Home বাংলা নিউজ ট্যানারির পুরোটা না সরলে পরিবেশ ছাড়পত্র নয়

ট্যানারির পুরোটা না সরলে পরিবেশ ছাড়পত্র নয়

tannery shift faces

ট্যানারির উৎপাদন প্রক্রিয়ার তিনটি ধাপের সব কটি হাজারীবাগ থেকে সরিয়ে সাভারে নেওয়া না হলে পরিবেশ ছাড়পত্র দেবে না পরিবেশ অধিদপ্তর। কোনো ট্যানারিকে পরিবেশ ছাড়পত্র পেতে হলে হাজারীবাগের উৎপাদনব্যবস্থা সম্পূর্ণ বন্ধ করে আবেদন করতে হবে। কয়েকটি পরিবেশবাদী সংগঠন ও বেসরকারি সংস্থা আয়োজিত এক সেমিনারে এসব কথা বলেছেন পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. রইছউল আলম মণ্ডল। তবে তিনি জানিয়েছেন, ট্যানারি সরিয়ে আবেদন করলে মালিকদের ছাড় দিয়ে হলেও পরিবেশ ছাড়পত্র দেওয়া হবে। উল্লেখ্য, ট্যানারির উৎপাদন প্রক্রিয়ার ধাপ তিনটি। প্রথম ধাপ ওয়েট ব্লু, দ্বিতীয় ধাপ ক্রাস্ট ও তৃতীয় ধাপ ফিনিশড। ট্যানারি মালিকদের দাবি, কারখানার ওয়েট ব্লু অংশ ৭৫ শতাংশ বর্জ্য উৎপাদন করে। বেশির ভাগ ট্যানারি সাভারের চামড়া শিল্পনগরীতে ওয়েট ব্লু অংশ সরিয়ে নেওয়ার কাজ করছে।

রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে গতকাল শনিবার ‘ট্যানারি স্থানান্তর: হাজারীবাগ থেকে সাভার কত দূর?’ শীর্ষক ওই সেমিনারের আয়োজন করে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা), অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি), বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট), বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ (বিলস), বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), ব্রতী সমাজকল্যাণ সংস্থা, নিজেরা করি এবং নাগরিক উদ্যোগ।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। এটি সঞ্চালনা করেন বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি ট্যানারিগুলোকে হাজারীবাগ ছাড়তে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়ার অনুরোধ করেন মন্ত্রীকে। আনোয়ার হোসেন ট্যানারিগুলোকে সাভারে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে বলেন, সেখানে যে সমস্যা আসবে তা মাঠে সমাধান করা যাবে। তিনি বলেন, ট্যানারির মালিকেরা ভাগ্যবান যে জনগণের টাকায় তাঁদের জন্য বর্জ্য পরিশোধনাগার নির্মিত হয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রইছউল আলম মণ্ডল জানান, এখন পর্যন্ত বে ট্যানারি ও আজিজ ট্যানারি সাভারে পরিবেশ ছাড়পত্র পেয়েছে। তবে তাদের বিভিন্ন শর্ত দিয়ে পরিবেশ ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি এম আবু তাহের বলেন, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে বেশির ভাগ ট্যানারি ওয়েট ব্লু অংশ সাভারে নিতে পারবে এবং আগামী জুনের মধ্যে কারখানার পুরোটা সাভারে নেওয়া সম্ভব হবে। তিনি পরিবেশ ছাড়পত্রের ক্ষেত্রে এ বিষয়টি বিবেচনা করার অনুরোধ জানান। অবশ্য এম আবু তাহেরের অনুরোধ নাকচ করে দিয়ে রইছউল আলম মণ্ডল বলেন, ‘আপনারা তো আমাদের কাছ থেকে ভাগে ভাগে লাইসেন্স নেননি। ছাড়পত্র নিতে হলে পুরোটা সরিয়েই নিতে হবে।’

রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে ১৫৪টি ট্যানারি স্থানান্তর করতে সাভারের হেমায়েতপুরে ১৯৯ একর জমিতে চামড়া শিল্পনগরী নির্মাণ করছে সরকার। অনুষ্ঠানের শুরুতে দেওয়া বক্তব্যে কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগার (সিইটিপি) নির্মাণ পরামর্শক দলের প্রধান ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষক মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, সিইটিপির চারটি মডিউলের দুটি চালানোর উপযোগী হয়েছে। তিনি ট্যানারিগুলোতে সাভারে গিয়ে বর্জ্য উৎপাদন শুরুর অনুরোধ জানান। অবশ্য তিনি জানান, কঠিন বর্জ্য এখন বাইরে নিয়ে ফেলতে হবে। এ থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যবস্থা করতে এক বছর সময় লাগবে।

দেলোয়ার হোসেনের বক্তব্যের জবাবে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) পরামর্শক সঞ্জয় কুমার তালুকদার বেশ কিছু অসংগতির কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, দেশের আইন অনুযায়ী কঠিন বর্জ্য বাইরে ফেলার সুযোগ নেই। সিইটিপিতে লবণ পরিশোধনের ব্যবস্থা নেই। যে পাইপ বসানো হয়েছে তা ফেটে যাচ্ছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনব্যবস্থা হবে খুবই খরুচে। সিইটিপির কাঠামো নির্মাণে ৪০ গ্রেডের রড ব্যবহার করা হচ্ছে। বিটিএর পরামর্শকের বক্তব্যের পর বাকি সময় এ নিয়ে তর্কবিতর্ক চলে। বাপার যুগ্ম সম্পাদক ইকবাল হাবীব বলেন, ‘আপনারা শুধু ভুল ধরছেন, নিজের কাজ করছেন না কেন।’

চামড়া শিল্পনগরী প্রকল্পের পরিচালক আবদুল কাইউম বলেন, দেশকে হেয় করার জন্য এসব অভিযোগ করা হচ্ছে। অনুষ্ঠানে চামড়া শিল্পনগরীতে শ্রমিকদের আবাসন না থাকার বিষয়টি তুলে ধরেন ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ। ইনস্টিটিউট অব আর্কিটেক্ট বাংলাদেশের সাবেক সভাপতি মোবাশ্বের হোসেন বলেন, শ্রমিকদের আবাসনের জন্য চামড়া শিল্পনগরীর আশপাশে ঝুপড়ি ঘর নির্মিত হলে, নদীর তীরে শৌচাগার নির্মিত হলে প্রকল্প এলাকা সুন্দর থাকবে না। নদী রক্ষা কমিশনের সদস্য শারমিন মুর্শিদ, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা প্রমুখ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।