Home বাংলা নিউজ পোশাকশিল্পে মজুরি বাস্তবায়নে কৌশল ও শ্রমিক ছাঁটাই

পোশাকশিল্পে মজুরি বাস্তবায়নে কৌশল ও শ্রমিক ছাঁটাই

সরকার পোশাক শ্রমিকদের নতুন মজুরি নির্ধারণ করে দিলেও শতভাগ কারখানায় এর পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি। কিছু ক্ষেত্রে তারা কৌশলের আশ্রয় নিচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে গ্রেড কারচুপির মাধ্যমে শ্রমিকদের পদ অবনমন ও ছাঁটাই।

এমন দাবি করে শ্রমিক নেতারা বলছেন, যেসব কারখানায় সরকার নির্ধারিত শ্রমিক মজুরি পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়েছে, এই হার ৬০ শতাংশের বেশি নয়।

তবে মালিকদের দাবি, এটা প্রায় ৯৭ শতাংশ। ১০ থেকে ১২টি কারখানায় মজুরি সমন্বয়ের জটিলতার ফলে এর বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি।

সরকারের নজরদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মতে, পোশাক শ্রমিকদের পুরোপুরি শর্ত মেনে মজুরি দিচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ কারখানা। কাজ কমে যাওয়া এবং পণ্য সরবরাহ প্রক্রিয়া ধীর হয়ে যাওয়ায় কিছু কারখানায় মজুরি যথাযথভাবে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।কিছু কারখানা বন্ধ হয়েছে। এতে সার্বিকভাবে নতুন মজুরি পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা সহজ হয়নি।

তৈরি পোশাক খাতের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ নেতারা মনে করেন, বৈশ্বিক মন্দা ও মূল্যস্ফীতির ফলে নতুন মজুরি ছিল সময়ের দাবি ছিল। তবে ক্রেতারা পোশাকের দাম না বাড়ালে বেশির ভাগ মালিকের পক্ষে মজুরি বাস্তবায়ন দীর্ঘ মেয়াদে সম্ভব হবে না।

গত ১৩ নভেম্বর শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীনে মজুরি বোর্ড পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি সাড়ে ১২ হাজার টাকা নির্ধারণ এবং গ্রেডের সংখ্যা সাত থেকে পাঁচে কমিয়ে এনে গেজেট প্রকাশ করে, যা ডিসেম্বর থেকে কার্যকরের কথা। সে অনুযায়ী জানুয়ারিতে নতুন বেতন কাঠামোয় শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু কিছু পোশাক কারখানা তা আমলে নেয়নি।

বিজিএমইএর জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি এস এম মান্নান কচি কালের কণ্ঠকে বলেন, দেশের তৈরি পোশাক কারখানাগুলো শতভাগ পরিপালনীয় মানদণ্ড অনুসারে (কমপ্লায়েন্স) কাজ করে। এ জন্য মালিকদের বিপুল বিনিয়োগ করতে হয়েছে।

তিনি বলেন, এ ছাড়া গ্যাস-বিদ্যুৎ, কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি, ডলার সংকট এবং একই সঙ্গে নতুন মজুরি বাস্তবায়ন তৈরি পোশাক খাতকে চাপে ফেলে দিয়েছে। এর পরও ৯৭ শতাংশ কারখানায় মালিকরা নতুন মজুরি বাস্তবায়নে  সক্ষম হয়েছেন।  

গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড কেন্দ্রের (জিটিইউসি) তথ্য মতে, ৩০ শতাংশ কারখানায় ডিসেম্বরের নতুন মজুরি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। নানা জটিলতার মধ্য দিয়ে ৬০ শতাংশ কারখানা মজুরি বাস্তবায়নে বাধ্য হয়েছে। জানুয়ারি মাসে এসব কারখানায় নতুন মজুরি বাস্তবায়ন করা হবে।

সংগঠনটি জানায়, কিছু পোশাক কারখানা এর মধ্যে সিনিয়র অপারেটরকে কৌশলে পদ অবনমন করে জুনিয়র অপারেটর হিসেবে মজুরি দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে শ্রমিকের আইডি কার্ডে পদ উল্লেখ না থাকার বিষয়টিকে তারা কাজে লাগিয়েছে। এ ছাড়া নতুন করে সাক্ষাৎকার নিয়ে পদ নির্ধারণ করা হয়েছে। তাঁদের বলা হয়েছে, ‘তোমাদের গ্রেড জুনিয়র অপারেটর সমমানের। তাই নতুন মজুরি কাঠামো অনুসারে জুনিয়র অপারেটরের মজুরি দেওয়া হয়েছে।’ 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন শ্রমিক কালের কণ্ঠকে বলেন, মালিকরা ক্রেতাদের চাপে নতুন মজুরি বাস্তবায়ন করলেও কৌশলে তাঁদের দ্বিগুণ খাটিয়ে নিচ্ছেন। এতে তাঁদের মানসিক ও শারীরিক সমস্যা হচ্ছে।

জিটিইউসির সাধারণ সম্পাদক সাদেকুর রহমান শামিম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘শুধু আমাদের সংগঠনের সঙ্গে জড়িত—এমন শ্রমিকদের আন্দোলনে জড়িত থাকার কারণে গত দুই থেকে আড়াই মাসে ২২ হাজারের বেশি শ্রমিক ছাঁটাই হয়েছে।’ সব মিলিয়ে প্রায় এক লাখ শ্রমিক এ সময় ছাঁটাই হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।

আন্তর্জাতিক শ্রম সংগঠন ইন্ডাস্ট্রিঅল বাংলাদেশের (আইবিসি) সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. তৌহিদুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, দ্বিগুণ কাজের চাপে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে শ্রমিকরা। এতে মানসিক চাপে পড়েছেন তাঁরা। দর-কষাকষির সক্ষমতা কমেছে। তিনি জানান, ১৫ হাজার ৩৫ টাকা যাঁদের বেতন (এ গ্রেডের  শ্রমিক), তাঁদের চাকরিচ্যুতির হার বেশি। তাঁদের বাদ দিয়ে কম মজুরিতে শ্রমিক নিচ্ছেন মালিকরা।

কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মিনা মাসুদ উজ্জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘নতুন মজুরি কাঠামো বাস্তবায়নে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। বিশেষ করে মালিকরা গ্রেড সমন্বয় করায় সিনিয়র অপারেটরদের মজুরি অনেক কমে এসেছে। এ বিষয়ে আমরা সমঝোতার চেষ্টা করছি।’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here