Home Blog Page 435

বাংলাদেশের ওপর আরো চাপ বাড়ছে

ইউরোপের বাজারে তৈরি পোশাকপণ্য রফতানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ভিয়েতনাম। বাণিজ্য আরো বৃদ্ধিতে সম্প্রতি দেশটির সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) সই করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। অন্যদিকে জিএসপি সুবিধা রক্ষায় বাংলাদেশের ওপর চাপ বাড়িয়ে চলেছে ইইউ।

বাংলাদেশসহ তিনটি দেশকে এভরিথিং বাট আর্মস (ইবিএ) স্কিমের আওতায় দেয়া বাণিজ্য সুবিধা নিয়ে সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ইউরোপীয় কমিশন (ইসি), যেখানে জিএসপি রক্ষায় বাংলাদেশকে কিছু সুনির্দিষ্ট সুপারিশ করা হয়েছে। এসব সুপারিশের মধ্যে আছে শ্রমসংঘ গঠনের বাধা, ট্রেড ইউনিয়নবিরোধী বৈষম্য ও হয়রানি দূর করা, ট্রেড ইউনিয়ন গঠন পদ্ধতি সহজ করা, শ্রমিকদের চাকরিচ্যুতি ও গ্রেফতার না করা, পরিদর্শন সক্ষমতা বৃদ্ধি, শিশুশ্রম নিরসন, মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা এবং আইনবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনাগুলোর যথাযথ তদন্ত।

‘রিপোর্ট অন ইইউ এনহ্যান্সড এনগেজমেন্ট উইথ থ্রি এভরিথিং বাট আর্মস বেনিফিশিয়ারি কান্ট্রিজ: বাংলাদেশ-কম্বোডিয়া অ্যান্ড মিয়ানমার’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি গত ১০ ফেব্রুয়ারি প্রকাশ করেছে ইসি। প্রতিবেদনে বাংলাদেশ নিয়ে ইসির মূল উদ্বেগের একটি ছিল শ্রম আইন। প্রচলিত আইনকে আন্তর্জাতিক কনভেনশনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে বাংলাদেশের ওপর চাপ বৃদ্ধি ও সংলাপের তাগিদ দেয়া হয়েছে এতে। শুধু তা-ই নয়, বাংলাদেশ এসব সুপারিশ বাস্তবায়নে ব্যর্থ হলে জিএসপি প্রত্যাহারে ইইউ প্রস্তুত বলেও জানিয়েছে কমিশন।

জানতে চাইলে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব কেএম আলী আজম এ প্রসঙ্গে বণিক বার্তাকে বলেন, তারা (ইইউ) আগেও একবার আমাদের ইবিএ সুবিধা প্রত্যাহার করার কথা বলেছে। তারা হয়তো সংলাপগুলো অব্যাহত রাখতে চায়। আমাদের সঙ্গে যে কয়টি সংলাপ হয়েছে, তার সবই ছিল ফলপ্রসূ। তাদের চাওয়া প্রতিটি বিষয়ে আমরা সময়াবদ্ধ পরিকল্পনা দিয়েছি। অনেক কাজ আমরা করেছি। আমরা মনে করি, সব ভালোরই আরো সুযোগ থাকে ভালো করার। সেই ভালো আমরা করার পক্ষে আছি। বাংলাদেশ সঠিক পথে আছে। আমার বিশ্বাস, তারাও এটা বুঝতে চাইছে এবং বুঝতে পারবে। যেহেতু আমরা সময়াবদ্ধ পরিকল্পনা দিয়েছি, তারা হয়তো চাইছে চাপে রেখে সময়মতো পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করাতে। সার্বিকভাবে তারা খুশি।

জানা গেছে, ইবিএ স্কিমের আওতায় ইউরোপে পণ্য রফতানিতে বাংলাদেশ শুল্কমুক্ত যে সুবিধা পায়, তা ধরে রাখতে বেশকিছু কর্মপরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। এ কর্মপরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়নে ইইউর কাছে ন্যূনতম ছয় মাস থেকে সর্বোচ্চ ছয় বছর সময় চেয়েছে বাংলাদেশ।

পরিদর্শন কার্যক্রম জোরদারে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরে (ডিআইএফই) ১ হাজার ৫১৪টি পরিদর্শক পদ সৃষ্টির ঘোষণা রয়েছে। এটি বাস্তবায়নে সুনির্দিষ্ট সময়সীমা চেয়েছিল ইইউ। শুধু পরিদর্শক নিয়োগ নয়, বাংলাদেশে শ্রম ও মানবাধিকার সুরক্ষাসংক্রান্ত বিভিন্ন ঘাটতি পূরণে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করে সময়াবদ্ধ বাস্তবায়ন কর্মসূচি গ্রহণ করতে সরকারকে চাপ দিয়ে আসছিল তারা। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়গুলো নিয়ে নানা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বাংলাদেশ।

গত বছরের ১৪ অক্টোবর বাংলাদেশ সফরে আসে ইবিএ পর্যবেক্ষকদের একটি দল। সফরের প্রথম উদ্দেশ্য ছিল, বাংলাদেশে প্রচলিত শ্রম আইনের সঙ্গে এ-সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক কনভেনশনের সামঞ্জস্য বিধানে হালনাগাদ আইন সংস্কার পর্যালোচনা। দ্বিতীয় উদ্দেশ্য ছিল, অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য সুবিধা জেনারালাইজড স্কিম অব প্রেফারেন্সেসের (জিএসপি) অধীনে আন্তর্জাতিক কনভেনশনের সঙ্গে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যালোচনা। পর্যবেক্ষক দলটি ২১ অক্টোবর বাংলাদেশে অবস্থান করে। সফর শেষে গত ডিসেম্বরে তাদের পর্যবেক্ষণ বাংলাদেশকে জানায় ইইউ।

বাংলাদেশ সফরকালে সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে মতবিনিময়ের পর শ্রম অধিকার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিচ্যুতি চিহ্নিত করেছে ইইউ প্রতিনিধি দলটি। ফলে বাংলাদেশে শ্রম অধিকার চর্চার শক্তিশালী মান নিশ্চিতে সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করে একটি চুক্তির দিকে অগ্রসর হওয়ার বিষয়ে মত দেয়া হয় ইইউ থেকে। সেই মত অনুসরণ করেই গত ২ জানুয়ারি চিহ্নিত বিচ্যুতি দূর করতে ন্যূনতম ছয় মাস থেকে সর্বোচ্চ ছয় বছরের সময়সীমা চেয়েছে বাংলাদেশ সরকার।

শ্রম অধিকারসংক্রান্ত যে বিষয়গুলোর জন্য সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা ইইউ থেকে চাওয়া হয়েছে, তার মধ্যে আছে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সুপারিশ অনুযায়ী বাংলাদেশ শ্রম আইন, শ্রম বিধিমালা ও ইপিজেড শ্রম আইন সংশোধন। শিশুশ্রম নিরসন, শ্রমিকের বিরুদ্ধে সহিংসতা প্রতিরোধ, ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধন বাধা দূর করা, শ্রম বিরোধ ও মামলা জট কমানো, শ্রম অভিযোগ নিষ্পত্তির পদ্ধতি উন্নয়ন এবং পরিদর্শকের ঘাটতি দূর করা।

দেশের সবচেয়ে বড় শ্রমঘন শিল্প পোশাক খাত নিয়েই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আগ্রহ। কারণ এ খাতের শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন গঠনসহ শ্রম অধিকারচর্চার বিষয়গুলো বেশি আলোচিত। জানতে চাইলে পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি ড. রুবানা হক জানান, প্রতিবেদনটি হতাশার বহিঃপ্রকাশ নয়। বরং প্রসঙ্গগুলোকে তাজা রাখতে চায় তারা, যেন মূলনীতিগুলো হারিয়ে না যায়। ইইউ তাদের চাপ অব্যাহত রাখতে চায়।

সরকারি ও বেসরকারি সূত্রগুলো বলছে, ২০১৭ সালের শেষভাগ থেকেই ইইউর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, শ্রমসংক্রান্ত ইস্যুগুলো কমপ্লাই না করলে বাংলাদেশের জিএসপি থাকবে না। জিএসপি স্কিমের আওতায় সবচেয়ে বেশি সুবিধা বাংলাদেশ নিচ্ছে। এ সুবিধার ফল সমাজের সবাই সমানভাবে পাচ্ছে কিনা, সে বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে ইইউ সংসদে।

২০২৪ সালে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হলে বাংলাদেশের জন্য ইবিএ সুবিধা থাকবে না। তখন বাংলাদেশকে জিএসপি প্লাসের মাধ্যমে বাণিজ্য সুবিধা আদায় করতে হবে। বর্তমানে জিএসপি প্লাসের শর্ত অনুযায়ী বাংলাদেশ ওই সুবিধার জন্য এখনো উপযুক্ত নয়। বাংলাদেশকে অনুরোধ করতে হবে। একই সঙ্গে ইইউকেও বাংলাদেশকে জিএসপি সুবিধার আওতায় রাখতে শর্তে পরিবর্তন আনতে হবে।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় বাজার ইউরোপ। মোট পোশাক রফতানির ৬২ শতাংশ হয় ইইউতে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রফতানির পরিমাণ ছিল ২১ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলার।

আর ইউরোপিয়ান কমিশনের পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৮ সালে ইবিএর আওতায় ইইউতে বাংলাদেশ ১৭ দশমিক ৪ বিলিয়ন ইউরোর পণ্য রফতানি করেছে। সুবিধার আওতায় বার্ষিক প্রায় ২ বিলিয়ন ইউরোর শুল্ক বাংলাদেশ বাঁচাতে পেরেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে তাদের প্রতিবেদনে।

প্রতিবেদনের একটি অংশে উল্লেখ করা হয়েছে, যে দেশগুলো উদ্বেগের বিষয়গুলোকে বিবেচনায় নিতে অনিচ্ছুক তাদের বিষয়ে আরো নিবিড়ভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। বাংলাদেশ, কম্বোডিয়া ও মিয়ানমারকে মৌলিক মানবাধিকার ও শ্রম অধিকার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণে চাপ দিয়ে যাচ্ছে ইইউ। এছাড়া কক্সবাজার থেকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশ-মিয়ানমারের যৌথ পদক্ষেপের ব্যর্থতার বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

কৃত্রিম সংকটে নিট পোশাক রফতানিকারকরা

নারায়ণগঞ্জের নিট পোশাক রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান এমবি নিটওয়্যার। প্রতিষ্ঠানটি তাদের তৈরি পণ্যের জন্য দেশের স্থানীয় বাজার থেকে অ্যাকসেসরিজ বা অনুষঙ্গ পণ্য কিনে থাকে। এসব পণ্যের মধ্যে আছে সুইং থ্রেট, লবণ, সোডা, স্কচটেপ, গামটেপ। এ পণ্যগুলো সাধারণত তিন থেকে চার মাসের মজুদ থাকে। কিন্তু চীনে প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়া করোনাভাইরাসের অজুহাত দেখিয়ে বিক্রেতারা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করেছেন। পাশাপাশি পণ্যের দামও বাড়িয়েছেন তারা।

কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির অভিযোগ শুধু এমবি নিটওয়্যারের না, নিট পোশাক রফতানিকারকদের মধ্যে অনেকেই এমন পরিস্থিতির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। নভেল করোনাভাইরাসের প্রভাব নিয়ে গত ২০ ফেব্রুয়ারি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত সভায় কৃত্রিম সংকট ও মূল্যবৃদ্ধির অভিযোগ সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিদের জানানো হয়। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়ে আরো আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন তারা।

সূত্র জানিয়েছে, বাণিজ্য সচিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় আমদানি-রফতানির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরাসহ ছিলেন ভোগ্যপণ্যের ব্যবসায়ীরা। নভেল করোনাভাইরাসের প্রভাব নিয়ে সভায় ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের অবস্থান জানতে চাওয়া হয়। যার পরিপ্রেক্ষিতে করণীয় নিয়েও আলোচনা হয়েছে সভায়। সার্বিকভাবে এ ভাইরাসের প্রভাবে কাঁচামালের সংকট এবং এর ফলে অর্থনীতিতে এক থেকে দেড় মাসের ধাক্কা আসবে বলে মত প্রকাশ করেছেন ব্যবসায়ীরা।

সভা সূত্রমতে, সভায় আলোচনা হয়েছে আদা-রসুনের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্য নিয়ে। বলা হয়েছে, এবার ভারতে ব্যাপক হারে আদার ফলন হয়েছে। গত বছর জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশে যে পরিমাণ আদা আমদানি হয়েছিল, এ বছর এখন পর্যন্ত গতবারের চেয়ে তিন গুণেরও বেশি আমদানি হয়েছে। গতবার ৭০০ টন আমদানি হলেও এবার হয়েছে ২ হাজার ৯০০ টনেরও বেশি। এর প্রভাবে বাজারে আদার দাম কমে গেছে বলে জানিয়েছেন আমদানিকারকরা। এ বছর জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে গতবারের চেয়ে তিন গুণ রসুনও বেশি আমদানি হয়েছে। আগে চীন থেকে এলেও এখন ভারত ও অন্যান্য গন্তব্য থেকে রসুন আমদানি করা হচ্ছে। সার্বিক দিক বিবেচনায় ভোগ্যপণ্যের বাজারে কোনো সমস্যা নেই বলে উঠে এসেছে সভায়।

নভেল করোনাভাইরাসের প্রভাবে দেশের শিল্প-কারখানায় উদ্ভূত সমস্যা নিয়েও আলোচনা হয়েছে সভায়। বিশেষ করে রফতানিমুখী নিট পোশাক রফতানিকারকদের সমস্যার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়। রফতানিমুখী কারখানাগুলো স্থানীয় বাজার থেকে যেসব কাঁচামাল কিনে থাকে, সেগুলোর দাম বেড়ে গেছে বলে অভিযোগ তোলেন সংশ্লিষ্টরা।

ভাইরাসটির অজুহাত দেখিয়ে কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ জানিয়ে সভায় বলা হয়, তিন-চার মাসের সমপরিমাণ কাঁচামালের মজুদ সবসময়ই থাকে। তার পরও স্থানীয় বাজারে কাঁচামাল বিক্রেতারা করোনার অজুহাত দেখিয়ে বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।

নিট পোশাক রফতানিকারকরা জানিয়েছেন, পোশাক পণ্যের যে অনুষঙ্গগুলো স্থানীয়ভাবে উৎপাদন হয়, যেমন সুইং থ্রেট, রঙ করার কাজে ব্যবহূত সোডা, লবণ। সবগুলো পণ্যেরই দাম বেড়েছে। এছাড়া প্লাস্টিক অনুষঙ্গ যেমন স্কচটেপ, গামটেপ, মবিলন টেপ যেগুলোর সবই চীন থেকে আমদানি করতে হয়, এসবেরও দাম বেড়ে গেছে। অর্থাৎ করোনার প্রভাবে দু-তিন মাস পর যে সমস্যা বা সংকট দেখা দেয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছিল, তা এখনই শুরু হয়ে গেছে।

এ বিষয়ে নিটপণ্য প্রস্তুত ও রফতানিকারকদের সংগঠন বিকেএমইএর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বণিক বার্তাকে বলেন, সভায় সবার আলোচনা থেকে এটা নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, এক থেকে দেড় মাসের একটা ধাক্কা আমাদের ওপর দিয়ে যাবে। আমদানি যেমন ব্যাহত হয়েছে, রফতানিও ব্যাহত হবে। অন্যদিকে ভোগ্যপণ্যের বাণিজ্যিক আমদানি যেগুলো ব্যাপক হারে হতো, সেগুলো এক দেড় মাসের ধাক্কায় আমদানি কমে যাবে। তখন জাতীয় রাজস্ব আহরণের ওপরই নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। কারণ পণ্য আমদানি হলে কর-শুল্ক বাবদ রাজস্ব আহরণ হতো, এখানেও একটা ঘাটতি সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি খারাপের দিকেই যাচ্ছে।

সভায় আলোচনার মধ্যে আরো ছিল বন্দরে পণ্য খালাসে দীর্ঘসূত্রতা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম কাস্টমস এবং এয়ারপোর্ট দুই জায়গার কার্যক্রমে আরো তত্পরতার প্রয়োজন হবে। কারণ জাহাজীকরণে বিলম্ব হওয়া পণ্যগুলো আসতে শুরু করবে। এগুলোর ক্ষেত্রে যেন কোনো অজুহাতে কালক্ষেপণ না করা হয়, দ্রুত পণ্য খালাস করে দেয়া হয়। বাজারে যে সংকট দেখা দিয়েছে, তা যেন কিছুটা হলেও লাঘব হয়, সে বিষয়ে সুপারিশ করা হয়েছে।

শুধু নিটপণ্য নয়, করোনার প্রভাব হিসেবে সংকট দেখছে ওভেন পোশাক রফতানিকারকরাও। দেশের পোশাক শিল্পের প্রয়োজনীয় কাঁচামালের বড় উৎস চীন। দেশে বস্ত্রশিল্পের আমদানি করা কাঁচামালের ৪৬ শতাংশই আসে চীন থেকে। কভিড-১৯ ছড়িয়ে পড়ায় দেশটি থেকে কাঁচামাল সরবরাহ ব্যবস্থা এখন প্রায় অকার্যকর হয়ে পড়েছে। সামনের দিনগুলোয় এ পরিস্থিতি আরো খারাপ হওয়ার আশঙ্কা করছেন শিল্পোদ্যোক্তারা। পরিস্থিতি মোকাবেলায় দুর্যোগ সহায়তা তহবিলসহ ঋণ সুবিধা চাইছেন তারা।

জানা গেছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে চীন থেকে বাংলাদেশের মোট পণ্য আমদানি হয়েছে ১৩ দশমিক ৬৩ বিলিয়ন ডলারের। এর মধ্যে শুধু টেক্সটাইল ফাইবার ও টেক্সটাইল আর্টিকেলস ছিল ৫ দশমিক শূন্য ২ বিলিয়ন ডলারের। কাঁচামালের প্রধান সরবরাহকারী দেশটির চলমান পরিস্থিতি বাংলাদেশের উৎপাদনমুখী শিল্পের বাণিজ্য ও ব্যবসাকে বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বস্ত্র খাত: ভুল নীতির খেসারত দিচ্ছে রাষ্ট্র

ভুল নীতির কারণে দেশের সম্ভাবনাময় বস্ত্র খাত এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। বিশেষ করে ওভেন সেক্টরকে বিপদের দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে। যার দায় সরকার ও সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো কোনোভাবে এড়াতে পারে না। প্রয়োজন ছিল, পর্যায়ক্রমে গার্মেন্টের জন্য কাপড় আমদানি কমিয়ে দেশের অভ্যন্তরে স্বয়ংসম্পূর্ণ ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ গড়ে তোলা।

এছাড়া প্রণোদনা দেয়াসহ মনিটরিং বডি গঠন করে যা যা করার দরকার ছিল, তা এ পর্যন্ত কোনো সরকারই করেনি। বিপরীতে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী নেতারা নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত। এই শিল্পের স্বার্থে শক্ত অবস্থান না নিয়ে কীভাবে সরকারের চাটুকারিতা করে বড় বড় সুবিধা আদায় করা যায়, রাজনৈতিক পদপদবি পাওয়া যায়, বন্ডের সুতা ও কাপড় এনে কালোবাজারে বিক্রি করে রাতারাতি কোটি কোটি টাকার মালিক হওয়া যায়- তারা ব্যক্তিস্বার্থে এসব পথেই হেঁটেছেন।

ফলে যা হওয়ার, তা-ই হয়েছে। এখন চীন থেকে কাপড় আমদানি আরও বিলম্বিত হলে শুধু গার্মেন্ট খাত নয়, এর সঙ্গে ব্যাংকসহ আরও অনেক খাত ধ্বংস হয়ে যাবে। কিন্তু এই সংকট নিয়ে অন্য কাউকে দোষারোপ করে লাভ নেই।

এই পরিস্থিতির জন্য আমরা কে কতখানি দায়ী, সেটিই আজ বিচার-বিবেচ্য বিষয়। সূক্ষ্মভাবে বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, ভুল নীতির কারণে যে ক্ষতি হচ্ছে, তার মাশুল প্রকারান্তরে রাষ্ট্রকেই দিতে হচ্ছে। সৃষ্ট সংকট নিয়ে ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীদের অনেকে সোমবার যুগান্তরের কাছে ক্ষোভ-অসন্তোষ প্রকাশ করে এমন তির্যক মন্তব্য করেন।

তারা বলেন, সুতায় নেই আমদানি ঠেকানো প্রটেকশন। বাজার প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে ওভেনে দেয়া হচ্ছে না প্রণোদনা। এছাড়া গার্মেন্টগুলোকে দেশীয় কাপড় কেনার ক্ষেত্রে বেঁধে দেয়া হয়নি কোনো সিলিং। শুধু সরকারের এসব ভুল নীতির কারণে শত শত সুতা ও কাপড়ের মিলগুলো শুরু থেকে নানামুখী সংকট মোকাবেলা করে আসছে। এখন করোনাভাইরাসের কারণে বড় ধরনের কাপড় সংকটে পড়েছে গার্মেন্ট সেক্টর।

সময় থাকতে যদি কাপড়ের মিলগুলোকে প্রয়োজনীয় নীতিসহায়তা দিয়ে স্বয়ংসম্পূর্ণ করা হতো, তাহলে আজ চীনের কাপড়ের জন্য গার্মেন্টগুলোকে বসে থাকতে হতো না। অথচ করোনাভাইরাসের প্রভাব দীর্ঘায়িত হলে বেশির ভাগ গার্মেন্টে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাবে। বিশ্লেষকদের অনেকে এমন পূর্বাভাস দিচ্ছেন, যা নিয়ে এখন সরকারের নীতিনির্ধারক মহলসহ সংশ্লিষ্ট সবাই উদ্বিগ্ন।

কিন্তু এই শেষ সময়ে উদ্বিগ্ন কিংবা প্রকৃত তথ্য গোপন করেও লাভ নেই। বাস্তব সংকট সবাইকে মোকাবেলা করতে হবে। কিন্তু কীভাবে? ৩০ বছর ধরে সব সরকার একশ্রেণির নেতিবাচক আমলাদের ফাঁদে পা দিয়ে সঠিক নীতি প্রণয়ন করতে পারেনি। বাস্তব অবস্থা না বুঝে সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত নীতিনির্ধারক মহল ভুলপথে হেঁটেছেন।

ফলে সেভাবে কোমর সোজা করে দাঁড়াতেই পারেনি খুবই সম্ভাবনাময় এই সেক্টর। তারা বলেন, প্রণোদনা বহাল রাখাসহ বেশি সুবিধা দেয়ার কথা ছিল সুতা ও কাপড়ের মিলে। কিন্তু সরকার দিয়েছে শুধু গার্মেন্টে। যারা শুধু সেলাইয়ের কাজ করে। দর্জিগিরি বললে অনেকে আবার ক্ষুব্ধ হন। কিন্তু এটিই তো বাস্তবতা।

এই খাতের রফতানি আয় দেখিয়ে বাহবা নেয়া হচ্ছে। যদিও গোপন করা হয় প্রকৃত রফতানি আয়। মোট রফতানি আয় থেকে ব্যাক টু ব্যাক এলসির হিসাব বাদ দেয়া হয় না। বিপরীতে নব্বইয়ের দশকে স্পিনিং খাতে দেয়া ২৫ শতাংশ প্রণোদনা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা হয়েছে।

বিকেএমইএ’র প্রথম সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম যুগান্তরকে বলেন, ওভেন খাতে ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্প গড়ে উঠেনি পর্যাপ্ত নীতিসহায়তার অভাবে। এর পেছনে ব্যবসায়ী নেতাদের ভূমিকা আছে। মোদ্দা কথা, বস্ত্র খাতের সব সংগঠন এক হয়ে সমস্যাগুলো সরকারের কাছে সঠিকভাবে তুলে ধরতে পারেনি।

তিনি মনে করেন, ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্পের উন্নয়নে মনিটরিং বডি গঠন করা দরকার ছিল শুরুতেই। যার কাজ হবে পর্যায়ক্রমে আমদানি কমিয়ে এনে দেশের অভ্যন্তরে ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ বাড়ানো। এছাড়া প্রয়োজনীয় প্রণোদনা প্রদান অব্যাহত রাখা, যা আমাদের প্রতিযোগী দেশগুলো করছে।

তিনি আরও বলেন, নিট খাতে সহায়তা দেয়ায় এখন ৮৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন হচ্ছে। ওভেন খাতে বড় বিনিয়োগ দরকার। আর ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদ দিয়ে ওভেন খাতের ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্প গড়ে তোলা সম্ভব না। সরকারের উচিত হবে, ওভেন খাতে বিশেষ প্রণোদনা দিয়ে এই সেক্টরের ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজে স্বয়ংসম্পূর্ণ করা।

বিশ্বব্যাংকের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন যুগান্তরকে বলেন, গার্মেন্ট খাতের শক্তিশালী ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্প দেশে গড়ে উঠলে এই সময়ে ব্যবসায়ীদের এত চিন্তিত হতে হতো না। কিন্তু সেটি না থাকায় এখন উৎপাদন বন্ধের আশঙ্কায় রয়েছেন অনেকে। দেশে ব্যাকওয়ার্ড শিল্প তথা সামগ্রিক পোশাক খাতের উন্নয়নে একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন মনিটরিং কমিটি গঠন করা উচিত। যে কমিটির কিছু দাঁত থাকবে, মানে কমিটির দেয়া শিল্পের উন্নয়ন ও ব্যবসাবন্ধব পরিবেশ সুপারিশ আমলে নিয়ে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে।

এ খাতের বিশেষজ্ঞদের কয়েকজন নাম প্রকাশ না করে প্রতিবেদককে বলেন, একটি গার্মেন্ট স্থাপন করতে খরচ হয় ১৫-২০ কোটি টাকা। অথচ ওই গার্মেন্টের বিপরীতে ব্যাংক থেকে তুলে নেয়া হয় ৫শ’ কোটি টাকার ঋণ। যা নানা পন্থায় বিদেশে অনেকে পাচার করে থাকেন। একপর্যায়ে কেউ কেউ ব্যাংকের টাকা মেরে দিয়ে প্রতিষ্ঠানে তালা ঝুলিয়ে দেয়। অথচ সব রকম সুযোগ-সুবিধা দেয়া হচ্ছে গার্মেন্টের জন্য।

অন্যদিকে ভালো মানের একটি ওভেন মিল স্থাপন করতে ব্যয় হয় কমপক্ষে ৫০০ কোটি টাকা, যা এক বিশাল কর্মযজ্ঞ। যেখানে হাজার হাজার লোকের কর্মসংস্থান হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্য, ওভেনের জন্য সরকারের নীতিসহায়তা শূন্য। অথচ ওভেন ফ্যাক্টরি স্থাপনের পর উদ্যোক্তাকে একদিকে ব্যাংক ঋণের বিপরীতে উচ্চ সুদ হারের বোঝা টানতে হয়, অপরদিকে কম দামে ফেব্রিক্স বিক্রি করতে হয়।

কারণ, যেসব দেশ থেকে সবকিছু আমদানি করে তিনি কাপড় তৈরি করছেন, সরকার ওইসব দেশের সঙ্গে তাকে বাজার প্রতিযোগিতায় ঠেলে দিচ্ছে। এখানে সরকারের কোনো প্রটেকশন নেই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রয়োজন ছিল- সরকার এখানে বাজার প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার রেশিও হিসাব করে একদিকে যেমন ওভেন মিল মালিকদের ভর্তুকি দেবে, তেমনি ৩-৪% সুদে ঋণ দেবে।

এছাড়া চালু হওয়া একটি ওভেন মিলকে কমপক্ষে ৭ বছর ১৫% হারে ভর্তুকি বা প্রণোদনা দিতে হবে। মনে রাখতে হবে, এটি হবে বিশেষ ব্যবস্থা। এভাবে নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। পৃথিবীর যেসব দেশ এসব সেক্টরে উন্নতি করেছে, তারা এভাবে শুরু করেছে এবং এখনও করে যাচ্ছে।

দুর্ভাগ্য হল, আমাদের দেশে গুরুত্বপূর্ণ এ বিষয়টি নিয়ে কেউ কখনও ভাবেনি। দেখা গেছে, যেখানে বিনিয়োগ কম, সব মনোযোগ সেখানেই দেয়া হয়েছে। ফলে আজ সুতা ও কাপড়ের মিলে হাজার হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ ঝুঁকির মুখে। একদিকে উচ্চ সুদের ফাঁদ, অপরদিকে উৎপাদন করেও বাজারে টিকে থাকতে না পারার যন্ত্রণা মিল মালিকদের কুরে কুরে খাচ্ছে। একসময় দেখা যাবে, বন্ধের সাইনবোর্ড ঝুলছে।

বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিল অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন বলেন, কিছু অজ্ঞ লোক সরকারকে ভুল বোঝানোর কারণে দেশের ওভেন খাতের ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্প গড়ে উঠছে না। যদি দেশে ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্প গড়ে উঠত, তাহলে আমাদের চীনের কাছে ধরনা দিতে হতো না।

দেশের টেক্সটাইল খাতই ওভেন কাপড়ের চাহিদা মেটাতে পারত। কিন্তু দেশের সুতা ও কাপড়ের মিলকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে যেসব পদক্ষেপ নেয়া দরকার ছিল, তা ৩০ বছরে কোনো সরকারই নেয়নি।

তিনি আরও বলেন, একশ্রেণির আমলা ও ব্যবসায়ী সরকারকে বোঝাতে চায়, তুলা আমদানিনির্ভর হওয়ায় দেশে টেক্সটাইল শিল্প গড়ে তোলা সম্ভব নয়। এটা ডাহা মিথ্যা কথা। জাপান, কোরিয়া, তাইওয়ান একসময় ফেব্রিক্সে লিড দিত। ওইসব দেশে কি তুলা উৎপাদন হতো? হতো না। আবার আফ্রিকা ও উজবেকিস্তানে তুলা উৎপাদন হয়, সেখানে কি টেক্সটাইল শিল্প গড়ে উঠেছে? তিনি বলেন, ‘বিষয়গুলো নিয়ে বিভিন্ন ফোরামে আলোচনা করেছি, কিন্তু ফল পাইনি। কারণ, ওই শ্রেণির আমলা ও একটি চক্র সব সময় তাদের স্বার্থে সরকারকে ভুল বোঝায়।

সংশ্লিষ্টরা জানান, উচিত ছিল আমদানির ক্ষেত্রে শুরু থেকে দেশীয় সুতা ও কাপড় ব্যবহারে কোটা নির্ধারণ করে দেয়া। প্রতিবছর ৫ শতাংশ করে বাড়ালে আজ বাংলাদেশ বস্ত্র খাতে শতভাগ ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজের সক্ষমতা অর্জন করতে পারত। বস্ত্র খাতের কয়েকজন উদ্যোক্তা যুগান্তরকে বলেন, রফতানিমুখী একটি কাপড়ের মিল করেও আমরা দেশে বিক্রি করতে পারছি না। প্রশ্ন হল- একটি মিল চালু করার প্রথমদিন থেকে কি শতভাগ কোয়ালিটি সম্পন্ন পণ্য উৎপাদন করা সম্ভব।

এটি কোনো দেশেই সম্ভব না। সবদিক থেকে ১০০% কোয়ালিটি কাপড় তৈরি করতে ২ থেকে ৩ বছর লেগে যায়। তাহলে ওই মানে উন্নীত করতে গিয়ে যত কাপড় রফতানি থেকে বাদ পড়বে, সেগুলোর কী হবে। এক্ষেত্রে সরকারের নীতি হবে, রফতানি ক্যাটাগরিতে যেসব কাপড় বাদ পড়বে, সেগুলো দেশের বাজারে বিক্রির অবাধ সুযোগ করে দেয়া। তাহলে মিলগুলো ক্ষতি পুষিয়ে দ্রুত সক্ষমতার দিকে এগিয়ে যাবে।

অপরদিকে গার্মেন্টগুলোকে তাদের আমদানি চাহিদার অন্তত ৩০ শতাংশ কাপড় দেশের মিলগুলো থেকে কেনা বাধ্যতামূলক করে দিতে হবে। আমদানি মূল্যের চেয়ে দাম বেশি হলে সরকার উৎপাদককে প্রয়োজনীয় নগদ সহায়তা দিয়ে দাম সমন্বয় করবে। এতে দেখা যাবে, চীন ও ভারত যদি মিটারপ্রতি ২ ডলারে দেয়, সেখানে স্থানীয় মিলগুলো থেকে একই কাপড় তারা দেড় ডলারে কিনতে পারবে।

ফলে প্রতিবছর স্থানীয় মিলগুলোর একদিকে যেমন উৎপাদন সক্ষমতা বাড়বে, তেমনি কাপড়ের গুণগত মানও দিন দিন বাড়তে থাকবে। উদ্যোক্তারা বলেন, মূলত সরকারের পলিসি বা নীতি হতে হবে এ রকম, যা সব দেশ করে থাকে। চীন, ভারত, পাকিস্তানসহ যেসব দেশ ইতিমধ্যে বস্ত্র খাতে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে, তাদের সরকারগুলো শুরু থেকে এভাবে সহায়তা দিয়ে আসছে। এমনকি চীন এখন পর্যন্ত তাদের শিল্পোদ্যোক্তাদের সেক্টর বিবেচনায় ১২ থেকে ১৭ শতাংশ পর্যন্ত প্রণোদনা দিয়ে আসছে।

কিন্তু এখানে সে সুযোগ নেই। ১৯৯০ সালের দিকে যখন দেশে সুতার মিলের যাত্রা শুরু হয়, তখন সরকারের পক্ষ থেকে ২৫ শতাংশ প্রণোদনা সুবিধা দেয়া হয়। পরবর্তী সময়ে সেটি কমাতে কামতে একেবারে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এভাবে প্রণোদনা দেয়ার কারণে সেসময় বহু মিল গড়ে উঠেছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে আসল কাজ না করে উল্টো প্রণোদনা বন্ধ করে দেয়া হয়। বিশ্লেষকরা বলছেন, সুতার মিলে এখন সবচেয়ে বেশি দরকার হল- আমদানিতে শতভাগ প্রটেকশন দেয়া।

অর্থাৎ অবৈধভাবে সুতা আসা ঠেকানোর পাশাপাশি বৈধ পন্থায় সুতার আমদানিও বন্ধ করতে হবে। তাহলে সঙ্গতকারণে দেশীয় সুতার চাহিদা ও বিক্রি বাড়বে। এভাবে এসব মিল শক্ত অবস্থানে চলে আসবে। কিন্তু এখানে সুতা আমদানি উন্মুক্ত করা ছাড়াও প্রতিদিন চোরাই পথে দেদার সুতার চালান ঢুকছে। এছাড়া বন্ডের সুতায় বাজার তো সয়লাব। এই যখন অবস্থা, তখন সুতার মিল দাঁড়াবে কীভাবে।

এদিকে উৎপাদনে থাকা সুতা ও ওভেন মিলগুলোকে পদে পদে আমলাতান্ত্রিক হেনস্তার শিকার হতে হয়। সরকারি কর্মকর্তাদের কাছে শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কোনো নথি গেলে এমন আচরণ করা হয়, যেন উদ্যোক্তারা শিল্পপ্রতিষ্ঠান করে বড় অপরাধ করে ফেলেছেন। বস্ত্র খাতে রফতানি পর্যায়ে এখন যে ৫ শতাংশ প্রণোদনা দেয়া হয়, তা পেতে বছরের পর বছর চরকির মতো ঘুরতে হয়। অথচ উচিত ছিল, উৎপাদন পর্যায়ে কমপক্ষে ১৫ শতাংশ প্রণোদনা প্রদান নিশ্চিত করাসহ সব ধরনের বাধা দূর করা।

এফবিসিসিআই’র সহসভাপতি ও বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, চীনের করোনাভাইরাসের কারণে দেশের গার্মেন্ট খাত এখন বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। এর কারণ, ওভেন খাতে পর্যাপ্ত ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্প গড়ে না ওঠায় এখনও ৭০ শতাংশের বেশি কাঁচামাল বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। দেশে কিছু টেক্সটাইল গড়ে উঠলেও সেগুলো চীনের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পারছে না।

কারণ, দেশে উৎপাদিত ফেব্রিক্সের দাম কিছুটা বেশি। উপরন্তু, ব্যাংক ঋণের এত উচ্চ সুদ দিয়ে প্রতিযোগী সক্ষমতা গড়ে তোলা সম্ভবও নয়। এজন্য দেশি ওভেন ফেব্রিক্স উৎপাদনে সরকারকে ভর্তুকি দেয়া উচিত। এতে সরকারের লাভ হবে। কারণ একদিকে কর্মসংস্থান বাড়বে, অন্যদিকে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে।

প্রসঙ্গত, এখানে একটি সুতা কিংবা কাপড়ের মিল করতে গেলে মেশিনারিজ, কাঁচামাল, বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যাল চীন, ভারত কিংবা ইউরোপের কোনো দেশ থেকে আমদারি করতে হয়। এমনকি মিল চালানোর জন্য টেকনিক্যাল লোকজনও মোটা অঙ্কের বেতন দিয়ে ওইসব দেশ থেকে আনতে হয়। আবার পণ্য উৎপাদন করার পর বিক্রির সময় প্রতিযোগিতা করতে হয় উল্লিখিত দেশের পণ্যের সঙ্গে।

প্রশ্ন হল- এটি কি আদৌ সম্ভব? কেননা, চীন, ভারত যে দামে সুতা ও কাপড় দিতে পারবে, বাংলাদেশের মিল মালিকরা তা কখনও পারবে না। মূলত এখানেই হল সরকারের আসল ভূমিকা রাখার বিষয়। দেশকে যদি শিল্প ও শিল্পের কাঁচামালে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে হয়, তাহলে দীর্ঘমেয়াদি কার্যকর পলিসি গ্রহণ করতে হবে।

বিশ্লেষকরা বলেন, এখানে সরকারের মূলত করণীয় বিষয় তিনটি। যেমন- প্রথমত, উদ্যোক্তাদের প্রয়োজনীয় প্রণোদনা দিয়ে কাপড়ের দামের পার্থক্য কমিয়ে আনা। যাতে আমদানি দরের চেয়ে স্থানীয় মিল মালিকরা কম দামে বিক্রি করতে পারেন, সেজন্য সমহারে নগদ সহায়তা দেয়া। দ্বিতীয়ত, গার্মেন্ট মালিকদের আমদানি চাহিদার নির্ধারিত পরিমাণ কাপড় স্থানীয় মিল থেকে কিনতে বাধ্য করা।

তৃতীয়ত, প্রণোদনা প্রদান ও নির্ধারিত কোটায় কাপড় বিক্রি নিশ্চিত করতে প্রতিবছর যাতে ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ বাড়ে, সেজন্য শক্ত মনিটরিং অথরিটি গঠন। গঠিত মনিটরিং অথরিটিকে স্থানীয় ওভেন মিলগুলোর বার্ষিক গড় উৎপাদন সক্ষমতা হিসাব করে সে অনুযায়ী গার্মেন্ট মালিকদের আমদানির ওপর সিলিং নির্ধারণ করতে হবে। অর্থাৎ দেশে যে পরিমাণ কাপড় উৎপাদিত হবে, সে পরিমাণ কাপড় তারা আমদানি করতে পারবে না। এভাবে টানা ১০ বছর করতে পারলে দেশের বস্ত্র খাত গুণে ও মানে সবদিক থেকে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে যাবে।

প্রশ্ন উঠতে পারে, সরকার কেন এ ধরনের নীতিসহায়তা দেবে। সহজ উত্তর- সরকারের নীতিনির্ধারকরা প্রণোদনা সহায়তার অর্থ তো নিজেদের ঘর থেকে এনে দেবে না। জনগণের ট্যাক্সের পয়সা থেকে দেবে। বিনিময়ে জনগণ এর কয়েকগুণ বেশি ফেরত পাবে। কারণ এই সেক্টরে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে লাখ লাখ বেকারের চাকরি হবে। আমদানি কমে গেলে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে। সফল ও ভালো সরকারের কাজ- এভাবে বাস্তব অবস্থা বুঝে নীতিসহায়তা দেয়া।

স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন উঠতে পারে- তাহলে আমাদের সরকারের নীতিনির্ধারক মহল সহজ এই বিষয়টি কি জানেন না। কিন্তু না জানার তো কোনো কারণ নেই। সমস্যাটা হল- তারা যখন বাজারে শাড়ি কাপড়ের দোকানে যান, তখন বিদেশি কাপড় তালাশ করেন বেশি বেশি।

এ কারণে প্রতিটি কাপড়ের দোকানে আমদানি ও চোরাইপথে আনা বিদেশি কাপড়ে ঠাসা। খোদ রাজধানীর মধ্যে বিশাল কাপড়ের মার্কেট বলে খ্যাত ইসলামপুর মার্কেটে কী বিক্রি হয়, সে বিষয়ে সরকারের নীতিনির্ধারক মহল কখনও খোঁজ নিয়ে দেখেছেন? এটি আসলে বন্ডের নামে বিনা শুল্কে আনা বিদেশি কাপড়ের রমরমা বাজার। তাহলে দেশীয় কাপড়ের গতি কীভাবে হবে?

বিশ্লেষকরা মনে করেন, সরকারে যারা আছেন, তাদেরকে আগে গোল নির্ধারণ করতে হবে। তারা কি দেশীয় কাপড়ে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে চান। যদি চান, তাহলে সেক্ষেত্রে যা যা করা দরকার, সেটি এখনই করতে হবে। এমনিতে দিনে দিনে বেলা অনেকদূর গড়িয়েছে।

বলা যায়, সময় আর হাতে খুব বেশি নেই। করোনাভাইরাস জোরেশোরে আঘাত হানলে এবং দীর্ঘস্থায়ী হলে শুধু গার্মেন্ট সেক্টর নয়, পুরো বস্ত্র খাত গভীর সংকটে পড়বে। অথচ আজ যদি গার্মেন্ট খাত দেশীয় সুতা ও কাপড় ব্যবহারে সক্ষমতা অর্জন করতে পারত, তাহলে আমদানির জন্য নতুন বাজার তালাশ করতে হতো না।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, সব দেশেরই ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্প তার সামর্থ্যরে প্রমাণ করে। নিট খাতে শক্তিশালী ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্প গড়ে ওঠায় ভালো দাম পাচ্ছি।

কিন্তু ওভেন খাতে অবস্থা দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। কারণ ওভেন খাতে সেভাবে ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্প গড়ে ওঠেনি। পর্যাপ্ত নীতিসহায়তা গ্রহণ করতে না পারায় এটি হয়েছে। তিনি আরও বলেন, দেশের স্বার্থেই ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্প গড়ে তুলতে সরকারের নীতিসহায়তা দেয়া দরকার।

এখনও সেই সুযোগ আছে। ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্পের ভবিষ্যৎ আছে। দেশে ওভেন ফেব্রিক্স উৎপাদন করা গেলে রফতানির লিড টাইম কমে আসবে। সর্বোপরি সরকারকে শিল্পের কথা মাথায় রেখে একটি সমন্বিত নীতি প্রণয়ন করতে হবে।

তাঁতের সবকিছুই কালোবাজারে

তাঁতিদের জন্য শুল্ক রেয়াত সুবিধায় আনা সুতা, রং ও রাসায়নিক কালোবাজারে বিক্রি হচ্ছে। অস্তিত্বহীন অনেক সমিতির নামে ফ্রি স্টাইলে সুতা আমদানি করা হচ্ছে। আবার তাঁতি সমিতির লাইসেন্স ব্যবহার করে তৃতীয়পক্ষ রেয়াত সুবিধায় সুতা আমদানি করে তা বিক্রি করছে। এ কারণে প্রকৃত তাঁতিদের ভাগ্যে কিছুই জুটছে না। এসব দ্রব্য বিক্রিতে নরসিংদীর মাধবদী, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইলের বল্লা ও নারায়ণগঞ্জের সুতার আড়তে গড়ে উঠেছে শক্তিশালী সিন্ডিকেট। এদিকে রেয়াত সুবিধায় আমদানি করা সুতার সঙ্গে অসম প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে দেশীয় সুতার মিলগুলোয় সুতার স্তূপ জমছে। এ বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়ে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিল অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ) তাঁত বোর্ডকে চিঠি দেয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে। জানা যায়, স্বাধীনতার পর দেশে তাঁত শিল্পের ব্যাপক প্রসার লাভ করে। সে সময় তাঁত শিল্পের সুতা সরবরাহের জন্য পর্যাপ্ত স্পিনিং মিল ছিল না। দরিদ্র ও আর্থিকভাবে অসচ্ছল তাঁতিদের বিটিএমএ’র পক্ষ থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ সুতা সরবরাহ করা হতো, যা দিয়ে তাঁতিরা গামছা, লুঙ্গি ও তোশকের কাপড়সহ মোটা কাপড় বানাতেন। এরপর সরকার তাঁতিদের রক্ষায় প্রথমে শুল্কমুক্ত সুবিধায় এবং পরে ৫ শতাংশ রেয়াত শুল্কহারে সুতা, রং ও রাসায়নিক আমদানির অনুমতি দেয়। এ সুযোগে তাঁতি সমিতির নামে সিন্ডিকেট সুতা আমদানি শুরু করে। তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, তাঁতি সমিতির নেতাদের বেশিরভাগই রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী। তারা সুতার ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। যদিও তাঁতের সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততা নেই। কিন্তু তাঁতিদের নাম ভাঙিয়ে দেদার সুতা, রাসায়নিক আমদানি করছেন তারা। এ ক্ষেত্রে শুল্ক ফাঁকি দিতে আমদানি করা সুতার দামও কম দেখানো হচ্ছে। একদিকে আমদানি পর্যায়ে শুল্ক ফাঁকি দেয়ার কারণে সরকার ন্যায্য রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, অন্যদিকে খোলাবাজারে বিক্রির কারণে সেখান থেকে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে। অথচ গরিব অসহায় তাঁতিরা প্রকৃতপক্ষে সরকারি এসব সুবিধা পাচ্ছেন না। কাস্টমসের অসাধু কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে অনেক ক্ষেত্রে ৬০ ও ৮০ কাউন্টের মতো উচ্চ কাউন্টের সুতা মিথ্যা ঘোষণায় আমদানি করা হচ্ছে। শতভাগ স্টেকচার্ড রঙিন সুতাকে নন-স্টেকচার্ড হিসেবে ঘোষণা দেয়া হচ্ছে। এমনকি ভিসকস সুতাও আমদানি হয়েছে, যার সঙ্গে তাঁতের সম্পর্ক নেই। এ বিষয়ে বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের চেয়ারম্যান শাহ আলম যুগান্তরকে বলেন, তাঁতের সুতা খোলা বাজারে বিক্রির বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। কোনো সমিতির বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেলে তদন্তসাপেক্ষে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। তাঁত বোর্ডের তথ্যমতে, বর্তমানে দেশে ১ হাজার ৩৪২টি তাঁতি সমিতি আছে। এসব সমিতির আওতায় প্রায় ৬ লাখ ১০ হাজার তাঁতি রয়েছেন। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। দিনে দিনে ব্যবসা হারিয়ে পূর্বপুরুষের তাঁত ব্যবসা ছেড়ে তাদের অনেকে অন্য ব্যবসার দিকে ঝুঁকছেন। ভুক্তভোগী সুতার মিল মালিকরা বলছেন, দেশে তাঁতির সংখ্যা ৭০ শতাংশ কমলেও রেয়াত সুবিধায় সুতা আমদানি প্রতিনিয়ত বাড়ছে। তাঁতের সুতা এভাবে খোলাবাজারে বিক্রি করায় সরকার একদিকে যেমন বিপুল অঙ্কের রাজস্ব হারাচ্ছে, অন্যদিকে স্থানীয় স্পিনিং মিলগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সামগ্রিকভাবে হুমকিতে পড়েছে ৩০ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ। বর্তমানে যত তাঁতি দেশে রয়েছেন তাদের সুতার প্রয়োজন মেটানোর মতো স্পিনিং মিল দেশে গড়ে উঠেছে। এমনিতে স্পিনিং মিলগুলো ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে এবং ঋণে জর্জরিত। এই পরিস্থিতিতে তাঁতি সমিতির সুতার অপব্যবহার বন্ধ করতে না পারলে তাঁত রক্ষার নামে দেশের সুতার মিলগুলোকে ধ্বংস করে দেয়া হবে। তারা আরও বলেন, সরকার সাধারণ তাঁতিদের সুবিধা দিতে রেয়াত সুবিধা দিয়েছে। কিন্তু এই রেয়াত সুবিধা দিতে গিয়ে ৩০ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ এবং ১০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানকে ঝুঁকিতে ফেলতে পারে না। তাঁতিদের সুবিধা দিতে চাইলে স্থানীয় মিলগুলো থেকে সুতা কিনতে প্রণোদনা দিতে পারে। মনে রাখতে হবে, স্পিনিং মিলে ব্যাংক খাতের বিনিয়োগ রয়েছে। স্পিনিং মিলগুলো বন্ধ হয়ে গেলে ব্যাংক খাতেও ধস নামবে। এমনিতে চীনের করোনাভাইরাস পোশাক শিল্পের দুর্বলতার কথা জানান দিয়েছে। অনেক গার্মেন্টে কাপড়ের অভাবে উৎপাদন বন্ধ হওয়ার পথে। যদি তৈরি পোশাক শিল্পের ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্প হিসেবে কাপড়ের মিলগুলোকে প্রণোদনা দিয়ে বাঁচিয়ে রাখতে পারত, তাহলে এই সংকটময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না। আর গার্মেন্ট মালিকদের চীনের দিকে তাকিয়ে থাকতে হতো না। এখন দেশের স্পিনিং মিলগুলোকে ধ্বংস করতে নানামুখী ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে মিথ্যা ঘোষণায় কম মূল্যে সুতা আমদানি করছে। বন্ডের সুতাও খোলাবাজারে বিক্রি হচ্ছে। আবার তাঁতি সমিতির নামে আমদানি করা সুতাও খোলাবাজারে বিক্রি হচ্ছে। এই ত্রিমুখী চাপ মোকাবেলা করে শিল্প টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়। তাঁতিদের জন্য দেয়া রেয়াত সুবিধা ভোগ করে রাজনৈতিক প্রভাবশালীরা রাতারাতি টাকার পাহাড় গড়ে তুলেছেন। কিন্তু গরিব-অসহায় তাঁতিরা কিছুই পাচ্ছেন না। অর্থাৎ সরকারের মহৎ উদ্দেশ্য অসৎ কাজে লাগানো হচ্ছে। ভুক্তভোগী মিল মালিকরা বলছেন, দেশে সুতা আমদানির প্রয়োজনই নেই। বর্তমানে বড় বড় শিল্প গ্রুপ স্পিনিং খাতে বিপুল অঙ্কের বিনিয়োগ করেছে। এসব স্পিনিং মিলে সব ধরনের সুতাই উৎপাদন হয়। কিন্তু তারপরও রফতানি আয়ের অজুহাত দেখিয়ে এবং তাঁতিদের অসহায়ত্বের কথা বলে সুতা আমদানি করে স্পিনিং খাতকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে সরকারকে সেক্টরের প্রকৃত চিত্র জানতে হবে। স্পিনিং মিলগুলো সম্পর্কে ধারণা নিতে হবে। যেসব সুতা বাংলাদেশে উৎপাদন হয়, তার আমদানি শতভাগ বন্ধ করে দেশীয় উৎস থেকে সুতা সংগ্রহ করতে গার্মেন্ট ও তাঁতিদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে। শুধু তখনই সত্যিকার অর্থে দেশ শিল্পে সমৃদ্ধ এবং সব পক্ষই উপকৃত হবে। বিটিএমএর পরিচালক খোরশেদ আলম বলেন, বন্ড ও তাঁতের সুতার সঙ্গে যুদ্ধ করতে হচ্ছে দেশের স্পিনিং মিলগুলোকে। অনেক তাঁতি সমিতির অস্তিত্ব বাস্তবে না থাকলেও সেসব সমিতির নামে রেয়াত সুবিধায় সুতা আমদানি হচ্ছে। অনুসন্ধান করে নরসিংদীর মেহেরপাড়া ইউনিয়ন ১নং প্রাথমিক তাঁতি সমিতি, আমদিয়া ইউনিয়ন ২নং প্রাথমিক তাঁতি সমিতির অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। তিনি আরও বলেন, নরসিংদীর মাধবদীতে হাটের দিন তাঁতিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা রেয়াত সুবিধায় আনা সমিতির সুতা পান না। বাজার থেকে সুতা কিনতে হয়। টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জের তাঁতিদেরও একই অবস্থা। এ ছাড়া তাঁতি সমিতির নামে ডেনিম কাপড়ের ব্যবহারের রাসায়নিক আনার প্রমাণও পাওয়া গেছে। এদিকে তাঁতের সুতা, রং ও রাসায়নিক বিক্রিতে উদ্বেগ জানিয়ে তাঁত বোর্ডকে চিঠি দেয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে বিটিএমএ। গত সোমবার বিটিএমএ’র একটি প্রতিনিধি দল তাঁত বোর্ডের চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলোচনায় তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছে। বিটিএমএ’র পক্ষ থেকে ৭টি প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এগুলো হচ্ছে- প্রকৃত তাঁতি ও তাঁতি সংগঠনের সঠিক তালিকা নির্ণয়ে ডাটাবেজ তৈরি করা। তাঁতি সংগঠনগুলোর প্রকৃত সুতার চাহিদা নিরূপণ করে আমদানি করা সুতা দিয়ে কী ধরনের কাপড় তৈরি হবে, তার বিস্তারিত বিবরণ, সংশ্লিষ্ট তাঁতির নাম এবং তার কাপড় উৎপাদনের সক্ষমতা আছে কি না, তা যাচাই করা। আমদানি করা সুতা দিয়ে কী ধরনের কাপড় তৈরি হবে, আমদানির আগে সেই ঘোষণা দেয়ার ব্যবস্থা করা। প্রয়োজনে বিটিএমএ ও তাঁত বোর্ড থেকে সুতার প্রকৃত ব্যবহার সত্যায়িত করার বিধান চালু করতে হবে। তাঁতি বা তাঁতের সংগঠন বার্ষিক সুতা আমদানির সঠিক তথ্য সংরক্ষণ ও আমদানি করা সুতা দ্বারা তৈরি কাপড়ের পরিমাণের তথ্য সংরক্ষণ করা। তাঁতের নামে যেসব কাউন্টের সুতার আমদানি হচ্ছে, সেই সুতা তাঁতে ব্যবহারযোগ্য কি না, তা যাচাই করা। তাঁত সংগঠনের নামে আমদানি করা সুতার কার্টনের গায়ে ‘নট ফর সেল’ উল্লেখ করে আমদানির ব্যবস্থা করা।

স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার এখনই সময়

করোনাভাইরাসের প্রভাব থেকে সরকার-ব্যবসায়ীসহ দেশের সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে শিক্ষা নিতেই হবে। তা নাহলে সংকট আরও ঘনীভূত হবে। বর্তমানে চীন থেকে কাপড় আমদানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ইতিমধ্যে অনেক গার্মেন্টের উৎপাদনও বন্ধ হওয়ার পথে। অথচ সরকার সময়মতো উপযুক্ত নীতি গ্রহণ করলে আজকের এই অচলাবস্থার সৃষ্টি হতো না। তাই শিল্পের স্বার্থে, বিশেষ করে কাপড় উৎপাদনে ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার এখনই সময়। সবাইকে একসঙ্গে জেগে উঠতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে নীতি প্রণয়নে সবার আগে দেশের স্বার্থকে প্রাধান্য দিতে হবে। এজন্য কাপড়ের মিলকে স্বনির্ভর করতেই হবে। এই মিল এগিয়ে গেলে দেশের বিশাল গার্মেন্ট শিল্পও নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবে। এটি যথাযথভাবে করতে পারলে ভবিষ্যতে কারও মুখাপেক্ষী হতে হবে না। এ জন্য পর্যায়ক্রমে তৈরি পোশাক খাতের কাপড়ের আমদানি কমিয়ে স্থানীয় উৎপাদন বাড়তে মিলগুলোকে সর্বাত্মক সহায়তা দিতে হবে। সময়ক্ষেপণ না করে সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আলোচনা করে কার্যকর রোডম্যাপ প্রস্তুত করা জরুরি। যেখানে এ মুহূর্তের জন্য স্বল্পমেয়াদি পদক্ষেপ গ্রহণ করাসহ পরবর্তীতে মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিতে হবে। যা সরকার ও ব্যবসায়ীদের মতৈক্যের ভিত্তিতে বাস্তবায়িত হবে। বস্ত্র খাতের উন্নয়নে এই রোডম্যাপ বাস্তবায়নে শক্তিশালী মনিটরিং বডি গঠনও সময়ের দাবি। বস্ত্র সেক্টরের সংকট নিয়ে মঙ্গলবার যুগান্তরে প্রকাশিত সংবাদের ভূয়সী প্রশংসা করে কাপড়ের মিল মালিকরা এ মুহূর্তে সরকারের করণীয় সম্পর্কে মতামত জানাতে গিয়ে উল্লিখিত পরামর্শ দেন। বস্ত্র খাতের প্রকৃত তথ্য তুলে ধরে রিপোর্ট করার জন্য অনেকে মুঠোফোনে প্রতিবেদককে ধন্যবাদ জানান। এই সেক্টরের বিভিন্ন সংগঠনের কয়েকজন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি বলেন, যুগান্তরের রিপোর্টটি আমলে নিয়ে ভবিষ্যৎ করণীয় নির্ধারণে সদস্যদের শিগগির চিঠি দেয়া হবে। এরপর সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে সরকারের প্রয়োজনীয় দাবি জানানো হবে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্যবসায়ী যুগান্তরকে বলেন, দেশের অর্থনৈতিক উন্নতির পেছনে নিঃসন্দেহে বস্ত্র খাতের ব্যাপক অবদান রয়েছে। এই সেক্টর ঘিরে কমপক্ষে এক কোটি লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। তৈরি পোশাক খাত নারীর ক্ষমতায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে এসব শিল্প প্রতিষ্ঠানের অবদান অনস্বীকার্য। এছাড়া এই শিল্পের সঙ্গে নানা রকম সামাজিক ও অথনৈতিক কানেকটিভিটির ব্যাপকতা লাভ করেছে। একটি সঙ্গে অন্যটির ব্যবসা জড়িত। যেখানে হাজার হাজার শ্রমিক-কর্মচারী কাজ করে সেখানে কেনাবেচার বিশাল বাজার গড়ে ওঠে। আজ একেবারে গ্রাম পর্যন্ত মানুষের জীবনযাপনে যে গুণগত পরিবর্তন এসেছে তার পেছনে রয়েছে শিল্প উদ্যোক্তাদের বিরাট ভূমিকা। ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে বেসরকারি খাত শুধু বেকার সমস্যার সমাধান করছে না, মানুষের জীবন মানোন্নয়নে অনন্য ভূমিকা রাখছে। তাই এসব সম্ভাবনাময় সেক্টর সংকটে পড়লে সমাজের বহু মানুষের ওপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। মানুষ বেকার হয়ে গেলে কেনাবেচা কমে যাওয়ার পাশাপাশি ব্যবসার কালেকশনও কমে যাবে। বিপরীতে উদ্যোক্তারা ব্যাংকের দায়দেনা পরিশোধ করতে পারবে না। এর ফলে বহু ব্যাংকও খেলাপি ঋণের ভারে ন্যুব্জ হয়ে পড়বে। তারা বলেন, দেশের এ রকম হালচাল কেউই প্রত্যাশা করে না। সেজন্য আমরা মনে করছি, অতীতে ভুল যা হবার হয়েছে। এজন্য কে বেশি দায়ী সে হিসাব না কষে দেশের স্বার্থকে বড় করে দেখতে হবে। এজন্য তৈরি পোশাক খাতের স্বার্থেই এর ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্প গড়ে শিল্পটিকে শক্তিশালী অবস্থানে নিতে হবে। কেননা গার্মেন্ট শিল্পের কাপড়সহ এর বড় একটি অংশ আমদানি নির্ভর। এর ফলে আমাদের প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা হারাতে হচ্ছে। তাই সময়ক্ষেপণ না করে দেশের কাপড়ের মিলগুলোকে এখনই প্রয়োজনীয় প্রণোদনা দিয়ে একটি প্যাকেজ কর্মসূচি হাতে নিতে হবে। সরকার এবং সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী সংগঠন মিলে যৌথ সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে একটি বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। যেখানে প্রধান উদ্দেশ্য থাকবে প্রতি বছর গার্মেন্ট খাতে কাপড় আমদানি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমিয়ে আনা। এজন্য স্থানীয় কাপড়ের মিলগুলোকে কমপক্ষে ৭ বছর পর্যন্ত ১৫% শতাংশ হারে প্রণোদনা দেয়া। এছাড়া এসব মিলের যেসব কাপড় রফতানি তালিকা থেকে বাদ পড়বে সেগুলো স্থানীয় বাজারে বিক্রির সুব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি ৩-৪% সুদে ঋণ দেয়া। এর ফলে চীন, ভারত ও পাকিস্তানের ন্যায় দেশীয় মিলগুলো এক সময় বাজার প্রতিযোগিতার সব সক্ষমতায় সফলভাবে উত্তীর্ণ হবে। পৃথিবীতে যেসব দেশ এখন পর্যন্ত এসব সেক্টরে সফলতা অর্জন করেছে তারা এভাবেই তাদের শিল্পকে প্রটেকশন দিয়েছে এবং এখনও দিয়ে যাচ্ছে। ব্যবসায়ীরা আরও বলেন, এই ফর্মুলা বাস্তবায়ন করতে পারলে আগামী ৭ থেকে ১০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ নির্ঘাত কাপড় ও গার্মেন্ট শিল্পে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারবে। তখন আর আমদানি করা কাপড় দিয়ে গার্মেন্ট চালাতে হবে না। দেশের উৎপাদিত সব ক্যাটাগরির উন্নতমানের কাপড় দিয়ে আমাদের গার্মেন্ট শিল্প বীরদর্পে এগিয়ে যাবে। তথ্যমতে, গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৮৩ কোটি ১২ লাখ ডলারের পণ্য রফতানির বিপরীতে আমদানি করা হয়েছে ১ হাজার ৩৮৫ কোটি ১১ লাখ ডলারের পণ্য। এর মধ্যে বস্ত্র খাতের সুতা ও কাপড় আমদানি হয়েছে ৪৩০ কোটি ৫৭ লাখ ডলারের। আর মেশিনারি ও ইলেকট্রিক যন্ত্রপাতি আমদানি করা হয়েছে ৩৬১ কোটি ১৪ লাখ ডলারের। পোশাক তৈরির অধিকাংশ কাঁচামাল আনা হয় চীন থেকে। ব্যবসায়ী নেতারা বলেন, চীনের করোনাভাইরাস প্রকারান্তরে দেশের জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। বিষয়টিকে এই দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে আমরা স্বনির্ভরতার পথে এগুতে পারব। কেননা, এই ক’দিনের ধাক্কায় সরকার ও সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা নিশ্চয় গার্মেন্ট সেক্টরের প্রকৃত শক্তি-সামর্থ্য সম্পর্কে কমবেশি অবগত হতে পেরেছে। কেননা, আমদানিনির্ভরতা যে কোনো দেশের জন্যই মঙ্গলজনক নয়, সেটি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। কিন্তু এখনও যদি সরকারের ঘুম না ভাঙে তাহলে সামনে আরও ভয়াবহ সংকট আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। সরকারের উচিত হবে, এ ধরনের সংকট মোকাবিলার জন্য দেশের ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্পকে প্রণোদনা দিয়ে শক্তিশালী অবস্থানে নিয়ে আসা। কোনো একটি গোষ্ঠীর জন্য নয়, সবার আগে দেশের স্বার্থের কথা চিন্তা করে ব্যবসা-বাণিজ্যের নীতি প্রণয়ন করতে হবে। তারা বলেন, ভালো কোনো কাজে নেতৃত্ব দিতে খুব বেশি লোকের প্রয়োজন হয় না। বিশ্বে এমন ভূরি ভূরি উদাহরণ আছে। যেখানে ১-২ জন লোকের নেতৃত্বে একটি দেশ উন্নতির সকল রেটিংয়ে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে। তাই সরকারের নীতিনির্ধারক মহলের সঙ্গে আমাদের ব্যবসায়ী নেতারা সেভাবে কার্যকর মিটিং করতে পারলে এই সংকট দূর করা কোনো কঠিন কাজ নয়। বিশেষ করে আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশকে স্বনির্ভর করার প্রশ্নে সব সময় দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। তাই আমাদের বিশ্বাস, প্রধানমন্ত্রীকে বিষয়টি যথাযথভাবে অবগত করতে পারলে তিনি দ্রুত প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবেন। সাধারণ ব্যবসায়ীরা বলেন, ‘বর্তমানে ব্যবসায়ী নেতাদের মধ্যে সবাই যে নিজের স্বার্থ নিয়ে ব্যস্ত থাকে, তা নয়। অনেকের মধ্যে রয়েছে অগাধ দেশপ্রেম। যারা দেশের মানুষের জন্য অনেক কিছু করে যেতে চান। এই শ্রেণির যোগ্য নেতাদের কাছে বিশেষ দাবি থাকবে, তারা যেন এখনই সরকারের সঙ্গে বসে সঠিক করণীয় নির্ধারণে উদ্যোগ নেন।’ তাহলে ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোকে নানা রকম বিতর্ক ও প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে না। উল্লেখ্য, ‘প্রসঙ্গ বস্ত্র খাত : আসল কাজটি করেনি কেউ- ভুল নীতির খেসারত দিচ্ছে রাষ্ট্র’ শিরোনামে মঙ্গলবার প্রধান শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়।

Bangladesh still risks losing EU GSP benefits

Bangladesh is still at risk of losing the European Union’s GSP as the latter has again warned about its readiness to launch the procedure for withdrawal of preferences in case of failure to produce sufficient results. The European Union (EU) will decide on its next steps following the publication of the assessment report by the International Labour Organisation (ILO) by the next month on Bangladesh in line with its (ILO’s) previous recommendations. The EU’s warning came in its latest report expressing its concerns over labour and human rights situation in Bangladesh. It suggested further improvements in these areas to avert any untoward situation such as withdrawal of trade preferences. The third biennial report on GSP (Generalised Scheme of Preferences) covering the period 2018-19 was published on February 12. The report cited the case of Cambodia where the Commission launched the procedure for a temporary withdrawal of the GSP facility in February 2019. The countries which are unwilling to address and engage on issues of concern are being scrutinised, it said, adding that through enhanced engagement, the EU intensified the dialogue with Bangladesh, Cambodia and Myanmar to press for concrete actions and sustainable solutions to serious shortcomings in respecting fundamental human and labour rights. According to the report, Bangladesh, considering only preferential imports, has become the EU’s number one GSP partner, closely followed by India, Indonesia, Vietnam and Pakistan. In Bangladesh parts, the Commission has raised concerns regarding labour rights, in particular freedom of association under the Sustainability Compact, raised the alignment of Bangladesh Labour Act and Export Processing Zone (EPZ) Act with fundamental ILO Conventions 87 and 98. In 2019, Bangladesh was denoted as a serious case under ILO Convention 81 on labour inspection, the report said, adding that 575 posts for labour inspectorates are not being filled. In 2018, the number of inspectors even decreased from 345 to 320. The EBA dialogue and the recent mission established that there were still difficulties in the registration process of trade unions and allegations of arrest, surveillance, violence and intimidation of workers persist. Serious legislative restrictions, such as existing minimum membership requirement, hamper the establishment of trade unions, it noted. The minimum membership requirement was reduced in October 2018 from 30 per cent to 20 per cent of the workforce, but remains a major barrier to the formation of trade unions and does not go far enough to bring the country in compliance with the ILO rules. Therefore, further efforts are necessary to fully address the concerns raised by the ILO supervisory mechanism, it added. Specifically, Bangladesh has been asked to remove legal obstacles in the right to establish and organise trade unions, elect officers and carry out freely activities of a trade union; tackling violence and anti-union discrimination, making urgent progress on the full elimination of forced and child labour. The EU also asked Bangladesh to address gaps in implementing occupational safety and health and fundamental, labour rights in practice through reinforcing the labour inspection’s capacity, improving freedom of expression and civil society space, investigating cases of alleged torture, ill-treatment, extrajudicial killings and enforced disappearances. It suggested ratifying the Convention on Enforced Disappearances, fully implementing the recommendations of the Human Rights Council Universal and Periodic Review and the conclusions by UN treaty monitoring bodies. According to the report, economic impact of EU tariff preferences under EBA Bangladesh remains by far the most important beneficiary of the EU’s EBA arrangement. Exports from Bangladesh to the EU more than tripled between 2006 and 2018. In 2018, figures showed that EBA exports from Bangladesh to the EU amounted to €17.4 billion and approximately €2 billion in duties were saved in Bangladesh on an annual basis, according to the report. When asked, labour secretary KM Ali Azam said they are yet to see the full report. He, however, said the government has already sent a time-bound action plan to the EU detailing how they would address the concerns. After the Rana Plaza building collapse, much improvement has been made, he said, admitting that still there is room for making further improvement. When contacted, Bangladesh Garment Manufacturers and Exporters Association (BGMEA) president Dr Rubana Huq said, “This is not an expression of disappointment but to keep the issues relevant and alive so that the principles don’t get lost.” The EU wants to keep the pressure on, she said, adding that recently they had constructive discussions at the EU Parliament and OECD (Organisation for Economic Cooperation and Development) and explained the progress.

Knitwear exporters allege artificial crisis of chemicals

The country’s knitwear exporters on Thursday alleged that they were facing losses as a section of importers created an artificial crisis of chemical compounds and raised the prices of the items using the coronavirus outbreak in China as a pretext. A number of chemical compounds including dyes and salt are used in the knitwear industries. The exporters made the allegation in a meeting on the impact of coronavirus on trade and business, held at the commerce ministry conference room in the capital. They also expressed their fear that there would be more than one month delay in getting supply of raw materials from China as Chinese exporting companies were yet to start their operations after the Chinese New Year due to the epidemic. Commerce secretary Md Jafar Uddin presided over the meeting while Bangladesh Knitwear Manufacturers and Exporters Association first vice-president Mohammad Hatem, commerce ministry additional secretary Md Obaidul Azam and representatives from the Federation of Bangladesh Chambers of Commerce and Industry, Bangladesh Garment Manufacturers and Exporters Association and Bangladesh Trade and Tariff Commission attended the meeting. ‘We have sought intervention of the government in the market as some of the importers have created an artificial crisis of chemical compounds including dyeing chemicals on the market,’ Hatem told New Age following the meeting. He said that the prices of most of the chemical compounds used in the knitwear industry were raised abnormally showing the coronavirus outbreak in China as a pretext but the chemical stocks were imported before the outbreak. Hatem said that a very few companies in China  started their operations in the last couple of days and it would take time to start shipment of industrial raw materials in full swing. ‘After a long break, a few Chinese companies have started shipment on a small scale and we have requested the commerce ministry to take necessary steps to release the delayed consignment on priority basis in port,’ Hatem said. Sources said that the traders of essential commodities in the meeting assured the ministry that the supply shortage of garlic and ginger would not take place on the market due to the virus outbreak in China as the harvesting of the items started in Bangladesh and India. Jafar Uddin said that the government’s monitoring teams would visit the commodity market on a regular basis and would take legal action against any manipulation.

Bangladesh sees plunge in import from China after coronavirus outbreak

Import of different products from China in terms of quantity and value declined by 21 per cent and 8.30 per cent respectively in the period between January 1 to February 15 of the current fiscal year 2019-2020 compared with that in the same period of last fiscal year (FY 2018-2019) due to impact of the coronavirus outbreak in the country. Import of almost all of the 30 top products, including clothing accessories, machinery, parts, fabric, yarn and diammonium phosphate, from the country also saw a drastic fall by more than 50 per cent in the first seven months of the current fiscal year compared with that in the same period of FY19, according to the National Board of Revenue data. According to the customs data, import of products from China declined by 2,49,311 tonnes to 9,44,827 tonnes in January 1- February 15 this year from that of 11,94,138 tonnes in the same period of the last year. The value of imported goods also dropped by Tk 1,578 crore to Tk 17,441 crore in the period of this year from Tk 19,019 crore in the same period of last year. According to the customs data, the value of top 30 imported goods stood at Tk 18,267 crore in July-January of FY20 while the figure was Tk 48,791 crore in the same period of FY19. Bangladesh imported 35,88,639 tonnes of products worth Tk 48,277 crore from China in the seven months of FY20 and earned Tk 9,097 crore in customs revenue. From China, the country’s import was 66,41,283 tonnes of products worth Tk 85,901 crore in FY19. Revenue collection from the sector was Tk 14,148 crore in FY19. Bangladesh’s total import was 1.05 crore tonnes of products worth Tk 3.95 lakh crore in FY19. Bangladesh imports around 30 per cent of its total import from China. A significant portion of the imported goods from the country is raw materials, machinery and parts which are either duty free or having low rate of duty. Customs officials said that they prepared the data following a commerce ministry request for conducting impact analysis of the epidemic on trade and industry, particularly on export-oriented readymade garment sector, supply of raw materials for the sector and consumer goods to the domestic market. The revenue board is also analysing the possible impact of the disruption of supply chain on overall customs revenue collection by the end of the fiscal year, they said. The issue will also be discussed at a meeting to be held with the finance ministry in the next week, they said. Officials said that the revenue collection at the import stage might also drop proportionately to the decline in import from the country. The NBR may get 7 per cent to 8 per cent of its targeted customs duty and other import-related taxes if the slowdown of import continues getting worse due to the virus outbreak, they said. According to the customs data, import of clothing accessories declined by 61 per cent in July-January of FY20 compared with that in the same period of FY19, the data showed. Import of denim dropped by 48 per cent, coloured plain cotton woven fabrics by 61 per cent, synthetic fabric by 57 per cent, diammonium phosphate by 50 per cent, dyed woven cotton fabrics by 60 per cent, textured yarn of polyester by 50 per cent, parts by 19 per cent, flat knitting machine and stitch-bonding machine by 76 per cent and sewing thread of synthetic filaments by 58 per cent. Automatic sewing machine import also declined by 68 per cent and other static converters dropped by 42 per cent in the period.

Eco-friendly packaging industry grows in relevance

The eco-friendly packaging and accessories industry has become more relevant in the SDG era. Both global buyers and domestic RMG manufacturers demand green packaging and accessories to fulfil buyers’ compliances and to brand Bangladesh as an eco-friendly source. According to industry insiders, the global market of green packaging in 2015 was worth USD 212 billion. It was worth USD 244 billion in 2018. It is expected to surpass USD 275 billion by the end of the current calendar year. The importance of green packaging is rising in the country as it complements SDG-12, which stands for sustainable consumption and production for promoting resource and energy efficiency, sustainable infrastructure and providing access to basic services, decent jobs, and a better quality of life for all. The participation of Bangladeshi companies in the global green packaging market is on the rise, but it is still low in terms of proportion. In the last fiscal year, packaging and accessories factories earned USD 7.5 billion through the RMG sector. If they can maintain green packaging and buyers’ compliances, they are likely to reach a higher place among national export sectors. Abdul Kader Khan, president of the Bangladesh Garment Accessories and Packaging Manufacturers’ and Exporters’ Association (BGAPMEA), said: “The number of packaging factories is increasing over time. In 2013, we had 1200 members, but it rose to 1,700 last year.” “This is the era of SDGs. Six out of 17 goals of SDGs is directly or indirectly related to the environment. So, we are emphasising on eco-friendly packaging industries. There is a high demand for green packaging, which includes cardboard stools, paper balls, eco-friendly printed fabrics, and recycled poly, in the international market,” he also said. “Bangladesh is an eco-friendly producer in the global market. We are the only country to fulfil the compliances set by Accord and Alliance. Still, there is unwillingness for international buyers to pay extra incentives and fair prices. That’s why factories are not often willing to go green,” he added. According to industry insiders, first-world countries are deeply concerned about the impact of single-use plastic packaging on the environment. So, Bangladesh has to use paperboard packaging and biomaterials in RMG packaging. As the RMG sector is the flagship sector of the country’s international trade, green packaging is going to attract more international buyers and benefit both RMG and packaging sectors of Bangladesh. Prof. Mustafizur Rahman, distinguished fellow of the Centre for Policy Dialogue (CPD), said: “The term ‘green factory’ is compatible with SDGs and very important for environmental protection. There is no alternative to establishing green factories for eco-friendly production and sustainable development.” “Six of the world’s top 10 green factories in the export sector are in our country. So, it can be said that we are an environment-friendly country when it comes to production. Bangladesh already has entered the era of green factory in the RMG sector. If there is a revolution of eco-friendly factories in the packaging sector, Bangladesh will surely ne branded as an eco-friendly producer in the global market,” he added. “First-world countries are the main consumers of our RMG, packaging, and knitwear products. They are very much sensitive about SDGs, climate change, etc. If Bangladesh gets branded as a eco-friendly producer country, it would be considered as an eco-friendly sources of products. The government should include these issues while formulating its fiscal and other policies.” Rahman said. “Every factory has to be built as a green factory in view of SDGs. A factory needs additional investment to build a green unit. Global supply chains and buyers should encourage factories with increased incentives and fair value to keep the process running,” he added.

Coronavirus: BGMEA seeks policy steps to face challenges

Stakeholders in the country’s apparel sector, which is largely dependent on China for supply of garment raw materials, have sought precautionary policy measures and other facilities to help face the challenges stemming from coronavirus outbreak. The industry people feared that the public health crisis in China would cause delays in arrival of raw materials, late shipment and delivery and cash flow crisis, sources said. The garment makers demanded that a disaster assistance fund be set up, credit guarantee scheme be launched and the back to back letter of credit (LC) clauses be amended to help the sector survive during the crisis period. According to industry people, about 46 per cent of the US$ 34 billion raw materials for local readymade garment (RMG) industry are sourced from China. In a letter to the central bank on February 13, the Bangladesh Garment Manufacturers and Exporters Association (BGMEA) placed the suggestions aiming to overcome the unseen challenges of coronavirus outbreak that already took its toll on the RMG supply chain. Terming China the largest trading partner of Bangladesh, BGMEA president Dr Rubana Huq in the letter said the country imported textile fibre and articles worth US$5.02 billion, out of its total $13.63 billion import, from China in fiscal year 2018-19. “The virus is taking its toll on trade and industry, especially on the supply chain of our manufacturing industries,” she noted. The epidemic may prolong further, she said, adding: “It could prove fatal for our industry as the supply chain becomes paralysed.” The BGMEA chief also said that their import has already been slowing down and vessels berthing at Chattogram port have come down to zero. Citing data of the National Board of Revenue (NBR), the BGMEA said import from China declined by 21 per cent in January and by 37 per cent during the first week of February. In the letter, Ms Huq proposed three measures, saying it is high time to adopt a set of precautionary policy measures to save the industry from the unprecedented disaster considering the severity of the multipronged impact of the virus on the industry. She demanded setting up of a disaster assistance fund that could be extended to factories or exporters to support unforeseen costs like air shipment and sourcing of raw materials and accessories from alternate and more expensive options to complete the orders. The BGMEA leader also said that banks should extend credit term by 30-60 days considering late arrivals of raw materials and increased cost for the extended period. Fearing possible delays in recovery from the crisis, she requested the central bank to consider a special credit guarantee scheme for commercial banks to encourage them to support the industry. Her other demands included amendments to the respective clauses related to back to back LCs to make the payment to the suppliers conditional and justified in proportionate to export proceeds.

RMG BANGLADESH NEWS