কোনো সিদ্ধান্তে নিতে পারেনি শ্রম মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে শ্রমিক নেতাদের বলা হয়েছে কাল মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে অনুষ্ঠেয় বৈঠক থেকে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত আসতে পারে। শ্রম মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। উপস্থিত ছিলেন শ্রম মন্ত্রণালয়ের সচিব কেএম আলী আজম। এ ছাড়াও পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতারা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। শ্রমিক নেতাদের দুপক্ষই গতকাল বৈঠকে পোশাক শ্রমিকদের বেতন-ভাতাসহ অন্য সুযোগ সুবিধা অব্যাহত রাখার দাবি করেন। তারা বলেন, আন্তর্জাতিক শ্রম আইন অনুযায়ী কোনো পোশাক কারখানা মালিক বা সরকারের পক্ষ থেকে সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হলে শ্রমিকদের কী কী সুবিধা দিতে হবে সে ব্যাপারে স্পষ্ট দিকনির্দেশনা রয়েছে। আলোচনায় অংশ নিয়ে জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম রনি বলেন, ছোট-মাঝারি অনেক কারখানায় এখনো শ্রমিকদের হাত ধোয়ার সাবান পর্যন্ত দিচ্ছে না। মালিকরা শ্রমিকদের বাসা থেকে হাত-পা ধুয়ে আসতে বলছে। শ্রমিকরা ভয়াবহ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে।

এ অবস্থায় কারখানা চালু থাকলে যদি কোনো শ্রমিক করোনায় আক্রান্ত হয়, তার দায় কে নিবে? একজন আক্রান্ত হলে পুরো কারখানায় ছড়িয়ে পড়বে। শ্রমিকরা গা ঘেষাঘেষি করে কাজ করে। এ বিবেচনায় কিছুদিনের জন্য হলে লকডাউন করা যায় কিনা ভেবে দেখতে হবে। তবে যে সিদ্ধান্তই নেওয়া হোক না কেন ভেবেচিন্তা নিতে হবে। শ্রমিকরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।

বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির সভাপ্রধান তসলিমা আখতার লিমা বলেন, যেখানে সরকার সব ধরনের লোকসমাগম হয় এমন কার্যক্রম বন্ধ করেছে। স্কুল, কলেজ, সভাসমাবেশ বন্ধ করেছে। সেখানে শ্রমঘন পোশাক কারখানা কেন বন্ধ হবে না? কারখানায় শ্রমিকরা গাঘেঁষে বসে। একজন আরেকজনকে ঠেলে উঠতে হয়। একজন আরেক জনের গায়ে হাত দেয়। শুধু কারখানায় না, গণপরিবহন ছাড়াও কারখানা ছুটির সময় একজন আরেকজনের গাঘেঁষে প্রবেশ করে এবং বের হয়। এ অবস্থায় যদি কোনো শ্রমিক আক্রান্ত হয় এর দায় কি মালিকরা নিবেন? মালিকরা যদি সঠিক ব্যবস্থা নেয় তাহলে কথা নেই। কিন্তু তারা এটা নিশ্চিত করতে পারবে না। তাহলে শ্রমিকদের স্ববেতনে ছুটি দিতে হবে। কারখানা চালুর পর তাকে স্বপদে বহাল রাখতে হবে। শ্রমিকদের জীবন ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দেওয়া কোনোভাবেই উচিত হবে না।

শ্রমিক নেতা লাভলী ইয়াসমিন বলেন, করোনা মোকাবিলা করার জন্য পুরো পৃথিবী প্রতিমুহূর্তে গবেষণা করছে। যেহেতু ১৪ দিন পর আলমত ধরা পড়ে, এর আগে তার আশপাশের সব মানুষকে আক্রান্ত করবে। একজন শ্রমিক আক্রান্ত হলে ওই কারখানাসহ আশপাশের সব কারখানা লকডাউন করতে হবে। কেন আমরা এ পর্যন্ত অপেক্ষা করব। এর আগেই বন্ধ করা উচিত। যাদের জন্য কারখানা চালু থাকবে সেই ক্রেতারাই সবকিছু বন্ধ রেখেছে। অর্ডার বাতিল করছে।

এদিকে কারখানা চালু রাখার পক্ষে মত দিতে গিয়ে শ্রমিক নেতা রহুল আমি বলেন, দেশে এখন মার্কেট বন্ধ হয়নি। পরিবহন বন্ধ হয়নি। তাই মনে করি লক ডাউন করার প্রয়োজন এখনো হয়নি। কারখানায় শ্রমিকরা যতক্ষণ থাকবে সে ততক্ষণ নিরাপদে থাকবে। এখন লকডাউন হলে মালিকরা বলবে শিপমেন্ট হয়নি, তাই বেতন-বোনাস দিতে পারবোনা। সামনে দুইটি ঈদ রয়েছে, মালিকরা এই সুযোগ কাজে লাগাবে। এ কারণেই বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না।

জাতীয় শ্রমিক লীগ সভাপতি ফজলুল হক মন্টু বলেন, পোশাক শিল্পে ৪০ লাখ শ্রমিক কাজ করে। কিন্তু অন্যান্য খাত মিলে প্রায় ১ কোটি শ্রমিক কাজ করে। পোশাক কারখানা বন্ধ করা হলে অন্য শ্রমিকরাও বন্ধের দাবিতে অস্থিরতা সৃষ্টি করবে। এটা মাথায় নিয়ে কাজ করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী সবাইকে সচেতন হতে বলেছেন। আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে। আমরা শুধু মালিকদের চাপ দেই। কিন্তু যারা বছরের পর বছর আমাদের দিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা লাভ করেছে সেই বায়ারদের কিছু বলি না। এই বিপদের সময় তাদেরও আমাদের পাশে চাই। তাদেরও চাপ দিতে হবে। এখন অনেক বায়ার ঢাকায় অবস্থান করছে কিন্তু তদাদের হারিকের দিয়েও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। অথচ তাদের কারণে শত শতকোটি টাকা নষ্ট হয়েছে।

সব পক্ষের মতামত শুনে শ্রম প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান বলেন, আমি পক্ষে বিপক্ষে মত দিব না। সিদ্ধান্ত দিবেন প্রধানমন্ত্রী। আমি কেবল দুই পক্ষের যুকিগুলো প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরব। তিনি বলেন, আজকের দিনেও এত মানুষ নিয়ে মিটিং করা নৈতিক ছিল না। তারপরেও শিল্প বাঁচাতে এই ঝুঁকি নিয়েছি। কারণ যাকে ভালোবাসি তাকে রক্ষা করতে হবে।

RMG BANGLADESH NEWS