Home বাংলা নিউজ ক্ষুদ্র ও মাঝারিদের ঋণ দিতে চাওয়া হলো ৫০০ কোটি টাকা 

ক্ষুদ্র ও মাঝারিদের ঋণ দিতে চাওয়া হলো ৫০০ কোটি টাকা 

উদ্যোক্তাদের ঋণ দিতে সরকারের কাছে নতুন করে ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছে শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রতিষ্ঠান ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) ফাউন্ডেশন। আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাজেট–সহায়তা হিসেবে এ তহবিল চেয়েছে তারা। একই সঙ্গে এই ঋণের সুদহার ৭ শতাংশ করার বিষয়েও অনুমোদন চাওয়া হয়েছে। 

এসএমই ফাউন্ডেশন সূত্রে জানা গেছে, করোনার সময় সরকার প্রণোদনা হিসেবে তাদের যে অর্থ বরাদ্দ দিয়েছিল, তা দিয়ে দুই দফায় ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। বর্তমানে এসএমই ঋণের চাহিদা বেড়েছে। কিন্তু তাদের কাছে পর্যাপ্ত তহবিল নেই। এ জন্য নতুন তহবিল বরাদ্দের আবেদন করা হয়েছে। সে অনুযায়ী নতুন তহবিল বরাদ্দ ও সুদহার পুনর্নির্ধারণের বিষয়ে শিল্প মন্ত্রণালয় সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগকে চিঠি দিয়েছে। এসএমই ফাউন্ডেশনের চাহিদার ভিত্তিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ে ওই চিঠি পাঠিয়েছে শিল্প মন্ত্রণালয়।

এসএমই ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তারা প্রথম আলোকে জানান, করোনা মহামারির সময় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত বিশেষ প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় এসএমই ফাউন্ডেশনকে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে আদায়কৃত ঋণের অর্থ ও নিজস্ব তহবিলের অর্থের সমন্বয়ে একটি রিভলভিং ফান্ড বা ‘ঘূর্ণমান তহবিল’ গঠন করে এসএমই ফাউন্ডেশন। তহবিলটি থেকে ২৯৪ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়। এই ঋণের বেশির ভাগ অর্থ এখনো ফেরত আসেনি। এ ছাড়া নতুন করে কোনো ঘূর্ণমান তহবিল গঠনের মতো অর্থও সংস্থাটির কাছে নেই। 

চাহিদার তুলনায় বর্তমানে আমাদের তহবিলের স্বল্পতা রয়েছে। এ জন্য নতুন তহবিল চেয়েছি। বর্তমানে ব্যাংক যে হারে সুদ ও অন্যান্য পরিষেবার মাশুল নেয়, তার তুলনায় ৭ শতাংশ অনেক কম। এ জন্য সুদহার বাড়ানোর জন্য আবেদন করা হয়েছে।

মো. মাসুদুর রহমান, চেয়ারপারসন, এসএমই ফাউন্ডেশন

জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন প্রথম আলোকে বলেন, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের শিল্প স্থাপন ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধির জন্য ঋণের অনেক চাহিদা রয়েছে। তবে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো সাধারণত ছোট আকারের ঋণ সরাসরি দিতে চায় না। এ জন্য এসএমই ঋণের পরিধি বাড়ানো প্রয়োজন।

শিল্প মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে বলা হয়েছে, দেশব্যাপী ঘূর্ণমান তহবিল কর্মসূচি সম্প্রসারণের চাহিদা ও সুযোগ থাকার পরও কাঙ্ক্ষিত অর্থ না পাওয়ায় তা করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে আরও ৫০০ কোটি টাকার তহবিল দেওয়া হলে আগের অর্থসহ মোট ৮০০ কোটি টাকার ঘূর্ণমান তহবিল গঠন করা সম্ভব হবে; যা দিয়ে ৫ হাজার প্রান্তিক উদ্যোক্তাকে ঋণের আওতায় আনা যাবে। 

এসএমই ফাউন্ডেশনের মহাব্যবস্থাপক নাজিম হাসান সাত্তার বলেন, ‘এসএমই ঋণের ক্ষেত্রে আমরা সম্ভাবনাময় ও সরকারের অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত উৎপাদন ও সেবা খাতের উদ্যোক্তাদের প্রাধান্য দিই। তাদের মধে৵ ঋণের জন্য কেমন চাহিদা রয়েছে, তা জানতে সম্প্রতি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে একটি সমীক্ষা করা হয়। তাতে ৫০০ কোটি টাকার চাহিদা পাওয়া গেছে। সেটি আমরা শিল্প মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে অর্থ বিভাগকে জানিয়েছি।’

সুদের হার ৭% করার আবেদন

সরকারি-বেসরকারি ২০টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে উদ্যোক্তাদের মধ্যে ঘূর্ণমান তহবিলের ঋণ বিতরণ করেছে এসএমই ফাউন্ডেশন। এই ঋণের সুদহার ছিল ৪ শতাংশ; যার পুরোটাই ব্যাংক পেত। তবে ঘূর্ণমান তহবিলের নতুন ঋণের ক্ষেত্রে সুদহার ৭ শতাংশ করতে চায় সংস্থাটি। এ জন্য অর্থ বিভাগের কাছে আবেদন জানিয়েছে তারা। প্রস্তাবিত ৭ শতাংশ সুদের মধ্যে ৫ শতাংশ পাবে বিতরণকারী ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান। বাকি ২ শতাংশ পাবে এসএমই ফাউন্ডেশন, যা উদ্যোক্তাদের দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধির কাজে ব্যবহার করা হবে। 

ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের শিল্প স্থাপন ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধির জন্য ঋণের অনেক চাহিদা রয়েছে। তবে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো সাধারণত ছোট আকারের ঋণ সরাসরি দিতে চায় না। এ জন্য এসএমই ঋণের পরিধি বাড়ানো প্রয়োজন।

ফাহমিদা খাতুন, নির্বাহী পরিচালক, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ

এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন মো. মাসুদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘চাহিদার তুলনায় বর্তমানে আমাদের তহবিলের স্বল্পতা রয়েছে। এ জন্য নতুন তহবিল চেয়েছি। বর্তমানে ব্যাংক যে হারে সুদ ও অন্যান্য পরিষেবা মাশুল নেয়, তার তুলনায় ৭ শতাংশ অনেক কম। এ জন্য সুদহার বাড়ানোর আবেদন করা হয়েছে।’

ঋণ পেয়েছেন ৬,০৬৬ জন

এসএমই ফাউন্ডেশন সূত্রে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে প্রণোদনা প্যাকেজ ও ঘূর্ণমান তহবিল থেকে এখন পর্যন্ত ৬ হাজার ৬৬ জন উদ্যোক্তা ঋণসুবিধা পেয়েছেন। এর মধ্যে সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজের ৩০০ কোটি টাকা পেয়েছেন ৩ হাজার ১০৮ জন উদ্যোক্তা। আর ফেরত পাওয়া অর্থে গঠিত ঘূর্ণমান তহবিল থেকে ২৯৪ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে ২ হাজার ৯৭৮ জনকে।

ঘূর্ণমান তহবিল থেকে ঋণ পাওয়া উদ্যোক্তাদের মধ্যে ৭৫ শতাংশ পুরুষ ও ২৫ শতাংশ নারী। ব্যবসার ধরন অনুসারে সবচেয়ে বেশি ঋণ পেয়েছেন উৎপাদন খাতের উদ্যোক্তারা। এরপর ব্যবসা ও ভ্যালু চেইন এবং সেবা খাতের অবস্থান।

শিল্প মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ২০০৭ সালে অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে এসএমই ফাউন্ডেশনের যাত্রা শুরু হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ‘ক্রেডিট হোলসেলিং’ নামে বিশেষ কর্মসূচির মাধ্যমে উদ্যোক্তাদের ঋণ দিত সংস্থাটি। ২০০৯ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত প্রায় ২ হাজার ২০০ উদ্যোক্তার মধে৵ সংস্থাটি ১২২ কোটি টাকা বিতরণ করে। তবে বর্তমানে শুধু ঘূর্ণমান তহবিল থেকে ঋণ দিচ্ছে এসএমই ফাউন্ডেশন। News Sources :prothomalo

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here