Home Bangla Recent আগামী বছরের পরও থাকছে অ্যাকর্ড?

আগামী বছরের পরও থাকছে অ্যাকর্ড?

গ্রহণযোগ্য তদারক সংস্থা গড়ে উঠার আগ পর্যন্ত চলবে কার্যক্রম ** সম্মতি দিয়েছে ৪৭টি ব্র্যান্ড

কারখানা সংস্কার ইস্যুতে পরিদর্শন জোট অ্যাকর্ড আগামী বছরের পর তাদের কার্যক্রম গুটিয়ে নেওয়ার বিষয়ে ভিন্ন বক্তব্য দিয়েছে। কারখানার সংস্কার তদারকিতে শক্তিশালী ও গ্রহণযোগ্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা গড়ে উঠার আগ পর্যন্ত বাংলাদেশে তাদের কার্যক্রম চলমান থাকবে বলে পরিস্কার জানিয়ে দিয়েছে জোটটি। সংস্কার বিষয়ে পাঁচটি সুনির্দিষ্ট ইস্যুতে সামর্থ্য তৈরির বিষয়টি উল্লেখ করে, এসব বিষয় দেখভালে স্থানীয় শক্তিশালী ও স্বচ্ছ নিয়ন্ত্রক সংস্থা গড়ে উঠার শর্ত দিয়েছে। একটি যৌথ তদারক কমিটির বিচারে এটি অর্জন হওয়ার পরই কেবল তারা কার্যক্রম গুটিয়ে নেবে। তাও ছয় মাস পর।

অথচ গত ১৯ অক্টোবর অ্যাকর্ড, বিজিএমইএ, শ্রমিক অধিকার সংগঠনসহ সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর উপস্থিতিতে এক বৈঠক শেষে আগামী বছরের পর অ্যাকর্ড থাকছে না বলে  সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। তিনি বলেছিলেন, আগামী বছরের মে মাসে সময়সীমা শেষ হওয়ার আগেই যৌথ তদারক কমিটি দুই দফায় সরকারের সমন্বয়ে গঠিত সংস্কার সমন্বয় সেলের (আরসিসি) সক্ষমতা পর্যালোচনা করবে। আরসিসি’র প্রস্তুতিতে ঘাটতি থাকলে মেয়াদ শেষে সর্বোচ্চ ছয় মাস থাকতে পারবে অ্যাকর্ড। সেই হিসেবে আগামী বছরের নভেম্বরের মধ্যে অ্যাকর্ডের কার্যক্রম গুটিয়ে নেওয়ার কথা। গত শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমইএ’র অ্যাকর্ডের থাকার বিষয়ে প্রায় একই রকম বক্তব্য দিয়েছিল। কিন্তু গতকাল অ্যাকর্ড দেওয়া বিবৃতি ভিন্ন বার্তা দিল।

উল্টো অ্যাকর্ডের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ২০১৮’র পরও বাংলাদেশে তাদের কার্যক্রম চলমান রাখার বিষয়ে ইতিমধ্যে ৪৭টি ব্র্যান্ড সম্মতি দিয়েছে। চলমান সংস্কারের আওতায় থাকা প্রায় ১২শ’ পোশাক কারখানা এই ৪৭টি ব্র্যান্ডের অর্ডার সরবরাহ করে। স্থানীয় পরিদর্শন সংস্থার সত্যিকারের কারখানা পরিদর্শন ক্ষমতা অর্জন, সংস্কার, ঝঁকিপূর্ণ কারখানার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া, সংস্কার প্রক্রিয়ায় পূর্ণ স্বচ্ছতা ও সুশাসন নিশ্চিত করা এবং শ্রমিকের নিরাপত্তার ইস্যুতে তদন্ত করে সঠিক সমাধান করার মত সক্ষমতার শর্ত তুলে ধরা হয়। এসব ক্ষেত্রে সক্ষমতা অর্জন করার বিষয়টি যৌথ পর্যালোচনা কমিটি স্বীকৃতি দিলেই কেবল অ্যাকর্ড ছয় মাস শেষে তাদের কার্যক্রম হস্তান্তর করবে।

অ্যাকর্ডের এমন বিবৃতির বিষয়ে যোগাযোগ করলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক কারখানা মালিক তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন। তারা মনে করছেন, অ্যাকর্ড কার্যক্রম হস্তান্তরে যে সব শর্ত যুক্ত করেছে, তার মানদণ্ড কী? সরকার সব ঠিক করার পরও তারা যদি সন্তুষ্ট না হয়, সেক্ষেত্রে কী করা যাবে? তারা আসলে কার্যক্রম চালিয়ে যেতে চায়। সেই সাথে সংস্কারে নতুন নতুন শর্ত যুক্ত করবে। ফলে অনেক উদ্যোক্তাকেই ব্যবসা ছেড়ে দিতে হতে পারে।

২০১৩ সালে রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর বাংলাদেশের কারখানার নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরীক্ষার উদ্যোগ নেয় অ্যাকর্ড। অ্যাকর্ডের সঙ্গে বর্তমানে ২২৮টি ব্র্যান্ড যুক্ত রয়েছে। এসব ব্র্যান্ডের পোশাক সরবরাহকারী দেড় হাজারের কিছু বেশি কারখানা ভবনের কাঠামো, অগ্নি ও বৈদ্যুতিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরীক্ষা শেষে সংস্কার কার্যক্রম তদারক করছে এ জোট। আগামী বছরের মে নাগাদ তাদের কার্যক্রম সম্পন্ন হওয়ার কথা। অন্যদিকে আমেরিকাভিত্তিক ক্রেতাদের জোট অ্যালায়েন্সও প্রায় ছয়শ’ কারখানার সংস্কার কাজ দেখভাল করছে। তাদের কার্যক্রমও আগামী বছর শেষ হওয়ার কথা। কার্যক্রম শেষ হওয়ার পর অ্যালায়েন্স আর থাকতে চায়না বলে ইতিমধ্যে জানিয়ে দিয়েছে। তবে তাদের কার্যক্রম হস্তান্তরের জন্য একটি শক্তিশালী ও স্বচ্ছ তদারক সংস্থা গড়ে তোলার বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে তারা।

এর আগে অ্যাকর্ড আগামী বছরের পর আরো তিন বছর বাংলাদেশে তাদের কার্যক্রম চালু রাখার বিষয়ে একতরফা সিদ্ধান্ত নেয়। ওই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, নতুন অ্যাকর্ড কারখানায় ট্রেড ইউনিয়ন ইস্যুতে কাজ করা এবং তাদের কার্যক্রম নেদারল্যান্ডের শ্রম আইন অনুযায়ী চলবে বলেও প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেয়। ইস্যুটি নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখায় সরকার ও কারখানা মালিকপক্ষ। এরপর ১৯ অক্টোবরের বৈঠকে তাদের সময়সীমা শেষে সর্বোচ্চ ছয় মাস থাকতে পারবে বলে সরকারের তরফে ঘোষণা আসে।  অবশ্য গতকালের বিবৃতিতে অ্যাকর্ড জানিয়েছে, সরকার ও বিজিএমইএ’র সঙ্গে সমন্বয়ের ভিত্তিতেই তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করবে বলে জানায়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here