Home বাংলা নিউজ নিয়ন্ত্রণে আসছে বস্ত্র খাতের ৯ হাজার কারখানা

নিয়ন্ত্রণে আসছে বস্ত্র খাতের ৯ হাজার কারখানা

পোশাক খাতের সংযোগ শিল্প হিসেবে আশির দশকে দেশে গড়ে উঠতে থাকে রফতানিমুখী বস্ত্র কারখানা। এরই ধারাবাহিকতায় গড়ে উঠেছে হোমটেক্সটাইল ও টেরিটাওয়েল পণ্য উত্পাদনকারী শিল্পও। সরকারি কোনো আইন ছাড়াই গত ৩০ বছরে এসব শিল্পপ্রতিষ্ঠানের বিকাশ ঘটেছে। শিল্প নিয়ন্ত্রণে এত দিন পর্যন্ত কোনো নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষও তৈরি হয়নি। তবে এখন নতুন বস্ত্র আইন অনুমোদন পেয়েছে। এর মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে আসছে বস্ত্র শিল্পের নয় হাজারের বেশি কারখানা।

অনুমোদিত বস্ত্র আইনে বস্ত্র শিল্প বলতে বস্ত্র বা তৈরি পোশাক, বস্ত্র খাতের মূলধনি যন্ত্রপাতি, অ্যালাইড টেক্সটাইল ও প্যাকেজিং উপাদান উত্পাদন, বস্ত্রপণ্য উত্পাদন, প্রক্রিয়াকরণ, প্যাকেজিং, গুদামজাত, আমদানি ও রফতানি, বিক্রয় ও বাজারজাত, বায়িং হাউজসহ সব কার্যক্রমকে বোঝানো হয়েছে। এছাড়া এ-সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম পরিচালনাকারী সব প্রতিষ্ঠান, সংস্থা, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানকেও এর আওতাভুক্ত উল্লেখ করা হয়েছে।

আইনের আওতায় বস্ত্র খাতের পোষক কর্তৃপক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে বস্ত্র পরিদপ্তর। এ কর্তৃপক্ষের তালিকা অনুযায়ী দেশের মোট ১০টি অঞ্চলে বস্ত্র শিল্প-সংশ্লিষ্ট কারখানা রয়েছে ৯ হাজার ৪০টি। মোট সাতটি সংগঠনের সদস্য এসব কারখানা। সংগঠনগুলোর মধ্যে আছে— বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিটিএমএ, বিটিটিএলএমইএ, বিএলএমইএ, বিজিএপিএমইএ ও বিএসটিএমপিআইএ। অনুমোদনের মাধ্যমে এসব কারখানা এরই মধ্যে আইনি কাঠামোয় চলে এসেছে। এখন বস্ত্র পরিদপ্তর অধিদপ্তরে রূপান্তরের মাধ্যমে বস্ত্র শিল্পের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করবে সরকার।

পরিদপ্তরের তালিকা অনুযায়ী বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত কারখানা রয়েছে ৪ হাজার ৬৭০টি। এছাড়া বিকেএমইএর সদস্য কারখানার সংখ্যা ১ হাজার ৫০০, বিটিএমএর ১ হাজার ৪৩০, বিটিটিএলএমইএর ৮২, বিএলএমইএর ৫৭, বিজিএপিএমইএর ৮৫৩ এবং বিএসটিএমপিআইএর ৪৪৮। সব মিলে মোট কারখানা ৯ হাজার ৪০টি।

বস্ত্র পরিদপ্তরের পরিচালক ও অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ ইসমাইল বণিক বার্তাকে বলেন, একটি আইনি কাঠামোর মধ্যে বস্ত্র শিল্পকে আনা হলেও উদ্দেশ্য থাকবে এ শিল্পের আরো বিকাশ ঘটানো। বেসরকারি খাত নিজ থেকেই বর্তমান পর্যায়ে বিকশিত হয়েছে। এখন এ বিকাশ আরো সুষম ও সুষ্ঠুভাবে যেন হয়, সে বিষয়ে ভূমিকা পালন করবে পোষক কর্তৃপক্ষ। ঠিক নিয়ন্ত্রণ বা নজরদারি দৃষ্টিভঙ্গিতে আমরা কাজ করতে চাই না।

অনুমোদিত আইন অনুযায়ী, পোষক কর্তৃপক্ষের নিবন্ধন ব্যতীত বস্ত্র শিল্প-কারখানা পরিচালনা করা যাবে না। মিথ্যা তথ্য প্রদান বা প্রতারণার মাধ্যমে নিবন্ধন গ্রহণ করলে তা বাতিল হবে। এছাড়া শর্ত লঙ্ঘন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বিলম্ব ফি ব্যতীত নিবন্ধন না করলে এবং কোম্পানি-সংস্থা-অংশীদার কারবার বা আইনগত সত্তার ক্ষেত্রে অবসায়ন হলেও নিবন্ধন স্থগিত বা বাতিল হবে। নিবন্ধন বাতিল বা স্থগিতের কারণে কোনো লোকসান বা ক্ষতির জন্য উক্ত প্রতিষ্ঠান কোনো ক্ষতিপূরণ দাবি করতে পারবে না।

বস্ত্র শিল্পপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করা হবে পোষক কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে। পরিদর্শনের ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বস্ত্র শিল্পের চাহিদা অনুযায়ী কারখানা পরিদর্শন করবেন। এক্ষেত্রে সহযোগিতা করতে হবে শিল্প মালিক কর্তৃপক্ষকে। সহযোগিতা না করলে তা হবে অপরাধ। পরিদর্শনে পোষক কর্তৃপক্ষ সুতা ও বস্ত্রের মজুদ কার্যক্রম, বাজারজাত এবং মূল্য স্থিতিকরণের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এবং প্রয়োজন মনে করলে নির্দেশনা জারি করবে। পরিদর্শনের জন্য পোষক কর্তৃপক্ষের প্রকৌশলগত সক্ষমতা অর্জনে প্রয়োজনীয়কার্যক্রমও গ্রহণ করবে সরকার।

অনুমোদিত আইনের বিষয়ে পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, নতুন কোনো কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে শিল্পকে সহযোগিতা করা হবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা। কোনো ধরনের হয়রানি আমরা চাই না। এমনিতেই আমাদের অনেক কর্তৃপক্ষের কাছে যেতে হয়। পোশাক খাত একটি মূল্যায়নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এমন সময় নতুন কোনো বিড়ম্বনা আমরা চাই না।

উল্লেখ্য, বস্ত্র কারখানা আছে এমন ১০ জেলার মধ্যে রয়েছে— ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, টাঙ্গাইল, পাবনা, রাজশাহী, কুমিল্লা, খুলনা, সিলেট ও চট্টগ্রাম। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি কারখানা আছে এমন জোনগুলো হলো— ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও চট্টগ্রাম। নরসিংদীসহ মোট পাঁচটি জোনে  দেশের বস্ত্র কারখানার ৯৭ শতাংশ অবস্থিত।